বই মানসিক চাপ কমিয়ে পুনর্জীবিত করে তোলে
সঠিক ধরণের সাহিত্য আপনাকে যেকোনো বিষয় সম্পর্কে একটি নতুন দৃষ্টিকোণ দিতে সক্ষম।
সাহিত্যিকদের মতে “একটি বই মূলত আপনাকে যে বার্তাটি দেয়, সেটি হল নিজের নীতিতে অটল থাকার। এ কারণে নানা ধরণের মানসিক পীড়া থেকে মুক্তি মেলে আর মন পুরো পরিশুদ্ধ নতুনের মতো হয়ে যায়।”
বই কীভাবে আপনার জীবনের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে পারে?
লেখকদের মতে, “গল্প, উপন্যাস, সাহিত্য আপনাকে সবকিছু থেকে পালাতে সাহায্য করে। ইংরেজি ভাষায় যাকে বলা হয় এস্কেপিজম বা পলায়নবাদ। এই পালিয়ে যাওয়ার বিষয়টি অন্য যেকোনো শিল্পের চেয়ে তীব্র ও শক্তিশালী।”
“একটি চলচ্চিত্র বা টিভি অনুষ্ঠানে আপনাকে ছবি দেখানো হয়, যেখানে একটি উপন্যাসের সাহায্যে আপনি সেই ছবি বা দৃশ্যপট নিজেই তৈরি করেন। সুতরাং বই আসলে অন্য যেকোনো মাধ্যমের চাইতে অনেক শক্তিশালী। কারণ এতে আপনি অনেক বেশি জড়িত।”
অগোছালো জীবন শৃঙ্খলায় আনতে বই
বই তার কাঠামোগত বিশ্লেষণের সাহায্যে একটি অগোছালো মনে শৃঙ্খলা আনতে পারে।
ঔপন্যাসিকদের অনেকেই নিজেরা যখন কোন ঝামেলায় পড়েন তখন তারা বইয়ের সাহায্য নেন।
তাদের মতে, “আপনি নিজেকে চেষ্টা করতে ও সমাধান করতে পারেন বইয়ের মধ্যে ডুবে যাওয়ার মাধ্যমে।”
“বইয়ের কোন অতিপ্রাকৃত গল্পের সঙ্গে সাথে নিজেকে যুক্ত করতে পারলে আপনার নিজের মনে থাকা নানা বিষয়কে এক জায়গায় এনে সমাধানের চেষ্টা করা যায়।”
বই হতাশ মনকে প্রবোধ দেয়
একটি শক্তিশালী সাহিত্যের শেষটি আনন্দের না হলেও – বাস্তবে এটি ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে।
হুইটল নামের এক ঔপন্যাসিক বিবিসিকে জানান যে, তিনি যখন ছোট ছিলেন তখন তার বাবা তাকে জ্যামাইকাতে তাঁর নিজের শৈশব সম্পর্কে বলতেন, যখন একজন গল্পকার ফসল কাটার সময় গ্রাম থেকে গ্রামে যেতেন এবং তারা দাস প্রথার গল্প বলে বেড়াতেন।”
“দাসপ্রথার এই বিষয়টি অনেক কষ্টের আর হতাশাজনক। তবে এটি ইঙ্গিত করে যে মানুষকে কতো সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে টিকে থাকতে হয়েছে।” বলেন মিস্টার হুইটল।
তরুণদের মনকে সহায়তা করতে সাহিত্য
তরুণদের মানসিক স্বাস্থ্য সঙ্কট মোকাবেলায় সাহিত্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
তরুণদের জন্য এখন আরও বেশি সংখ্যক উপন্যাস লেখা হচ্ছে যা কিশোর-কিশোরীদের তাদের প্রতিদিনের জীবনে যে বিষয়গুলি মোকাবেলা করতে পারে, সেগুলি মোকাবিলায় সাহায্য করবে। সেটা হত পারে বুলিং বা কটূক্তি, মাদক, সমকামিতা, সামাজিক বর্জনসহ আরও নানা ইস্যু।”
“যে বিষয়গুলি তাদের জীবনে ঘটতে পারে, অথচ এতদিন হয়তো তারা সেটা বুঝতেই পারেনি। আমি সত্যিই মনে করি যে একটি বই আমাদের মধ্যে থাকা হিমায়িত সমুদ্রকে ভেঙে দেওয়ার কুড়াল হিসেবে কাজ করতে পারে এবং এটি যে কোনও যুগের ক্ষেত্রেই সত্য।”- বলেন সেই লেখক।
বই পড়ার যেমন মানসিক উপকার রয়েছে, তেমনটা কি লেখার ক্ষেত্রেও আছে?
আসলে একজন লেখকের জীবন মানসিক স্বাস্থ্যের বিবেচনায় অনেকটা একটি মিশ্র ব্যাগের মতো।
যার মধ্যে অনেক প্রয়োজনীয় কিছু থাকে।
এর মধ্যে একটি হল অনেক মানসিক ট্রমা বা আবেগ বের করে দেয়ার ক্ষমতা। এক্ষেত্রে লেখা লেখি দুর্দান্তভাবে কাজে আসে।
পরিশেষে এটা বলতেই হয় যে, যখন কোন বই পাঠকের সুস্থতার ওপর প্রভাব ফেলে বা পাঠককে সুস্থ করে তোলে। ওই বইয়ের লেখকের জন্য এরচেয়ে বড় প্রাপ্তি আর কিছুই হতে পারেনা।
সূত্র: