যুক্তরাষ্ট্র ভিসা নীতি ।। প্রধানমন্ত্রী ও নেতাদের প্রতিক্রিয়া
ছবি -মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের বিবৃতিতে ভিসা নিষেধাজ্ঞার কথা জানানো হয়।
যুক্তরাষ্ট্র ভিসা নীতি প্রয়োগের ঘোষণার পর শুক্রবার রাতেই ঢাকায় এ নিয়ে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানান পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।
তিনি বলেন, “নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়া ব্যক্তিদের সংখ্যা খুব একটা বড় নয় এমন ধারণাই যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন থেকে দেয়া হয়েছে”।তবে বিষয়টি নিয়ে মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে তারা কথা বলবেন বলেও জানান।
মি. আলম বলেন যে কয়েকজনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, তারা (আওয়ামী লীগ) আশা করছেন সেটা সঠিক তথ্য ও উপাত্ত বিশ্লেষণ করেই নেওয়া হয়েছে।
“আমাদের সরকারের কেউ এটার আওতায় পড়লে আমরা এটা জানব। এতে সরকারের কাজে সমস্যা তৈরি হলে, পরবর্তীতে মার্কিন প্রশাসনের সাথে আমরা কথা বলব। এর আগেও, অন্তত তিনজনের বিষয়ে আমাদের কাজ করতে হয়েছে। আমরা (সমাধানে) সাকসেসফুল হয়েছি”।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের সবশেষ পদক্ষেপের বিষয়ে যথারীতি কড়া প্রতিক্রিয়া এসেছে প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকেই।
জাতিসংঘ স্থায়ী মিশনে মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা বলেন, কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী যদি বাংলাদেশের বাইরে থেকে নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করে, সে ক্ষেত্রে এ দেশের জনগণ ওই ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে স্যাংশন (নিষেধাজ্ঞা) দেবে ।
তিনি বলেন, “কে নিষেধাজ্ঞা দিল আর কে দিল না, তাতে কিছু যায়-আসে না।”
“আমার ছেলেও এখানে (যুক্তরাষ্ট্র) আছে। সে ব্যবসা-বাণিজ্য করছে, বিয়ে করেছে, তার মেয়ে আছে, সম্পত্তি আছে, বাড়িঘর আছে। যদি বাতিল করে, করবে। তাতে কিছু আসে-যায় না। আমাদের বাংলাদেশ তো আছেই।’
তবে ‘ভিসা নীতির মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে টার্গেট করলে কিছু বলার নেই’ এমন মন্তব্যও করেন তিনি।
আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা যে ধারণা দিচ্ছেন সে অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী মূলত সারাদেশের নেতাকর্মী ছাড়াও প্রশাসন ও নিরাপত্তা সংস্থার সদস্যদের সাহস যোগানোর চেষ্টা করেছেন।
এজন্যই তিনি তার ছেলের প্রসঙ্গ উদাহরণ হিসেবে ব্যবহার করেছেন বলে মনে করছেন নেতাদের কেউ কেউ।
যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষণায় কী ছিলো
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে শুক্রবার যে সিদ্ধান্ত জানানো হয়েছে, তাতে নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত থাকার অভিযোগে বাংলাদেশি কিছু নাগরিকের বিরুদ্ধে ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেয়ার প্রক্রিয়া শুরুর কথা বলা হয়েছে।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞপ্তিতে কারও নাম ছিলো না।
সেখানে বলা হয়েছিলো, যাদের ভিসা নিষেধাজ্ঞার আওতায় নেয়া হয়েছে তারা বাংলাদেশের বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তা, ক্ষমতাসীন ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্য, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, বিচারবিভাগের সদস্য এবং নিরাপত্তা সংস্থার সদস্য।
যাদের উপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেয়া হচ্ছে সেসব ব্যক্তি তা তাদের পরিবারের সদস্যরা হয়তো যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন না বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।
সেখানে আরো বলা হয়, ভবিষ্যতে আরো কোন ব্যক্তিবর্গের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া ক্ষুণ্ণ করা বা এর সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ পাওয়া গেলে তারাও একই ভিসা নীতির আওতায় পড়তে পারেন।
ঘোষণা পরপরই বিষয়টি রাজনৈতিক অঙ্গনসহ সারাদেশে আলোচনার ঝড় তোলে। বিশেষ করে বিরোধী দলগুলো ব্যাপক প্রচার শুরু করে যাতে ধারণা দেয়ার চেষ্টা ছিলো যে সরকারের ঘনিষ্ঠ লোকজন নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়েছেন।
এদিকে, আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ অবশ্য বলছেন, তাদের দলের খুব বেশি লোক আমেরিকা ইউরোপে আসা যাওয়া করে না।
তাই এটি দল হিসেবে আওয়ামী লীগের ওপর কোনো প্রভাব ফেলেনি বলে দাবি করেন তিনি।
তবে জেলা পর্যায়ের কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতা নিজেদের নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে বলেছেন ‘আমেরিকা শক্তিশালী দেশ। তারা ঠিক কতটা যাবে কিংবা তারা দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিরোধিতা করছে কি-না’ তা পরিষ্কার হওয়া দরকার দ্রুত।
তথ্য সূত্র. বিবিসি বাংলা