ভূমিকম্প কেন হয়
ভূ-অভ্যন্তরে শিলায় পীড়নের জন্য যে শক্তির সঞ্চয় ঘটে, সেই শক্তির হঠাৎ মুক্তি ঘটলে ভূ-পৃষ্ঠ ক্ষণিকের জন্য কেঁপে ওঠে এবং ভূ-ত্বকের কিছু অংশ আন্দোলিত হয়। এই রূপ আকস্মিক ও ক্ষণস্থায়ী কম্পনকে ভূমিকম্প বলে।
কম্পন-তরঙ্গ থেকে যে শক্তির সৃষ্টি হয়, তা ভূমিকম্পের মাধ্যমে প্রকাশ পায়। এই তরঙ্গ ভূ-গর্ভের কোনও নির্দিষ্ট অঞ্চলে উৎপন্ন হয় এবং উৎসস্থল থেকে চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ে। ভূমিকম্প সাধারণত কয়েক সেকেণ্ড থেকে ১/২ মিনিট স্থায়ী হয়।তবে কিছু কিছু ভূমিকম্প ৮-১০ মিনিটও স্থায়ী হয়।মাঝে মাঝে কম্পন এত দুর্বল হয় যে, তা অনুভব করা যায় না। কিন্তু শক্তিশালী ও বিধ্বংসী ভূমিকম্পে ঘর-বাড়ি ও ধন-সম্পত্তির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয় এবং অসংখ্য প্রাণহানি ঘটে।
সাধারণ জ্ঞানে ভূমিকম্প শব্দটি দ্বারা যে কোন প্রকার ভূকম্পন জনিত ঘটনাকে বোঝায় – সেটা প্রাকৃতিক অথবা মনুষ্য সৃষ্ট যাই হোক না কেন। বেশিরভাগ ভূমিকম্পের কারণ হল ভূগর্ভে ফাটল ও স্তরচ্যুতি হওয়া কিন্তু সেটা অন্যান্য কারণ যেমন অগ্ন্যুৎপাত, ভূমিধস, খনিতে বিষ্ফোরণ বা ভূগর্ভস্থ নিউক্লিয়ার গবেষণায় ঘটানো আণবিক পরীক্ষা থেকেও হতে পারে। ভূমিকম্পের প্রাথমিক ফাটলকে বলে ফোকাস বা হাইপোসেন্টার। এপিসেন্টার হল হাইপোসেন্টার বরাবর মাটির উপরিস্থ জায়গা।
জাপানের ভৌগলিক অবস্থান গত কারণে দেশটি পৃথিবীর যেই কোনো দেশের চেয়ে বেশি ভূমিকম্প অনুভূত করে থাকে। দেশটিতে প্রতি বছর গড়ে দুই হাজার এর মত ভূমিকম্প সংঘটিত হয়ে থাকে।
ভূমিকম্পের প্রকোপ পৃথিবীর সর্বত্র সমান নয়
প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল : প্রশান্ত মহাসাগরের বহিঃসীমানা বরাবর সবচেয়ে বেশি ভূমিকম্প হয়। এ অংশের জাপান, ফিলিপাইন, চিলি, অ্যালিসিয়ান দীপপুঞ্জ ও আলাস্কা সবচেয়ে বেশি ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকা হিসেবে পরিচিত।
ভূমধ্যসাগরীয়-হিমালয় অংশ : এ অংশ আল্পস পর্বত থেকে শুরু করে ভূমধ্যসাগরের উত্তর তীর হয়ে ককেশাস, ইরান, হিমালয়, ইন্দোচীন ও পূর্ব ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জ হয়ে নিউজিল্যান্ড পর্যন্ত বিস্তৃত।
মধ্য আটলান্টিক : ভারত মহাসাগরীয় শৈলশিরা অংশ উত্তর-দক্ষিণ বরাবর মধ্য আটলান্টিক শৈলশিরা এবং ভারত মহাসাগরীয় শৈলশিরা একত্র হয়ে মিলে আফ্রিকার লোহিত সাগর বরাবর ভূমধ্যসাগরীয় অংশের সঙ্গে মিলেছে। এ তিনটি প্রধান বলয় ছাড়াও বিচ্ছিন্নভাবে ভূপৃষ্ঠের অভ্যন্তরে এবং মহাসাগরের খাদে কিছু অংশে ভূমিকম্পের প্রকোপ দেখা যায়। ভূমিকম্পের কারণ অনুসন্ধানকালে বিজ্ঞানীরা লক্ষ করেন পৃথিবীর বিশেষ কিছু এলাকায় ভূকম্পন বেশি হয়। এসব এলাকায় নবীন পর্বতমালা অবস্থিত। পৃথিবীর ব্যবচ্ছেদে দেখা যায়, ভূত্বক ৮টি বড় বড় টুকরা এবং ৬টি আঞ্চলিক টুকরা দ্বারা বিভক্ত। এগুলো টেকনিক প্লেট নামে পরিচিত। ভূপৃষ্ঠে যেসব কারণে ভূমিকম্প হয়ে থাকে, এর মধ্যে অন্যতম হলো এই প্লেটগুলোর বিভিন্ন রকমের স্থানান্তর বা বিচ্যুতি। ভিত্তিশিলাচ্যুতি বা ফাটল বরাবর আকস্মিক ভূ-আলোড়ন হলে ভূমিকম্প হয়। আগ্নেয়গিরির লাভা প্রচ- শক্তিতে ভূ-অভ্যন্তর থেকে বের হয়ে আসার সময়ও ভূমিকম্পের সৃষ্টি হয়।
ভূমিকম্পে গত পৌনে চার বছরে ৪৭ বার কেঁপেছে বাংলাদেশ। ২০১৮ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে এ সংখ্যা বেড়েছে। ছোট ও মাঝারি মাত্রার এসব ভূমিকম্পের উৎসস্থলের ২০টি ছিল দেশের ভেতর, বাকি ২৭টি ছিল সীমান্ত এলাকাসহ আশপাশের দেশগুলো। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, দেশে বড় রকমের ভূমিকম্পের আশঙ্কা রয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বারবার ভূমিকম্প হওয়ার অর্থ ফল্ট লাইনগুলো সক্রিয় আছে। – প্রথম আলো
আর ফল্ট লাইন সক্রিয় থাকায় বড় ধরনের ভূমিকম্প হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে ভূমিকম্পজনিত দুর্যোগ থেকে জীবন ও সম্পদ রক্ষায় সরকারি–বেসরকারি পর্যায়ে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়ার ওপর জোর দিচ্ছেন তাঁরা। যেমন ভূমিকম্প–সহনশীল ভবনসহ অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণ, জনসচেতনতা বৃদ্ধি, ভূমিকম্প মোকাবিলায় পূর্বপ্রস্তুতি এবং ভূমিকম্প-পরবর্তী উদ্ধার, ত্রাণ ও পুনর্গঠন কর্মসূচি হাতে নেওয়া।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্যমতে, ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৪৭টি ভূমিকম্পের প্রভাবে কেঁপেছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে ২০১৮ সালে ৪ বার, ২০১৯ সালে ৭ বার, ২০২০ সালে ১৫ বার এবং চলতি বছেরর প্রথম ৯ মাসে ২১ বার ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। সর্বশেষ ৭ অক্টোবর রাত ১২টা ২৮ মিনিটে ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে দেশ। রিখটার স্কেলে ৫ দশমিক ৬ মাত্রার এই ভূমিকম্পের উৎসস্থল ছিল মিয়ানমারের মানওয়া। ভূমিকম্পটির কেন্দ্র ছিল ভূপৃষ্ঠ থেকে ১১৪ কিলোমিটার গভীরে।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মেহেদী আহমেদ আনসারি বলেন, ‘গত দু-তিন বছরে দেশে ভূমিকম্পের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। আবার ১০০ বছরের মধ্যে আমাদের এখানে বড় ভূমিকম্প হয়নি তেমন। এটা একটা জিনিস নির্দেশ করে যে এগুলো শক্তি সঞ্চয় করছে। ফলে সামনে বড় ভূমিকম্পের শঙ্কা আছে।’
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাংলাদেশ সরকার ও জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) সার্বিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মসূচি (পিডিএমপি) প্রকল্পের সাবেক পরিচালক আবদুল কাইয়ূম বলেন, ‘ছোট ছোট ভূমিকম্প হওয়ার অর্থ হলো এই ফল্ট লাইনগুলো সক্রিয়। সক্রিয়তাই প্রমাণ করে যেকোনো সময় বড় ধরনের ভূমিকম্প হওয়ার আশঙ্কা আছে।’
ব্রিটিশ পত্রিকা দ্য গার্ডিয়ান মাত্রার বিচারে বিশ্বের শীর্ষ ১০ ভূমিকম্পের তালিকা
১. চিলি, ২২ মে ১৯৬০ : মাত্রা—৯ দশমিক ৫
চিলির এ ভূমিকম্প এখন পর্যন্ত বলা হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় মাত্রার ভূমিকম্প। রিখটার স্কেলে ৯ দশমিক ৫ মাত্রার এই ভূমিকম্পে চিলিতে মারা গিয়েছিল চার হাজার ৪৮৫ মানুষ। আহত হয়েছিল ২০ লাখের বেশি। ১৯৬০ সালে লাতিন আমেরিকার দেশ চিলির দক্ষিণাঞ্চলে এই শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হেনেছিল। এই ভূমিকম্পে পুয়ের্তো সাভেদ্রা নামে একটি সমুদ্রবন্দর পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। এই ভূমিকম্পের ফলে সাগরে সুনামির সৃষ্টি হয়। সুনামিতে সৃষ্ট ঢেউয়ের কবলে পড়ে ফিলিপাইন ও জাপানে মারা গিয়েছিল আরো ১৭০ জন।
২. প্রিন্স উইলিয়াম সাউন্ড, আলাস্কা, ২৪ মার্চ ১৯৬৪ : মাত্রা—৯ দশমিক ২
এই ভূমিকম্পের ফলে আলাস্কায় ভয়ংকর ভূমিধসের সৃষ্টি হয়েছিল। এতে সাগরে সুনামিরও সৃষ্টি হয়। মৃতের সংখ্যা ছিল ১২৮ জন আর ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ছিল ৩১ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার।
৩. উত্তর সুমাত্রার পশ্চিম উপকূল, ২৬ ডিসেম্বর ২০০৪ : মাত্রা—৯ দশমিক ১
ভূমিকম্পের সঙ্গে সমুদ্রপৃষ্ঠের পানির উচ্চতা বেড়ে যাওয়ার একটা সম্পর্ক রয়েছে, এটাই সুনামি নামে পরিচিত। পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে প্রাণঘাতী সুনামি বলা হয় ২০০৪ সালে, একটি ৯ দশমিক ১ মাত্রার ভূমিকম্পের পর। এশিয়া ও পূর্ব আফ্রিকার ১৪টি দেশে অনুভূত হয়েছিল এই ভূমিকম্প ও সুনামি। এই সুনামিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল ইন্দোনেশিয়া; এক লাখ ৭০ হাজার মানুষ এতে প্রাণ হারায়। অনেক মৃতদেহই উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। মৃতের সংখ্যা নিরূপণ করতে কয়েক মাস সময় লেগে যায়। ইন্দোনেশিয়ার মৎস্য শিল্প ও কারখানার প্রায় ৬০ শতাংশ পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যায় এই সুনামিতে।
৪. কামচাটকা, ৪ নভেম্বর ১৯৫২ : মাত্রা—৯
রাশিয়ার দূরপ্রাচ্যে আঘাত হেনেছিল শক্তিশালী এই ভূমিকম্প। এর ফলে প্রশান্ত মহাসাগরে সৃষ্টি হয়েছিল সুনামি। কামচাটকা উপদ্বীপ ছিল এই ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল। তিন হাজার মাইলজুড়ে অনুভূত হয়েছিল এই ভূকম্পন, যা রাশিয়ার দূরপ্রাচ্য ও হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জে অনুভূত হয়েছিল। তবে এই ভূমিকম্পে হতাহতের কোনো ঘটনা ঘটেনি। পেরু ও চিলিতেও আঘাত হেনেছিল এই ভূমিকম্প।
৫. আরিকা, পেরু (বর্তমান চিলি), ১৩ আগস্ট ১৮৬৮ : মাত্রা—৯
প্রশান্ত মহাসাগরে সৃষ্ট এই ভূকম্পন হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জ পর্যন্ত অনুভূত হয়েছিল। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল দক্ষিণ আমেরিকার আরেকুইপা শহর। সেখানে মারা যায় ২৫ হাজার মানুষ। বলিভিয়ার লা পাজ শহরেও অনুভূত হয়েছিল ভূকম্পন। প্রথম আঘাত হানার চার ঘণ্টা পর ভূমিকম্পটির আফটার শক আঘাত হানে সমুদ্রে। এতে ১৬ মিটার উঁচু ঢেউ আছড়ে পড়েছিল সৈকতে।
৬. যুক্তরাষ্ট্রের উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরীয় উপকূল, ২৬ জানুয়ারি ১৭০০ : মাত্রা—৯ (আনুমানিক)
অনেক আগের এই ভূমিকম্পের কোনো দালিলিক প্রমাণ না থাকলেও উত্তর আমেরিকার বাসিন্দারা মুখে মুখে শুনেছেন এই ভূমিকম্প এবং তার ক্ষয়ক্ষতির কথা। উত্তর আমেরিকা মহাদেশের অন্যতম ভয়াবহ ভূমিকম্প মনে করা হয় এটিকে। ভ্যাঙ্কুভার দ্বীপের পাচেনা উপকূলে বসবাস করা জনগোষ্ঠী সুনামিতে সৃষ্ট ঢেউয়ের কারণে তলিয়ে গিয়েছিল।
৭. চিলি, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১০ : মাত্রা—৮ দশমিক ৮
সপ্তদশ শতক থেকেই চিলিতে ছোট-বড় ভূমিকম্প অনুভূত হয়ে আসছে। ২০১০ সালের এই ভূমিকম্পে প্রাণ হারান ৫২১ জন মানুষ। আহত হন অন্তত ১২ হাজার। আট লাখ মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েন।
৮. ইকুয়েডরের উপকূল, ১৩ জানুয়ারি ১৯০৬ : মাত্রা—৮ দশমিক ৮
ইকুয়েডর ও কলম্বিয়ার সমুদ্র উপকূলে সৃষ্ট এই সুনামিতে মারা যায় পাঁচ শতাধিক মানুষ। আহত হয় আরো দেড় হাজার। মধ্য আমেরিকা ও সানফ্রান্সিসকোতেও অনুভূত হয় এই ভূমিকম্প। ভূমিকম্পের প্রভাবে হাওয়াইয়ের নদীগুলো প্লাবিত হয়ে বন্যার সৃষ্টি হয়েছিল।
৯. লিসবন, ১ নভেম্বর ১৭৫৫ : মাত্রা—৮ দশমিক ৭
পর্তুগালের রাজধানী লিসবনে আঘাত হানা শক্তিশালী এই ভূমিকম্পে শহরের প্রায় অর্ধেক মানুষ প্রাণ হারিয়েছিল। ভূকম্পনের ফলে সৃষ্ট সুনামি এবং অগ্নিকাণ্ড পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ করে তোলে। উত্তর আমেরিকা, ফ্রান্স ও উত্তর ইতালিতে অনুভূত হয়েছিল এই ভূমিকম্প।
১০. আসাম-তিব্বত, ১৫ আগস্ট ১৯৫০ : মাত্রা—৮ দশমিক ৬
ভয়াবহ এই ভূমিকম্পে আসাম-তিব্বতের ৭০টি গ্রাম নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ভারতের আসাম প্রদেশ। এতে মারা যায় এক হাজার ৫২৬ জন মানুষ। ভূমিকম্পের পরে ভয়াবহ বন্যা দেখা দেয়।
গত সোমবার ভোর রাতে গাজিয়ানটেপের কাছে ৭.৮ মাত্রার ভূমিকম্পটি আঘাত হানে ২০২৩ সালে ভূমিকম্পে তুরস্ক ও সিরিয়ায় নিহতের সংখ্যা আজ পর্যন্ত ১৫ হাজার
দক্ষিণ তুরস্ক এবং উত্তর সিরিয়ায় বিধ্বংসী এক ভূমিকম্পে এখনো পর্যন্ত অন্তত ১৫ হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হবার খবর নিশ্চিত হয়েছে। এ সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে আশংকা করা হচ্ছে।
গত সোমবার ৬ফেব্রুয়ারি ২০২৩ স্থানীয় সময় প্রায় বেলা দেড়টার দিকে আরও একটি ৭.৫-মাত্রার ভূমিকম্প হয়।
তুর্কি দুর্যোগ সংস্থা জানিয়েছে, প্রথম ভূমিকম্পটিতেই তুরস্কে ৩,৪১৯ জনেরও বেশি মারা গেছে এবং আহত হয়েছে আরও ১৫ হাজার মানুষ।অন্যদিকে সিরিয়ায় ১৬০০ জনেরও বেশি লোক মারা গেছে বলে জানা যাচ্ছে।গত সোমবার পর পর দুটি ভূমিকম্পের পর তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চলে পর পর কয়েকটি শক্তিশালী আফটারশক ও কম্পন আঘাত হেনেছে।কর্মকর্তারা বলেছেন যে এটি ‘আফটারশক’ ছিল না।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ডাব্লিউএইচও বলছে, দুই দেশ মিলিয়ে, তাদের হিসেবে অনুযায়ী, দুই কোটি ৩০ লক্ষ মানুষ ভূকম্পের শিকার হয়েছেন।
এর মধ্যে প্রায় ১০ লক্ষেরও বেশি শিশু রয়েছে বলে ডব্লিউএইচওর সিনিয়র জরুরি কর্মকর্তা অ্যাডেলহেইড মার্শাং এর আগে জাতিসংঘ স্বাস্থ্য সংস্থার নির্বাহী কমিটিকে জানিয়েছেন।
সিরিয়ায় উদ্ধার অভিযানে ইতোমধ্যেই সমস্যা বাড়তে শুরু করেছে। রাস্তাঘাট ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় তুরস্ক থেকে জাতিসংঘের জরুরি সাহায্য পাঠানোর পথ বন্ধ হয়ে গেছে।
তুরস্ক পৃথিবীর অন্যতম সক্রিয় ভূমিকম্প প্রবণ অঞ্চলগুলোর একটিতে অবস্থিত।
এর আগে ১৯৯৯ সালে দেশটির উত্তর পশ্চিমাঞ্চলে একটি শক্তিশালী ভূমিকম্পে ১৭ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছিল।সর্বশেষ ভূমিকম্পটি ঘটেছে তুরস্কের দক্ষিণ-পূর্ব সীমান্তের কাছে দক্ষিণ-পশ্চিম থেকে উত্তর-পশ্চিমমুখী ‘পূর্ব আনাতোলিয়ান ফল্ট’-এর চারপাশে।সিসমোলজিস্টরা দীর্ঘকাল ধরে বলে আসছেন যে এই ফল্টটি অত্যন্ত বিপজ্জনক, যদিও গত ১০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে সেখানে কোনও উল্লেখযোগ্য ভূকম্পন হয়নি।
তবে অতীতে এই এলাকায় কিছু মারাত্মক ভূমিকম্প হয়েছে।বিশেষ করে, ১৮৮২ সালের ১৩ই অগাস্ট সেখানে ৭.৪-মাত্রার একটি ভূমিকম্প হয়েছিল, যা আজকের রেকর্ড করা ৭.৮-মাত্রার চেয়ে উল্লেখযোগ্যভাবে কম।তা সত্ত্বেও, ১৯ শতকের সেই ভূমিকম্পে অনেক শহরের প্রচুর ক্ষতি হয়। আলেপ্পো শহরে ৭,০০০ মানুষ মারা যায়।শক্তিশালী ঐ ভূমিকম্পের আফটারশক চলতে থাকে প্রায় এক বছর ধরে।
তথ্য সূত্র : উইকিপিডিয়া/ বিবিসি বাংলা/ প্রথমআলো