রুহুল কুদ্দুস টিটো
মুমিন বলা হয়, আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে রাসুল (সা.) যে দ্বিন নিয়ে এসেছেন তা পূর্ণাঙ্গ বিশ্বাস কবুলকারী এবং পালনাকারী কে। আর মুত্তাকি বলা হয় যে ব্যক্তি সকল কাজে আল্লাহকে ভয় করে। খাঁটি মুমিন হওয়ার জন্য মুত্তাকি হওয়া শর্ত, তদ্রূপ মুত্তাকি হওয়ার জন্যও মুমিন হওয়া শর্ত।সকল প্রকার হারাম থেকে নিজেকে রক্ষা করে কুরআন সুন্নাহ মোতাবেক জীবন পরিচালনা করাই তাকওয়া ।
মুত্তাকী (আরবি: مُتَّقِينَ বা তক্বী (আরবি: تقي) শব্দের অর্থ ইসলাম ধর্ম অনুসারে ধার্মিক, আল্লাহ ভীরু। তাকওয়ার গুণে গুণান্বিত ব্যক্তিকে মুত্তাকী বলা হয়। অর্থাৎ যাদের অন্তরে আল্লাহ তায়ালার ভয় আছে এবং যারা আল্লাহর আদেশ নিষেধ পালন করেন তারাই মুত্তাকী।
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি নিজেকে শিরক, কবিরা গুনাহ এবং অশ্লীল কথা ও কাজ থেকে মুক্ত রাখে তাকে মুত্তাকী বলা হয়।
মুত্তাকী ব্যক্তি সততা, আমানতদারি, সহনশীলতা, কৃতজ্ঞতা, ন্যায় ও ইসলামের গুণে গুণান্বিত হয়ে থাকে।
কুরআন হলো মানুষের জন্য হিদায়াত বা পথপ্রদর্শক। কিন্তু সবাই এই কুরআন থেকে হিদায়াত পাবে না। হিদায়াত পাবেন তারাই যারা তাকওয়া অবলম্বনকারী, তথা মুত্তাকী, ‘হুদাল্লিল মুত্তাকিন অর্থাৎ এই কুরআন হলো মুত্তাকীদের জন্য হিদায়েত।’ আর মুত্তাকী হলো তারা ‘যারা অদৃশ্যে ঈমান আনে, নামাজ কায়েম করে এবং তাদের যে জীবনোপকরণ দান করেছি তা থেকে ব্যয় করে, আর তোমার প্রতি যে কিতাব নাজিল করা হয়েছে এবং তোমার আগে যা নাজিল করা হয়েছিল, তার ওপর ঈমান আনে এবং আখেরাতের ওপর দৃঢ় বিশ্বাস রাখে, তারাই তাদের প্রতিপালকের নির্দেশিত পথে রয়েছে এবং তারাই সফলকাম। (সূরা বাকারাঃ ৩-৫)।
উপরিউক্ত আয়াত গুলোতে মুত্তাকীদের পাঁচটি মৌলিক গুণের কথা বলা হয়েছেঃ
১। অদৃশ্য, দৃষ্টির অন্তরালের বস্তু, যা ইন্দ্রিয়ানুভূতির অতীত, যেমন আল্লাহ, ফেরেশতা, আখেরাত, জান্নাত, জাহান্নাম ইত্যাদি ঈমান আনা বা বিশ্বাস স্থাপন করা।
২। যথাযথ ভাবে যথা নিয়মে, যথা সময়ে সব শর্ত পালন করে একাগ্রতা ও নিষ্ঠার সাথে নামাজ সম্পাদন করা।
৩। আর্থিক ত্যাগ স্বীকার করে মানব কল্যাণে আল্লাহতায়ালার পথে ব্যয় করার মানসিকতাসম্পন্ন হওয়া।
৪। আল্লাহ তায়ালার দিকনির্দেশনা সংবলিত সব আসমানি কিতাবে বিশ্বাস স্থাপন করা এবং একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান হিসেবে আল-কুরআনুল কারিমকে স্বীকার করা ও সে অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করা।
৫। মুত্তাকির পঞ্চম গুণ হচ্ছে পৃথিবীর জীবনের কর্মের চিরস্থায়ী ফলাফল পাওয়ার জন্য আখিরাতের জীবনের ওপর সুদৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন করা। স্বামীর আনুগত্য ও খেদমত করা স্ত্রীর উপর ওয়াজিব।
আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ পুরুষরা নারীদের কর্তা, কারণ আল্লাহ তাদের এককে অপরের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন এবং এজন্যে যে, পুরুষ তাদের ধন-সম্পদ ব্যয় করে। কাজেই পূণ্যশীলা স্ত্রীরা অনুগতা। (সূরা নিসাঃ ৩৪)
মুসনাদে আহমাদ বর্ণিত হাদিসে আছে, যে মহিলা যথারীতি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করে, রমজান মাসের রোজা রাখে, নিজের সতীত্ব রক্ষা করে চলে এবং স্বামীর পূর্ণ আনুগত্য করে, তার ইচ্ছা, সে জান্নাতের যে কোনো দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ ব্যতীত যদি অন্য কাউকে আমি সিজদা করার নির্দেশ দিতাম, তাহলে স্ত্রীকে তার স্বামীকে সিজদা করার অনুমতি দিতাম। (তিরমিযীঃ ১১৫৯) মোট কথাঃ ইসলাম পুরুষকে নারীর নেতা বানিয়েছে। নারীর উপর কর্তব্য হচ্ছে, আল্লাহ তায়ালা তাকে তার স্বামীর যা আনুগত্য করার নির্দেশ দিয়েছেন তার আনুগত্য করা। অর্থাৎ স্বামী বেনামাজি এবং বদমেজাজি হলেও তার আনুগত্য করা ওয়াজিব।
“আর যে স্বীয় রবের সামনে দাঁড়ানোকে ভয় করে এবং কুপ্রবৃত্তি থেকে নিজকে বিরত রাখে, নিশ্চয় জান্নাত হবে তার আবাসস্থল।”
— সূরা নাযিআত ৭৯ : ৪০-৪১
গুনাহের পরিস্থিতি বিভিন্ন রকম হতে পারে। যেমন কারো প্রতি ক্রোধ জাগ্রত হয়েছে, এ অবস্থায় আল্লাহর ভয়ে সীমালঙ্ঘন থেকে বিরত থাকার মাধ্যমে মানুষ আল্লাহর কাছে মুত্তাকী হিসাবে গণ্য হয়। তাবেয়ী ইমাম মুজাহিদ উপরের আয়াতের ‘শয়তানের পক্ষ হতে কুমন্ত্রণাকে’ ‘ক্রোধ’ শব্দের দ্বারা ব্যাখ্যা করেছেন। অন্যান্য গুনাহের পরিস্থিতিতেও আল্লাহর ভয়ে নিজকে নিয়ন্ত্রণ করার দ্বারা ‘তাকওয়ার’ পরিচয় পাওয়া যায়।
মুত্তাকীদের ৫ টি বৈশিষ্ট্যঃ
১. সবসময় মনের ভেতর আল্লাহ তায়ালার ভয় রাখেন।
মুত্তাকী হলেন আল্লাহ পাকের ঐসকল বান্দা, যাদের অন্তরে আল্লাহ পাকের ভয় আছে এবং যারা গোনাহ থেকে বেঁচে থাকেন। আল্লাহকে স্মরণ করার এক পর্যায় হল, গুনাহের পরিস্থিতি তৈরি হলে আল্লাহকে স্মরণ করা এবং গুনাহে লিপ্ত হওয়া থেকে বিরত থাকা। কুরআন মাজীদে আল্লাহ তাআলা বলেন-
وَأَمَّا مَنْ خَافَ مَقَامَ رَبِّهِ وَنَهَى النَّفْسَ عَنِ الْهَوَى فَإِنَّ الْجَنَّةَ هِيَ الْمَأْوَى
‘পক্ষান্তরে যে স্বীয় প্রতিপালকের সম্মুখে উপস্থিত হওয়ার ভয় করে এবং প্রবৃত্তি থেকে নিজেকে বিরত রাখে, জান্নাতই হবে তার আবাস।’-সূরা নাযিআত ৭৯ : ৪০-৪১
২. কু-প্রবৃত্তি থেকে নিজেকে বিরত রাখেন।
৩. সবসময় সৎকর্ম করা ও অসৎকর্ম থেকে বিরত রাখার যথাসাধ্য চেষ্টা করেন এবং অন্যকেও এ ব্যাপারে করার ও বিরত রাখার যথাসাধ্য চেষ্টা করেন।
৪. কোন মন্দ কাজে জরিয়ে পরলে সাথে সাথে আল্লাহ তায়ালার কাছে আনুশোচনাগ্রস্থ হন।
যখন কোনো বান্দা আল্লাহর দিকে ফিরতে শুরু করে তখন আল্লাহ কত খুশি হন হযরত রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
لله أشد فرحا بتوبة عبده حين يتوب إليه من أحدكم كان على راحلته بأرض فلاة، فانفلتت منه، وعليها طعامه وشرابه، فأيس منها، فأتى شجرة فاضطجع في ظلها قد أيس من راحلته، فبينا هو كذلك إذا هو بها قائمة عنده، فأخذ بخطامها ثم قال من شدة الفرح : اللهم أنت عبدي وأنا ربك أخطأ من شدة الفرح
অর্থাৎ কোনো ব্যক্তি কোনো মরুভূমিতে সফর করছে। যে উটে সফর করছে তাতেই তার পাথেয় ও সামানা। কোথাও হয়ত যাত্রা বিরতির জন্য একটু নেমেছে। এদিকে সুযোগ পেয়ে উটটি পালিয়ে গেল। এখন এই ধূ ধূ মরুভূমিতে মৃত্যুর প্রহর গোনা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। এই প্রান্তর পায়ে হেঁটে পাড়ি দেওয়া সম্ভব নয়, আর পানি ও পাথেয় ছাড়া বেঁচে থাকাও সম্ভব নয়। অতএব মৃত্যুর জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত হয়ে এক গাছের নিচে এসে শুয়ে পড়েছে। কিছুক্ষণ পর চোখ খুলে দেখে, তার সেই উট সব পাথেয়সহ তার সামনে উপস্থিত। আনন্দের আতিশয্যে ভুলে বলে ফেলেছে اللهم أنا عبدي وأنت ربك (হে আল্লাহ! আমি তোমার বান্দা,তুমি আমার রব) রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, এ বান্দা ঐ মুহূর্তে তার উট ফিরে পেয়ে যে পরিমাণ আনন্দিত হয়, আল্লাহ পাক তার ফিরে আসা বান্দার প্রতি তারচেয়েও বেশি খুশি হন। – [সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৭৪৬]
৫. তারা জান্নাতে আল্লাহ তায়ালার সান্নিধ্য লাভের আশা রাখেন।
তাকওয়া কি
তাকওয়া (আরবি: تقوى) শব্দের অর্থ বিরত থাকা, বেঁচে থাকা, নিষ্কৃতি লাভ করা, ভয় করা, নিজেকে রক্ষা করা। ব্যবহারিক অর্থে দ্বীনদারি, ধার্মিকতা, পরহেজগারি, আল্লাহভীতি, খোদাভীতি, আত্মশুদ্ধি , আল্লাহ ও সত্যের প্রতি সচেতন এবং পরিজ্ঞাত হওয়া, “ধর্মপরায়ণতা, আল্লাহর ভয়” ইত্যাদি বোঝায়। ইসলামি পরিভাষায়, সর্বাবস্থায় আল্লাহ তাআলাকে ভয় করে হারাম থেকে বেঁচে থাকা এবং তাঁর হুকুম-আহকাম মেনে চলাই হল তাকওয়া।
অন্যকথায় সকল প্রকার হারাম থেকে নিজেকে রক্ষা করে কুরআন সুন্নাহ মোতাবেক জীবন পরিচালনা করাকে তাকওয়া বলা হয়। এটি প্রায়শই কুরআনে পাওয়া যায়। যারা তাকওয়া অনুশীলন করে — ইবনে আব্বাসের ভাষায়, “আল্লাহর সাথে শিরক পরিহার করে এবং তাঁর আনুগত্যে কাজ করে এমন বিশ্বাসী”- তাদের বলা হয় মুত্তাকি (আরবি: مُتَّقِينَ, আল-মুত্তাকিন, ধার্মিক) বা তাক্বী (আরবি: تقي)।
এরিক ওহল্যান্ডারের মতে, “তাকওয়া” শব্দটি কুরআনে ১০০ বারের বেশি ব্যবহৃত হয়েছে। [২] “অক্সফোর্ড ডিকশনারি অফ ইসলাম” অনুসারে, “তাকওয়া” শব্দটি এবং এর থেকে উৎপন্ন শব্দসমূহ কুরআনে “২৫০ বারের বেশি” উপস্থিত হয়েছে।[৩]
এটা সেই কিতাব যাতে কোন সন্দেহ নেই, (এটি) মুত্তাকিনদের (যারা তাকওয়া অবলম্বন করে অর্থাৎ আল্লাহকে মেনে চলে তাদের) জন্য হেদায়েত বা পথনির্দেশ।
— আল-বাকারা, ২:২
হে মু’মিনগণ বা বিশ্বাসীগণ! আল্লাহকে তাকওয়া করো বা মেনে চলো যেমনভাবে তাঁকে তাকওয়া করা বা মেনে চলা উচিত। আর তোমরা (পরিপূর্ণ) মুসলিম বা আত্মসমর্পণকারী না হয়ে মৃত্যুবরণ করো না।
— সূরা আলে-ইমরান, ৩ঃ১০২
কাজেই তোমরা আল্লাহকে তাকওয়া কর বা মেনে চলো তোমাদের পরিপূর্ণ সাধ্য অনুযায়ী, তোমরা (তাঁর বাণী, আদেশ নিষেধ) শুন, তোমরা (তাঁর) আনুগত্য কর এবং (তাঁর পথে) ব্যয় কর, এটা তোমাদের নিজেদেরই জন্য কল্যাণকর। যারা অন্তরের সংকীর্ণতা (شُّحَّ, শুহহা) থেকে রক্ষা পেল, তারাই সফলকাম।— সূরা তাগাবুন ৬৪ঃ১৬
বল, ‘পার্থিব ভোগ অতি সামান্য এবং যে মুত্তাকী তার জন্য পরকালই উত্তম। আর তোমাদের প্রতি খেজুরের আঁটির ফাটলে সুতো বরাবর (সামান্য পরিমাণ)ও যুলুম করা হবে না।’— নিসা, ৪:৭৭
বস্তুতঃ ক্ষমা করাই তাকওয়ার অধিক নিকটবর্তী এবং তোমরা পারস্পরিক সহায়তা হতে বিমুখ হয়ো না, যা কিছু তোমরা করছ আল্লাহ নিশ্চয়ই তার সম্যক দ্রষ্টা।— বাকারা, ২ঃ২৩৭
কুরআনে তাকওয়ার ফজিলত
তাকওয়া দ্বারা, একজন ব্যক্তিকে কষ্ট থেকে রক্ষা করা হয়, সন্দেহ দূর করা হয়, এবং আল্লাহ তার জন্য সমস্ত দুঃখ থেকে মুক্তি এবং সমস্ত বিপদ থেকে মুক্তির পথ তৈরি করেন এবং তার জন্য এমন জায়গা থেকে রিজিকের ব্যবস্থা করেন যেখান থেকে তিনি আশাও করেন না। কুরআনে এসেছে,
‘যে আল্লাহকে তাকওয়া করে বা মেনে চলে, তিনি তার জন্য (সমস্যা থেকে) উত্তরণের (মুক্তির/নিষ্কৃতির) পথ তৈরি করে দেন। আর তিনি তাকে এমন উৎস থেকে রিজিক দেন; যা সে ধারণাও/কল্পনাও করতে পারে না। আর যে আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল বা ভরসা করে; আল্লাহ তার জন্য যথেষ্ট। .. যে আল্লাহকে তাকওয়া করে বা মেনে চলে, তিনি তার জন্য তার কাজকে সহজ করে দেন।…আর যে ব্যক্তি আল্লাহকে তাকওয়া করে বা মেনে চলে, আল্লাহ তার পাপসমূহ মুছে দেন এবং তার কর্মের প্রতিফল/প্রতিদান/পুরস্কারকে বেশি/বর্ধিত করে দেন।— (সুরা তালাক : আয়াত ২-৫)
সুতরাং যে দান করে এবং তাকওয়া অবলম্বন করে (আল্লাহর তথা ইসলামের আদেশ নিষেধ মেনে চলে), আর উত্তমকে সত্যায়ন করে ও বিশ্বাস করে, আমি তার জন্য সহজ পথে চলা সহজ করে দেই। আর যে কৃপণতা করে ও বেপরওয়া হয় বা ইস্তিগনাহ করে এবং উত্তম বিষয়কে অসত্যায়ন ও অবিশ্বাস করে, আমি তাকে কষ্টের বিষয়ের জন্যে সহজ পথ দান করি।— সূরা লাইল, ৯২: ৫-৭
কুরআনে তাকওয়ার বিনিময়ে আল্লাহর দেওয়া যে ফজিলতগুলোর কথা এসেছে তার মধ্যে ইহকালীন ফজিলতগুলো হলঃ
- আল্লাহর হিদায়েত লাভ হওয়া [সূরা বাকারা: (১-২)]
- আল্লাহর রহমত লাভ [সূরা আরাফ: (১৫৬)]
- আল্লাহর মহব্বত লাভ [সূরা আলে ইমরান: (৭৬)]
- পার্থিব জগতে আল্লাহর সংঘ ও সাথীত্ব অর্জন [সূরা হাদীদ: (৪)], [সূরা মুজাদিলা: (৭)], [সূরা তওবা: (৪০)], [সূরা নাহাল: (১২৮)], [সূরা বাকারা: (১৯৪)]
- শুভ পরিণতি বা শেষ ফল লাভ [সূরা ত্বহা: (১৩২)], [সূরা সাদ: (৪৯)], [সূরা হুদ: (৪৯)]
- পার্থিব জগতে সুসংবাদ লাভ [সূরা ইউনুস: (৬৩-৬৪)]
- পার্থিব জগতে কাজ সহজ হওয়া [সূরা লাইল: (৫-৭)]
- কষ্টের জীবন থেকে মুক্তি পাওয়া এবং এমন জায়গা থেকে রিযক লাভ করা, যা কল্পনার ঊর্ধ্বে। [সূরা তালাক: (২-৩)]
- দুনিয়াবাসীর তাকওয়ার ফলে আসমান ও যমিনের বরকত উন্মুক্ত হওয়া [সূরা আরাফ: (৯৬)]
- আমল বিশুদ্ধ হওয়া ও গ্রহণযোগ্যতা লাভ করা এবং পাপ মোচন হওয়া। [সূরা আহযাব: (৭০-৭১)]
- দুনিয়া ও আখেরাতের কোন প্রতিদান নষ্ট না হওয়া [সূরা ইউসুফ: (৯০)]
- শয়তানের সব অনিষ্ট থেকে সুরক্ষা [সূরা আরাফ: (২০১)]
- কাফেরদের অনিষ্ট থেকে নিরাপত্তা লাভ [সূরা আলে ইমরান: (১২০)]
- মুসিবত ও দুশমনের মোকাবিলার মুহূর্তে আসমান থেকে সাহায্য অবতীর্ণ হওয়া [সূরা আলে ইমরান: (১২৩-১২৫)]
- মুসিবত ও সীমালঙ্ঘন থেকে নিরাপত্তা লাভ [সূরা মারইয়াম: (১৭-১৮)]
- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনে আদব প্রদর্শনে সক্ষম হওয়া [সূরা হুজুরাত: (৩)]
- আল্লাহর নিদর্শনাবলীর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করতে সক্ষম হওয়া। [সূরা হাজ্জ: (৩২)]
- ফুরকান (হক ও বাতিল এবং সত্য ও মিথ্যা পার্থক্য করার জ্ঞান) লাভ করা [সূরা হাদীদ: (২৮)]
- ইলম ও জ্ঞান অর্জন [সূরা বাকারা: (২৮২)]
- অন্তরের সংকীর্ণতা (شُّحَّ, শুহহা) থেকে মুক্ত হওয়া [তাগাবুন : ১৬]
- যাদের অন্তরে ব্যাধি রয়েছে তারা মুত্তাকী নারীদের ওপর লোভ করার সুযোগ ও সাহস পায় না [সূরা আহযাব: (৩২)]
- মুত্তাকীরা অসিয়ত ও ভাগ-বণ্টনে কারো ওপর যুলুম করে না [সূরা বাকারা: (১৮০)]
- মুত্তাকী পুরুষদের থেকে তালাক প্রাপ্ত নারীদের জরুরী খোর-পোষ ও বরণ-পোষণ লাভ [সূরা বাকারা : (২৪১)]
পরকালীন উপকারিতাগুলো হলো:
- আখেরাতে আল্লাহর নিকট সম্মান লাভ হবে। [সূরা হুজুরাত: (১৩)]
- আখিরাতে সফলতা ও কামিয়াবির চাবিকাঠি হবে। [সূরা হুজুরাত: (৫২)]
- কিয়ামতের দিন আল্লাহর শাস্তি থেকে নাজাত মিলবে। [সূরা মারইয়াম: (৭১-৭২)] [সূরা লাইল: (১৭)]
- আমল কবুল হবে। [সূরা মায়েদা: (২৭)]
- জান্নাতের মিরাস ও উত্তরাধিকার লাভ হবে। [সূরা মারইয়াম: (৬৩)]
- আখেরাতে জান্নাতে সুদৃঢ় প্রাসাদ থাকবে, যার উপরেও থাকবে প্রাসাদ, তার নিচ দিয়ে নদী প্রবাহিত।[সূরা যুমার: (২০)] [টীকা ১]
- কিয়ামতের দিন পুনরুত্থানের মুহূর্তে, হাশরের ময়দানে, চলার পথে ও বসার স্থানে কাফেরদের উপরে অবস্থান করবে। তারা জান্নাতের সুউচ্চ স্থানে সমাসীন হবে। [সূরা বাকারা: (২১২)]
- আখেরাতে জান্নাত লাভ হবে [সূরা আলে ইমরান: (১৩৩)] [সূরা মায়েদা: (৬৫)]
“যে ব্যক্তি আল্লাহর সামনে দণ্ডায়মান হওয়ার ভয় (خَافَ, খাফা) করবে ও কুপ্রবৃত্তি থেকে বেঁচে থাকবে, তার স্থান হবে জান্নাত।”— (সূরা আন-নাযিআত, আয়াত ৪০-৪১)
- আখেরাতে গুনাহের কাফফারা হবে। [সূরা মায়েদা: (৬৫)]
- আখেরাতে মনের চাহিদা পূরণ হবে ও চোখের শীতলতা লাভ হবে।[সূরা নাহাল: (৩১)]
- আখেরাতে ভয় ও পেরেশানি দূর হবে এবং কিয়ামতের দিন কোন অনিষ্ট মুত্তাকীকে স্পর্শ করতে পারবে না। [আল-জুমার : ৬০] [সূরা ইউনুস: (৬২-৬৩)]
- কিয়ামতের দিন অভিযাত্রী দল হিসেবে (বর যাত্রীর ন্যায়) উপস্থিত করা হবে। তারা বাহনে চড়ে আল্লাহর সামনে উপস্থিত হবে, এরাই সর্বোত্তম অভিযাত্রী। [সূরা মারইয়াম: (৮৫)][৪]
- আখেরাতে জান্নাত কাছে নিয়ে আসা হবে। [সূরা শুআরা: (৯০)] [সূরা ক্বাফ: (৩১)]
- আখেরাতে পাপী ও কাফেরদের বরাবর হবে না। [সূরা সাদ: (২৮)]
- সকল বন্ধুত্ব কিয়ামতের দিন শত্রুতায় পরিণত হবে, শুধু মুত্তাকীদের বন্ধুত্ব ব্যতীত। [সূরা যুখরুফ: (৬৭)]
- আখেরাতে নিরাপদ স্থান, জান্নাত ও ঝর্ণাধারা থাকবে। [সূরা দুখান: (৫১-৫৬)]
- আখেরাতে আল্লাহর নিকট তাদের তাকওয়া অনুপাতে বিভিন্ন আসন থাকবে। [সূরা কামার: (৫৪-৫৫)]
- আখেরাতে বিভিন্ন নহরে গমন করতে পারবে। যেমন পরিচ্ছন্ন পানির নহর, সুস্বাদু দুধের নহর যার স্বাদ কখনো নষ্ট হবে না এবং মজাদার শরাব, যা পানকারীদের জন্য হবে সুপেয়। [সূরা মুহাম্মদ: (১৫)] [টীকা ২]
- আখেরাতে তাকওয়ার ফলে মুত্তাকীরা জান্নাতের বৃক্ষসমূহের তলদেশ দিয়ে বিচরণ করবে ও তার ছায়া উপভোগ করবে। [সূরা মুরসালাত: (৪১-৪৩)]
- আখেরাতের মহাভীতির কারণে পেরেশান হবে না। তাদের সাথে ফেরেশতারা সাক্ষাত করবে সূরা ইউনুস: (৬২-৬৪) [সূরা আম্বিয়া: (১০৩)]
- আখেরাতে রয়েছে চমৎকার ঘর। [সূরা নাহাল: (৩০)]
- আখেরাতে তাদের নেকি ও প্রতিদান বহুগুন বর্ধিত করা হবে। [ সূরা হাদীদ: (২৮)]
হাদীস
আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে প্রশ্ন করা হলো, কোন কাজটি সবচেয়ে বেশি পরিমাণ মানুষকে জান্নাতে নিয়ে যাবে। তিনি বলেন, ‘আল্লাহভীতি (তাকওয়া) ও উত্তম চরিত্র।’ আবার তাকে প্রশ্ন করা হলো, কোন কাজটি সবচেয়ে বেশি পরিমাণ মানুষকে জাহান্নামে নিয়ে যাবে। তিনি বলেন, ‘মুখ ও লজ্জাস্থান।’
— তিরমিজি, হাদিস : ২০০৪
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিদায় হজ্জের ভাষণে বলেন, “জনমণ্ডলী! তোমাদের প্রভু একজন। তোমাদের পিতাও একজন। তোমরা সবাই আদম থেকে আর আদম মাটি থেকে সৃষ্টি। তোমাদের মাঝে যারা সর্বাধিক মুত্তাকি, খোদাভীরু তারাই আল্লাহর কাছে সর্বাধিক মর্যাদাবান। তাকওয়া ছাড়া কোনো অনারবের ওপর কোনো আরবের শ্রেষ্ঠত্ব নেই।/হে লোক সকল! নিশ্চয়ই তোমাদের পালনকর্তা এক এবং তোমাদের পিতা (আদম) এক। একজন আরব একজন অনারব থেকে উত্তম নয় এবং একজন অনারব একজন আরবের চেয়ে উত্তম নয়; একজন লাল মানুষ একজন কালো মানুষের চেয়ে উত্তম নয় এবং একজন কালো মানুষ লাল মানুষের চেয়ে উত্তম নয় – শুধুমাত্র তাকওয়া (তাকওয়া) ব্যতীত…”— (মুসনাদে আহমদ, ২২৩৯১, ২২৯৭৮; আল-সিলসিলাত আল-সহীহ, ২৭০০)।
ইবনু ’উমার (রাঃ) বলেন, ’বান্দা প্রকৃত তাকওয়ায় পৌঁছতে পারে না, যতক্ষণ পর্যন্ত সে, মনে যে বিষয় সন্দেহের সৃষ্টি করে, তা পরিত্যাগ না করে।— বুখারী ২
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, এক মুসলিম অপর মুসলিমের ভাই। সে তাকে জুলুম করবে না। তাকে লাঞ্ছিত ও তুচ্ছ মনে করবে না। তাকওয়া এখানে থাকে। এ বলে তিনি তার বুকের দিকে তিনবার ইশারা করলেন। কোন লোকের খারাপ হওয়ার জন্য এতটুকু যথেষ্ট যে, সে তার মুসলিম ভাইকে তুচ্ছ মনে করবে। প্রত্যেক মুসলিম একে অন্যের উপর হারাম, তার রক্ত, তার সম্পদ ও তার সম্মান হরণ করা।— (মুসলিম হাঃ ৩২-[২৫৬৪])
তথ্যসূত্র: পবিত্র কোরাআন, উইকিপিডিয়া