মেহেরপুরে আওয়ামী লীগ বনাম আওয়ামী লীগের ভোটযুদ্ধ ।। ভোট যুদ্ধে মেহেরপুর-২ আসনে চমক দেখাতে পারেন তৃণমূল বিএনপির সাবেক এমপি আব্দুল গণি
রুহুল কুদ্দুস টিটো
মেহেরপুর জেলার দুটি সংসদীয় আসনের ভোটের মাঠে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জেলায় ২টি আসন রয়েছে। এই আসনগুলোতে যারা আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন-মেহেরপুর-১ ফরহাদ হোসেন ,মেহেরপুর-২ (গাংনী) আসনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন ডাঃ আবু সালেহ মোঃ নাজমুল হক সাগর।
মেহেরপুর-১ আসনের প্রার্থীরা হলেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী ফরহাদ হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও দুইবারের সাবেক এমপি স্বতন্ত্র প্রার্থী প্রফেসর আব্দুল মান্নান, আওয়ামী লীগের জাতীয় পরিষদের সদস্য ও সাবেক এমপি জয়নাল আবেদীন, জাতীয় পার্টির আব্দুল হামিদ, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট প্রার্থী বাবুল জাম, জাকের পার্টির সাইদুল আলম, এনপিপির তরিকুল ইসলাম লিটন।
মেহেরপুর-২ আসনের প্রার্থীরা হলেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী আবু সালেহ মোহাম্মদ নাজমুল হক, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বর্তমান সংসদ সদস্য স্বতন্ত্র প্রার্থী সাহিদুজ্জামান, স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য মকবুল হোসেন, তৃনমূল বিএনপির আব্দুল গনি, এনপিপির গোলাম রসুল, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের শাহ জামাল, ওয়ার্কার্স পার্টির নুর আহমেদ বকুল, জাকের পার্টির সামসুদ্দোহা, জাতীয় পার্টির কিতাব আলী।
জাতীয় নির্বাচনে সরগরম মেহেরপুরের ভোটের মাঠ। পাড়া-মহল্লা থেকে শুরু করে সবখানেই চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ।দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন ঘিরে সবখানেই চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। আগ্রহের কমতি নেই ভোটারদের মাঝেও। তারা বলছেন, মানুষের পাশে থেকে সমস্যা সমাধানে যারা কাজ করবেন তাদেরই চান প্রতিনিধি হিসেবে।
সদর ও মুজিবনগর উপজেলা নিয়ে মেহেরপুর-১ আসন। এ পর্যন্ত এখানে উপ-নির্বাচন সহ আওয়ামীলীগ ও বিএনপি ৫ বার এবং একবার জাতীয় পার্টি জয়লাভ করেছে।
দলের সাবেক সংসদ সদস্যরা (এমপি) নৌকার প্রতীকের প্রার্থীকে হারাতে মাঠে এখন ব্যাপক তৎপর। মেহেরপুর-১ আসনে ফরহাদ হোসেনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে লড়াইয়ের কথা বলছেন দলের একাংশ। অনেকে মনে করছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে আব্দুল মান্নানের প্রতিদ্বন্দ্বিতাহতে পারে।
নেতারা প্রকাশ্যে মাঠে নেমেছেন সাবেক এমপি আব্দুল মান্নানের পক্ষে নির্বাচনী দলের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মিয়াজান আলী, জেলা পরিষদের আরেক সাবেক চেয়ারম্যান দলের সদর উপজেলা সভাপতি গোলাম রসুল, জেলা সহসভাপতি আব্দুল মান্নান (ছোট), মুজিবনগর উপজেলা সভাপতি উপজেলা চেয়ারম্যান জিয়াউদ্দিন বিশ্বাস, জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক পৌর মেয়র মাহফুজুর রহমান রিটনসহ অনেকেমহিলা আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক ও বর্তমান নেতারা প্রকাশ্যে মাঠে নেমেছেন।
ফরহাদ হোসেন বলেছেন ‘যারা দলের বিরুদ্ধে সব সময় ছিল, তারাই নৌকার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ভোটাররা ওই সব নেতাকে ভালো করেই চেনে। তাই ভোটে এর কোনো বিরূপ প্রভাব পড়বে না। কারণ তৃণমূল নেতারাসহ সব ইউপি চেয়ারম্যান ও দলের বেশিরভাগ নেতা নৌকার পক্ষে মাঠে নেমেছেন।’
অন্যদিকে, ফরহাদ হোসেনের পক্ষে সরব সদর এবং মুজিবনগর উপজেলার সব ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানরা, জেলায় দলের নতুন কমিটির সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্য এবং যুব মহিলা লীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের অনেক নেতাকর্মী।
তৃণমূলের সাধারণ মানুষও জয়নাল আবেদীনকে এমপি হিসেবে চাচ্ছে। জয়নাল আবেদীন বলেন, শেখ হাসিনার কর্মী হিসেবে জেলার উন্নয়নে কাজ করেছি। সরকারের উন্নয়ন ধরে রাখতে নৌকার পক্ষে ভোট চাচ্ছি। তিনি দাবি করেছেন নবম সংসদ নির্বাচনে এমপি হয়ে যে উন্নয়ন করেছেন তা আর কেউ করতে পারেনি। এজন্য মানুষ তাকে আবার এমপি হিসেবে দেখেতে চায়।
মেহেরপুরের দুটি আসনে অবস্থাদৃষ্টে দেখা যাচ্ছে মূল আওয়ামীলীগের ভোটগুলো ভাগ হয়ে ভোট যুদ্ধ হবে আওয়ামীলীগ বনাম আওয়ামীলীগ।
মেহরপুর ১ আসনে অন্য দলের প্রার্থীদের ভোট নিয়ে সাধারনের মধ্য তেমন কোন আলোচনা নেই বললে চলে।
মেহেরপুর-২ (গাংনী) আসনে নৌকার প্রার্থী চিকিৎসক আবু সালেহ মো. নাজমুল হক সাগর। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যাবিষয়ক সম্পাদক। এ আসনে তার মূল প্রতিদ্বন্দ্বী দলের সাবেক এমপি মকবুল হোসেন এবং বর্তমান এমপি সাইদুজ্জামান খোকন। ভোটের মাঠে রয়েছেন দলের উপজেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মখলেছুর রহমান মুকুল।
এ ছাড়া প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটব্যুরো সদস্য নুর আহমদ বকুল, জাতীয় পার্টির (জাপা) কেতাব আলী, জাকের পার্টির সামসুদ্দোহা, তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী বিএনপির সাবেক এমপি আব্দুল গণি, বাংলাদেশ কংগ্রেসের আল ফারুক, ন্যাশনাল এনপিপির গোলাম রসুল এবং সাংস্কৃতিক মুক্তি জোটের শাহজালাল হোসেন।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এমএ খালেক বলেন, আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মেহেরপুর ৭৪ গাংনী ২ আসনে নৌকার মনোনীত প্রার্থী ডা. এএসএম নাজমুল হক সাগর কে বিপুল ভোটে জয়লাভ করে আমরা জননেত্রী শেখ হাসিনা কে এমপি হিসাবে উপহার দিয়ে আবারও দেশ পরিচালনার সুযোগ করে দিবো।
আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া আওয়ামী লীগ নেতারা ভোটের মাঠে সক্রিয় থাকলেও বাকিদের তেমন পদচারণা নেই। ভোটারদের অনেকেরই ধারনা নৌকার প্রার্থীর সঙ্গে মকবুল হোসেনের ভোটযুদ্ধ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। দুই প্রার্থীকে নিয়েও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা দুইভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন।
মেহেরপুর-২ (গাংনী) আসনে বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল গণিকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেন তৃণমূল বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ।বিএনপির হয়ে তিনি তিনবার এ আসনটিতে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন আব্দুল গণি। ১৯৯১, ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারী নির্বাচন এবং ২০০১ সালে তিনি ধানের শীষ প্রতীকে জয়লাভ করে এলাকার বিএনপি নেতাকর্মীদের কাছে এক স্মরণীয় ব্যক্তিত্বে পরিণত হয়েছিলেন। অনেকে বলছেন ভোট যুদ্ধে এ আসনে চমক দেখাতে পারেন সাবেক এমপি আব্দুল গণি ।
এবার মেহেরপুর-১ আসনে ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৩০ হাজার ২৯২ জন। মেহেরপুর-২ আসনে ২ লাখ ৭৩ হাজার ৮১২ জন ভোটার রয়েছে ।
মেহেরপুরের তিনটি উপজেলাকে ভাগ করা হয়েছে দুটি সংসদীয় আসনে। এ জেলার মোট ভোটার সংখ্যা ৫ লাখের কাছাকাছি। আর প্রথম বারের মত ভোট দেবেন অন্তত সাড়ে ৩৮ হাজার মানুষ।