ইতিহাসের পরিক্রমায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে বিতর্কিত ভূমিকার কারণে ৫৫ বছর পরও ক্ষমা না চাওয়ায় প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হচ্ছে জামায়াতে ইসলামীকে।। ২০২৪ সালের পাঁচই অগাস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর প্রভাবশালী দল হিসেবে দেখা যাচ্ছে
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ইতি কথা
![]()

ছবি :১ম আমির, জামায়াতে ইসলামীর সাইয়েদ আবুল আ’লা মওদুদী ।।জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমীর গোলাম আযম (বামে) ও মতিউর রহমান নিজামী (ডানে)
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীবাংলাদেশের সর্ববৃহৎ ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দল। বাংলাদেশে ইসলামি শরিয়াহ আইন বাস্তবায়ন এই দলের উদ্দেশ্য। দলটি ইকামতে দ্বীন (ইসলাম প্রতিষ্ঠা) নামক মতাদর্শকে মূলভিত্তি হিসেবে গ্রহণ করেছে এবং একে “রাষ্ট্রক্ষমতা লাভের মাধ্যমে ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা” অর্থে দলীয় ও রাজনৈতিকভাবে ব্যাখ্যা করে থাকে।
এটি পাকিস্তানের জামায়াতে ইসলামী এবং মিশরের মুসলিম ব্রাদারহুড ( ইখওয়ানুল মুসলিমিন)-এর আদর্শ ধারণ করে। ২০১৩ সালের ১ আগস্ট বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট জামায়াতের নিবন্ধন সম্পর্কিত একটি রুলের রায় দেয়। যা সংগঠনের নিবন্ধন অবৈধ এবং নির্বাচনে অংশগ্রহণের অযোগ্য ঘোষণা করে। ২০২৪ সালে বাংলাদেশে সংঘটিত স্বৈরাচার বিরোধী অসহযোগ আন্দোলনের প্রাক্কালে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে আওয়ামী লীগ সরকার জামায়াতকে নিষিদ্ধ করেছিল।তারপর ২৮ আগস্ট ২০২৪ তারিখে অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জামায়াতের উপর অর্পিত নিষেধাজ্ঞা বাতিল করে দেয়।
জামায়াত ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার এবং পাকিস্তান বিভক্তির বিরোধীতা করেছিল। প্রায়শই জামায়াত মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতার পিছনে ভারতীয় আধিপত্যের আশঙ্কা এবং ইসলামী আন্দোলনের স্বার্থকে সামনে আনে।দলটির অনেক নেতাকর্মী সেসময় গঠিত আধা-সামরিক বাহিনীতে যোগদান করেছিল বলে অভিযোগ রয়েছে, যারা গণহত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে অভিযুক্ত।জামায়াতে ইসলামীর সদস্যরা আধাসামরিক বাহিনী শান্তি কমিটি গঠনে নেতৃত্ব দিয়েছিল।
১৯৭২ সালে সরকার জামায়াতকে রাজনীতি থেকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে এবং দলের নেতারা পাকিস্তানে নির্বাসনে চলে যান। পরবর্তীতে ১৯৭৫ সালে প্রথম রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিব হত্যাকাণ্ডের পর এবং কয়েকটি সামরিক অভ্যুত্থানের পর ১৯৭৭ সালে মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এলে জামায়াতের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। দলটির নেতাকর্মীরা ফিরে আসার অনুমতি পান এবং ১৯৭৯ সালের মে মাসে তৎকালীন জামায়াতে ইসলামীর অত্যন্ত প্রভাবশালী নেতা আব্বাস আলী খানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী প্রতিষ্ঠিত হয়। এই সংগঠনের উদ্দেশ্য হলো শরিয়াহ ভিত্তিক একটি ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা যা পাকিস্তান ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশসমূহে লক্ষ্য করা যায়।
১৯৮০-এর দশকে জামায়াত গণতন্ত্রের পুনরুদ্ধারের জন্য বহুদলীয় জোটে যোগদান করে। এসময় দলটি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও সমসাময়িক বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে আন্দোলন করে। পরবর্তীতে দলটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তনের জন্য আন্দোলন করে। পরবর্তীতে ২০০১ সালে নির্বাচনের পূর্ব মুহূর্তে বিএনপির সাথে আরো অন্য দুটি দলসহ চারদলীয় ঐক্যজোট গঠন করে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। নির্বাচনে চারদলীয় ঐক্যজোট জয়লাভ করলে বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন সরকারের অধীনে জামায়াতের দুজন সদস্য মন্ত্রী নির্বাচিত হন। ২০০৮ সালের পর থেকে নেতৃবৃন্দ আটক পরবর্তীতে বিতর্কিত আন্তর্জাতিক ট্রাইবুনালের রায়ে দণ্ডিত হওয়ায় দলটি কিছুটা দূর্বল হয়ে যায়। ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলটি ৩০০টি আসনের মধ্যে মাত্র ৫টি আসন লাভ করে। ২০১০ সালে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে ১৯৭১ সালে অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করে; ২০১২ সালের মধ্যে দুজন বিএনপি নেতা ও জামায়াতের সাবেক ও বর্তমান সদস্যসহ ৮ জন নেতার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের মামলা দায়ের করা হয়। ২০১৩ সালের জুলাই পর্যন্ত জামায়াতের সাবেক সদস্যসহ মোট চার জনকে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা ও একজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও সাবেক আমীর অধ্যাপক গোলাম আযমকে ৯০ বছর কারাদণ্ড প্রদান করা হয়।রায়গুলোর প্রতিবাদে জামায়াত দেশের বিভিন্ন জায়গায় প্রতিবাদ করে, যাতে অনেক লোক নিহত হয়।
ব্রিটিশ ভারত (১৯৪১-১৯৪৭)
সাইয়েদ আবুল আ’লা মওদুদী ১৯৪১ সালের ২৬ আগস্ট লাহোরের ইসলামিয়া পার্কে সামাজিক-রাজনৈতিক ইসলামি আন্দোলনের অংশ হিসেবে জামায়াতে ইসলামী হিন্দ নামে সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেন। জামায়াত ভারতের মুসলমানদের জন্য পৃথক রাষ্ট্র হিসেবে পাকিস্তান সৃষ্টির বিরোধিতা করেছিল। জামায়াত ১৯৪৬ সালের নির্বাচনের সবচেয়ে বড় দল মুসলিম লীগকে সমর্থন করেনি।
স্বাধীনতা ও ভারত-পাকিস্তান বিভক্তির পর মওদুদী ভারত থেকে পাকিস্তান চলে যান। বর্তমান বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী মূলত পূর্ব পাকিস্তানের সাবেক জাতীয় পার্টির অংশ থেকে সৃষ্টি হয়েছিল।
পাকিস্তান সময়কাল (১৯৪৮-১৯৭১)
পাকিস্তান সৃাষ্টির পর জামায়াতে ইসলামী মূলত ভারত ও পাকিস্তান দুটি অংশে বিভক্ত হয়ে যায়। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান জামায়াতের শাখা থেকে সৃষ্টি হয়। ১৯৬২ সালে আইয়ুব খান প্রণিত মুসলিম পরিবার আইন অধ্যাদেশের বিরোধিতা করার কারণে ১৯৬৪ সালের ৪ জানুয়ারি জামায়াতে ইসলামীর কর্মকাণ্ডের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। মওদুদী সহ ৬০ জন জামায়াত নেতাকে গ্রেফতার করা হয়। এর মধ্যে পূর্ব পাকিস্তানের ১৩ জন জামায়াত নেতা ছিলেন। অধ্যাপক গোলাম আযম তাদের একজন। ঐ বছর অক্টোবরেই আবার নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হয়।
জামায়াতে ইসলামী, জেনারেল আইয়ুব খান সামরিক আইন ঘোষণার সময় পাকিস্তানে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে এবং ১৯৬৫ সালে সর্বদলীয় গণতান্ত্রিক জোট গঠিত হয়।
পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ প্রদত্ত ছয় দফা এবং মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ঘোষিত ১১ দফার তারা তীব্র বিরোধিতা করে। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামী পশ্চিম পাকিস্তানে ৪ টি আসন লাভ করে। মুক্তিযুদ্ধকালীন ১৯৭১ সালের ৩ সেপ্টেম্বর ডাঃ আব্দুল মালিক কে গভর্নর করে ১৭ই সেপ্টেম্বার একটি প্রাদেশিক সরকার গঠন করা হয়।সে সরকারের মন্ত্রী সভায় পরবর্তীকালে জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমীর আব্বাস আলী খান ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ (১৯৭১)
১৯৭১ সালে জামায়াতে ইসলামী, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করে। জামায়াতে ইসলামী মুক্তি যুদ্ধের সময় পাকিস্তানের পক্ষে কাজ করে। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সাথে এই দলের সদস্যরা হত্যা, ধর্ষন, লুটপাট, সংখ্যালঘু নির্যাতনে জড়িত থাকা সহ বিভিন্ন মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে জামায়াতে ইসলামীর অনেক নেতাকর্মীকে মৃত্যুদন্ডসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজা প্রদান করা হয়েছে।
২৫ মার্চ রাতে সংঘটিত অপারেশন সার্চলাইট এর ছয় দিন পর গোলাম আযম ঢাকা বেতার কেন্দ্র থেকে একটি ভাষণ দেন। এ ভাষণে তিনি ভারতের কড়া সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, ” ভারত সশস্ত্র অনুপ্রবেশকারী প্রেরণ করে কার্যত পূর্ব পাকিস্তানিদের দেশপ্রেমকে চ্যালেঞ্জ করেছে।…আমি বিশ্বাস করি যে, এই অনুপ্রবেশকারীরা পূর্ব পাকিস্তানি মুসলমানদের নিকট হতে কোন প্রকার সাহায্য পাবে না।
৩০ জুন লাহোরে সাংবাদিকদের কাছে গোলাম আযম বলেন, “তাঁর দল পূর্ব পাকিস্তানে দুস্কৃতকারীদের তৎপরতা দমন করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করছে এবং এ কারণেই দুস্কৃতকারীদের হাতে বহু জামায়াত কর্মী নিহত হয়েছে। ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল পাকিস্তানের অখণ্ডতা রক্ষার উদ্দেশ্যে গোলাম আযম পাকিস্তানের সামরিক শাসকের সাথে দেখা করে ঢাকায় শান্তি কমিটি গঠন করেন। এর সদস্য ছিলেন পাকিস্তানপন্থী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা। গোলাম আযম এই কমিটির নেতা ছিলেন।
১৯৭১ সালের ৫ ও ৬ সেপ্টেম্বর দৈনিক সংগ্রাম এ গোলাম আযমের পশ্চিম পাকিস্তান সফরকালের একটি সাক্ষাৎকারের পূর্ণ বিবরণ দুই কিস্তিতে ছাপা হয়। এই সাক্ষাতকারে তিনি মুক্তিবাহিনীর সাথে তার দলের সদ্স্যদের সংঘর্ষের বিভিন্ন বিবরণ ও পূর্ব পাকিস্তান পরিস্থতির ওপর মন্তব্য করেন। তিনি বলেন “বিচ্ছিন্নতাবাদীরা জামায়াতকে মনে করতো পহেলা নম্বরের দুশমন। তারা তালিকা তৈরি করেছে এবং জামায়াতের লোকদের বেছে বেছে হত্যা করছে, তাদের বাড়িঘর লুট করে জ্বালিয়ে দিয়েছে এবং দিচ্ছে। এতদসত্বেও জামায়াত কর্মীরা দেশের প্রতিরক্ষায় বাধ্য। কেননা তারা জানে ‘বাংলাদেশে’ ইসলাম ও মুসলমানদের জন্য কোনো স্থান হতে পারে না। জামায়াত কর্মীরা শহিদ হতে পারে কিন্তু পরিবর্তিত হতে পারে না।”
মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে সহায়তার জন্য রাজাকার বাহিনী গঠনের পেছনে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছিলেন বলে জামায়াতে ইসলামীর তৎকালীন নেতা এ কে এম ইউসুফের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে।যিনি পরবর্তীতে দলটির নায়েবে আমির হন। তিনি খুলনায় শান্তি কমিটির প্রধান ছিলেন।
পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে সহায়তা দানকারী নিন্দিত আধা-সামরিক বাহিনী আল-বদরের সাথে জামায়াতে ইসলামীর তৎকালীন ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘের নেতা-কর্মীরা সম্পৃক্ত ছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। যদিও জামায়াত প্রায়শই ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার ফলেই মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছে বলে উল্লেখ করে থাকে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল কর্তৃক ইতোমধ্যেই এই সংগঠনের বেশ কয়েকজন নেতাকে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে মানবতাবিরোধী বিভিন্ন অপরাধের অভিযোগে ফাঁসি ও অন্যান্য দন্ডের আদেশ দেয়া হয়েছে। যদিও এই রায়কে আন্তর্জাতিক মহল তৎকালীন সরকারের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত রায় বলে অভিহিত করেছেন।
বাংলাদেশ অধ্যায় (১৯৭১-বর্তমান)
১৯৭১ সালের পর ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হলে জামায়াত ও এর আওতায় পড়ে। ১৯৭৬ সালের আগস্টে জিয়াউর রহমান সরকার সকল ধরনের রাজনৈতিক দলের রাজনীতি উন্মুক্ত করে রাজনৈতিক দল অধ্যাদেশ ঘোষণা করেন। এ সময় ইসলামিক ডেমোক্রেটিক লীগ নামক একটি দলের সাথে জামায়াতে ইসলামী যুক্ত ছিল। পরে গোলাম আযম বাংলাদেশে ফিরে এলে ১৯৭৯ সালের মে মাসে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ গঠিত হয়। এসময় এর ভারপ্রাপ্ত আমীরের পদ লাভ করেন আব্বাস আলী খান। ২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনে এটি ৩০০ আসনের মধ্যে ১৮ টি আসন লাভ করে।পরবর্তীতে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের নেতৃত্বে গঠিত চার দলীয় ঐক্যজোটের অন্যতম শরিক হিসেবে সরকার গঠনে ভূমিকা পালন করে। এরপর ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে এটি ৩০০ আসনের মধ্যে ২ টি আসন লাভ করে।
জামায়াতে ইসলামী এর আগে সর্বশেষ ২০১৩ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি প্রকাশ্যে সমাবেশ করে। এরপর তারা শুধু জটিকা মিছিলে সীমাবদ্ধ ছিল। ১০ জুন ২০২৩ শনিবার দীর্ঘ এক দশক অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে ঢাকায় দলটি প্রকাশ্যে সমাবেশ করে।
নিবন্ধন বাতিল ও ফেরত
কয়েকটি ইসলামি সংগঠনের ২৫ জন সদস্য জামায়াতের নিবন্ধনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করলে ২০০৯ সালের ২৭ জানুয়ারি বাংলাদেশের হাই কোর্ট একটি রুল জারি করে। জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুজাহিদ এবং বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন সচিবকে ৬ সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলে আদালতের বেঞ্চ। পরবর্তীতে ১লা আগস্ট ২০১৩ সালে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট রুলের রায় ঘোষণা করে এতে সংগঠনের নিবন্ধন অবৈধ এবং সংগঠনটিকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের অযোগ্য ঘোষণা করা হয়।
১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন বাতিল করে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিল পুনর্বহাল চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আবেদন করে জামায়াত।
১ জুন ২০২৫ তারিখে আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায় বাতিল করে, দলটির নিবন্ধন ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন।[৪৯] আর ২৪ জুন ২০২৫ তারিখে জামায়াতে ইসলামীর জন্য পুরনো প্রতীক ‘দাঁড়িপাল্লা’সহ পুনরায় নিবন্ধন ফেরত সংক্রান্ত এক প্রজ্ঞাপন জারি করে নির্বাচন কমিশন।
নিষিদ্ধ ঘোষণা
২০২৪ সালের ১ আগস্ট বাংলাদেশ সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক জামায়াতে ইসলামী ও এর অঙ্গ সংগঠন বাংলাদেশ ইসলামি ছাত্র শিবিরকে নিষিদ্ধ সংগঠন হিসেবে তালিকভুক্ত করে প্রজ্ঞাপন জারি করে। প্রজ্ঞাপন মতে, সরকারের নির্বাহী আদেশে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ১৮(১) ধারা অনুযায়ী জামায়াতে ইসলামী, ছাত্রশিবির ও তাদের অন্যান্য অঙ্গসংগঠনকে নিষিদ্ধ করা হয়।
২০২৪ সালে জুলাইয়ে বাংলাদেশে সংগঠিত বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের ব্যানারে আয়োজিত কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সহিংসতার ঘটনায় জামায়াত ও এর ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবির জড়িত মর্মে অভিযোগ করে আসছিল সরকার। এমন পরিপ্রেক্ষিতে ২৯ জুলাই ২০২৪ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের সভায় জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করার বিষয়ে একমত হন নেতারা। বৈঠকে সিদ্ধান্তের পর সরকারের নির্বাহী আদেশে ১ আগস্ট এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
তবে ১৪ দলীয় জোটের সভায় জামায়াতে ইসলামী ও এর ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবির নিষিদ্ধের সিদ্ধান্তকে বেআইনি বলে দাবি করে আসছে দলটি।
গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন,
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট একটি রাজনৈতিক প্লাটফর্ম। একটি রাজনৈতিক দল বা জোট অন্য একটি রাজনৈতিক দলের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। বাংলাদেশের আইন ও সংবিধান কাউকে এ এখতিয়ার দেয়নি। কোনো দল বা জোট অন্য কোনো দলকে নিষিদ্ধ করার ধারা চালু হলে এক দল অন্য দলকে নিষিদ্ধ করতে থাকবে। তখন রাষ্ট্রের শৃঙ্খলা বলে কিছু থাকবে না।
সরকারের নির্বাহী আদেশে নিষিদ্ধ ঘোষণার পরও এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয় জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে। নিষিদ্ধের প্রজ্ঞাপন জারি হওয়ার পর এক বিবৃতিতে জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন,
সরকার ছাত্রদের অরাজনৈতিক আন্দোলনকে দমন করার জন্য দেশে দলীয় ক্যাডার ও রাষ্ট্রীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে গণহত্যা চালায়। সরকারের এই গণহত্যার বিরুদ্ধে দেশের শিক্ষকসমাজ, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, সাংবাদিক ও বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন করে যাচ্ছে। বিশ্বসম্প্রদায় এই গণহত্যার নিন্দা জানিয়েছে। সরকার নিজেদের অপকর্ম ঢাকার জন্য বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরকে নির্বাহী আদেশবলে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে চলমান আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে চাচ্ছে।
২৮ আগস্ট ২০২৪ তারিখে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জামায়াতের উপর অর্পিত নিষেধাজ্ঞা বাতিল করে দেয়।
নিষিদ্ধাদেশ প্রত্যাহার
২০২৪ সালের ১ আগস্ট বাংলাদেশ সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক জামায়াতে ইসলামী ও এর অঙ্গ সংগঠন বাংলাদেশ ইসলামি ছাত্র শিবিরকে নিষিদ্ধ সংগঠন হিসেবে তালিকভুক্ত করে প্রজ্ঞাপন জারি করে। প্রজ্ঞাপন মতে, সরকারের নির্বাহী আদেশে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ১৮(১) ধারা অনুযায়ী জামায়াতে ইসলামী, ছাত্রশিবির ও তাদের অন্যান্য অঙ্গসংগঠনকে নিষিদ্ধ করা হয়।
পরবর্তী ২৬ দিনের মাথায় এই আদেশটি প্রত্যাহার করে নেয় অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করে।
একাত্তরে বিতর্কিত ভূমিকার জন্য গোলাম আযম, নিজামীসহ জামায়াত নেতারা ক্ষমা চেয়েছেন?
“এগুলোতো ক্ষমা চাওয়া না। এগুলো হচ্ছে সমাজের সমালোচনার মুখে একটা পালিশ দেওয়া আর কি। একটা কোনো রকম দায়সারা গোছের কথা বলে তাদের সমর্থকদের বা তাদের নিয়ে যারা প্রশ্ন করছে, তাদের সমালোচনা বন্ধ করার একটা চেষ্টা”-আনু মুহাম্মদ
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে বিতর্কিত ভূমিকার কারণে ৫৫ বছর পরও ক্ষমা না চাওয়ায় প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হচ্ছে জামায়াতে ইসলামীকে। এনিয়ে দলটির নেতারা বিভিন্ন সময়ে নানা বক্তব্য দিয়েছেন।
সবশেষ জামায়াতের বর্তমান আমীর শফিকুর রহমান ১৯৪৭ সাল থেকে এখন পর্যন্ত তাদের দ্বারা কেউ কষ্ট পেয়ে থাকলে, বিনাশর্তে মাফ চেয়েছেন। কিন্তু ১৯৭১ সাল বা স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রসঙ্গ সুনির্দিষ্টভাবে তার বক্তব্যে আসেনি।
একইসাথে তিনি দাবি করেছেন, এর আগেও দলটির আরও দুই নেতা ক্ষমা চেয়েছেন। তবে এনিয়েও রাজনীতিতে তৈরি হয়েছে নানা আলোচনা।
প্রশ্ন উঠছে, ১৯৭১ সালের পাকিস্তানি সেনাদের সহায়তা করার যে অভিযোগ দলটির বিরুদ্ধে আছে, সে বিষয়ে আদৌ কি গোলাম আযম, মতিউর রহমান নিজামীসহ দলটির নেতারা কখনও ক্ষমা চেয়েছেন?
না কি রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর রাজনীতিতে সক্রিয় দলগুলোর মধ্যে জামায়াতে ইসলামীর যে প্রভাবশালী অবস্থান দৃশ্যমান হচ্ছে, সে জায়গা থেকে ক্ষমতার কাছাকাছি যাওয়ার চিন্তা থেকে মানুষের সহানুভূতি পেতে দলটির আমীর নতুন করে ক্ষমা চাওয়া প্রসঙ্গের অবতারণা করছেন, এমন প্রশ্নও তুলছেন অনেকে।ফলে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে বিতর্কিত ভূমিকার জন্য জামায়াতে ইসলামীর বিভিন্ন নেতাদের বক্তব্যগুলোর গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে বিশ্লেষকদের। দলটির নেতাদের এসব বক্তব্যে একাত্তর নিয়ে বিতর্কের মীমাংসা হচ্ছে না বলেও মনে করছেন তারা।
আদৌ কি ক্ষমা চেয়েছেন জামায়াত নেতারা?


জামায়াতের আমীর শফিকুর রহমান
জামায়াতে ইসলামের প্রসঙ্গ এলেই আলোচনায় আসে ১৯৭১ সালে দলটির ভূমিকার কথা।সেসময় বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে পাকিস্তানি সেনাদের সহযোগিতার জন্য জামায়াতের সহায়তায় মিলিশিয়া বাহিনী গঠন করা হয়।এসব মিলিশিয়া বাহিনীর বিরুদ্ধে রয়েছে খুন, ধর্ষণ, লুটপাট আর অগ্নিসংযোগের মতো অপরাধের নানা দালিলিক প্রমাণ।
স্বাধীনতার ৪২ বছর পর একাত্তরে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ড হয় দলটির কয়েকজন শীর্ষ নেতার, যদিও সেই বিচারপ্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন ছিল জামায়াতের।
কিন্তু স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়কার ভূমিকার জন্য এখন পর্যন্ত দলীয় বা আনুষ্ঠানিকভাবে দোষ স্বীকার করেনি তারা।
পাঁচ মাস আগে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়াত নেতা এটিএম এজহারুল ইসলামের মৃত্যুদণ্ড থেকে খালাসের রায় হয়।
এনিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে জামায়াতের আমীর শফিকুর রহমান বলেন, “মানুষ আমরা কেউ ভুলের উর্ধ্বে না। দল হিসেবে দাবি করি না, আমরা ভুলের ঊর্ধ্বে। এ সংগঠনের প্রতিটি কর্মী, সহকর্মী কিংবা দলের দ্বারা যে যেখানে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, কষ্ট পেয়েছেন, সবার কাছে বিনা শর্তে মাফ চাই। আপনারা আমাদের ক্ষমা করে দেবেন”।
গত ২২শে অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে এক অনুষ্ঠানে প্রসঙ্গটি আবারও আলোচনায় এলে শফিকুর রহমান বলেন, “শুধু ৭১ না, সাতচিল্লশ থেকে শুরু করে ২০২৫ সালের আজকে ২২শে অক্টোবরের এখানকার টাইম রাত ৮টা ১১ মিনিট – এই পর্যন্ত আমাদের দ্বারা যে যেখানে যত কষ্ট পেয়েছেন, আমরা বিনা শর্তে যারা কষ্ট পেয়েছেন তাদের কাছে মাফ চাই। এটা গোটা জাতি হলেও চাই, ব্যক্তি হলেও চাই। কোনো অসুবিধা নাই”।
তিনি দাবি করেন, তার আগে এই ‘এপোলজি’ তারা অন্তত আরও তিনবার দিয়েছেন। এসময় একজন সাংবাদিক তাকে বলেন “কেউ কেউ শুধু একাত্তর নিয়ে ক্ষমা চাইতে বলে”।
তার জবাবে শফিকুর রহমান বলেন, “শুধু একাত্তরেই ভুল করেছি আর করি নাই? আর যারা আমাদের ক্ষমা চাইতে বলে তারা ফেরেশতার দল?”
অনেকটা একই ভাষায় ১৯৯৪ সালে “দুঃখ প্রকাশ” করেছিলেন দলটির তৎকালীন আমীর গোলাম আযম।
স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় বিতর্কিত ভূমিকার জন্য বাতিল করা নাগরিকত্ব ফেরত পাবার পর ঢাকার বায়তুল মোকাররমের সামনে আয়োজিত এক সমাবেশে দেওয়া ভাষণে তিনি বলেন, “ইচ্ছাকৃতভাবে দেশের এবং জনগণের ক্ষতির কোনো চেষ্টা আল্লাহর রহমতে আমি কোনোদিন করিনি। যা ভালো বুঝেছি দেশের জন্য, জনগণের কল্যাণের জন্য – করেছি। এরপরও মানুষের ভুল হয়। ভুল হতে পারে। কেউ আমার কোনো কাজকে ভুল মনে করতে পারেন”।
“নবী ছাড়া কে দোষী নয়? দোষ কমবেশি সবারই আছে। তাই যারা আমার কোনো কাজকে ভুলে মনে করেছেন, আমার কোনো কাজে অসন্তুষ্ট হয়েছেন, আমার কোনো কাজে ব্যথিত হয়েছেন, দুঃখ পেয়েছেন – আমি তাদের সবাইকে জানাচ্ছি, আমিও আপনাদের বেদনার সাথে শরিক, আমিও দুঃখিত”, বলেন তিনি।
কাত্তর নিয়ে দলীয় অবস্থান তুলে ধরতে গিয়ে কয়েকদিন আগে জামায়াতের আমীর বলেছিলেন, তার আগে ক্ষমা চাওয়া আরও দুই জামায়াত নেতাদের একজন দলটির সাবেক আমীর মতিউর রহমান নিজামী।
যদিও নথিপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, মি. নিজামী তার বক্তব্যে একাধিকবার একাত্তরে দলটির ভূমিকাকে “রাজনৈতিক” দাবি করলেও কখনও কোনো ভুল স্বীকার করেননি।
২০০৫ সালে বিবিসি বাংলাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, “১৯৭১ সালে তারা যে ভূমিকা নিয়েছিলেন, সেটা ছিল রাজনৈতিক ভূমিকা, তারা ১৬ই ডিসেম্বরের পরে বাংলাদেশের বাস্তবতাকে মেনে নিয়েছেন”।
১৯৭১ সালে দলটির ভূমিকা ভুল থাকার বিষয়টি জামায়াতে ইসলামী স্বীকার করে নিচ্ছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে নিজামী বলেছিলেন, রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ব্যাপারে নানা মতের সুযোগ আছে। কেউ এটাকে ভুল বলতে পারে, কেউ কেউ অন্যভাবেও বলতে পারে।
তবে মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজনৈতিক ভূমিকার বাইরে কোনো ধরনের অপরাধমূলক কাজকর্মের সঙ্গে জামায়াতে ইসলামী জড়িত ছিল না বলেও সেসময় দাবি করেন তিনি।
জামায়াতের আমীরের বক্তব্য কি দলীয় বক্তব্য?
সরকারিভাবে স্বীকৃত হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ৩০ লক্ষ মানুষ প্রাণ হারান। ধর্ষণের স্বীকার হন দুই লক্ষ নারী। সেই অপরাধে সরাসরি সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ থাকার পরও দল হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চায়নি জামায়াত।
এবারও পাঁচ মাসের ব্যবধানে দলটির প্রধান নেতা দুইবার ক্ষমা চাইলেও সময় বা অপরাধের বিষয়টি স্পষ্ট করেননি, যেমনটা দেখা গেছে গোলাম আযমের বেলাতেও।
তবে মি. আযম ব্যক্তিগতভাবে দুঃখ প্রকাশ করলেও বর্তমান জামায়াতে আমীরের ক্ষমা চাওয়ার দুইটি ঘটনাতেই তিনি “আমরা” শব্দটি ব্যবহার করেছেন। অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন তাহলে কি তিনি দলের পক্ষ থেকে ক্ষমা চেয়েছেন?
যদিও ক্ষমা চাওয়ার বিষয়ে জামায়াতের আমীরের বলা কথা দলের আনুষ্ঠানিক বক্তব্য নয়, এমনটি বলছেন দলটির কেউ কেউ।
“ভুলতো হইতেই পারে উনি বলেছেন মানুষ হিসেবে। এই সকল কিছুর জন্য উনি নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছেন। সুতরাং এটা আমাদের দলীয় বক্তব্য না হলেও যেহেতু এটা আমীরে জামায়াত বলেছেন, আমরা ওনার বক্তব্যের সাথে দ্বিমত পোষণ করি না”, বিবিসি বাংলাকে বলেন জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের।
একইসাথে ৭১ নিয়ে আলোচনা বা যুক্তিতর্কে সে ঘটনাকে অতীত হিসেবেই দেখাতে চায় জামায়াত, যার সঙ্গে মেলে বর্তমান ও সাবেক জামায়াতে আমীরের কথা।
১৯৯২ সালে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মতিউর রহমান নিজামী বলেছিলেন, “আমাদের সেসময় রাজনৈতিক অবস্থানটা ভিন্ন ছিল, সেটা সকলের জানা। আমরা বাংলাদেশের বাস্তবতা মেনে নিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের হেফাজতের জন্য আন্তরিকভাবে প্রচেষ্টা চালাচ্ছি”।
সম্প্রতি নিউইয়র্কে দেওয়া বক্তব্যে শফিকুর রহমান বলেন, “যে জাতি চিংড়ি মাছের মতো লাফাইতে গিয়া শুধু পিছনের দিকে যায়, সেই জাতির কোনো ভবিষ্যৎ নাই”।
‘এগুলোতো ক্ষমা চাওয়া না’
আজ পর্যন্ত ১৯৭১ সালের বিতর্কিত ভূমিকার জন্য দলীয় বা আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চায়নি জামায়াত।
২০২৪ সালের পাঁচই অগাস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর প্রভাবশালী দল হিসেবে দেখা যাচ্ছে দলটিকে। জনসাধারণের সমর্থন পেলে রাষ্ট্র ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্নও দেখছেন জামায়াতের নেতারা।
আর সেই লক্ষ্যেই দলটির অবস্থান নিয়ে নানা সময়ে ওঠা প্রশ্ন-সমালোচনা বন্ধে তারা কৌশলগত অবস্থান নিচ্ছেন, আছে এমন আলোচনা।
ফলে সাম্প্রতিক সময়ে জামায়াতের নেতাদের অবস্থান নিয়েও রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মনে সন্দেহ রয়েছে।
এনিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক এবং নাগরিক অধিকার নিয়ে আন্দোলনকারী আনু মুহাম্মদ বিবিসি বাংলাকে বলেন, “এগুলোতো ক্ষমা চাওয়া না। এগুলো হচ্ছে সমাজের সমালোচনার মুখে একটা পালিশ দেওয়া আর কি। একটা কোনো রকম দায়সারা গোছের কথা বলে তাদের সমর্থকদের বা তাদের নিয়ে যারা প্রশ্ন করছে, তাদের সমালোচনা বন্ধ করার একটা চেষ্টা”।
কিন্তু এভাবে দায় এবং দায়িত্ব থেকে মুক্তি পাওয়া যায় না উল্লেখ করে তিনি বলেন, “দায় নিয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবেতো বটেই, যে রাজনীতি এবং মতাদর্শের কারণে এমন ঘটনা ঘটে, সেটা থেকে না বের হলেতো ওটারই ধারবাহিকতা আমরা দেখতে থাকবো। যেটার লক্ষণ এখনই আমরা দেখতে পাচ্ছি”।
তথ্যসূত্র: উইকপিডিয়া, বিবিসিবাংলা

