আমেরিকার বালটিমোরের ফ্রান্সিস স্কট কী ব্রিজ এবং আমার স্মৃতিতে বাল্টিমোর
ক্যাপ্টেন আবু মোহাম্মদ সালেহ
গত ২৬ শে মার্চ ২০২৪ তারিখে সিঙ্গাপুরের পতাকাবাহি একটি কন্টেইনার জাহাজ এমভি ডালির ধাক্কায় যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ড অঙ্গরাজ্যের বালটিমুরে ফ্রান্সিস স্কট কী ব্রিজের কিছু অংশ ভেঙ্গে পড়ে। দুর্ঘটনাটি ঘটে স্থানীয় সময় রাত ০১:২৭ মিনিটে। এতে বেশ কয়েকজন মানুষের হতাহতের খবর পাওয়া গেছে। মেরিটাইম সেক্টরের জন্য সত্যিই এটা দুঃখজনক ব্যাপার। জানা যায় এমভি ডালি জাহাজটি সেতুটির কাছাকাছি আসলে পাওয়ার ফেইলর হয় এবং জাহাজটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে।
চেষ্টা করেও জাহাজের আর নিয়ন্ত্রণ আনা সম্ভব হয়নি এবং এক সময় জাহাজটির সাথে সেতুটির পিয়ারের সংঘর্ষ হয় এবং সেতুর প্রধান স্প্যানগুলি ভেঙ্গে পড়ে। কন্টেইনার জাহাজটি পোর্ট থেকে বেরিয়ে যাচ্ছিল এবং জাহাজে হারবার পাইলট ছিল।
জানা যায় সংঘর্ষের পরে সেতুটি থেকে কয়েকজন মানুষ এবং কয়েকটি গাড়ি পানিতে পড়ে যায়। দুর্ঘটনার পরেই রেসকিউ অপারেশন শুরু করা হয়। দুর্ঘটনার আগ মুহূর্তে জাহাজটি থেকে পোর্ট অথরিটিকে রেডিওর মাধ্যমে বিপদের কথা জানানো হয়েছিল এবং যার ফলে সেতুতে কর্মরত শ্রমিকদের ক্ষয়ক্ষতি কিছুটা কম হয়েছে এবং বড় রকম প্রাণহানির আশঙ্কা থেকে বাঁচা গিয়েছে বলে জানা যায়। এর আগেও ১৯৮০ সালে এই ব্রিজের সাথে একটি কার্গো জাহাজের সংঘর্ষ হয় তবে সে সময় সেতুটির তেমন কোন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। ফ্রান্সিস স্কট কী ব্রিজটি স্টিলের কাঠামোতে তৈরি এবং এটি প্যাটাপস্ক নদীর ওপর নির্মিত হয়েছে। সেতুটির কাজ শুরু হয় ১৯৭২ সালে এবং ২৩ মার্চ ১৯৭৭ সালে যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হয়।
সেতুটির দৈর্ঘ্য ২৬৩২ মিটার বা ১.৬ মাইল। এটি ৪ লেন বিশিষ্ট একটি ব্রিজ। এটি বালটিমোর মেট্রোপলিটন এলাকার দ্বিতীয় দীর্ঘতম সেতু। আমি জাহাজ নিয়ে ২০২১ সালের ২৬ মার্চ আমেরিকার মেরিল্যান্ড অঙ্গরাজ্যের বালটিমোর বন্দরে গিয়েছিলাম। আমরা ইউরোপের একটি পোর্ট থেকে এখানে আসি কারগো লোড করার জন্য। আমরা বন্দরে তিন দিনের মতো অবস্থান করি। বন্দরে কারগো লোড শেষ হয়ে গেলে আমরা চায়নার উদ্দেশ্যে রওনা হই। আমার সুযোগ হয়েছিল বালটিমোর শহরটি ঘুরে দেখার। বালটিমোর বন্দরে জাহাজ নিয়ে যেতে গেলে বেশ কয়েকটি ব্রিজের নিচ দিয়ে যেতে হয়। প্রথমেই পড়ে ফ্রান্সিস স্কট কী ব্রিজ। এরপর আরো কয়েকটি ব্রিজ পার হয়ে জেটিতে ভিড়তে হয়। আমিও ব্রিজটির নিচ দিয়ে জাহাজ নিয়ে বন্দরে গিয়েছিলাম। বন্দর থেকে বের হওয়ার সময় এটি সর্বশেষ ব্রিজ।
ব্রিজের নিচ দিয়ে যাওয়ার সময় অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। কোন বন্দরে ঢোকা এবং বের হওয়ার সময় জাহাজের সামনে এবং পিছনে টাগবোট থাকলে অনাকাঙ্ক্ষিত বিপদ থেকে অনেক ক্ষেত্রেই রক্ষা পাওয়া যায়। যদিও এটা নির্ভর করে সেখানকার লোকাল রেগুলেশনের উপরে। ন্যারো চ্যানেলে অনেক বন্দরে জাহাজের সামনে পিছনে টাগবোট ব্যবহার করা হয়। জাহাজের কোন ফেইলর হলে সেক্ষেত্রে টাগবোট তার শক্তিশালী ইঞ্জিন দিয়ে পুশ,পুল বা টোইং করে জাহাজকে বিপদ থেকে রক্ষা করে এবং নিরাপদ চলাচলে সহায়তা করে। চ্যানেলে ব্রিজটি পার হওয়ার সময় ডালি জাহাজের সামনে-পিছনে টাগবোট থাকলে হয়ত এ ধরনের বড় দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব হতো।
আমি যখন বাল্টিমোর বন্দরে গিয়েছিলাম তখন জানতে পারি এখানে আমার মেরিন একাডেমীর একজন ব্যাচমেট ড্রাফ্ট সার্ভেয়ার হিসাবে কর্মরত রয়েছে। আমি তার সাথে যোগাযোগ করি এবং জানাই আমরা পোর্টে এসেছি। বন্ধুটি খুব খুশি হয় এবং জানায় সে আমাকে নিয়ে বাইরে ঘুরতে যেতে পারবে। আমার সময় মত বন্ধুটি বন্দরে গাড়ি নিয়ে আসে এবং আমরা একসাথে ঘুরতে বের হই। কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরির পর সে আমাকে তার বাসায় নিয়ে যায়। তখন ছিল রমজান মাস। আমরা তার বাসায় একসাথে ইফতার করি। তার বাড়ির সুন্দর পরিবেশ দেখে খুবই ভালো লেগেছিল। ভাবিও ছিলেন খুব আন্তরিক বাসায় অনেক রকম খাবারের আয়োজন করেছিলেন। তাদের আতিথিয়তায় সত্যিই মুগ্ধ হয়েছিলাম। অবশেষে ডিনার শেষ হলে বন্ধু আমাকে বন্দরের গেটে দিয়ে আসে। এখনো প্রায়ই বন্ধুর সাথে যোগাযোগ হয়। এভাবে বালটিমোর বন্দর থেকে সুন্দর স্মৃতি সাথে নিয়ে এসেছিলাম।
-ক্যাপ্টেন আবু মোহাম্মদ সালেহ (শুভ) মাস্টার মেরিনার,(এ.এফ. এন. আই) এক্স ক্যাডেট, বাংলাদেশ মেরিন একাডেমি চট্টগ্রাম।
Write to Abu Mohammad Saleh