১৯৭০ এর নির্বাচন : ১৯৭১ এর মার্চ , ১৬ ডিসেম্বর “মিত্র বাহিনী” এর কাছে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পণের কারন
রুহুল কুদ্দুস টিটো
১৯৭০ এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার পর বাঙালিরা আশা করেছিল যে ক্ষমতার পালাবদল হবে এবং আওয়ামী লীগ ৬ দফা অনুসারে সরকার গঠন করবে।
১৯৭১ মার্চ মাস ছিলো আন্দোলন-সংগ্রামে উত্তাল, উত্তেজনায় ভরপুর। ক্ষণে ক্ষণে বদলে যাচ্ছিল দৃশ্যপট। একদিকে নির্বাচনে জিতে আসা আওয়ামী লীগের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরে পাকিস্তানী সামরিক জান্তার গড়িমসি, অন্যদিকে দেশব্যাপী প্রতিরোধ-সংগ্রাম।
এমনি এক প্র্রেক্ষাপটে সংকট সমাধানের কথা বলে দৃশ্যপটে এলেন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান। ঢাকায় শুরু হলো ইয়াহিয়া-মুজিব শীর্ষ বৈঠক।কিন্তু ১৬ই মার্চ থেকে ২৪শে মার্চ পর্যন্ত আলোচনায় সময় গড়িয়ে গেলেও সমাধান মিললো না। উল্টো ২৫শে মার্চের রাত থেকে হামলা শুরু করলো পাকিস্তানি বাহিনী।
১৯৭২ সালে সাংবাদিক রবার্ট পেইন তার ‘ম্যাসাকার’ বইয়ে লেখেন, ১৯৭১ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি পশ্চিম পাকিস্তানে অনুষ্ঠিত এক সামরিক বৈঠকে ইয়াহিয়া খান বাঙালিদের খতম করার সিদ্ধান্ত নেন। ওই সেনা বৈঠকে ইয়াহিয়া খান বলেছিলেন, ‘কিল থ্রি মিলিয়ন অব দেম, অ্যান্ড দ্য রেস্ট উইল ইট আউট অব আওয়ার হ্যান্ডস।’ এই পরিকল্পনার পথ ধরে ২৫ মার্চ দিবাগত রাতে ঢাকা পরিণত হয় লাশের শহরে।
১৯৭১ সালের ১৬ মার্চে স্বাধীনতার দাবিতে উত্তাল পূর্ব পাকিস্তানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে সমঝোতা বৈঠকে বসেন সামরিক প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান।
২৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৭১ এ তৎকালীণ রাষ্ট্রপতি ও সেনা প্রধান ইয়াহিয়া খান পিপিপি (পাকিস্তান পিপলস্ পার্টি) এর জুলফিকার আলী ভুট্টোর প্ররোচনা ও চাপে জাতীয় বিধানসভার কার্যাবলি মার্চ পর্যন্ত স্থগিত করে দেন। পিপিপি এরই মধ্যে শেখ মুজিবুর রহমানের জনপ্রিয়তা হ্রাস করার উদ্দেশ্যে তদবির চালিয়ে যাচ্ছিলো, জুলফিকার আলি ভুট্টো এও বলেন যে তিনি বাঙালিদের ক্ষমতা থেকে দূরে রাখতে চান।
পশ্চিম পাকিস্তানের পিপলস পার্টিসহ আরও কয়েকটি দল ৩রা মার্চের জাতীয় পরিষদে যোগদানের অস্বীকৃতি জানানোর প্রেক্ষিতে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা করেন।এই স্থগিতকরণের প্রতিবাদে আওয়ামী লীগ ৭ মার্চ ১৯৭১ এ একটি গণসমাবেশের আয়োজন করে। এই সমাবেশ এতই সফল ছিল যে পাকিস্তান সরকার সেনাছাউনি ও পূর্বপাকিস্তানের সরকারি প্রতিষ্ঠান কার্যাবলী সীমিত করে দিতে বাধ্য হয়। সধারন জনগণ ও সেনাবাহিনী এবং বাঙালি ও বিহারীদের মধ্যাকার সংঘর্ষ ছিল প্রতিদিনকার সাধারণ ব্যপার।
ইয়াহিয়া-মুজিব আলোচনা
ঢাকা তখন একরকম শেখ মুজিবের নির্দেশে চলছে। অসহযোগ আন্দোলন চূড়ান্ত পর্যায়ে। ক্ষোভে উত্তাল পুরো দেশ।আওয়ামী লীগের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের কোন নমুনা দেখা যাচ্ছে না।এরই মধ্যে একাত্তরের ১৫ই মার্চ ইয়াহিয়া খান ঢাকায় এলেন। তার সফরসূচি নিয়ে ছিলো কঠোর গোপনীয়তা।
বিমানবন্দরে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাংবাদিকদের সাক্ষাতেরও কোন ব্যবস্থা ছিলো না।কিন্তু কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনি উপেক্ষা করেই প্রেসিডেন্ট হাউসের সামনে স্বাধীন বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ বিক্ষোভ মিছিল করে।পরদিন দৈনিক ইত্তেফাকে সে ছবি ছাপা হয়।
১৬ই মার্চ প্রেসিডেন্ট ভবনে বৈঠকে বসলেন ইয়াহিয়া-মুজিব। রুদ্ধদ্বার বৈঠক। বৈঠকে দুই শীর্ষ নেতা ছাড়া আর কেউ নেই। বৈঠক চললো প্রায় আড়াই ঘণ্টা।বৈঠকের বিষয়বস্তু তখনো অজানা।বৈঠক শেষে শেখ মুজিব সাংবাদিকদের জানান, “আলোচনা দুই-এক মিনিটের ব্যাপার নয়, যথেষ্ট সময় প্রয়োজন। তাই আলোচনা আরো চলবে।”
পরদিন ইত্তেফাকের প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজনৈতিক ও অন্যান্য সমস্যা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে এ বিষয়ে একের পর এক প্রশ্ন হলেও সেসব এড়িয়ে যান শেখ মুজিব।দ্বিতীয় দিনের রুদ্ধদ্বার বৈঠক শেষে শেখ মুজিবকে বেশ গম্ভীর দেখাচ্ছিলো বলে রিপোর্ট করে ইত্তেফাক।আলোচনা ফলপ্রসূ হয়েছে কি-না, সে বিষয়ে শেখ মুজিব সাংবাদিকদের প্রশ্নের কোন জবাব দেননি।
তবে তিনি জানান, আলোচনার মধ্যেই আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।
অপারেশন সার্চলাইট
জেনারেল ইয়াহিয়া শেখ মুজিবের সাথে বৈঠকের উদ্দেশ্যে মার্চের মাঝামাঝি সময়ে ঢাকা আসেন,এবং এরপর ভূট্টো তার সাথে যোগ দেন। আওয়ামী লীগের কাছে ক্ষমতা না হস্তান্তরের উদ্দেশ্য (পশ্চিম পাকিস্তানি শাষক গোষ্ঠীর ভয় ছিল যে ক্ষমতা পূর্বে হস্তান্তরিত হলে পশ্চিমে পাকিস্তান পিপলস পার্টির কর্তৃত্ব হ্রাস পাবে)পাকিস্তানি জেনারেলরা,( যাদের মধ্যে গুল হাসান ছিলেন অগ্রগামী) পিপিপি কে সমর্থন যোগাতে থাকে যার ফলাফল দাঁড়ায় সেনা আক্রমণ।
সুখরঞ্জন দাসগুপ্ত তার “মিডনাইট ম্যাসাকার ইন ঢাকা” বইয়ে বলেছেন, তাজউদ্দীন আহমেদ স্বাধীনতার পর তাঁকে অপারেশন সার্চলাইটের কারণ হিসেবে বলেন, মুজিবসহ আওয়ামী লীগের পঞ্চপ্রধান একটা পরিকল্পনা করেছিল যে, যেহেতু পাকিস্তানের মধ্যেই নির্বাচনে তারা ক্ষমতা দখল করতে পারবে বলে জানতো, তাই প্রথমে তারা তাই করার সিদ্ধান্ত নিল। পরিকল্পনা অনুযায়ী শেখ মুজিবুর রহমান মন্ত্রিসভায় থাকতে চাইবেন না।
সৈয়দ নজরুল (সৈয়দ নজরুল ইসলাম হবেন প্রধানমন্ত্রী, তাজউদদীন হবেন স্বরষ্ট্রমন্ত্রী, খোন্দকারকে (মোশতাক আহমেদ) পার্লামেন্টের স্পীকার করে দেওয়া হবে, তারপর এক সময় প্রধানমন্ত্রীরূপে সৈয়দ নজরুল পূর্ব পাকিস্তান থেকে পাকিস্তানি সৈন্যবাহিনী সরিয়ে আনার হুকুম করবেন ও তাজউদ্দীন সে-হুকুম তামিল করবেন। এই কাজটি হওয়ার পর, শেখ মুজিব ঢাকায় জাতীয় পার্লামেন্টের অধিবেশন ডাকবেন, সেখানে তিনিই স্বাধীন বাংলাদেশ সৃষ্টির প্রস্তাব তুলবেন। সে প্রস্তাব গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গে জন্ম নেবে সার্বভৌম বাংলাদেশ; তবে ভুট্টো এই পরিকল্পনার আভাস পেয়ে যান, খোন্দকার মোশতাক আহমেদ বিষয়টি জানিয়ে দেন। আর সেই জন্যই পচিশ মার্চ পাকিস্তানি সৈন্যবাহিনী ভুট্টোর নির্দেশে অপারেশন সার্চলাইটের আক্রমণ চালায়।
মুক্তিযুদ্ধ গবেষক আফসান চৌধুরীর তিনি বিবিসিকে বলছিলেন, “৭০ এর সাধারণ নির্বাচনের পরই পাকিস্তানী সামরিক জান্তা বাঙ্গালির উপর হামলা করার সিদ্ধান্ত নেয়। আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেয়া মানেই শেখ মুজিবকে ক্ষমতা দেয়া হবে না।”
২৫ মার্চের ‘অপারেশন সার্চলাইট’ এর জন্য প্রধানত জুলফিকার আলী ভুট্টো, জেনারেল ইয়াহিয়া, জেনারেল হামিদ ও টিক্কা খানকে দায়ী করা হয়।
১৯৭১সালে ২৫ মার্চ থেকে শুরু হওয়া পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কর্তৃক পরিচালিত পরিকল্পিত গণহত্যা, যার মাধ্যমে তারা ১৯৭১ এর মার্চ ও এর পূর্ববর্তী সময়ে সংঘটিত বাঙালি জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকে দমন করতে চেয়েছিল।
এই গণহত্যা ছিল পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকদের আদেশে পরিচালিত,যা ১৯৭০ এর নভেম্বরে সংঘটিত অপারেশন ব্লিটজ্ এর পরবর্তি অনুষঙ্গ। অপারেশনটির আসল উদ্দেশ্য ছিল ২৬ মার্চ এর মধ্যে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশ) সব বড় বড় শহর দখল করে নেয়া এবং রাজনৈতিক ও সামরিক বিরোধীদের এক মাসের ভেতর নিশ্চিহ্ন করে দেয়া।
বাঙালিরা তখন পাল্টা প্রতিরোধ সৃষ্টি করে,যা পাকিস্তানি পরিকল্পনাকারীদের ধারণার বাইরে ছিল। মে এর মাঝামাঝি সময়ে সকল বড় বড় শহরের পতন ঘটার মধ্যে দিয়ে অপারেশন সার্চলাইটের প্রধান অংশ শেষ হয়।
সামরিকএ আক্রমণ ১৯৭১ সালের গণহত্যাকে ত্বরান্বিত করে। এই গণহত্যা বাঙালিদের কারারুদ্ধ করে তোলে যে কারণে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বাঙ্গালি অফিসার ও সৈনিকেরা বিদ্রোহ ঘোষণা করে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষিত হয় এবং বহু মানুষকে শরণার্থীরূপে ভারতে আশ্রয় নিতে হয়।
ভয়াবহ এ গণহত্যা ১৯৭১ এর বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সূত্রপাত ঘটায় এবং বাঙালিরা দখলদারী পাকিস্তানি বাহিনীকে বিতারিত করার সংগ্রামে লিপ্ত হয়।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ ছিল ১৯৭১ সালে সংঘটিত তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তানের সশস্ত্র সংগ্রামের শুরুতে ১৯৭০ এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ায় ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাধেশ সরকার গঠনের মাধ্যমে বাংলাদেশ একটি স্বাধীন দেশ হিসাবে পৃথিবীর বুকে আত্মপ্রকাশ করে।
গ্রেফতারের পূর্বে ২৬শে মার্চের প্রথম প্রহরে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। সারাদেশে শুরু হয়ে যায় মুক্তিযুদ্ধ।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে বাংলাদেশ ভারতের কাছ থেকে অর্থনৈতিক, সামরিক ও কূটনৈতিক সাহায্য লাভ করে। ডিসেম্বরের শুরুর দিকে যখন স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম কেবল সময়ের ব্যাপার মাত্র তখন পাকিস্তান পরিস্থিতিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। এভাবে ভারত বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে সরাসরিভাবে জড়িয়ে পড়ে। মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় সামরিক বাহিনীর সম্মিলিত আক্রমনে পাকিস্তানের দখলদারী বাহিনীর পতন ত্বরান্বিত হয়।
১৬ই ডিসেম্বর ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে পাকিস্তান ৯৩,০০০ হাজার সৈন্যসহ আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করে। স্বাধীন বাংলাদেশের জন্মের মধ্য দিয়ে পরিসমাপ্তি ঘটে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের।
১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ১৬ই ডিসেম্বর ভারত ও বাংলাদেশের যৌথ কমান্ড “মিত্র বাহিনী” এর কাছে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিনাশর্তে আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়।
বাংলাদেশের যৌথ কমান্ড “মিত্র বাহিনী” এর কাছে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিনাশর্তে আত্মসমর্পণের কারন
মুক্তিবাহিনী ছিলো বাংলাদেশ সরকারের বাহিনী; সেই সময় বাংলাদেশ স্বীকৃতিপ্রাপ্ত কোন দেশ ছিলো না, এবং বাংলাদেশ বাহিনী জেনেভা কনভেনশনের “১৬ নং আর্টিক্যালে সাইন-করা বাহিনী” ছিলো না। পাকিস্তানী কমান্ডার তার বাহিনীর সদস্যদের প্রান বিনাশ হওয়ার সম্ভাবনার কথা ভেবেই, মুক্তিবাহিনীর সাথে সারেন্ডার চুক্তি করেনি।
মুক্তিযুদ্ধকালীন বাংলাদেশ সরকারের অধীনে মুক্তিবাহিনীর সদরদফতরে তৎকালীন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তার দায়িত্বে ছিলেন নজরুল ইসলাম। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে পরবর্তীতে ‘একাত্তরের রণাঙ্গন অকথিত কিছু কথা’ নামে একটি বই লিখেছেন তিনি। অনুপম প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত এই বইয়ে পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে কেন এমএজি ওসমানী ছিলেন না, সে বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
জেনারেল ওসমানী বলেন ‘তোমরা লোকজনকে অন্ধকারে রেখেছো। দুনিয়ার রীতিনীতি সম্পর্কে মানুষকে কিছু জানতে দাও।’ ওসমানী বলেন, ‘যুদ্ধ-বিগ্রহ, জয়-পরাজয়, আত্মসমর্পণ সম্পর্কে জেনেভা কনভেনশনের আন্তর্জাতিক নীতিমালা আছে। জেনেভা কনভেনশনে স্বাক্ষরকারী দেশগুলো যুদ্ধ-বিগ্রহ, জয়-পরাজয়, আত্মসমর্পণ ইত্যাদির ব্যাপারে এ নীতিমালা মানতে বাধ্য। আমরা মানে বাংলাদেশ জেনেভা কনভেনশনে স্বাক্ষরকারী দেশ নই। এই কনভেনশনের স্বাক্ষরকারী দেশ হিসেবে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী আমাদের কাছে আত্মসমর্পণ করতে রাজি হবে না। কারণ, তাদের (পাক বাহিনী) ধারণা, আমাদের কাছে আত্মসমর্পণ করলে আমরা তাদের সঙ্গে জেনেভা কনভেনশনে বর্নিত নীতিমালা অনুযায়ী আচরণ করবো না।
যেহেতু আমরা জেনেভা কনভেনশনের আওতায় পড়ি না, তাই জেনেভা কনভেনশনের নীতিমালা মানতে আমরা বাধ্যও নই। আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা তাদের হত্যা করে ফেলবে। কিন্তু জেনেভা কনভেশন অনুযায়ী পরাজিত আত্মসমর্পণকারী সৈন্যদের হত্যা করা বা কোনও রূপ নির্যাতন করা যায় না। তাদের নিরাপত্তায় আইনি প্রটেকশন দিতে হয়। সামরিক রীতিনীতি অনুযায়ী তাদের সঙ্গে আচরণ করতে হয়। উন্নত খাবার, নানান সুযোগ-সুবিধা দিতে হয়। বন্দিকালীন সময়ে নিরস্ত্র অবস্থায় এক্সারসাইজ, খেলাধুলা ইত্যাদির সুযোগ-সুবিধা দিতে হয়। কিন্তু আমরা তো এখনও ভারতের মাটিতেই রয়ে গেছি। বাংলাদেশই তো আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। আমাদের সিভিল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন প্রতিষ্ঠিত হয়নি। কোনও নিয়মিত সুশৃঙ্খল সেনাবাহিনী নেই। এমনকি পুলিশ বাহিনীও নেই। এ অবস্থায় ৯০ হাজার পাকিস্তানি সৈন্য আমাদের কাছে আত্মসমর্পণ করলে, আমরা তাদের রাখবো কোথায়? তাদের প্রটেকশন দেবো কিভাবে? ৯০ হাজার সৈন্যকে তিন বেলা উন্নত খাবার দেবো কোথা থেকে। দেশে গিয়ে তো আমরাই খাবার পাবো না।’
মুক্তিযুদ্ধের যেই পর্যায়ে পাকিস্তানী বাহিনীর কামন্ডার, জেনারেল নিয়াজী সারেন্ডার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো, তখন তার ভাবনায় কাজ করছিলো তার নিজের ও তার ৯০ হাজার সৈন্যের বন্দী অবস্হায় সিকিউরিটি, ভবিষ্যত ও অবেশেষে নিজ দেশে ফেরার কথা; এসব ভাবনা মাথায় রেখেই জেনারেল অরোরার সাথে সারেন্ডারের শর্তাবলী নেগোসিয়েট করেছেন জেনারেল নিয়াজী ।
তথ্যসূত্র: উইকিপিডিয়া/বিবিসি বাংলা