বিশ্বকাপে দলের ভরাডুবি শান্ত করে দিয়েছে
বিশ্বকাপে দলের ভরাডুবি শান্ত করে দিয়েছে সাকিব আল হাসানকে ।সাকিব আল হাসান সবকিছু মেনে নেওয়ার মতো মানুষ কোনো দিনই ছিলো না। সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকরাও একের পর এক প্রশ্নে তটস্ত রাখলেন বাংলাদেশ অধিনায়ককে। সবকিছু শান্তভাবে নিয়ে ভেবে ভেবে উত্তর দিলেন সাকিব। এটাও মেনে নিলেন, বাংলাদেশের সবচেয়ে বাজে বিশ্বকাপ এবারই।
সংবাদ সম্মেলনে সাকিবের কাছে জানতে চাওয়া হলো বিশ্বকাপের আগে আর বিশ্বকাপের পারফরম্যান্সে এত গরমিল কেন? টাইগার দলপতির সরল স্বীকারোক্তি, ‘আমরা টুর্নামেন্টজুড়েই সংগ্রাম করছি, উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে এগোচ্ছি। এই ফল হজম করা কঠিন। যদিও ক্রিকেটে এটা হয়। খেলোয়াড়দের মধ্যে আত্মবিশ্বাস বলে কিছু নেই। ব্যাটিং-বোলিং কোনো কিছুতে ভালো করতে পারছি না। বোলিং খুব ভালো হলেও কিন্তু আমরা ব্যাটাররা হতাশ করেছি। একটি দলকে এভাবে হারতে দেখা খুবই হতাশার।’
নেদারল্যান্ডসকে ২২৯ রানে বেঁধে ফেলার পর জয় দেখতে পাচ্ছিল বাংলাদেশ। বিদেশ-বিভুঁইয়েও স্লোগানে মুখরিত হয়েছে গ্যালারি। লাল-সবুজ জার্সি পরে বিশ্বকাপে প্রিয় দলকে সমর্থন দিতে এসেছিলেন দর্শকরা।
অথচ সাকিবদের কাছ থেকে তারা উপহার পেলেন হতাশার পরাজয়। কলকাতাতেও নিজ সমর্থকদের কাছে শুনতে হলো দুয়ো। সমালোচনা আর বিতর্ক মেনে নিয়ে সাকিব জানান, এটা তাদের প্রাপ্য।
তাঁর মতে, ‘আমি এটাকে মেনে নিই। কারণ, আমাদের কাছে তাদের প্রত্যাশা অনেক। সেটা যখন পূরণ হবে না, তখন সমালোচনা করবে– এটাই স্বাভাবিক।’
সেমিফাইনালে
প্রথম ম্যাচে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে জয়। বিশ্বকাপে তার পর থেকে হেরেই চলেছে বাংলাদেশ। শনিবার ইডেনে নেদারল্যান্ডসের বিরুদ্ধেও হেরেছে তারা। কী ভাবে এখনও সেমিফাইনালে যাওয়া সম্ভব?
আনন্দবাজার পত্রিকা বলছে সেই প্রথম ম্যাচে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে জয়। বিশ্বকাপে তার পর থেকে হেরেই চলেছে বাংলাদেশ। শনিবার ইডেনে নেদারল্যান্ডসের মতো দুর্বল দলের বিরুদ্ধেও হেরেছে তারা। টানা পাঁচটি ম্যাচ হেরে শাকিব আল হাসানের দল দাঁড়িয়ে খাদের কিনারায়। কিন্তু সব আশা এখনও শেষ হয়ে যায়নি। বাংলাদেশ এখনও সেমিফাইনালের যোগ্যতা অর্জন করতে পারে। তার পরেও অবশ্য তাকিয়ে থাকতে হবে বাকি দলগুলির দিকে।
সেমিফাইনালে উঠতে গেলে বাংলাদেশকে জিততে হবে বাকি তিন ম্যাচে। বাংলাদেশের খেলা বাকি পাকিস্তান (৩১ অক্টোবর), শ্রীলঙ্কা (৬ নভেম্বর) এবং অস্ট্রেলিয়ার (১১ নভেম্বর) বিরুদ্ধে। তিনটি ম্যাচেই বড় ব্যবধানে জিততে হবে, যাতে নেট রান রেট অনেকটাই বেশি থাকে।
তিনটি ম্যাচেই জিতলে বাংলাদেশ সর্বোচ্চ আট পয়েন্টে পৌঁছতে পারে। এতে তৃতীয় বা চতুর্থ স্থানে শেষ করতে পারে। তার জন্যে বাকি দলগুলিকেও হারতে হবে। ভারত এবং দক্ষিণ আফ্রিকার ইতিমধ্যেই ১০ পয়েন্ট রয়েছে। এই দুই দেশ তাদের বাকি ম্যাচে হারলেও ছুঁতে পারবে না বাংলাদেশ। নিউ জ়িল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়া দুই দেশেরই এখন আট পয়েন্ট করে রয়েছে। ছ’টি করে ম্যাচ খেলেছে তারা। যদি এই দুই দেশ নিজেদের পরের ম্যাচে জেতে যেতে, তা হলেই ছিটকে যাবে বাংলাদেশ। এই দুই দেশকে শুধু হারলেই হবে না, বড় রানে হারতে হবে যাতে রান রেট অনেকটা কমে যায়। এতে বাংলাদেশ রান রেটের বিচারে তাদের টপকে যেতে পারবে।
বাংলাদেশের উপরে রয়েছে শ্রীলঙ্কা এবং আফগানিস্তান। বাংলাদেশ চাইবে, দুই দলই তাদের বাকি ম্যাচগুলিতে হারুক। এতে দুই দেশ সর্বোচ্চ ছ’পয়েন্টে শেষ করবে। তা হলে বাংলাদেশের আট পয়েন্টকে ছুঁতে পারবে না।
দলে অশান্তি
বিশ্বকাপে ভাল খেলতে পারছে না বাংলাদেশ। চলছে সমালোচনা। তার সঙ্গে যোগ হয়েছে শাকিব আল হাসানদের শিবিরে অশান্তি। শনিবার নেদারল্যান্ডসের কাছে হারের পর এই অশান্তির কথা স্বীকার করে নিয়েছেন বাংলাদেশের অধিনায়ক।
শাকিব মেনে নিয়েছেন, বাংলাদেশ এ বারের বিশ্বকাপে সব থেকে খারাপ খেলছে। এর আগের কোনও বিশ্বকাপে তাঁরা এত খারাপ পারফরম্যান্স করেননি। ব্যর্থতার অন্যতম কারণ হিসাবে তামিম ইকবালের সঙ্গে তাঁর বিতর্কের কথাও মেনে নিয়েছেন শাকিব। তামিমকে কেন্দ্র করে সতীর্থদের সঙ্গে তাঁর যে একটা দূরত্ব তৈরি হয়েছে, তাও মেনে নিয়েছেন শাকিব। অস্বীকার করেননি দলে বিভাজন রয়েছে এই ইস্যুতে।
নেদারল্যান্ডসের কাছে হারের পর সাংবাদিক সম্মেলনে এসেছিলেন শাকিব। বাংলাদেশের ব্যর্থতায় তার সঙ্গে তামিমের বিবাদের প্রভাব রয়েছে কি না, জানতে চান এক সাংবাদিক। উত্তরে শাকিব বলেছেন, ‘‘আমার এবং তামিমের মধ্যে বিতর্ক হয়তো দলের পারফরম্যান্সে প্রভাব ফেলছে। মেনে নিতে অসুবিধা নেই যে, এটাই আমাদের জঘন্যতম বিশ্বকাপ।’’ তিনি আরও বলেছেন, ‘‘বিতর্ক দলে প্রভাব ফেলতেই পারে। অস্বাভাবিক কিছু না। দলে কার মনের ভেতর কী আছে, এটা বলা মুশকিল। ভিন্ন মত থাকতেই পারে। আমি অস্বীকার করছি না। পারফরম্যান্সে প্রভাব ফেলতেই পারে।’’
বিশ্বকাপের আগে তাঁদের প্রস্তুতি যে পর্যাপ্ত ছিল না, তা-ও মেনে নিয়েছেন সাকিব। তিনি বলেছেন, ‘‘অবশ্যই আমাদের প্রস্তুতিতে ঘাটতি ছিল। যে ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে বিশ্বকাপ খেলতে আসা উচিত, তা আমরা নিইনি। এখন এই সব অজুহাত দেওয়ার কোনও মানে হয় না। কোনও লাভ নেই। মেনে নিতেই হবে আমাদের প্রস্তুতি ঠিক ছিল না।’’
নেদারল্যান্ডসের কাছে হার তাঁদের যে বিশ্বকাপ থেকে কার্যত ছিটকে দিয়েছে, তা-ও মেনে নিয়েছেন শাকিব। সেমিফাইনালের ওঠার আশা প্রায় ছেড়েই দিয়েছেন তিনি। বাংলাদেশ অধিনায়কের লক্ষ্য, বাকি তিনটি ম্যাচে নিজেদের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করা। শাকিব বলেছেন, ‘‘সত্যি কথা বলতে, খুবই কঠিন এই পরিস্থিতি থেকে ঘুরে দাঁড়ানো। আরও তিনটে ম্যাচ রয়েছে আমাদের। সুযোগ এখনও আছে। তবে খুবই কঠিন। আমাদের চেষ্টা করতে হবে। তা ছাড়া আমাদের কিছু করার নেই। আমাদের পারফরম্যান্স অত্যন্ত হতাশার। এর থেকে অনেক ভাল করা উচিত ছিল আমাদের।’’-আনন্দবাজার পত্রিকা