মুসলিমরাই এই পৃথিবীতে সবচেয়ে সুখী-সাইকোলজিস্ট ড. লরা ম্যারি এডিনগার-স্কন্স ।। যখন বিপদ-আপদ সবার নিত্যসঙ্গী ইসলামে রয়েছে এমন কিছু বিশ্বাস ও আমল যা মানসিক প্রশান্তি লাভে অত্যন্ত কার্যকর
সৃষ্টির সেরা জীব মানুষ আমরা এমন এক পৃথিবীতে ও এমন সময়ে বসবাস করছি, যখন বিপদ-আপদ সবার নিত্যসঙ্গী। কার কখন কোন বিপদ আসে কেউ জানে না। বলে-কয়েও আসে না দুর্বিপাক ও আকস্মিক আপদ। শত সতর্কতা সত্ত্বেও আক্রান্ত হয় অনেক নিরাপরাধ ও সাধারণ মানুষজন।বিপদ বা সঙ্কটে আক্রান্ত হলে— মানুষ স্বাভাবিকতই হতবিহ্বল হয়ে পড়ে। দিশেহারা হয়ে করণীয় ভুলে যায়। চিন্তা-ভাবনা ও কাজ-কর্ম বিক্ষিপ্ত হয়ে পড়ে।
মানুষকে পরীক্ষা করার জন্য আল্লাহ তাআলা কোরআনুল কারিমে ঘোষণা করেন, ‘নিশ্চয়ই আমি তোমাদেরকে কিছু ভয় ও ক্ষুধা দ্বারা এবং কিছু ধন-সম্পদ-প্রাণ ও ফল-ফসলের ক্ষতির মাধ্যমে পরীক্ষা করবো। আর আপনি ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দিন। যারা তাদের ওপর কোনো বিপদ-আপদ আসে; তখন তারা বলে, নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহর জন্য এবং নিশ্চিতভাবে তার দিকেই ফিরে যাব।’ (সুরা বাকারা: আয়াত ১৫৫-১৫৬)
মুমিন বিপদে পড়ার আগে থেকে সতর্ক থাকে। আল্লাহর কাছে আশ্রয় ও প্রার্থনা কামনা করে। আর বিপদে আক্রান্ত হলেও, আল্লাহর কাছে সাহায্য চায়। কারণ, তিনিই একমাত্র উদ্ধারকারী ও রক্ষা দানকারী। তিনি চাইলে মুহূর্তেই বিপদ দূর করে দিতে পারেন। কষ্ট থেকে মুক্তি দিতে পারেন। পেরেশানি ও যন্ত্রণার কুহেলিকা হটিয়ে দিতে পারেন।
ইসতেগফার করা
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,‘যে ব্যক্তি সব সময় ইসতেগফার করতে থাকে, আল্লাহ তাআলা তাকে সংকট (বিপদ-আপদ) থেকে মুক্তির পথ বের করে দেন। যাবতীয় দুঃশ্চিন্তা থেকে মুক্তি ও প্রশান্তি দান করেন আর তাকে তার ধারণাতীত জায়গা থেকে রিজিকের ব্যবস্থা করেন।’ (আবু দাউদ)
কোরআন-সুন্নাহ মোতাবেক আল্লাহর কাছে নিজের গোনাহ থেকে ক্ষমা প্রার্থনা করা। বেশি বেশি ‘রাব্বিগফিরলি (رَبِّىْ اغْفِرْلِىْ)’; ‘আসতাগফিরুল্লাহা ওয়া আতুবু ইলাইহি (اَسْتَغْفِرُ الله وَ اَتُوْبُ اِلَيْهِ)’ পড়া।
মানসিক অশান্তি ও অবসাদ মানব জীবনের একটি বড়ো সমস্যা। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে অনেক অমুসলিমও ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে আশ্রয় নিচ্ছে। কারণ ইসলাম হচ্ছে শান্তির ধর্ম ও শান্তির আলয়। ইসলামে রয়েছে এমন কিছু বিশ্বাস ও আমল যা মানসিক প্রশান্তি লাভে অত্যন্ত কার্যকর।
এমন পাঁচটি বিষয়
একত্ববাদে বিশ্বাস: যুক্তরাষ্ট্রের সাইকোলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের জার্নালে জার্মানির ম্যান হেইম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাইকোলজিস্ট ড. লরা ম্যারি এডিনগার-স্কন্স কর্তৃক একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। সেই গবেষণায় উঠে এসেছে যে, মুসলিমরাই এই পৃথিবীতে সবচেয়ে সুখী। কারণ মুসলিমরা একজন সৃষ্টিকর্তার ওপর পরিপূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস রেখে জীবন পরিচালনা করেন। মুসলিমরা তকদির বা ভাগ্যে বিশ্বাস করেন। ফলে অল্পতেই তারা সন্তুষ্টি ও পরিতৃপ্তি বোধ করেন।
মুসলিমদের মনে আল্লাহর ভয় থাকে বদ্ধমূল। ফলে তারা বহুবিধ পাপাচার থেকে বিরত থাকেন। আল্লাহর একত্ববাদ আর আল্লাহর ওপর দৃঢ় বিশ্বাস মুসলিমদেরকে প্রভাবিত করায় হতাশা ও উদ্বেগ তাদেরকে খুব বেশি গ্রাস করতে পারে না। গবেষণার বিশ্লেষণে দেখা যায়, অতি মাত্রায় একত্ববাদে বিশ্বাস বিষণ্ণতা, মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও আত্মহত্যার ঝুঁকি কমিয়ে দেয়। গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, ধর্ম ও সুখের সঙ্গে একটি ইতিবাচক সংযোগ আছে। (সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক, ১১ জুলাই ১৯)।
কোরআন অধ্যয়ন: কোরআন তেলাওয়াত। অধ্যয়নের মাধ্যমেও হৃদয়ে প্রশান্তি আসে। কোরআন মাজিদ সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আমি কোরআনে এমন বিষয় নাজিল করি যা সকল রোগের সুচিকিৎসা এবং মুমিনের জন্য রহমত।’ (সূরা বানি ইসরাঈল, আয়াত ৮২)।
ইতালির বিখ্যাত মনোবিজ্ঞানী ৩৮ বছর বয়স্ক রোকসানা ইলিনা নেগ্রা ইসলাম গ্রহণের পর তাঁর প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘আমি পবিত্র কোরআন অধ্যয়ন করেছি। যতই পড়েছি ততই আমি মুগ্ধ হয়েছি। এই মুগ্ধতা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। আমি মনোবিজ্ঞানের ছাত্র। আমি সবসময় প্রশান্তির জন্য, অসুস্থতা থেকে নিরাময়ের উপায় খুঁজে বের করার চেষ্টা ও গবেষণা করেছি। আলহামদুলিল্লাহ! আমি এ সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি—ইসলামেই রয়েছে সবকিছুর সঠিক সমাধান।’ (সূত্র: দৈনিক ইনকিলাব, ১৬ জানুয়ারি ২০১৭)
নামাজ আদায়: নামাজ আদায়ের ব্যাপারে রোকসানা ইলিনা নেগ্রা বলেন, ‘ইসলামের প্রধান ইবাদত নামাজ অনুশীলন দুনিয়াতে প্রশান্তি লাভের অন্যতম সেরা মাধ্যম।’ (প্রাগুক্ত)। নামাজ আদায়ের মাধ্যমে মানুষের অন্তরে প্রশান্তি আসে। নামাজ আদায়কারীরা মানসিক অশান্তি থেকে নিরাপদ থাকে। এ সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে ভীরুরূপে। যখন তাকে অনিষ্ট স্পর্শ করে, তখন সে হা-হুতাশ করে। আর যখন কল্যাণপ্রাপ্ত হয়, তখন কৃপণ হয়ে যায়। তবে তারা স্বতন্ত্র, যারা নামাজ আদায়কারী। যারা তাদের নামাজে সার্বক্ষণিক কায়েম থাকে।’ (সূরা মায়ারিজ, আয়াত ১৮-২৩)।
রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হতেন বেলাল (রা) কে বলতেন, ‘নামাজের ইকামত দাও, এর মাধ্যমে আমাকে প্রশান্তি দাও।’ আবু দাউদ, হা/৪৯৮৫। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন পেরেশান হতেন নামাজে দাঁড়িয়ে যেতেন। আবু দাউদ, হা/১৩১৯।
আল্লাহর স্মরণ: পরিপূর্ণ মানসিক প্রশান্তি লাভ ও সবরকম মানসিক উৎকণ্ঠা থেকে মুক্তির অন্যতম উপায় হলো আল্লাহ তায়ালাকে স্মরণ করা। আল্লাহ তায়ালাকে স্মরণের মাধ্যমে মানসিক প্রশান্তি এবং হৃদয়ের পরিতৃপ্তি অর্জিত হয়। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা ইমান আনে ও আল্লাহর স্মরণে তাদের অন্তর প্রশান্ত হয়। জেনে রেখ, আল্লাহর স্মরণেই শুধু হৃদয় প্রশান্ত হয়।’ (সুরা রাদ, আয়াত ২৮)
আল্লাহর ওপর তাওয়াককুল বা নির্ভরতা: একজন ইমানদার আল্লাহ তায়ালার ওপর এই বিশ্বাস রাখে যে, সর্ববিষয়ে আল্লাহ তায়ালা তার জন্য যথেষ্ট। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর ওপর নির্ভর করে তার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট।’(সূরা তালাক, আয়াত ৩) আল্লাহর ওপর নির্ভরশীলতা ও পরিপূর্ণভাবে বিশ্বাস স্থাপনে তার মনোবল বেড়ে যায়। ফলে সে অন্তরে খুঁজে পায় এক অনাবিল সুখ ও পরিতৃপ্তি।-তথ্য সূত্র: ইত্তেফাক