ছোট্ট বেলার সেই খেলা গুলো …
আলাপচারিতা
ইচিং বিচিং
ইচিং বিচিং বাংলাদেশ সহ ভারত উপমহাদেশের একটি জনপ্রিয় গ্রামীণ খেলা।সাধারণত এই খেলার জন্য শিশু ও কিশোরীরা গ্রাম সংলগ্ন সবুজ মাঠকে নির্বাচন করে। উচ্চতা অতিক্রম এই খেলার একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
ইচিং বিচিং চিচিং ছা
দু’জন খেলোয়াড় পাশাপাশি বসে খেলোয়াড়দের অতিক্রম করার জন্য উচ্চতা নির্মাণ করে দেয়। প্রথমে তারা দু’পায়ের গোড়ালি দিয়ে উচ্চতা নির্মাণ করে। খেলোয়াড়রা উচ্চতা অতিক্রম করার পর তারা পায়ের উপর আরেক পা তু্লে দিয়ে উচ্চতা বাড়িয়ে দেয়। এইভাবে পায়ের উপর প্রসারিত করতল স্থাপন করে উচ্চতা বাড়িয়ে তোলা হয়। উচ্চতা অতিক্রম করার পর বসে থাকা খেলোয়াড়রা দুই পা মুক্ত করে ত্রিকোণাকার একটি সীমানা তৈরি করে। এই পায়ে ঘেরা স্থানটি পা তুলে দম দিতে দিতে বা ছড়া আওড়াতে আওড়াতে তিনবার অতিক্রম করে লাফ দিয়ে পার হতে হয়। এই সীমানা অতিক্রম করার পর বসে থাকা খেলোয়াড়দের যুক্ত পাকে প্রতিটি খেলোয়াড় শূন্যে লাফিয়ে ইচিং বিচিং ছড়া বলতে বলতে দুইবার করে অতিক্রম করে নেয়। এটিই খেলার শেষ পর্ব।
ওপেন টু বাইস্কোপ বাংলাদেশের গ্রামীণ খেলাধুলার মধ্যে অন্যতম।এর সরলতার কারণে মেয়েদের কাছে ওপেন টু বাইস্কোপ খেলাটি আজ পর্যন্ত জনপ্রিয়তা পেয়ে আসছে। এটি একটি সহায়ক খেলা। দল গঠন করার জন্য এই খেলাটি খেলা হয়। এই খেলাটির সাথে জড়িত ছড়া-গানটি ব্রিটিশ যুগের ইংরেজ সাহেবদের বিনোদনের প্রতি ইঙ্গিত করে।
ওপেন টু বাইস্কোপ
নাইন টেন টেলিস্কোপ
চুলটানা বিবিয়ানা
সাহেব বিবির বৈঠকখানা
সাহেব বলেছে যেতে
পান সুপারি খেতে
পানের আগায় মরিচ বাটা
স্প্রিং এর চাবি আঁটা
যার নাম মনিমালা
তাকে দেবো মুক্তার মালা।
ডাংগুলি
ডাংগুলি বাংলাদেশ ও উত্তর ভারতের অন্যতম জনপ্রিয় গ্রামীণ খেলা। সাধারণত কিশোর বয়সী ছেলেরা এই খেলা খেলে। উত্তরভারতে এর নাম গোলি ডাণ্ডা। ক্রিকেট আসার পর এর জনপ্রিয়তা অনেকটাই ম্রীয়মান হয়ে এসেছে। বাংলাদেশে অঞ্চলভেদে খেলাটি ড্যাংবাড়ি, গুটবাড়ি, ট্যামডাং, ভ্যাটাডান্ডা ইত্যাদি নামে পরিচিত।
ডাংগুলি খেলার উপকরণ দু’টি- একটি দেড় থেকে দুই ফুট লম্বা লাঠি (ডাং বা ডাণ্ডা), অপরটি গুলি যা নামে গোল মনে হলেও গোল নয়, আসলে প্রায় দুই ইঞ্চি লম্বা আরেকটি ছোট লাঠি যার দুই প্রান্ত কিছুটা সূঁচালো করা থাকে।
ডাংগুলি বাংলার সর্বাঞ্চলীয় একটি জনপ্রিয় খেলা। প্রধানত কম বয়সের ছেলেরা এটি খেলে থাকে; মেয়েরা সাধারণত ডাংগুলি খেলে না। দুই থেকে পাঁচ-ছয়জন করে দুই দলে বিভক্ত হয়ে এটি খেলতে পারে। দেড় হাত লম্বা একটি লাঠি এবং এক বিঘত পরিমাণ একটি শক্ত কাঠি খেলার উপকরণ।
প্রথমটিকে ডান্ডা ও দ্বিতীয়টিকে গুলি বা ফুত্তি বলা হয়। প্রথমে খোররলা মাঠে একটি ছোট গর্ত করা হয়। যারা দান পায় তাদের একজন গর্তের ওপর গুলি রেখে ডান্ডা মেরে সেটিকে দূরে ফেলার চেষ্টা করে। প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়েরা চারিদিকে দাঁড়িয়ে থেকে সেটিকে লুফে নিতে চায়।
তারা সফল হলে ঐ খেলোয়াড় আউট হয়, আর ধরতে না পারলে গর্তের ওপর রাখা ডান্ডা লক্ষ করে ছুড়ে মারতে হয়। ছোঁয়া গেলে সে দান হারায়, আর তা না হলে সে ডান্ডা দিয়ে তুলে গুলিকে আবার দূরে পাঠায়। তারপর গুলি থেকে গর্ত পর্যন্ত ডান্ডা দিয়ে মাপতে থাকে। সাত পর্যন্ত মাপের আঞ্চলিক নাম হলো: বাড়ি, দুড়ি, তেড়ি, চাঘল, চাম্পা, ঝেঁক, মেক। এরূপ সাত মাপে এক ফুল বা গুট এবং সাত ফুলে এক লাল হয়। ভাঙা ফুলের ক্ষেত্রে যেখানে শেষ হয়, পরের খেলা সেখান থেকে শুরু হয়।
বাড়ি, দুড়ি ইত্যাদি প্রতিটি মারের পৃথক পৃথক পদ্ধতি আছে। আউট না হওয়া পর্যন্ত একজন খেলোয়াড় খেলতে পারে, আউট হলে দ্বিতীয় একজন একই পদ্ধতিতে খেলবে। এভাবে সবাই আউট হয়ে গেলে বিপক্ষ দল দান পেয়ে খেলা শুরু করে। বস্তুত এ খেলাটি বর্তমান যুগের ক্রিকেটের গ্রাম্য সংস্করণ এবং ব্যাট ও বল ডান্ডা ও গুলির সমতুল্য। এক্ষেত্রেও ক্যাচ হলে অথবা ডান্ডার আঘাত করে আউট করার বিধান আছে।