শারীরিক বা বাহ্যিক পবিত্রতার তিনটি বিধিবদ্ধ পন্থা নির্ধারিত রয়েছে। যথা অজু, গোসল ও তায়াম্মুম। অজু ও গোসল পবিত্র পানি দিয়ে সম্পাদিত করা হয় এবং তায়াম্মুম বিশেষ শর্তে পবিত্র মাটি দিয়ে সম্পন্ন করা হয়।
আল্লাহ তায়ালা পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন মানুষদের ভালোবাসেন। কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘সেখানে এমন লোক আছে, যারা উত্তমরূপে পবিত্রতা অর্জন করতে ভালোবাসে। আর আল্লাহ পবিত্রতা অর্জনকারীদের ভালোবাসেন।’ -(সুরা তাওবা, আয়াত: ১০৮)
আমাদের বিভিন্ন কারণে শরীর অপবিত্র হয়। কিছু কিছু অপবিত্রতা থেকে অজুর মাধ্যমে পবিত্র হওয়া যায় আর কিছু কিছু অপবিত্রতা থেকে গোসলের মাধ্যমে পবিত্রতা অর্জন করতে হয়। যেমন, স্ত্রী সহবাস ও স্বপ্নদোষ, মেয়েদের হায়েজ-নেফাস থেকে পবিত্র হওয়ার পর গোসল করা ফরজ।
এসব কারণে কারো শরীর অপবিত্র হলে যতদ্রুত সম্ভব গোসলের মাধ্যমে পবিত্রতা অর্জন করে নেওয়া। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন মানুষদের ভালোবাসেন।
পবিত্র কোরআনে বিশেষভাবে নামাজ ও পবিত্র কোরআন পড়ার আগে অজু করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মুসলমানদের মধ্যে শারীরিক পবিত্রতা লাভের জন্য গোসলের পরে অজুর স্থান। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনের সুরা মায়িদায় বলা হয়েছে অজুর নিয়ম।
আল্লাহ বলেছেন, ‘হে বিশ্বাসীগণ! যখন তোমরা নামাজের জন্য দাঁড়াও তখন তোমাদের মুখ হাত কনুই পর্যন্ত ধোবে ও তোমাদের মাথায় হাত বুলিয়ে নেবে, আর গিট পর্যন্ত ধোবে। যদি তোমরা অপবিত্র থাকো তবে বিশেষভাবে পবিত্র হবে। যদি তোমরা অসুস্থ থাকো বা সফরে থাকো বা তোমাদের কেউ পায়খানা থেকে। আসো কিংবা স্ত্রীর সঙ্গে সংগত হও, আর পানি না পাও, তবে তাইয়াম্মুম করবে। পরিষ্কার মাটি দিয়ে এবং তা মুখে ও হাতে বুলিয়ে নেবে। আল্লাহ্ তোমাদেরকে কষ্ট দিতে চান না এবং তিনি তোমাদেরকে পবিত্র করতে চান ও তোমাদের ওপর তাঁর অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করতে চান-যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা জানাতে পারো।’ (সুরা মায়িদা, আয়াত: ৬)
নামাজ আদায় করা
আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘হে ইমানদাররা, নেশাগ্রস্ত অবস্থায় তোমরা সালাত আদায় করো না, যতক্ষণ না পর্যন্ত তোমরা বুঝতে পার যে, তোমরা নামাজে কী বলছ। তাছাড়া বড় নাপাকি হয়ে গেলে গোসল না করে সালাত আদায় করো না।’ (সূরা নিসা (৪) আয়াত, ৪৩)
কোরআন শরিফ স্পর্শ করা
অপবিত্র শরীর কোরআন শরিফ স্পর্শ করা যাবে না। পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘যারা সম্পূর্ণ পবিত্র তারা ছাড়া অন্য কেউ তা স্পর্শ করে না।’ (সূরা ওয়াকিয়া, আয়াত, ৭৯)
ইবনে ওমর রা. বর্ণনা করেন যে, ‘পবিত্র না হয়ে কোরআন কারীম স্পর্শ করবে না।’ (দারে কুতনী, ৪৩১)
কোরআন তিলাওয়াত করা
আলী রা. বলেন যে, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সব সময় আমাদেরকে কোরআন পড়িয়েছেন, তবে যখন বড় নাপাকি অবস্থায় থাকতেন সে সময় ছাড়া।’ (তিরমিজি, ১৪৬, আহমদ, ১০১৪)।
মসজিদে অবস্থান করা
আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘হায়েজ হয়েছে এমন নারী ও গোসল ফরজ এমন অপবিত্র ব্যক্তির জন্য মসজিদে যাওয়া বৈধ করি না। (আবু দাউদ, ২৩২)।’ তবে মসজিদের ভেতর দিয়ে অন্য কোথাও যেতে চাইলে তা বৈধ।
কাবা ঘর তাওয়াফ করা
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহর ঘর কাবায় তাওয়াফ করা নামাজ আদায়ের সমান।’ (নাসাঈ, ২৯২০)