গাজার হাসপাতালে হামলা ‘রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসবাদ’ ও ‘যুদ্ধাপরাধ’: ওআইসি ।। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে ‘মিথ্যাবাদী’ আখ্যা
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক দু দিনের সফরে মধ্যপ্রাচ্যের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছেন। আজ বৃহস্পতিবার সকালেই তার ইসরায়েল পৌঁছানোর কথা রয়েছে।
সেখানে দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু এবং প্রেসিডেন্ট ইসাক হারজগ এর সাথে তার সাক্ষাতের কর্মসূচি রয়েছে। অপর দিকে জানা গেছে
মিশরের প্রেসিডেন্ট গাজায় ত্রাণ সহায়তা পৌঁছাতে একটি সীমান্ত ক্রসিং খুলে দিতে রাজি হয়েছেন, যেখানে ত্রাণবাহী ২০টি পর্যন্ত ট্রাক যেতে পারবে।
এদিকে, ইসরায়েলের মানুষের সাথে সংহতি জানিয়ে দেশে ফিরেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তবে মধ্যপ্রাচ্যের পথে থাকা ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক বৃহস্পতিবার সকালেই ইসরায়েলে পৌঁছানোর কথা রয়েছে।
ওদিকে ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলছেন, গাজার হাসপাতালে হামলার ঘটনায় মৃতের সংখ্যা আরও বেড়েছে এবং এ পর্যন্ত ৪৭১ জন মারা গেছে।
হাসপাতালে বিস্ফোরণের সাথে নিজের সম্পৃক্ততার খবর প্রত্যাখ্যান করেছে ইসরায়েল এবং প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও ইসরায়েলের এ অবস্থানকে সমর্থন করেছেন।
যদিও হামাস তাৎক্ষনিকভাবে ওই ঘটনার জন্য ইসরায়েলকেই দায়ী করেছিলো। তবে ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্স বা আইডিএফের অভিযোগ ফিলিস্তিনিদের ছোড়া রকেট লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে ঘটনাটি ঘটেছে।
তবে আরব বিশ্বের অনেক দেশই হামাসের মতো ইসরায়েলকেই ওই হামলার জন্য দোষারোপ করেছে এবং আরব নেতারা প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সঙ্গে তাদের বৈঠকও বাতিল করেছেন।
অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার একটি হাসপাতালে ইহুদিবাদী ইসরাইলের পাশবিক বিমান হামলার নিন্দা জানিয়েছে ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা বা ওআইসি। সংস্থাটি ওই হামলাকে ‘সংগঠিত রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসবাদ’ ও ‘যুদ্ধাপরাধ’ বলে আখ্যায়িত করেছে।
গাজা উপত্যকায় ইসরাইলি আগ্রাসনের বিষয়ে আলোচনা করতে জেদ্দায় ওআইসির মন্ত্রী পর্যায়ের জরুরি বৈঠকে ওআইসির মহাসচিব ইব্রাহিম তাহা সংস্থাটির এ অবস্থান ঘোষণা করেন।
তিনি বলেন, যেকোনো ধরনের মানবিক মূল্যবোধের বিচারে হাসপাতালে হামলা মেনে নেয়া যায় না। তাহা বলেন, এটি একটি যুদ্ধাপরাধ ও সংগঠিত রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসবাদ যার বিচার করা জরুরি।
এ ধরনের ভয়াবহ ইসরাইলি হামলা বন্ধ করতে সম্মিলিত প্রচেষ্টা চালানোর আহ্বান জানান ওআইসির মহাসচিব। তিনি বলেন, আগ্রাসন বন্ধ করে এখন গাজায় জরুরি খাদ্য, ওষুধ ও চিকিৎসা সামগ্রীসহ ২৩ লাখ মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
ইব্রাহিম তাহা বলেন, ওআইসি এর আগেও এ ব্যাপারে সতর্ক করেছিল যে, আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি ইসরাইলের কোনো শ্রদ্ধাবোধ নেই এবং তাকে তার বর্বরতার জন্য কখনও বিচারের সম্মুখীন হতে হয়নি। তিনি আরো বলেন, ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে অবৈধ ইহুদি বসতি স্থাপন, ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক ঘরবাড়ি থেকে বিতাড়ন, তাদের বিরুদ্ধে জাতিগত নির্মূল অভিযান, হত্যা, সংগঠিত সন্ত্রাস, আল-আকসা মসজিদে হামলা এবং এ ধরনের অন্যান্য অপরাধ করার জন্য ইসরাইলকে কখনও শাস্তি পেতে হয়নি।
ওআইসির জরুরি বৈঠকে যোগ দিতে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির-আব্দুল্লাহিয়ান এরইমধ্যে জেদ্দায় পৌঁছেছেন। এ বৈঠক সম্পর্কে ওআইসির মহাসচিব আরো বলেন, “আমি আশা করি এই বৈঠকটি ইসরাইলি আগ্রাসন বন্ধ করতে, ফিলিস্তিনি জনগণকে রক্ষা করতে এবং এই অগ্নিপরীক্ষায় তাদের সহায়তা প্রদানের জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে সফল হবে।”
হাসপাতালের পুরো প্রাঙ্গণ জুড়ে রক্তের দাগ
ভয়াবহ বিস্ফোরণের পর গাজার আল আহলি আরব হাসপাতালের পুরো প্রাঙ্গণ জুড়ে রক্তের দাগ এবং যত্রতত্র পড়ে আছে ব্যক্তিগত ব্যবহার্য জিনিসপত্রসহ নানা কিছু।
কাছেই একটি পার্কিং এরিয়ায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া গাড়ির সারি। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আশেপাশের ভবনগুলোও।
গাজা শহর থেকে বিবিসি নিউজের রুশদি আবু আলৌফ জানিয়েছেন, যে সেখানে এখন আতঙ্কের পরিবেশ বিরাজ করছে এবং মানুষজন আসলে বোঝার চেষ্টা করছে যে কী ঘটেছে সেখানে, যে জায়গাটিতে আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী মানুষ সুরক্ষিত থাকার কথা।
“আমরা বাড়িঘর ছেড়ে এখানে এসেছি,” বিস্ফোরণে বেঁচে যাওয়া একজন নারী বলছিলেন বিবিসিকে। “আমরা ভেবেছিলাম এটি নিরাপদ কিন্তু এখানেই বোমা ফেলা হলো”।
তবে অনেকেই এখনো ওই হাসপাতাল প্রাঙ্গণে অবস্থান করছেন কারা পরিবহন না থাকায় তারা দক্ষিণের দিতে যেতে পারছেন না।
অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার একটি হাসপাতালে বিমান হামলার ঘটনায় ইহুদিবাদী ইসরাইলকে দায়ী করে এর নিন্দা জানিয়েছেন জাতিসংঘে নিযুক্ত ফিলিস্তিনি স্বশাসন কর্তৃপক্ষের রাষ্ট্রদূত রিয়াদ মানসুর।
এ হামলা নিয়ে ইহুদিবাদী প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ‘অসত্য’ বলছেন বলেও তিনি অভিযোগ করেছেন।
গতকাল (বুধবার) নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে রিয়াদ মনসুর এ কথা বলেন। এ সময় জাতিসংঘে নিযুক্ত অন্যান্য আরব দেশের রাষ্ট্রদূত ও প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
গাজা উপত্যকা আল-আহলি আল-আরাবি হাসপাতালে মঙ্গলবার রাতে ইসরাইলি বিমান হামলায় ৪৭১ জন নিহত হয়েছেন বলে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নিশ্চিত করেছে। প্রাথমিকভাবে ওই হামলায় ৫০০ জন নিহত হয়েছে বলে হামাস এক বিবৃতিতে জানিয়েছিল। ওই পাশবিক হামলায় আহত হয়েছেন অন্তত ৩১৪ জন।
রিয়াদ মানসুর বলেন, “আমরা অত্যন্ত কঠোর ভাষায় এ ধরনের কাজের নিন্দা জানাই। আমরা মনে করি, এই অপরাধ ও হত্যাকাণ্ডের জন্য ইসরাইল দায়ী। ঘৃণ্য এই অপরাধের জন্য তাদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো উচিত।”
ইহুদিবাদী ইসরাইল গাজার যেসব ভবন বিমান হামলা চালায় সেখানে হামলার কিছুক্ষণ আগে বিমান থেকে লিফলেট ফেলে জানিয়ে দেয় যে, সেখানে হামলা হবে। গাজার আল-আহলি হাসপাতালেও সেরকম হুমকি দেয়া হয়েছিল বলে ইসলামি জিহাদ আন্দোলন জানিয়েছে।
কাতার-ভিত্তিক নিউজ চ্যানেল আল-জাজিরার খবরেও বলা হয়েছে, ইসরাইলের সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র এর আগে বলেছিলেন, গাজার হাসপাতালগুলোয় হামলা করা হতে পারে। তাই সেগুলো খালি করা দরকার। অথচ একটি হাসপাতালে হামলা চালিয়ে শত শত ফিলিস্তিনিকে হত্যা করে জনরোষে বেকায়দায় পড়ে যাওয়ার পর এখন তেল আবিব দাবি করছে তারা সেখানে হামলা চালায়নি।
জাতিসংঘে নিযুক্ত ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত রিয়াদ মানসুর নিউ ইয়র্কে আরো বলেন, ইসরাইলিরাই এই অপরাধের জন্য দায়ী। ঘটনাটি নিয়ে তারা মনগড়া বক্তব্য দিতে পারে না।
এ হামলার জন্য ফিলিস্তিনের ইসলামি জিহাদকে দায়ী করায় ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে ‘মিথ্যাবাদী’ আখ্যা দেন রিয়াদ মানসুর। তিনি বলেন, “ইসরাইল এখন ফিলিস্তিনিদের দায়ী করতে ঘটনা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে চায়। ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু একজন মিথ্যাবাদী। হামলার পর তার ডিজিটাল মুখপাত্র এক্সে (সাবেক টুইটার) লিখেছিলেন, হাসপাতালটির কাছে হামাসের ঘাঁটি আছে ভেবে ইসরাইল সেখানে হামলা চালিয়েছে। কিন্তু পরে সেই বার্তা মুছে ফেলা হয়।”
তত্য সূত্র: বিবিসি, পার্সটুডে