আমিত্বের কারণে ফেরাউন, কারুন, শাদ্দাদের মতো প্রভাবশালীরাও ধ্বংস হয়েছে
রুহুল কুদ্দুস টিটো
আমি ও আমিত্বের দ্বারা অহংকার ও গর্ব প্রকাশ পায় অথচ চোখ বন্ধ করলে ‘আমিত্ব’র অস্তিত্ব শেষ।
মহান আল্লাহ তাঁর আমি ও আমিত্বের প্রকাশ ঘটানোর জন্য মানুষসহ সমগ্র জাহানের সকল মাখলুকাতকে সৃষ্টি করেছেন। এটা চরম সত্য যে, আল্লাহর রহমত ছাড়া মানব জাতির কোনো অস্তিত্বই নেই শ্রেষ্ঠত্বের মিথ্যা অহমিকা, মর্যাদার ভিত্তিহীন দাবি এবং কোনো জন্মগত স্বতঃসিদ্ধ অধিকার নেই অথচ মানুষ নিজেকে অযথা শ্রেষ্ঠত্বের আসনে সমাসীন মনে করে বড়, শ্রেষ্ঠ ও মর্যাদাশীল সেই সব এ অহমিকার ফলে মানুষকে মিথ্যুক, লাঞ্ছিত ও অপমানিতই হতে হয় আর এর নেমে আসে দুনিয়া ও আখিরাতের শাস্তি এ জন্য দায় এ অহংকারী মানুষের।
পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তিনি বলেন, আমি যখন তোমাকে আদেশ দিলাম, তখন কী তোমাকে নিবৃত্ত করল যে তুমি সিজদা করলে না? সে বলল, আমি তার চেয়ে শ্রেষ্ঠ; আপনি আমাকে আগুন দিয়ে সৃষ্টি করেছেন এবং তাকে কাদামাটি দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। তিনি বলেন, তাহলে তুমি এখান থেকে নেমে যাও, এখানে থেকে অহংকার করবে, এটা হতে পারে না। সুতরাং তুমি বের হয়ে যাও, নিশ্চয় তুমি অধমদের অন্তর্ভুক্ত।’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ১২-১৩)
অহংকারের কারণে শয়তানকে হতে হয়েছে চির অভিশপ্ত।
‘আমার’ বলে কিছু নেই : দুনিয়ায় ‘আমার’ বলে কোনো কিছু নেই। দুনিয়ায় যা কিছু আমার মনে হয়, সবই মরীচিকা। নিঃশ্বাস ত্যাগ করা মাত্রই সেই মরীচিকা কেটে যায়। পবিত্র কোরআনে দুনিয়ার জীবনকে শুধুই ধোঁকার সামগ্রী বলা হয়েছে। (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১৮৫)
সন্তান-সন্ততি, ধন-সম্পদ, আত্মীয়-স্বজনকে বলা হয়েছে পরীক্ষাস্বরূপ। এগুলোর মাধ্যমে মহান আল্লাহ আমাদের পরীক্ষা করেন। মহান আল্লাহ বলেন, ‘জেনে রেখো, তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি তো এক পরীক্ষা। আর আল্লাহর কাছেই রয়েছে মহাপুরস্কার।’ (সুরা : আনফাল, আয়াত : ২৮)
কিয়ামতের বিভীষিকাময় মুহূর্তে এরা কেউ সঙ্গী হবে না। কেউ কারো কোনো উপকার করতে পারবে না। সেদিন বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়-স্বজন একে অন্যকে ভুলে যাবে। সেদিন মানুষ আল্লাহর কাঠগড়ায় দাঁড়াবে একাকী। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর কিয়ামতের দিন তাদের সবাই তাঁর (আল্লাহর) কাছে আসবে একাকী। (সুরা : মারইয়াম, আয়াত : ৯৫) আমাদের অহংকার করার কোনো অতিকার নেই, আমরা আল্লাহর গোলাম মাত্র।
রাসুল (সা.) বলেন, ‘যার অন্তরে সরিষাদানা পরিমাণও অহংকার আছে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৫৯)
আমি ও আমিত্বের দ্বারা অহংকার ও গর্ব প্রকাশ পায়, সে ক্ষেত্রে আমি ও আমিত্বের ব্যবহার অবৈধ। তবুওমানুষ সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি হওয়ার কারণে তার মধ্যেও এই আমি ও আমিত্বের প্রকাশ ঘটানোর অদম্য ইচ্ছা বা কামনা বিদ্যমান দেখা যায়।
পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘শুক্রবিন্দু থেকে তিনি তাকে সৃষ্টি করেছেন।’ (সুরা : আবাসা, আয়াত : ১৯) যে মানবের জন্ম এমন নাপাক পানি থেকে, তার জন্য অহংকার শোভা পায় কি। এটা জানার পরও যাদের মাঝে অহংকার আসে, তাদের মতো বোকা আর পৃথিবীতে কেউ হতে পারে না। আমিত্বের কারণে ফেরাউন, কারুন, শাদ্দাদের মতো প্রভাবশালীরাও ধ্বংস হয়েছে।
মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আল আমিনের ইবাদতের জন্যই মানবজাতির সৃষ্টি । মহান আল্লাহ প্রদত্ত নিয়ামতের জন্য মানুষ শুকরিয়া করলে, মহান আল্লাহ পাক নিয়ামতকে আরো বৃদ্ধি করে দেবেন; কিন্তু আল্লাহর প্রদত্ত নিয়ামত পেয়ে অহংকার করলে সেই নিয়ামত যেমন হাতছাড়া হয়ে যাবে, তেমনি মহান আল্লাহর রহমত থেকেও বঞ্চিত হতে হবে।
আমাদের উচিত অহংকার ত্যাগ করা, দম্ভের ‘আমি’ ও ‘আমিত্ব’কে মহান আল্লাহর জন্য বিলীন করে দেওয়া, আল্লাহকে ভয় করা, তাঁর কাছেই আত্মসমর্পণ করে ‘আমি’ ও আমার‘আমিত্ব’কে বিলীন করে কৃত অপরাধের জন্য হে রহমানের রাহিম নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করা উত্তম । দয়া ময় মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আল আমিন হে রহমানের রাহিম আমাদের ক্ষমা করুন।