ভারতীয় নৌবাহিনীর অভিযানে এমভি আবদুল্লাহ মুক্ত হয়েছে বলে যে অসত্য খবর ।। ছিনতাই হওয়া এমভি আব্দুল্লাহর সর্বশেষ
সোমালিয়ায় জলদস্যুদের হাতে জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহকে মুক্ত করার কোনো প্রক্রিয়া এখনো শুরু হয়নি বলে জানিয়েছে জাহাজটির মালিক প্রতিষ্ঠান কেএসআরএম।
ভারতীয় নৌবাহিনীর অভিযানে এমভি আবদুল্লাহ মুক্ত হয়েছে বলে যে অসত্য খবর প্রচার করা হচ্ছে, তাতে জিম্মি ২৩ নাবিকের জীবন আরও শঙ্কায় পড়ছে বলে মনে করছে জাহাজটির মালিক প্রতিষ্ঠান কেএসআরএম।
প্রতিষ্ঠানটির মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম শনিবার রাতে বলেন, ‘আটক জাহাজ মুক্ত করতে নানাভাবে চেষ্টা চলছে। তবে নানা জটিলতায় এখনো সেই প্রক্রিয়া শুরু করা যায়নি। এমভি আবদুল্লাহকে ভারতীয় নৌবাহিনীর সহায়তায় মুক্ত করা গেছে বলে প্রকাশিত সংবাদটি গুজব।’
এদিকে বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনও জানিয়েছে, ভারতীয় নৌবাহিনীর অভিযানে এমভি আবদুল্লাহ মুক্ত হয়েছে বলে ভারতীয় কিছু গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এখন ঘুরে বেড়াচ্ছে। এই খবর ভিত্তিহীন।
জিম্মি নাবিকদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা নির্ভরশীল একটি সূত্র জানায়, শনিবার মধ্যরাতে নাবিকরা জানিয়েছেন, মিডিয়ায় জিম্মি জাহাজ মুক্তির খবর দেখে তারা বেশ দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।
নাবিকরা জানিয়েছেন, শুক্রবার সোমালিয়ার উপকূলের দিকে অগ্রসর হওয়ার সময় ইউরোপ আর ভারতীয় দুই যুদ্ধজাহাজ সোমালিয়ার জলদস্যুদের থামতে বলে। ওদের ডেকে আনা হয়েছে এমন ধারণা থেকে জলদস্যুরা ক্ষিপ্ত হয়ে এমভি আবদুল্লাহর নাবিকদের ব্রিজে জড়ো করে তাদের দিকে বন্দুক তাক করে রাখে বেশ কিছু সময়। এ সময় জলদস্যুরা অস্ত্রের মুখে এমভি আবদুল্লাহর ক্যাপ্টেনকে ভারতীয় নৌবাহিনীর জাহাজকে দূরে সরে যাওয়ার বেতার বার্তা পাঠাতে বাধ্য করে। ফলে নৌবাহিনীর জাহাজ দুটোও পিছু হটে। এর পরই এমভি আবদুল্লাহকে আরও উত্তর দিকে নিয়ে যায় জলদস্যুরা। যাচাই-বাছাই ছাড়া কোনো ধরনের খবর প্রকাশ না করার জন্য নাবিকদের পক্ষ থেকে বারবার অনুরোধ জানানো হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত ৪ মার্চ বাংলাদেশের এসআর শিপিংয়ের ১৩ মিটার গভীরতার জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ মোজাম্বিকের মাপুতু বন্দর থেকে কয়লা নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতের উদ্দেশে রওনা দেয়। এর পর গত মঙ্গলবার দুপুর দেড়টার দিকে খবর আসে, ভারত মহাসাগরে জাহাজটি ছিনতাই হয়েছে।
জলদস্যুদের উৎপাতের কারণে ঝুঁকিপূর্ণ ভারত মহাসাগরে অস্ত্রধারী নিরাপত্তারক্ষীসহ জাহাজ চলাচলের নিয়ম রয়েছে। এ ছাড়া জাহাজের চারপাশে তারকাঁটার বেষ্টনী, হাইস্পিড ওয়াটারগানসহ বিভিন্ন নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়। কিন্তু দস্যুদের কবলে পড়া এমভি আবদুল্লাহতে এসব ব্যবস্থার কোনোটিই নেওয়া হয়নি।
বিশ্লেষকরা বলছেন, কয়লাবোঝাই জাহাজটির পানির ওপরের অংশের উচ্চতা কম হওয়ায় খুব সহজেই এটিতে চড়ে বসে দস্যুরা। যার ফলে অনেকটা বিনা বাধায় জাহাজের নিয়ন্ত্রণ নেয় তারা।
বিশেষ কমান্ডো অভিযান চালিয়ে সোমালি জলদস্যুদের ছিনতাই করা মাল্টার একটি মালবাহী জাহাজ জব্দ করেছে ভারতীয় নৌ বাহিনী। এ সময় ১৭ জন নাবিককে উদ্ধার করা হয়েছে।
শনিবার ভারতীয় নৌবাহিনীর একজন মুখপাত্র এসব কথা জানান।
গত তিন মাস ধরে ছিনতাই করা এই জাহাজটি নিয়ে ভারত মহাসাগরে ঘুরে বেড়াতো সোমালিয়ার জলদস্যুরা।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স-এ (সাবেক টুইটার) নিজেদের পেইজে এ নিয়ে একটি পোস্ট দিয়েছে ভারতীয় নৌবাহিনী।
পোস্টে বলা হয়েছে, মাল্টার পতাকাবাহী বাল্ক কার্গো জাহাজ রুয়েন নিয়ে জাহাজে থাকা ৩৫ জলদস্যুর সবাই আত্মসমর্পণ করেছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের নৌবাহিনী ধারণা করছে, রুয়েন থেকেই বাংলাদেশি মালিকানাধীন জাহাজ আব্দুল্লাহতে হামলা চালিয়েছিল জলদস্যুরা। মহাসাগরে এই জাহাজটিকে ঘাঁটি হিসাবে ব্যবহার করে তারা অন্যান্য জাহাজে হামলা চালাতো।
ভারতের নৌ বাহিনী জানিয়েছে, রুয়েন জাহাজটিতে অভিযান চালানোর সময় ভারতীয় যুদ্ধজাহাজ আইএনএস কলকাতা লক্ষ্য করে গুলি করে জলদস্যুরা। তবে অভিযান শেষে জাহাজে থাকা সব নাবিককে অক্ষত উদ্ধার করা হয়েছে।
জাহাজটিতে অবৈধ অস্ত্র, গোলাবারুদ এবং মাদক আছে কিনা তাও পরীক্ষা করা হয়েছে।
রুয়েন নামের এই জাহাজটি গত বছরের ১৪ ডিসেম্বর ছিনতাই করা হয়। শুক্রবার জাহাজটিকে আটকের কথা জানায় নৌবাহিনী।
এর আগে নজরদারি করার জন্য একটি হেলিকপ্টার পাঠানো হয়েছিল যুদ্ধজাহাজ থেকে। জলদস্যুরা সেটি লক্ষ্য করে গুলি করে।
ওই অভিযানের বেশি কিছু ছবি ও ভিডিও নিজেদের এক্স প্ল্যাটফর্মে প্রকাশ করেছে ভারতীয় নৌবাহিনী।
এই সপ্তাহের শুরুতে সোমালিয়ার উপকূলে বাংলাদেশের পতাকাবাহী একটি কার্গো জাহাজ দখলে এই জাহাজটিরই সম্ভাব্য ব্যবহারের কথা জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নৌবাহিনী।
এর আগে এডেন উপসাগর এবং ভারত মহাসাগরে জলদস্যুদের নিরস্ত করতে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন বাহিনী অভিযান শুরু করে। ফলে কমে যায় জাহাজ ছিনতাইয়ের ঘটনা।
২০১৭ সালের পর রুয়েনই প্রথম জাহাজ কোনো জাহাজ যেটি সোমালি জলদস্যুরা সফলভাবে ছিনতাই করতে পেরেছিল।