গাজায় অবস্থিত ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অংশ ইসরায়েলি বিমান হামলায় ধ্বংস।।গাজায় অভিযান চালাতে প্রস্তুত ইসরায়েল
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, “তারা গাজায় অভিযান চালাতে প্রস্তুত” এবং এর অংশ হিসেবে গাজা সীমান্তে লাখ লাখ সেনা মোতায়েন করা হয়েছে।
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী- আইডিএফ এর মুখপাত্র জোনাথন কনরিকাস বলেন, গাজার চারপাশে প্রতিবন্ধকতা পুনরায় স্থাপন করা হয়েছে। গাজা সীমান্তের কাছে “পদাতিক, সাঁজোয়া সেনা, আর্টিলারি সৈন্যদল পাঠানো হয়েছে”। সেই সাথে আরো প্রায় তিন লাখ সংরক্ষিত সেনা মোতায়েন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, সামরিক বাহিনী গাজা উপত্যকার কাছাকাছি রয়েছে এবং ইসরায়েলি সরকার তাদেরকে যে মিশন দিয়েছে তা সম্পন্ন করতে প্রস্তুত হচ্ছে। এই লড়াইয়ের শেষে ভবিষ্যতে ইসরায়েলি বেসামরিক নাগরিকদের হত্যা করার মতো হামাসের যাতে আর কোন সামরিক সক্ষমতা অবশিষ্ট না থাকে তা নিশ্চিত করাই এই মিশনের লক্ষ্য।
লেবানন থেকে হামলা
বুধবার দুপুরে ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে সামরিক বাহিনীর সাইরেন বাজানো হয়েছে বলে জানিয়েছে আইডিএফ।
সংস্থাটি জানিয়েছে, গাজা ছাড়াও লেবানন থেকে সীমান্ত এলাকায় ইসরায়েলের সামরিক পোস্ট লক্ষ্য করে একটি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছে।
আইডিএফ বলছে, ট্যাংক বিধ্বংসী ওই ক্ষেপণাস্ত্রটি আরব আল-আরামশি নামে একটি গ্রামের কাছে আঘাত হেনেছে। হামাস ইসরায়েলের যে অংশে হামলা চালিয়েছে এই গ্রামটি একেবারে তার বিপরীতে দেশটির আরেক প্রান্তে অবস্থিত।
সাম্প্রতিক সময়ে লেবানন সীমান্তে এটাই প্রথম সহিংসতা নয়।
হেজবুল্লাহ হচ্ছে ইরান সমর্থিত লেবাননের একটি সশস্ত্র গোষ্ঠী। ইসরায়েল ও বেশিরভাগ পশ্চিমা দেশগুলো ওই গোষ্ঠীকে নিষিদ্ধ করেছে। হামাস হামলা চালানোর পর থেকেই এই গোষ্ঠীটিও ইসরায়েলে হামলা চালানো শুরু করেছে।
বুধবার সকাল থেকে ইসরায়েল-লেবানন সীমান্তে সহিংসতার মাত্রা বেড়ে গেছে।
লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হেজবুল্লাহ বলেছে, চলতি সপ্তাহে স্কিরমিশে ইসরায়েলের কাছে তিন জন যোদ্ধা হারানোর প্রতিশোধ হিসেবে ইসরায়েলি সেনা পোস্ট লক্ষ্য করে দুটি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে তারা।
এর প্রতিক্রিয়ায় লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে গোলা নিক্ষেপ করে চলেছে ইসরায়েল।
লেবাননের জাতীয় সংবাদ সংস্থা তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, “ধায়রা এলাকার আশপাশের এলাকায় গোলা ছুড়েছে শত্রুপক্ষ এবং ইয়ারিন এলাকার কাছাকাছি এলাকায় ফসফরাস শেল নিক্ষেপ করা হয়েছে।”
এদিকে ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলেও সাইরেন বাজার শব্দ শোনা গেছে। সম্ভাব্য আক্রমণের বিষয়ে ইসরায়েলিদের সতর্ক করতেই এই সাইরেন বাজানো হয়।
ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলা
ছবির উৎস,REUTERS গাজায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসরায়েলি হামলার পরের চিত্র।
মঙ্গলবারই গাজায় অবস্থিত ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অংশ ইসরায়েলি বিমান হামলায় ধ্বংস হয়ে গেছে।
এক্স, যা আগে টুইটার নামে পরিচিত ছিল, সেখানে পোস্ট করা এক বার্তায় ইসরায়েলি বিমান বাহিনী নিশ্চিত করেছে যে, তারা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলা চালিয়েছে।
ইসরায়েলি বিমান বাহিনী-আইএএফ বলেছে, তারা বিশ্ববিদ্যালয়টিতে হামলা চালিয়েছে কারণ এটি “হামাসের প্রকৌশলের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়”। এছাড়া এটি “রাজনৈতিক এবং সামরিক শক্তির গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রও” বটে।
এই স্থাপনা ব্যবহার করে হামাস অস্ত্র উৎপাদন করতো বলেও তারা দাবি করেছে।
ইসরায়েলে হতাহত
গাজা থেকে ইসরায়েলে হামাসের হামলার চালানোর চার দিন পরও ইসরায়েলি কর্মীরা সেডেরত শহর থেকে এখনো মরদেহ সরিয়ে নিচ্ছে।
স্থানীয় একটি পুলিশ স্টেশনে যেখানে বন্দুক যুদ্ধ হয়েছিল সেখান থেকে মরদেহ সরিয়ে নেয়া হচ্ছে।
ইসরায়েলে নিহতদের সংখ্যা ১২০০ তে দাঁড়িয়েছে। এদের মধ্যে বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক। আহত হয়েছে ২৭০০ বেশি মানুষ।
সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র কনরিকাস বলেন, বিব্বুৎজ কাফার আজা এলাকাসহ “অবর্ণনীয় নৃশংসতা” সামনে এসেছে। এই স্থান থেকেই গতকাল বিবিসির সাংবাদিক রিপোর্ট করেছিল।
কনরিকাস নৃশংসতার চিত্রকে “কোন জম্বি কিংবা ধ্বংসযজ্ঞের কোন সিনেমার দৃশ্যের সাথে তুলনা করেছেন।”
তথ্যসূত্র: বিবিসি বাংলা