বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন কেন্দ্র করে আমেরিকার ভিসানীতি এবং স্যাংশন ইতিহাসে প্রথম
রুহুল কুদ্দুস টিটো
আমেরিকার ভিসানীতি এবং স্যাংশন একত্রে মিলিয়ে এখন নানামুখী আলোচনা চলছে কারণ বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনপ্রক্রিয়ায় বাধাদানকারী ব্যক্তিদের ভিসা দেওয়ার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আরোপের পদক্ষেপ নেওয়া শুরুর ঘোষণা আসে ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩।
স্বাধীনতা পরবর্তী জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র দেশের ইতিহাসে এ প্রথম আমাদের আমেরিকার বিধিনিষেধ আরোপ করলো কেন? এ প্রশ্নের উত্তর সকলের জানা বটে কিন্তু এক র্যাব ছাড়া আর কে কে পাচ্ছেন বা পাবেন এটা সময় বলে দেবে। কিন্তু সোস্যাল মিডিয়াতে নানা জনের নাম দিয়ে একেক জন এমন বর্ণনা দিচ্ছেন তাতে মনে হচ্ছে আমেরিকার গোপন বিষয়টি আমেরিকার সরকারের দপ্তরে গিয়ে নথি দেখে ডকুমেন্ট হাতে নিয়ে বলছেন। অথচ আমেরিকান স্যাংশন আরোপ করার একমাত্র ক্ষমতা রাখে ওফাক (OFAC—অফিস অব ফরেন অ্যাসেট কন্ট্রোল)। তারা অত্যন্ত গোপনীয়তার সঙ্গে এই কাজটি করে থাকে। ওফাক থেকে স্যাংশন জারি করে তালিকা প্রকাশ না করা পর্যন্ত কারো পক্ষে জানা সম্ভব নয়, এমনকি আমেরিকার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষও জানতে পারবে না।
আমেরিকার ভিসানীতি এবং স্যাংশন ইতিহাসে প্রথম
বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠ ও শান্তিপূর্ণভাবে জাতীয় নির্বাচন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গত ২৪ মে ২০২৩ বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। তাতে বলা হয়, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনপ্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত বাংলাদেশিদের ভিসা দেবে না দেশটি। এর আগে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র।
গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে বাংলাদেশের পুলিশের এলিট ফোর্স র্যাব ও এর কয়েকজন বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তার উপর এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
কেন এমন নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র?
সাধারণত কোন দেশ আরেকটি দেশকে বা নির্দিষ্ট কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে শাস্তি দেয়ার জন্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।এমন দেশ এরকম নিষেধাজ্ঞা জারি করে, যেসব দেশে ওই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের যাতায়াত, বিনিয়োগ বা স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় রয়েছে।
আবার নিষেধাজ্ঞা অনেক সময় এক দেশ আরেক দেশের ওপর প্রতিশোধ হিসেবে আরোপ করে।
ইউনিভার্সিটি অব স্যালফোর্ড এর আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক মরটিজ পিয়েপার বিবিসিকে বলেছেন, “আপনি একটি দেশের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারেন কারণ আপনি ঐ দেশটির আচরণে পরিবর্তন দেখতে চান”।
বিষয়টা হলো, “ঐ দেশের নাগরিক তার নিজ দেশের সরকারের ওপর রাগান্বিত হবে। এবং দাবী জানাবে আরোপিত নিষেধাজ্ঞার ভিত্তিতে সরকার যাতে শোধরায়”।
কারা যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা মেনে চলতে বাধ্য?
যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বা অর্থ দপ্তরের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, সকল মার্কিন নাগরিক বা স্থায়ী বসবাসের অনুমতি রয়েছে, এমন সকল ব্যক্তি, যেখানেই থাকুন না কেন, অফিস অব ফরেন অ্যাসেটস কন্ট্রোল (ওএফএসি) নির্দেশনা মেনে চলতে বাধ্য।
অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্র যখন নিষেধাজ্ঞা জারি করে, সেইসব ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বা দেশের সঙ্গে মার্কিন কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কোন রকম লেনদেন বা সম্পর্ক রক্ষা করতে পারে না। সেই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক রয়েছে, এমন কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান সেটি করতে পারে না। যাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকবে, তারা যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে পারবেন না।
যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতির যে নির্বাহী আদেশে এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে, সেখানে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে থাকা সকল অর্থ-সম্পদ, মার্কিন কোন ব্যক্তির নিয়ন্ত্রণে থাকা সম্পদ জব্দ থাকবে। এগুলো হস্তান্তর, প্রদান বা লেনদেন করা যাবে না।
সেই সঙ্গে যেসব প্রতিষ্ঠান যুক্তরাষ্ট্রে নিবন্ধিত, তাদের বিদেশি শাখাকেও এই নির্দেশনা মানতে হবে। যেসব প্রতিষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্র ভর্তুকি বা অনুদান দিয়ে থাকে, অথবা যুক্তরাষ্ট্র পরিচালনা করে, তাদের জন্যও এই নির্দেশনা কার্যকর হবে।
যদি কেউ সেটা লঙ্ঘন করে, তাহলে বিভিন্ন অংকের জরিমানার মুখোমুখি হতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের এই নিষেধাজ্ঞা বন্ধু দেশগুলো মানতে বাধ্য নয়। কিন্তু কানাডা, যুক্তরাজ্য, জার্মানি বা অস্ট্রেলিয়ার মতো যেসব দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে, তারাও যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা অনুসরণ করে থাকে।
যুক্তরাষ্ট্রের জারি করা কয়েকটি আলোচিত নিষেধাজ্ঞা
বিভিন্ন সময় যুক্তরাষ্ট্র দেশ হিসাবে ইরান, উত্তর কোরিয়া, রাশিয়া, কিউবা, সিরিয়া, ভেনেজুয়েলা বিভিন্ন কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। তবে দেশ ভেদে এসব নিষেধাজ্ঞার প্রকৃতি আলাদা।
ইরান, উত্তর কোরিয়া, কিউবা, ভেনেজুয়েলা এবং সিরিয়ার ওপর ব্যাপক আকারে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। ফলে এসব দেশের সরকার বা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কোন মার্কিন প্রতিষ্ঠান কোনরকম লেনদেন বা বাণিজ্য করে না।
এমনকি মার্কিন নিষেধাজ্ঞার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক রয়েছে, এমন কোন দেশ ইরান থেকে তেল কিনতেও পারে না। মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে ইরান বা ভেনেজুয়েলার অর্থনীতি একপ্রকার বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল।
এছাড়া সন্ত্রাসবিরোধী এবং মাদক বিরোধী নিষেধাজ্ঞার আওতায় বিভিন্ন দেশের একাধিক ব্যক্তির ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র বা সহযোগী দেশগুলোয় থাকা সম্পদ জব্দ করার পাশাপাশি তারা যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ করতে পারে না।
আমেরিকার ভিসানীতি এবং স্যাংশন সম্পূর্ণ ভিন্ন দুটো প্রক্রিয়া। ভিসানীতি প্রয়োগ করা হয় আমেরিকায় ভ্রমণের ক্ষেত্রে।
পক্ষান্তরে আমেরিকার স্যাংশন প্রয়োগ করা হয় কোনো দেশের, ব্যক্তির বা প্রতিষ্ঠানের আর্থিক লেনদেন বা ব্যবসা-বাণিজ্যকে সীমিত করার উদ্দেশ্যে। সুতরাং আমেরিকার ভিসানীতি এবং স্যাংশন সম্পূর্ণ দুটো ভিন্ন বিষয় এবং এর প্রয়োগ ও কার্যকারিতাও ভিন্ন। তবে এই দুটোর মধ্যে সূক্ষ্ম একটা সম্পর্ক আছে। আমেরিকার যে ভিসানীতিই বলবৎ থাকুক না কেন, যাদের বা যে প্রতিষ্ঠানের ওপর স্যাংশন আরোপ করা হবে, তারা সাধারণ নিয়মে আমেরিকার ভিসা পাবে না।
আমেরিকান স্যাংশন আরোপ করার একমাত্র ক্ষমতা রাখে ওফাক (OFAC—অফিস অব ফরেন অ্যাসেট কন্ট্রোল)। তারা অত্যন্ত গোপনীয়তার সঙ্গে এই কাজটি করে থাকে। ওফাক থেকে স্যাংশন জারি করে তালিকা প্রকাশ না করা পর্যন্ত কারো পক্ষে জানা সম্ভব নয়, এমনকি আমেরিকার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষও জানতে পারবে না।
স্যাংশন কোনো সাধারণ বিষয় নয়। স্যাংশন খুবই উচ্চ মানের এক কমপ্লায়েন্স বিষয়, যার সঙ্গে জড়িয়ে আছে যথেষ্ট আইনগত দিক। স্যাংশন নিয়ে কথা বলতে হলে এ বিষয়ে পারদর্শী হতে হবে। উন্নত বিশ্বে আইনজীবী এবং সিজিএসএস বা সার্টিফায়েড গ্লোবাল স্যাংশন স্পেশালিস্ট ছাড়া অন্য কেউ এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করে না। অবশ্য ওফাক থেকে স্যাংশন জারি করে তালিকা প্রকাশ করলে তার ওপর সংবাদ প্রকাশ করা যেতেই পারে এবং সেখানে স্যাংশনের কার্যকারিতা বা ক্ষতিকর দিক নিয়ে এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞের মন্তব্য দেওয়া যেতে পারে। এর বাইরে যদি ওফাক কর্তৃপক্ষের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তির সরাসরি বক্তব্য পাওয়া যায়, তাহলে হয়তো সংবাদ করা যেতে পারে এবং সে ক্ষেত্রে সেই বক্তব্য অবশ্যই অফিশিয়াল মাধ্যমে পেতে হবে এবং ভেরিফাই করে নিতে হবে। তবে আমি নিশ্চিত যে ওফাক কর্তৃপক্ষের কেউ এ ব্যাপের কোনো যোগাযোগই করবেন না।স্যাংশনের প্রভাব কতটুকু সেটি ভিন্ন প্রেক্ষাপট, কিন্তু বিষয়টি কোনো দেশের জন্য অস্বস্তিকর তো বটেই।-নিরঞ্জন রায় কালেরকন্ঠ
যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি প্রসঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তারা স্যাংশন দিচ্ছে, আরও স্যাংশন দেবে—দিতে পারে, এটা তাদের ইচ্ছা কিন্তু আমার দেশের মানুষের ভোটের অধিকারসহ সব মৌলিক অধিকার আমরা নিশ্চিত করেছি।
সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২৩ শনিবার ভয়েস অব আমেরিকা সাক্ষাৎকারটি প্রচার করে। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন ভয়েস অব আমেরিকার সাংবাদিক শতরূপা বড়ুয়া।
যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন; বাংলাদেশের মানবাধিকার এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে নিয়মিত তাগিদ দিয়ে আসছে। বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসও বিভিন্ন সময় এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। আমরা দেখেছি, গত সপ্তাহে শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বাংলাদেশিদের যে ভিসা নীতি আরোপের কথা বলেছিল, তার প্রথম পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে। আমরা এ-ও জানি, র্যাবের ওপর ২০২১ সালে যে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে তা এখনো বহাল আছে। এই বিষয়গুলো অ্যাড্রেস করাসহ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের যে বন্ধুত্বপূর্ণ ও অংশীদারত্বের সম্পর্ক তা জোরদার করার জন্য আপনারা কী ধরনের উদ্যোগ নিচ্ছেন—জানতে চাইলে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার এটাই প্রশ্ন যে, হঠাৎ কথা নেই-বার্তা নেই তারা আমাদের ওপর ভিসা স্যাংশন দিতে চাচ্ছে কী কারণে?
‘আর মানবাধিকারের কথা যদি বলে বা ভোটের অধিকারের কথা যদি বলে, আমরা আওয়ামী লীগ; আমরাই তো এ দেশের মানুষের—বাংলাদেশের মানুষের ভোটের অধিকার নিয়ে সংগ্রাম করেছি। আমাদের কত মানুষ রক্ত দিয়েছে এই ভোটের অধিকার আদায় করার জন্য। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন যাতে হয়, তার জন্য যত রকমের সংস্কার দরকার সেটা আমরাই তো করেছি। আজকে ছবিসহ ভোটার তালিকা; স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স; মানুষকে ভোটের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করা; আমার ভোট আমি দেবো, যাকে খুশি তাকে দেবো এই স্লোগান তো আমার দেওয়া। আমি এভাবে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেছি। কারণ আমাদের দেশে বেশির ভাগ সময় মিলিটারি ডিকটেটররা দেশ শাসন করেছে। মানুষের ভোট দেওয়া লাগেনি। তারা ভোটের বাক্স ভরে নিয়ে জাস্ট রেজাল্ট ঘোষণা দিয়েছে,’ বলেন তিনি।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘এরই প্রতিবাদে আমরা আন্দোলন-সংগ্রাম করে আজকে আমরা নির্বাচন সুষ্ঠু পরিবেশে নিয়ে আসতে পেরেছি। এখন মানুষ তার ভোটের অধিকার সম্পর্কে অনেক সচেতন। সেটা আমরা করেছি। সে ক্ষেত্রে হঠাৎ এ ধরনের একটা স্যাংশন দেওয়ার কোনো যৌক্তিকতা আছে বলে আমি মনে করি না।
‘দ্বিতীয় কথা হচ্ছে, আমাদের দেশের আইন অনুযায়ী, আমার কোনো আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা—সেটা র্যাব হোক, পুলিশ হোক, যেটাই হোক; কেউ যদি কোনো রকম অন্যায় করে আমাদের দেশে কিন্তু তাদের বিচার হয়। এই বিচারে কিন্তু কেউ রেহাই পায় না,’ বলেন প্রধানমন্ত্রী।
অনেক সময় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য কোনো কাজ অতিরিক্ত করে, করতে পারে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘করলে সেটা কিন্তু আমাদের দেশের আইনেই বিচার হচ্ছে। যেখানে এ রকম বিচার হচ্ছে, এ ধরনের ব্যবস্থা আছে সেখানে এ স্যাংশন কী কারণে!’
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘এই যে আমরা ২০০৮ এর নির্বাচনে জয়ী হয়ে ২০০৯-এ সরকার গঠন করলাম। তার থেকে এ পর্যন্ত যতগুলো নির্বাচন হয়েছে, ন্যাশনাল ইলেকশন অথবা লোকাল গভর্নমেন্ট ইলেকশন সুষ্ঠুভাবে হয়েছে এবং মানুষ তো তাদের ভোট দিয়েছে সতঃস্ফূর্তভাবে। এটা নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তোলার চেষ্টা করেছে কিন্তু বাস্তবতাটা কী? বাংলাদেশের মানুষ তার ভোটের অধিকার নিয়ে সব সময় সচেতন। কেউ ভোট চুরি করলে তাদের ক্ষমতায় থাকতে দেয় না।
‘৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়া ভোট চুরি করেছিল। সে কিন্তু দেড় মাসও টিকতে পারেনি। ৯৬ সালের ৩০ মার্চ পদত্যাগে বাধ্য হয় জনগণের রুদ্ররোষে, আন্দোলনে। আবার ২০০৬ সালে এক কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার দিয়ে ভোটার লিস্ট তৈরি করেছিল। সেই ভোটার লিস্ট নিয়ে ইলেকশন করে ঘোষণা দিলো, তখন ইমার্জেন্সি ডিক্লিয়ার হলো। সেই ইলেকশন বাতিল হয়ে গেল। কাজেই আমাদের দেশের মানুষ কিন্তু ভোট সম্পর্কে এখন যথেষ্ট সচেতন,’ বলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি।
তিনি আরও বলেন, ‘একটা ইলেকশন অবাধ, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু হবে—এটা তো আমাদেরই দাবি ছিল এবং আন্দোলন করে আমরাই সেটা প্রতিষ্ঠিত করেছি। আজকে এখন তারা স্যাংশন দিচ্ছে, আরও স্যাংশন দেবে—দিতে পারে, এটা তাদের ইচ্ছা কিন্তু আমার দেশের মানুষের যে অধিকার; তাদের ভোটের অধিকার, তাদের ভাতের অধিকার, তাদের বেঁচে থাকার অধিকার, তাদের শিক্ষা-দীক্ষা সব মৌলিক অধিকারগুলো কিন্তু আমরা নিশ্চিত করেছি। ২০০৯ সাল থেকে ২০২৩ সাল, বাংলাদেশ কিন্তু বদলে যাওয়া বাংলাদেশ।
‘এখন আর বাংলাদেশে দুর্ভিক্ষ নেই। এখন মানুষের সে রকম হাহাকার নেই। এমনকি আমাদের যে বেকারত্ব, সেটা কমিয়ে এখন মাত্র তিন শতাংশ। সেটাও মানুষ ইচ্ছা করলে কাজ করে খেতে পারে। আজকের বাংলাদেশ ডিজিটাল বাংলাদেশ। ওয়াই-ফাই কানেকশন সারা বাংলাদেশে, প্রত্যেক ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ। রাস্তা-ঘাটের অভূতপূর্ব উন্নয়ন আমরা করে দিয়েছি, মানুষ যাতে কাজ করে খেতে পারে। আমরা কারিগরি শিক্ষা, ভোকেশনার ট্রেইনিংয়ের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছি। এভাবে দেশের জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। সেখানে এভাবে স্যাংশন দিয়ে মানুষকে ভয়-ভীতি দেওয়া; ঠিক আছে আমেরিকা যদি স্যাংশন দেয়, আমেরিকায় আসতে পারবে না, আসবে না। না আসলে কী আসে-যাবে! আমার দেশে এখন যথেষ্ট কর্মসংস্থানের সুযোগ আছে। কাজেই আমরা দেখি, কী করে তারা। কেন তাদের এই স্যাংশন জানি না,’ যোগ করেন তিনি।
তথ্যসূত্র: বিবিসি বাংলা,কালেরকন্ঠ, দ্য ডেইলি স্টার