মেহেরপুর প্রেস ক্লাবের ইতি কথা ১৯৬৭-২০২০ সাল
মো: রুহুল কুদ্দুস টিটো
দিন যায় কথা থাকে, ৫৩ বছরের ইতিহাস লেখা বেশ কঠিন কাজ। আমার জন্য নির্দ্ধারিত বিষয় ”মেহেরপুর প্রেসক্লাবের ইতিকথা লেখার জন্য ফারুক হোসেন ও বেন-ইয়ামিন মুক্ত আমাকে চিঠি খানা ধরিয়ে দিয়ে খালাস। আর আমার অবস্তা ত্রাহী ত্রাহী মধুসদন। লেখার শুরুতে বলে রাখি আমার ৬২ বছর বয়সে স্মৃতিরোমন্থন করে লিখতে যেয়ে ভুল হতে পারে। কেউ বাদ পড়ে যেতে পারেন। যদি এমনটা আপনাদের নজরে পড়ে তা হলে জানবেন এটি অনিচ্ছাকৃত। দয়া করে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে নেবেন। এক বসাতে ইতিকথা মানে ইতিহাস লেখা পূর্ণতা পায় না। কিছু ত্রটি থেকেই যেতে পারে। পরে সংশোধন করে নেয়া হয়।
অমর্ত্য সেনের ভাষায় ইতিহাস লেখা এত সহজ নয়। এটা অত্যান্ত কঠিন কাজ । ইতিহাস লিখতে বিচার বুদ্ধি ও নানা দিকের বিচার বিশ্লেষণ করে ইতিহাস লিখতে হয়, একটা সঠিক চিত্র তৈরী করা খুব কঠিন।
এ ইতিকথা লিখতে যেয়ে আমি হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি অমর্ত্য সেনের এ কথার। মেহেরপুর প্রেসক্লাবের ছোট অথচ গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানটি গড়তে কতটা বন্ধুর পথ পাড়ি দিতে হয়েছে, যা আগামী প্রজন্মর জানা দরকার। আমি আমার সাধ্যানুযায়ী প্রাপÍ তথ্য এ লেখায় উপস্থাপনের চেষ্টা করেছি মাত্র। সঠিক দিন ক্ষন ঠিক না হলে কি আর করা যা স্মৃতিতে আছে তা আর অন্যের সাহয্য নিয়ে উপস্থাপন করার চেষ্টা ইতিহাস বলা চলে কিনা তা জানিনা তবে এটা নিশ্চিত বলা যাবে স্মৃতি রোমন্থন।
আমার সাংবাদিকতার হাতে খড়ি ১৯৭৪ সালে। প্রথমে সাপ্তাহিক কিষাণ পরবর্তীতে সাপ্তাহিক থেকে দৈনিকে রুপান্তর হয়। ৭৫ সালে ইত্তেফাকে মেহেরপুরের ট্রেজারী লুটের খবর দিয়ে কাজ শুরু হয় । এ ছাড়া দৈনিক পূর্বাঞ্চল, দৈনিক খবর ’৯০ দশকে মেহেরপুরে প্রথম কম্পিউটার কম্পোজে আমার সম্পাদনায় ও প্রকাশনায় পাক্ষিক পশ্চিমাঞ্চল বের করতাম। দৈনিক মুক্তকন্ঠে ২০০১ সাল পর্যন্ত সাংবাদিকতা করি। চাকুরীর কারনে অনত্র বদলি হওয়ায় সাংবাদিকতায় ছিলাম না বেশ কয়েক বছর । তবে লেখা চর্চা চলত। অবসরে এসে আবার যুক্ত হই মেহেরপুরে এ সাংবাদিকতায়। এখন ফ্রি ল্যান্সিং সাংবাদিকতায়। ১৯৭৪ থেকে ২০০১ পর্যন্ত প্রায় ২৭ বছর মেহেরপুরের সাংবাদিক যুক্ত হয়ে অনেক অভিজ্ঞতা অর্জন হয়েছে এখনো অর্জন করছি নানা ভাবে। সাংবাদিকতার সুবাদে আমার মেহেরপুর প্রেসক্লাবে যুক্ত হওয়া আশির দশক থেকে প্রেসক্লাবে অর্জিত অভিজ্ঞতার এ স্বল্প পরিসরে তুলে ধরার চেষ্টা করছি।
১. বাংলাদেশে প্রেসক্লাব গঠনের সংক্ষিপ্ত কথা
প্রেসক্লাব সাংবাদিকদের একটি সংঘবিশেষ। সাংবাদিকদের সামাজিক মিলনকেন্দ্র বা অবসর বিনোদনের স্থল হলেও মূলত বুদ্ধিচর্চার পীঠস্থান হিসেবেই এর সর্বাধিক পরিচিতি। প্রেসক্লাবের গঠনকাঠামো ও আদর্শ-উদ্দেশ্য সব দেশে হুবহু একরকম নয়।
বাংলাদেশের প্রধান প্রেসক্লাব সহ প্রায় প্রতিটি জেলা ও গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলে আলাদা আলাদা প্রেসক্লাব রয়েছে। স্ব-নিয়ন্ত্রিত এ প্রতিষ্ঠানগুলোর গঠনবিধি ও লক্ষ্য-উদ্দেশ্য স্বকীয় বৈশিষ্ঠপূর্ণ । অবিভক্ত বাংলায় প্রথম প্রেসক্লাব প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৪৫ সালে কলকাতায়। এর প্রথম প্রেসিডেন্ট ছিলেন দ্য স্টেটসম্যান পত্রিকার পূর্ণচন্দ্র সেন এবং সেক্রেটারি ছিলেন হিন্দুস্থান স্ট্যান্ডার্ড পত্রিকার মণীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য। প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন অমৃতবাজার পত্রিকার অবনিমোহন মজুমদার ও দ্য স্টেটসম্যান-এর ডব্লিউ. এইচ নানি-সহ ৪৫ জন সাংবাদিক।
দেশ বিভাগের পর এ অঞ্চলে প্রেসক্লাব প্রতিষ্ঠার চিন্তাভাবনা শুরু হয় ১৯৪৮ সালে। অ্যাসোসিয়েট প্রেস অব ইন্ডিয়ার প্রতিনিধি পি.এম বালান, ইংল্যান্ডের ডেইলি মেইল-এর প্রতিনিধি দৈনিক সংবাদ-এর তৎকালীন সম্পাদক খায়রুল কবির এবং বার্তা সম্পাদক সৈয়দ নূরুদ্দিন ছিলেন এর উদ্যোক্তা। দু বছর পর এ আলোচনায় যুক্ত হন পূর্ব পাকিস্তান সরকারের ডাইরেকটর অব ইনফরমেশন সৈয়দ মোহাম্মদ হোসেন এবং দি অবজার্ভার সম্পাদক আব্দুস সালাম।এক পর্যায়ে এপিপি-র ম্যানেজিং এডিটর এ.এম.এ আজিমকে সভাপতি এবং ইউপিপি’র সম্পাদক আব্দুল মতিনকে সম্পাদক করে পূর্ব পাকিস্তান প্রেসক্লাব (ইপিপিসি) নামে স্মারক পরিমেল সমিতি গঠিত হয়।বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পর ১৯৭২ সালে পূর্ব পাকিস্তান প্রেসক্লাব সংশোধন করে নাম রাখা হয় বাংলাদেশ জাতীয় প্রেসক্লাব। (তথ্যসূত্র উকিপিডিয়া)
২. মেহেরপুর প্রেসক্লাব প্রতিষ্ঠার ইতিকথা
জাতীয় প্রেসক্লাবের পথ ধরে মেহেরপুর তৎকালীন মহকুমায় গঠিত হয় মেহেরপুর প্রেসক্লাব। প্রতিষ্ঠিত হয় প্রথম ১৯৬৭ সালে। দৈনিক সংবাদের সাংবাদিক ইসলাম আলী, দৈনিক আজাদের আনছারুল হক, অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস অব পাকিস্তানের (এপিপি) মোজাম্মেল হক এবং মৃণাল কান্তি ভট্টাচার্যসহ আরো কয়েকজন সাংবাদিককে সংগে নিয়ে তৎকালীন মহকুমা প্রশাসকের আন্তরিক পৃষ্ঠপোষকতায় ক্লাব প্রতিষ্ঠা করা হয়।
সে সময়ের মেহেরপুর মহকুমা প্রশাসক এ ওয়াই এম আর ওসমানীকে সভাপতি এবং ইসলাম আলীকে সাধারণ সম্পাদক করে মেহেরপুর প্রেসক্লাবের প্রথম কমিটি গঠন করা হয়। ৬০ এর দশকে উল্লেখিত কয়েকজন সাংবাদিক একত্রিত হয়ে তৎকালীন মহকুমা প্রশাসককে সভাপতি করে মেহেরপুর প্রেসক্লাব এর যাত্রা শুরু করেন। যতদূর মনে পড়ে ১৯৬৮-৬৯ সালের দিকে এখন যেখানে তারিক হোমিও হল সেখানেই ঘর ভাড়া নিয়ে মেহেরপুর প্রেসক্লাব এর যাত্রা শুরু করেন তৎকালীন সাংবাদিকবৃন্দ।
১৯৭১ পরবর্তী মেহেরপুর প্রেসক্লাব মহকুমা প্রশাসক মোমেনুল হক যিনি প্রেস ক্লাবের সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছিলেন। তিনি মেহেরপুর প্রেস ক্লাবের জন্য একটি জমি বরাদ্দ দিয়েছিলেন। যায়গাটি তখনকার শত্রæ সম্পতি খুকি ঘোষালির ছিল। যা পরে প্রেসক্লাব দখলে নিতে পারেনি। সাংবাদিকদের বসার যায়গাটিও ছিল না। যিনি দখলে নিয়েছিলেন তিনি ক্লাবের একজন সতির্থজন ছিলেন। ঘর করার পর সাইনবোর্ড লাগিয়েছিলেন প্রেসক্লাবের । পরে সেখানে একটি প্রিন্টিং প্রেসের সাইনবোর্ড দেন। এ ভাবে তিনি কাগজপত্র করে নেন নিজের নামে। তিনি আজ মরহুম এ সম্মানে তাঁর নাম উল্লেখ করলাম না । মেহেরপুরের অনেকে বিষয়টি জানতেন। বিষয়টি আইনি তদন্ত হয়। তিনি যায়গাটি জাল করেন প্রমাণিত হয়। তিনি পেশায় এ্যডভোকেট হওয়ায় সব আইনজীবিরা বিচারকের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেছিলেন। ঐ যাত্রায় রক্ষা পান তিনি। সুচতুর মানুষ বিচারক বদলি হলে আবার আইনের ফাকফোকর দিয়ে দলিল দস্তাবেস করে জমিটি তার নামে করে নেন। আমি এ বিষয়টি তৎকালীন সভাপতি ইসলাম আলীর কাছে জানতে চেয়েছিলাম। তিনি বলেন আমরা বিশ্বাস করেছিলাম তাকে সে আমাদের ঘর করে দেবে। তবে ঘর দেয়নি লিখিত কোন চুক্তি করা হয়েছিল না এটা ভুল হয়েছে। প্রেসক্লাবের কাগজপত্র গুলি সময় মত করতে পারেনি । প্রতিষ্ঠান গড়ার জন্য নয় প্রতিষ্ঠানে ঢুকে নিজ স্বার্থ উদ্ধার কারী ব্যক্তি বিশেষের জন্য একটি প্রতিষ্ঠান তার মূল লক্ষ্য অর্জনে বাধাগ্রস্থ হয়। একজন নিজ স্বার্থ উদ্ধার কারী ব্যক্তির কারনে আজও মেহেরপুর প্রেসক্লাব গৃহহারা।
শহীদ সামসুজ্জোহা পার্কের বিপরিতে ব্রিটিশ আমলের কমলা প্রিন্টিং প্রেসের উপরতলায় হামিদ খান এসপি সাহেবের ঘর ভাড়া করে প্রেসক্লাব চলত।
বর্তমানে মেহেরপুর শহরের প্রধান সড়কে মুন্সী জমির উদ্দিন মার্কেটে পৌরসভার ৩টি ভাড়া করা ঘরে মেহেরপুর প্রেস ক্লবের কার্যালয় অবস্থিত। এ ঘরটি আমাদের প্রদান করেছিলেন তৎকালীন পৌর চেয়ারম্যন পরবর্তী মেয়র মুত্তাছিম বিল্লাহ মতু ।
বর্তমান মেয়র মাহফুজুর রহমান রিটন নিজ উদ্যগে মেহেরপুর প্রেসক্লাবের একটি কনফারেন্স হল রুপান্তরিত করে আধুনিক রুপে সাজিয়ে দিয়েছেন।
এ প্রেসক্লাবে পদধূলি রেখেছেন তৎকালীন সময়ের ভারতীয় হাই কমিশনার, বিবিসি রিপোর্টার আতাউস সামাদ, যায়যায়দিনের সম্পাদক শফিক রেহমান, দেশ বরেণ্য সাংবাদিক আলহাজ্ব শামসুল হুদা, সৈকত রুশদি, তারিকুল ইসলাম, রফিকুর রশীদ রিজভী প্রমূখ।
৩. সুখ দু:খ বেদনা নিয়ে আজকের প্রেসক্লাব
৮০ সালের প্রথম দিকে সাংবাদিকের সংখ্যা বাড়লেও শক্তিশালী প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো গড়ে ওঠেনি। প্রেস ক্লাব অনেকটা চাল চুলোহীন হয়ে পড়ে।
আশির দশকে অসংগঠিত সাংবাদিকদের সংগঠিত করা এবং প্রেসক্লাব পূর্ণগঠনে এগিয়ে আসেন সাংবাদিক তোজাম্মেল আযম। ১৯৮৩ সালের শেষের দিকে আ ক ম হাজী ইদ্রীস আলী, তোযাম্মেল আযম, রুহুল কুদ্দুস টিটো, আশারাফুল ইসলাম, মুহাম্মদ রবীউল আলম, সৈয়দ আমিনুল ইসলাম, আব্দুস সালাম খান, আব্দুর রশিদ মজুমদার। এ ক্ষেত্রে তোজামে¥ল আযমের ভূমিকা ছিল অগ্রগন্য। তোজাম্মেলের বাড়িতে বসে তাকে আহবায়ক করে একটি কমিটি করা হয়।
দফায় দফায় সাংবাদিকরা আলোচনা করে দায়ীত্ব দিলে আ ক ম হাজী ইদ্রীস আলী, ইসলাম আলী ’৮৬ সালে জেলা প্রশাসক এ এইচ এম মাসুদের সাথে জেলায় প্রেসক্লাবের গঠনের প্রস্তাব দিলে এগিয়ে আসেন তিনি। এই প্রক্রিয়ায় পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে জেলা প্রশাসক এ এইচ এম মাসুদ তাঁর অনুরোধে একটি খসড়া গঠনতন্ত্র প্রণয়ন কাজ করেছিলেন মরহুম নাসির উদ্দীন মীরু।
এই সময় জেলা প্রশাসক এ এইচ এম মাসুদকে সভাপতি এবং আবদুস সালাম খানকে সাধারণ সম্পাদক করে প্রেস ক্লাবের কমিটি গঠন করা হয়।
রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ হিসেবে সংবাদপত্রের মাধ্যমে রাষ্ট্রের অন্য তিনস্তম্ভের ভুলভ্রান্তি তুলে ধরা সাংবাদিকের কাজ। একটি রাষ্ট্র কোন দিকে যাচ্ছে, ভালো দিকে যাচ্ছে কিনা, সঠিক পথে আছে কিনা তা সাংবাদিকের সাহসিকতার সাথে তুলে ধরা তার দায়ীত্ব ও কর্তব্যের মধ্যে পড়ে। সাংবাদিকরা যুদ্ধের সময় তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে অনেকক্ষেত্রে তাঁদের জীবন হারায় তবুও সে সঠিক সংবাদ সংগ্রহ প্রকাশে কোন দ্বিধা করে না তার দায়ীত্বে সে অনড় থাকে নিজ দেশ প্রেম ও জাতীর জন্য ।
প্রেসক্লাবের সদস্যদের দায়িত্ব হচ্ছে সত্যনিষ্ঠ, বস্তুনিষ্ঠ এবং তথ্যনির্ভর সংবাদ পরিবেশন নিশ্চিত করা। সে সময় আব্দুস সালাম খান জনস্বার্থে জেলা প্রশাসনের বিরুদ্ধে যায় এমন একটি সংবাদ প্রকাশ করায় তার উপর অনেকে নানা মন্তব্য করেন। যার ফলে তিনি তার আত্মমর্যদা সাংবাদিকের পেশাদারিত্ব সততা অক্ষুন্ন রাখতে আব্দুস সালাম খান প্রেসক্লাবের পদ থেকে পদত্যাগ করেন। এ সময় অধিকাংশ সাংবাদিক অনুধাবন করেন যে, জেলা প্রশাসক প্রেস ক্লাবের সভাপতি হলে সাবলীলভাবে বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা করা সম্ভব নয়।
এক পর্য়ায়ে মেহরপুর প্রেসক্লাব এ দৃঢ়তা নিয়ে তাদের সংবাদ পরিবেশন ও ঐক্যবদ্ধ যাত্রা শুরু করে তোজাম্মেল আজম আ ক ম ইদ্রিস আলী, আবুল বাশার দেশব্রতী, রুহুল কুদ্দুস টিটো, আশরাফুল ইসলাম প্রমূখ মিলে অনেক বাধা-বিপত্তি পার করে করে রুহুল কুদ্দুস টিটো কে সভাপতি করে প্রশাসন প্রভাবমুক্ত প্রেসক্লাব তার যাত্রা শুরু করে। আমরা সকল সাংবাদিকদের আহŸান করেছিলাম ইসলাম আলী, অবদুল মান্নান, মৃণালকান্তি ভট্টাচার্য্য, আমাদের সাথে একমত ছিলেন না আমরা চেয়েছিলাম কোন প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তি প্রেসক্লাবের পদাধিকার বলে সভাপতি থাকবে না। উনারা চাইছিলেন জেলাপ্রশাসক সভাপতি থাক উনারা আলাদা থেকে গেলেন। আমাদের সাথে থাকলেন না তবে মাঝে মাঝে এ ক্লাবে আসতেন ।
৮০-র দশকে রুহুল কুদ্দুস টিটোর নেতৃত্বে আশরাফুল ইসলামকে সেক্রেটারী করে মেহেরপুর প্রেসক্লাব এক সময় নিয়ামত ভাইয়ের মিষ্টিমুখ পরিচিত দোকানের বিপরীতে আবু তালেবদের ঘরে মেহেরপুর প্রেসক্লাব যাত্রা শুরু করে। ঢাল নেই তলোয়ার নেই অনেকটা নিধিরাম সর্দারের মত আমরা যাত্র শুরু করলাম। অর্থাৎ ঘর ভাড়া আসবে কোথা থেকে সে চিন্তা করার সময় ছিল না। বসতাম পাটিতে। টেবিল চেয়ার নেই, হয়ে যাবে হয়ে গেল তা কি ভাবে সদস্যরা নিজের গাঁটের পয়সা দিয়ে যাত্রা শুরু। আশরাফুল ইসলাম ফালাহুল ট্রাস্ট নামক প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন। তিনি সেখান থেকে চেয়ার টেবিল আনলেন। আমরা ঘর ঝাড় দেয়া থেকে সবটাই করতাম। এখানে আমরা সন্ধ্যায় বসে সংবাদ লেখা সংবাদ নিয়ে আলোচনা মেহেরপুরের রাজনৈতিক নেতারা আসতেন পাটিতে বসে আলোচনা চলত।
তখন এরশাদের শাসন চলছে। রাজনৈতিক নেতারা কোন ঠাসা। কেউ জনসভা করতে পারে না। এক পর্যায় আমাদের মাথায় আইডিয়া আসল সব দলের নেতাদের নিয়ে প্রেসক্লাবে বসে রাজনৈতিক আলোচনা করা হবে। আমাদের জা,পা নেতা আ ক ম হাজী ইদ্রীস ভাই আছেন তিনি সামাল দেবেন। আমরা পজিশন ও অপজিশন দুজনের কথা শুনব । আমরা সিদ্ধান্ত মোতাবেক প্রতি শুক্রবার এ আলোচনাসভার কাজ শুরু করলাম ।বক্তা থাকতেন মরহুম ছহিউদ্দীন,মরহুম আহম্মদ আলী সহ সকল দলের নেতারা আসতেন। মানুষ রাত পর্যন্ত রাস্তায় দাড়িয়ে বক্তব্য শুনত। মেহরপুরে সাংবাদিকদের সমাজে মানুষের মাঝে প্রভাব বলয় বাড়তে থাকে।সাধারন মানুষ ও আমাদের কাছে আসতেন নানা অভিযোগ নিয়ে। আমরাও ধৈর্য্য সহকারে তাদের কথা শুনতাম। যেটা সংবাদ তা পত্রিকায় পঠিয়ে দিতাম। আমরা প্রশাসনের কোন অসংগতি খবর পেলে তা প্রকাশ করে দিতাম সকলে মিলে। প্রশাসনের কর্তা ব্যাক্তিরাও আমাদের প্রত্যেক সদস্যকে সম্মানের দৃষ্টিতে দেখতেন ।
আমরা প্রশাসনের অসংগতির কোন সংবাদ করলে এক সাথে সবাই এক রিপোর্ট করতাম। রাজনৈতিক মহলে মেহেরপুরের এ প্রেসক্লাবের সাংবাদিকদের গ্রহনযোগ্যতা বাড়তে থাকে। মেহেরপুর প্রেসক্লাবও প্রতিষ্ঠানিক রুপে পরিণত হতে থাকে।
এ ছাড়াও মেহেরপুর প্রেসক্লাব তখন তার মূল লক্ষ্য সমাজের কল্যাণ মেহেরপুরের সার্বিক উন্নয়ন নিয়ে যে কাজগুলি করত তা এখনও মেহেরপুরের মানুষ মনে রেখেছে।
নাগরিকদের আন্দোলন, সংগ্রাম, অধিকার, মুজিবনগর উন্নয়ন দাবী দাওয়া, মিছিল, মিটিং, মানববন্ধন সবই হয় এই প্রেসক্লাব ঘিরে। সংবাদপত্রের পাতায় সংবাদ প্রকাশের পাশাপাশি মেহেরপুরে জজ কোর্ট প্রতিষ্ঠা, আধুনিক জেলা হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা, স্থলবন্দর প্রতিষ্ঠার দাবি এবং ন্যূনতম বিদ্যুৎ প্রাপ্তির আন্দোলনসহ মেহেরপুরের বিভিন্ন সমস্যা ও উন্নয়নের আন্দোলন সংগ্রামে সাংবাদিকরা গণমানুষের পাশে থেকে সহযোদ্ধার ভূমিকা পালন করে আসছে ।দলের নেতৃবৃন্দ ও জেলার গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ মেহেরপুর প্রেসক্লাবে পদচারণা যেমন ছিল এ প্রেসক্লাবে তখন তরুণ নেতৃত্ব দিয়েছেন তারাও এসেছেন এবং বিভিন্ন সময়ে তাদের রাজনৈতিক মতবাদ সহ মেহেরপুর উন্নয়নের বিভিন্ন ভূমিকা রেখেছেন। অনেকটা বলা যায় মেহেরপুর উন্নয়নে মেহেরপুর প্রেসক্লাব রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব দের নিয়ে জেলার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে এখনও রাখছে।রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের নিয়ে মেহেরপুর প্রেসক্লাব জেলার উন্নয়ন অন্যায়ের প্রতিবাদ বিভিন্ন দাবি আদায়ে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছে।
তখন আমরা সাংবদিকতা করতাম নিজের পয়সায়। কোন পত্রিকা তখন বেতন ভাতা দিত না। আশারফুল, রুহুল কুদ্দুস টিটো,তোজাম্মেল আযম, আবু লায়েছ লাবলু, মুহাম্মদ রবিউল ইসলাম, নাফিজ খান ,তারেক, আহসান রেজা পিকু, ফারুক আহমেদ রন্টু, সানোয়ার সানু প্রমূখ আমাদের সাথে ছিলেন।
আশির দশকের শেষের দিকে প্রেসক্লাবের সদস্য অর্ন্তদ্বন্দ রাজনৈতিক বলয়ের প্রভাব পড়ে। সাময়িক সময়ের জন্য এ সমস্যাটি দেখা দেয়ার কারন ছিল; মেহেরপুর প্রেসক্লাব বেশ ইর্ষনীয় সামাজিক মর্যদাপূর্ণ অবস্থানে পৌঁছেছিল বলে অনেকে এর সদস্যপদ নিতে বেশ তৎপর ছিলেন। মেহেরপুরের মানুষের কাছে জনপ্রিয় হয়েছিল ও আস্থাভাজন প্রতিষ্ঠানে রুপান্তরিত হয়েছিল। মেহেরপুর প্রেসক্লাবের সদস্যপদ পাওয়াটা আভিজাত্যের প্রতিক ছিল তবে সদস্য পদটি পাওয়া সহজ ছিল না । এ বিষয়ে ¯েœহভাজন মুনির হায়দার বিশিষ্ট সাংবাদিক মেহেরপুরের সন্তান তিনি জাতীয় প্রেসক্লাবের স্মরণীকায় মেহেরপুরপ্রেস ক্লাব থেকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সদস্যপদ পেয়েছিলেন। তিনি মেহেরপুর প্রেসক্লাবের সদস্য পদ পাওয়া নিয়ে লেখেন সহজে তার বর্ণনা তার লেখায় পাওয়া যায়।
মেহেরপুর প্রেসক্লাবে আসন করে নেয়ার জন্য রাজনৈতিক মদদ পুষ্ট সংবাদপত্রের সাংবাদিকতার কার্ড সংগ্রহ করে প্রেসক্লাবের সদস্যপদ নেয়ার চেষ্টা করে এবং একছত্র ভাবে দখল রাখার চেষ্টা করে। তবে এ অচলঅবস্থা চলে নব্বই পরবর্তী সময় পর্যন্ত। যা স্থায়ী হয়নি।
১৯৯৫ পরবর্তী প্রেসক্লাবটির আর্থসামাজিক কর্মকান্ড মানব কল্যাণে বৃহৎ পরিসরে পরিচালনার লক্ষ্যে প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম নিজস্ব যুক্তি মননে ক্লাবের গঠনতন্ত্রে পরিবর্তন আনেন। সেই গঠনতন্ত্রে সাংবাদিকদের তীর্থস্থান প্রেস ক্লাবকে সাংবাদিকদের মান উন্নয়ন সহ সামাজিক সেবামূলক প্রতিষ্ঠান হিসাবে রূপদানের লক্ষ্য নিয়ে প্রেস এ্যন্ড হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট ইন্সটিটিউট (পি.এইচ.ডি.আই) নামে একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করা হয়। এবং ওই গঠনতন্ত্রে প্রেস ক্লাবকে প্রেস এ্যন্ড হিউমান ডেভেলপমেন্ট ইন্সটিটিউট (পি.এইচ.ডি.আই) নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠান হিসাবে আনা হয়। ২০০০ সালে এই নিয়ে সাংবাদিকদের মধ্যে বিভক্তি দেখা দেয়। সাংবাদিকরা (পি.এইচ.ডি.আই) এর বৈধ্যতা এবং প্রেস ক্লাবের উপর নিয়ন্ত্রণ প্রশ্নে আপত্তি তুলে এর বিরোধীতা করে।
২০০১ পরবর্তী আমি চাকুরির কারনে বদলি হয়ে যাওয়ায় মেহেরপুরে না থাকায় সরাসরি প্রেসক্লাবের সাথে সম্পৃক্ততা কমে যায়। তবে যোগাযোগ ছিল সদস্য বন্ধুদের সাথে। এ কথা অনস্বীকার্য যে সাংবাদিক আতিকুর রহমান টিটু আমার সাথে যোগাযোগ রাখতেন এবং প্রেসক্লাব নিয়ে তিনি কি করছেন তা নিয়ে আমার সাথে আলাপ করতেন। প্রেসক্লাব একত্রী করন অনুষ্ঠানে আমাকে কর্মস্থল থেকে মেহেরপুর আসতে বাধ্য করেছিলেন। ২০১৪ সালের এ অনুষ্ঠানে মরহুম ইসলাম আলি মাস্টার উপস্থিত ছিলেন। বলা যায় সাবেক সভাপতি হিসাবে আমি উপস্থিত হয়েছিলাম আতিকুর হমান টিটুর আহŸানেই।
মেহেরপুর প্রেসক্লাব ছাড়াও গড়ে ওঠে রিপোর্টার্স ইউনিটি। আজকের কাগজ, এটিএন বাংলা ও এটিএন নিউজের সাংবাদিক মরহুম আতিকুর রহমান টিটু সংবাদপত্রের এজেন্ট হওয়ায় তিনি নব প্রজন্মের বেশকিছু তরুণকে সংবাদকর্মী হিসাবে গণমাধ্যমে যুক্ত করেন। পরে তিনি সাংবাদিকদের ঐক্যের স্বার্থে রিপোর্টার্স ইউনিটি ভেঙ্গে দেন। বর্তমানে রিপোর্টার্স ইউনিটের অনেক সদস্য এখন এ প্রেসক্লাবে যুক্ত রয়েছেন।আতিকুর রহমান টিটিু মেহেরপুর প্রেসক্লাবের অনেক অসংগতি মেনে নিতে পারতেন না। এ প্রতিষ্ঠানের সদস্য পদ পেয়ে বেশ প্রতিবাদী ছিলেন। এক পর্যায় তিনি ও মুস্তাফিজুর রহমান তুহিন দুজনের নেতৃত্বে অন্য সদস্যদের সাথে নিয়ে অন্যদের সম্মতিতে দখল বেদখল হয়ে যাওয়া কিছুদিনের জন্য বন্ধ থাকা এ প্রেসক্লাবটির সদস্যদের দ্বন্দ মিটিয়ে একত্রীকরন করতে সক্ষম হন। ২০১৪ সালের নভেম্বর মাসে বিভক্ত সকল পক্ষের সাংবাদিকদের ঐক্যবদ্ধতা ও প্রেস ক্লাব কার্যক্রম সক্রিয় করতে সাংবাদিকরা ঐক্যমত হয়ে সাংবিধানিক পরিবর্তন এনে গঠণতন্ত্র পরিবর্ধন ও পরিমার্জন করে প্রেসক্লাবটি স্ব অবস্থানে সক্রিয় ভাবে অদ্যবদী চলছে।
৪. গঠণতন্ত্র যাদের পরিশ্রমে
মেহেরপুর প্রেসক্লাবের গঠনতন্ত্রটি বেশ কয়েকবার কাঁটাছেঁড়া হয়েছে। এখন যে সংবিধান অনুসরন করা হচ্ছে সেটিও পরিবর্তন ও পরিমার্জনের দাবী রয়েছে কয়েকটি ক্ষেত্রে । আশির দশকে এবং ২০১৪ সালে নভেম্বর মাসে মেহেরপুর প্রেসক্লাবের তৃতীয় সংশোধনী গঠনতন্ত্র প্রণয়নে যারা ভূমিকা রেখেছেন (যদিও এ গঠনতন্ত্র সময়ের দাবীতে পরিবর্তন পরিমার্জন করা হয়েছে সাধারণ সদস্যদের মতামতের ভিত্তিতে) যাদের অক্লান্ত প্রচেষ্টা ও অবদান রয়েছে তারা হলেন ;
আশরাফুল ইসলাম তিনিই প্রথমদিকে আশির দশকে গঠনতন্ত্র প্রণয়নে কাজ শুরু করেন।
পরে ঐক্যমতের ভিত্তিতে তৃতীয় সংশোধনী গঠনতন্ত্র প্রণয়নে যারা ভূমিকা রেখেছেন মো: তুহিন আরন্য মো: আতিকুর রহমান টিটু, মো: ওয়াজেদুল হক, মো: আবুল লায়েছ লাবলু, মো: মিজানুর রহমান, মো: কামারুজ্জামান খান, মো: মাহাবুবুল হক পোলেন, মো: আলামিন হোসেন, মো: ইয়াদুল মোমিন, মো: মহাসীন অলী, মো: গোলাম মোস্তফা মো: আনিসুজ্জামান মেন্টু, মো: জি এফ মামুন লাকী মো: ফারুক মল্লিক, মীর সউদ আলী চন্দন,মো: রশিদ হাসান খান আলো, মো: জুলফিকার আলী কানন।
প্রেসক্লাবের ক্রান্তিকালীন এ গঠনতন্ত্র প্রণয়নে কয়েকটি ধারায় অসংগতি রয়েছে যা পরিবর্তন ও পরিমার্জনের সংযোযনের সুযোগ রয়েছে। পরিবর্তন প্রয়োজন প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে এটা সর্বতভাবে স্বীকৃত ব্যাক্তি স্বার্থ নয় প্রতিষ্ঠান স্বার্থ অগ্রগণ্য। যতদূর জানি নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সমাধানের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে বর্তমান কমিটি।
৫. বিভিন্ন মেয়াদে সভাপতি ও সাধারণ সম্পদকের দায়ীত্ব যারা পালন করেছেন
পদাধিকার বলে সভাপতি ছিলেন যথাক্রমে মহকুমা প্রশাসক ও পরবর্তীতে জেলা প্রশাসক ১৯৬৭- ১৯৮৫ সাধারণ সম্পাদকের দায়ীত্বে ছিলেন ইসলাম আলী।
আব্দুস সালাম খান সাধারণ প্রথম সম্পাদক পরে প্রতিবাদে পদাধিকার বলে সভাপতি বাদ হলে সভাপতির দায়ীত্বে ছিলেন আবদুস সালাম খান জানুয়ারী ১৯৮৬- ডিসেম্বর ১৯৮৬
১৯৮৭ জানুয়ারী থেকে ডিসেম্বর ১৯৮৭ পর্যন্ত ইসলাম আলী সভাপতি ও আব্দুল মান্নান সাধারণ সম্পাদকের দায়ীত্ব পালন করেন।
১৯৮৮- ১৯৯৫ পর্যন্ত সভাপতি রুহুল কুদ্দুস টিটো সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম দায়ীত্ব পালন করেন।
১৯৯৬ – ২০০৮ পর্যন্ত সভাপতি আশরাফুল ইসলাম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন মুস্তাফিজুর রহমান (তুহিন আরণ্য)
২০০৯ জানুয়ারী- ২০০৯ ডিসেম্বর সভাপতি ইসরাইল হোসেন সাধারণ সম্পাদক ছিলেন মহাসীন আলি আংগুর
২০১০ -২০১৪ সভাপতি ছিলেন আল আমিন হোসেন সাধারণ সম্পাদক ছিলেন পলাশ খন্দকার
২০১৫- ২০১৬ সভাপতি রশিদ হাসান খান আলো সাধারন সম্পাদক মিজানুর রহমান মিজান
২০১৬- ২০১৭ মিজান সহ ১০ জন সদস্য এ কমিটি থেকে পদত্যাগ করলে রশিদ হাসান খান আলো মার্চ পর্যন্ত
একাই সভাপতি পদে ছিলেন। পরে ২০১৭ শেষে নির্বচনের মাধ্যমে সাংবিধানিক এ সংকট উত্তরন ঘটে
২০১৮ -২০১৯ পর্যন্ত নির্বাচিত হয়ে সভাপতির দায়ীত্বে আসেন আলামিন হোসেন রফিকুল আলম। এ সময় কালে প্রথম বড় পরিসরে অভিষেক অনুষ্ঠান করা হয় এবং প্রেসক্লাব কিছুটা অফিসিয়াল ফরমে আনার চেষ্টা করে এ কমিটি।
২০১৯-২১ বর্তমানে দায়ীত্ব পালন করছেন সভাপতি ফজলুল হক মন্টু ও সাধারন সম্পাদক আলাআমিন হোসেন ২০২১ মে পর্যনÍ দায়ীত্ব পালনের মেয়াদ রয়েছে। এ কমিটি করোনাকালীন সময়ে সাংবাদিক কল্যানে সাহায্য প্রদান করে অনন্য ভূমিকা রেখেছে। কল্যাণ তহবিল গঠন প্রথম মেহেরপুর প্রেসক্লাবের স্মরণিকা ৫০ বর্ষপূর্তী পালনে পদক্ষেপ নিয়েছে। প্রতিষ্ঠানের মানউন্নয়নে এ কমিটির উদ্যেগ প্রসংশার দাবী রাখে।
৭. মেহেরপুর প্রেস ক্লাব এক বিশ্বাসের নাম মানুষের কাছে আস্থার স্থান
মেহেরপুরের এ প্রতিষ্ঠানটি গড়ার লক্ষ্যে আজ অবধি যারা সম্পৃক্ত ছিলেন বা আছেন, যাদের শ্রম-মেধা-ভালোবাসায় আজকের সাংবাদিকতায় এ আস্থা ও বিশ্বাস তৈরি, অনেক অধিকার, অধিকারহীনতা, পাওয়া, না-পাওয়ার বঞ্চনা, অনেক আশা-নিরাশার পাকচক্রে বাঁধা পড়েছে এ প্রাতিষ্ঠানিক জীবনে।
আমাদের সব দুঃখ-বেদনা পেরিয়ে মফস্বল সাংবাদিকতায় শেষ পর্যন্ত এ পেশাটি মর্যাদার লড়াইয়ে টিকে থাকার এ পেশায় সবচেয়ে বড় তৃপ্তি শেষ পর্যন্ত মানুষ এবং মানুষের জন্য কাজ করা। এ পেশার সকলকে শেষ পর্যন্ত এসে মিলতে হয় সমষ্টির মোহনায়। সমষ্টিকে পরিচর্যা এবং তার সৃজনশীল-বিকাশের কাজের মধ্য দিয়ে দিতে হয় পথের দিশা- সঠিক পথে থাকার, সঠিক পথে চলার। যারা সাংবাদিকতা কাজে নিয়োজিত তাদের একটুখানি অবসরের দম ফেলার সুযোগ ও জায়গা হলো এ প্রেস ক্লাব। রাজনীতি, অর্থনীতি, সংস্কৃতির শিকড় সন্ধানে যারা নিরন্তর লিপ্ত, তারা এ প্রেসক্লাবে আলাপে-আড্ডায় সংবাদতথ্য সন্ধান করে থাকেন ক্লাবে সম্পৃক্ত সাংবাদিকরা। মেহেরপুর প্রেস ক্লাবটিতে বহু মত ও বহু পথের মানুষের অগমন ঘটেছে ।
অসাম্প্রদায়িক প্রগতিশীল সব চেতনার ধারক মেহেরপুর প্রেস ক্লাব এক বিশ্বাসের নাম এবং আস্থার প্রতীক মেহেরপুরের মানুষের কাছে। ঐতিহাসিক মুজিবনগর খ্যাত মেহেরপুরপ্রেস ক্লাব স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাস ঐতিহ্য ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, গণতন্ত্র ও অসাম্প্রদায়িক চেতনা লালন সে সংঙ্গে গণতান্ত্রিক আন্দোলন, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন, সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী আন্দোলন-সংগ্রামে জাতীর ক্রান্তি লগ্নে মেহেরপুর প্রেসক্লাব মাানুষের মাঝে থেকেছে। অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি, দুঃশাসনের বিরুদ্ধে মানুষের সাথে থাকে যে কোন সমস্যা হলে মানব বন্ধন সমাবেশ প্রতিবাদ যা কিছু এখনো সব কিছুই ঘটে প্রেসক্লাবের সামনে প্রেসক্লাব ঘিরে। দৈনিক যুগান্তর পত্রিকার সম্পাদক সাইফুল আলম সাহেবের জাতীয় প্রেসক্লাব কেন্দ্রিক একটি লেখাতে পড়েছিলাম কেন মানুষের এ আস্থা প্রেস ক্লাবের প্রতি, কেনই বা ভরসা এতটা?
প্রেস ক্লাব কি অনেক ‘ক্ষমতাধর’ যে তাদের সমস্যার সমাধান করে দেবে? কোনো আলাদিনের চেরাগের দৈত্যের অধিকারী এখানকার পেশাজীবী সাংবাদিকরা? -না, কোনো ক্ষমতা কিংবা ক্ষমতাধর দৈত্য এসবের কিছুই নয়; প্রেস ক্লাব কেবলই এক বিশ্বাস, আস্থা ও ভরসার প্রতীক মাত্র। এ প্রতিষ্ঠানের সদস্যরা ন্যূনতম ক্ষমতার অধিকারীও নন এ কথা যেমন সত্য, তেমনই সত্য এ পেশার মানুষের আছে কেবল একটি সহানুভূতিপূর্ণ সহমর্মী হৃদয়; যে হৃদয়ে প্রতিফলিত হয়, প্রতিধ্বনি ওঠে অধিকারবঞ্চিতদের, অধিকার বঞ্চনার আর্তধ্বনি। তারা সহানুভূতিপূর্ণ হৃদয়ে সত্য প্রতিবেদনে তাদের কথা তুলে ধরেন পত্রিকার পৃষ্ঠায়, টেলিভিশনের পর্দায়, রেডিও’র তরঙ্গে- আর তখন সেসব প্রতিবেদনে বোধকরি সঞ্চারিত হয় মজলুম মানুষের হৃদয়ের শক্তি। তা রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকদের দৃষ্টিতে পড়ে, কানে ঢোকে- তারাও সমব্যথী হয়ে ওঠেন মানুষের প্রতি আর তার ফলেই প্রশস্থ হয় প্রতিকারের পথ। মানুষের বঞ্চনার অবসান ঘটে।
এ এক দীর্ঘ প্রক্রিয়া- গণতন্ত্রের অন্তহীন সৌন্দর্য নিহিত এ প্রক্রিয়ায়ই বলা যায়- ‘জনগণই ক্ষমতার উৎস’- এ বহুল প্রচলিত একটি বাক্য যে রয়েছে আমাদের দেশে; মূলত সেই জনগণের ক্ষমতাই- জনপ্রতিনিধিদেরনিস্কৃয় নিষ্পিষ্ট ক্ষমতাকেই- স্পৃষ্ট করে জনতার অধিকার, স্মরণ করিয়ে দেয় এবং আদায় করে নেয় তা।
তাহলে কৌতূহলী এ প্রশ্ন জাগেই- প্রেস ক্লাবের ‘শক্তি’ কোথায়? মূলত প্রেস ক্লাবের শক্তি বহু মত ও বহু পথের মধ্যে বহুরৈখিক সমন্বয়ে, সমবায়ে, সেতুবন্ধে।
জনতা ছাড়া ক্ষমতা কিংবা ক্ষমতা ছাড়া জনতা- দুটিই মূলত অকার্যকর। প্রেস ক্লাব এ অকার্যকর ক্ষমতাকে এবং জনতাকে মিলিয়ে দেয় মাত্র। আর যখন এ দুইয়ের সম্মিলন ঘটে তখন অবসান ঘটে নানা অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি, দুঃশাসনের- ক্ষমতা এবং জনতা দুটিই কার্যকর শক্তি তথা যথার্থ ক্ষমতা হয়ে ওঠে তখন। প্রেস ক্লাব মূলত মমতা দিয়ে বিচ্ছিন্নদের ঐক্যবদ্ধ করে- অর্থবহ করে তোলার ক্যাটালিস্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করে।আর এ কারণেই এ প্রতিষ্ঠান, এ পেশার মানুষের ওপর এখনও মানুষ তথা জনতা, জন প্রতিনিধিদের আস্থা ও ভরসা।
আমি আশাবাদী মেহেরপুর প্রেসক্লাবের প্রতিটি সদস্য মানুষের আশা ও ভরসার এ জায়গাটিকে পেশাগত নৈতিকতা দিয়ে নিজেদের মতভেদ ভুলে গিয়ে তিলে তিলে গড়ে ওঠা এ প্রতিষ্ঠানটিকে আরও উন্নত ও দৃঢ়তর অবস্থানে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হবে পরবর্তী প্রজন্মের জন্য । আমরা যা পারিনি বর্তমান তোমরা তা করবে গড়বে নতুন ইতিহাস মানুষের মাঝে চিরভাস্মর হয়ে থাকুক মেহেরপুর প্রেসক্লাব।#