মানব চারিত্রিক মধুময়তা অমৃততুল্য
রুহুল কুদ্দুস টিটো
আল্লাহতায়ালা উত্তম ও সুন্দরতম চরিত্রের মাধ্যমে তাঁর প্রিয় হাবিবের প্রশংসা করেছেন। আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই আপনি মহান চরিত্রে অধিষ্ঠিত।- ’ সূরা আল-কালাম
মানুষ সামাজিক জীব, আর মানুষের সামাজিক পরিচয়টা গড়ে ওঠে চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে। চরিত্র মানুষকে অনাবিল সুখের পথে পরিচালনা করে। সৎ চরিত্র ঈমানকে দৃঢ় করে আর অসৎ চরিত্র ঈমানকে ধ্বংস করে। মানব চরিত্র ভালো এবং গঠনমূলক না হলে অন্যসব সহায় সম্পদ অর্থহীন হয়ে পড়ে। মানব চরিত্রই উন্নত ও সমৃদ্ধ জাতির প্রধান জীবনী শক্তি।
মানব জীবনে অর্থবিত্ত জৌলুসকে যতোটা না বৃদ্ধি করে; তার থেকে হাজারগুণ বৃদ্ধি করে জীবনের যন্ত্রণা আর হাহাকার। মানব চারিত্রিক মধুময়তা অমৃততুল্য।
সৎ চরিত্র ঈমানকে পরিপূর্ণ আর অসৎ চরিত্র ঈমানকে ধ্বংস করে। মুমিন কখনও অসৎ চরিত্রের অধিকারী হতে পারে না। অর্থাৎ অসৎ চরিত্রের অধিকারী পূর্ণ ঈমানদার হতে পারে না।
‘হযরত ওয়াহাব (রহ.) বলেন, মানবজীবনে সবচেয়ে বড় বিপদ হলো অসৎ চরিত্র’। ইংরেজিতে একটি প্রবাদ আছে- Money is lost Nothing is lost, Health is lost Something is lost, Charecter is lost All is lost অর্থাৎ- টাকা হারিয়েছো কিছুই হারিয়ে যায়নি, স্বাস্থ হারিয়েছো তো সামান্য কিছু হারিয়েছো,চরিত্র হারিয়েছো তো সব কিছুই হারিয়েছো।
ইসলাম এমন একটি পরিপূর্ণ জীবন পদ্ধতি যা সব দিক থেকে সার্বিকভাবে মুসলমানের ব্যক্তিগত জীবনকে গঠন করার ব্যাপারে গুরুত্ব প্রদান করেছে। আর সেজন্যই ইসলাম চরিত্র তথা উত্তম চরিত্রকে ইমানের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান বলে উল্লেখ করেছে।
চরিত্রবান ব্যক্তি সদা আনন্দে থাকেন। দুশ্চিন্তা তাকে গ্রাস করতে পারে না। কারণ তার মধ্যে অবৈধ সম্পদ উপার্জন করে উচ্চভিলাষের মন মানুষিকতা নাই। সৎ উপার্জনের মাধ্যমে তিনি যা আয় করেন তাতেই সন্তুষ্ট থাকেন ।
হজরত উসামা ইবনে শারিক (রা.) একটি হাদিস বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, একবার হজরত রাসূলুল্লাহকে (সা.) জিজ্ঞাসা করা হলো, হে আল্লাহর রাসূল! মানুষকে আল্লাহ প্রদত্ত নেয়ামতসূহের মধ্যে সর্বোত্তম কোনটি? হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, উত্তম চরিত্র। -মুসনাদে আবু দাউদ: ১৩২৯
আল্লাহর দরবারে যখন বান্দার আমলের চূড়ান্ত হিসাব হবে, তখন নেকির পাল্লায় সৎ চরিত্রকে স্বতন্ত্র আমল হিসেবে ওজন করা হবে এবং সব থেকে ওজনদার আমল হিসেবে সেদিন সৎ চরিত্র মুমিনের মুক্তির কারণ হবে।
সৎ চরিত্র ঈমানকে পরিপূর্ণ আর অসৎ চরিত্র ঈমানকে ধ্বংস করে।মুমিন কখনও অসৎ চরিত্রের অধিকারী হতে পারে না। অর্থাৎ অসৎ চরিত্রের অধিকারী পূর্ণ ঈমানদার হতে পারে না। হজরত আনাস ইবনে মালেক (রা.) একটি হাদিস বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, অসৎ চরিত্র ঈমানকে ওইভাবে নষ্ট করে যেভাবে মাকাল ফল খাদ্যদ্রব্য নষ্ট করে। -শোয়াবুল ঈমান: ৭৬৭২
তাওবাহ হলো গুনাহ বা পাপকাজ থেকে ফিরে আসা।
তাওবা জ্ঞানী মানুষের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বৈশিষ্ট্
মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন,“ ভালো ও মন্দ সমান হতে পারে না। মন্দ প্রতিহত করো ভালো দ্বারা, তোমার সঙ্গে শত্রুতা আছে সে হয়ে যাবে অন্তরঙ্গ বন্ধুর মতো (সুরা হা-মীম সেজদা, আয়াত নং- ৩৪)।
হযরত উসামা ইবনে শারিক ( রা.) একটি হাদিসে বর্ণনা করেছেন, তিনি জিজ্ঞাসা করেন হে আল্লাহর রাসূল ( সা.), মানুষকে আল্লাহ প্রদত্ত নেয়ামত সমূহের মধ্যে সর্বোত্তম কোনটি? হযরত মুহম্মদ ( সা.) বলেন, উত্তম চরিত্র (মুসনাদে আবুদাউদঃ ১৩২৯)।
আদি পিতা হজরত আদম (আ.) ও আদি মাতা হজরত হাওয়া (আ.) যে ইস্তিগফার দ্বারা তাওবাহ করেছিলেন, তা হলো: ‘হে আমাদের রব! আমরা জুলুম করেছি আমাদের নফছের প্রতি, আপনি যদি ক্ষমা ও দয়া না করেন, আমরা অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাব।’ (৭:২৩)।
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ তওবাকারীদের ভালোবাসেন এবং পবিত্রতা অর্জনকারীদের পছন্দ করেন।’ (২:২২২)। হাদিস শরিফে রয়েছে: ‘গুনাহ থেকে তওবাকারী বেগুনাহ ব্যক্তির মতো।’ (বুখারি)। হাদিসে আরও আছে: ‘সব আদম সন্তান পাপী, আর পাপীদের মধ্যে উত্তম হলো তওবাকারীগণ।’ (মুসলিম)।
প্রশংসনীয় ও উত্তম উৎকৃষ্ট স্বভাব, যা সৃষ্টির সেরা মানুষকে সর্বনিম্ন হীনতম অধঃপতিত স্থান হতে সর্বোচ্চ সর্বোৎকৃষ্ট উন্নত ও উচ্চতম স্থানে অধিষ্ঠিত করে। তাওবাহ (গুনাহের জন্য অনুতাপ করা, ক্ষমা চাওয়া) প্রাথমিকভাবে কলব দ্বারা সম্পাদিত হয়। পর্যায়ক্রমে তা বাহ্যিকভাবে প্রকাশ পায়। ‘ইস্তিগফার’ বা ক্ষমা প্রার্থনা তাওবাহর একটি পর্যায় এবং একটি অন্যটির পরিপূরক।
সময়ের সমষ্টিই হচ্ছে হায়াত বা আয়ু। সুন্দর ও সাবলীল ভাবে জীবনকে পরিচালনা করতে হলে সততার বিকল্প নাই। সৎ জীবন-যাপনে বাহ্যিক দিক থেকে ঐশ্বর্য মন্ডিত এতটা না হলেও হৃদয়ের দিক থেকে প্রশান্তি অবধারিত। ন্যায় পরায়ণ মানুষরা হন ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন এবং সাহসী। অসৎ চরিত্র মানুষের মর্যাদাকে খেয়ে ফেলে। তারা হন ভীত! হৃদয়ে প্রশান্তির বদলে না পাওয়ার বেদনা অনলের ন্যায় সব সময় জ্বলতে থাকে। অবৈধ পন্থায় আহরণ করা সম্পদ পুরোপুরি ভোগ করা যায় না! সেই সম্পদ এক সময় অভিশাপ হিসেবে দেখা দেয়! যতই শিক্ষিত এবং ধন সম্পত্তির মালিক হোন না কেন যদি সৎ চরিত্রবান না হন তাহলে কাজের ক্ষেত্রে ফলাফল শূন্য।