একদিকে একতরফা নির্বাচন বাতিলের দাবি বিএনপিসহ ৩৯টি দলের ।। অপর দিকে মেহেরপুর সহ দেশের প্রতি আসনেই আওয়ামী লীগ বনাম আওয়ামী লীগের ভোটযুদ্ধ হওয়ার অবস্থা তৈরি হয়েছে
রুহুল কুদ্দুস টিটো
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল বাতিলের দাবি জানিয়েছে সরকারের বিরুদ্ধে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা বিএনপিসহ ৩৯টি দল। তারা বলেছে, গণদাবি উপেক্ষা করে আরেকটি একতরফা নীলনকশার নির্বাচনের পাঁয়তারা চলছে।
আজ বৃহস্পতিবার বিএনপিসহ ৩৯টি দলের নেতাদের এক যৌথ সভায় এ আহ্বান জানানো হয়। আজ বিকেলে রাজধানীর তোপখানা মোড়ে শিশুকল্যাণ পরিষদ মিলনায়তনে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যৌথ সভার বক্তব্য তুলে ধরা হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আন্দোলনে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পরিকল্পিত সহিংসতা ও নাশকতার ঘটনা ঘটিয়ে সরকার ও সরকারি দল গত ২৮ অক্টোবর বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর মহাসমাবেশ পণ্ড করে দেয়। বিএনপিসহ বিরোধীদের ওপর এই দায় চাপিয়ে গত এক মাস দমন–নিপীড়ন ও গ্রেপ্তারের পথে দেশব্যাপী তারা ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘আমরা বিস্ময়ের সাথে লক্ষ করছি যে সরকারের পদত্যাগের গণদাবিকে উপেক্ষা করে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের মতো আরেকটি একতরফা নীলনকশার নির্বাচনের পাঁয়তারা করছে। সরকারের এই রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে সরকারের সহযোগী হিসেবে নির্বাচন কমিশন আগামী ৭ জানুয়ারি ২০২৪ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে। পাতানো এই নির্বাচনের অংশ হিসেবে আজ ৩০ নভেম্বর কথিত নির্বাচনের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখও নির্ধারণ করেছে।’
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘আমরা পরিষ্কার করে উল্লেখ করতে চাই যে সরকার যদি জেদ আর অহমিকা নিয়ে জবরদস্তি করে নির্বাচনের নামে আরেকটি তামাশা মঞ্চস্থ করতে চায়, তাহলে সরকারের এই অশুভ তৎপরতা প্রতিরোধ করা ছাড়া দেশবাসীর সামনে অন্য কোনো পথ থাকবে না।’
অবাধ, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের জন্য অবিলম্বে আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ ও নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তী সরকার প্রতিষ্ঠায় কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে দলগুলো।
বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির সভাপতি মোস্তফা জামাল হায়দারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, গণতন্ত্র মঞ্চের নেতা জোনায়েদ সাকিসহ যুগপৎ আন্দোলনে থাকা দলগুলোর শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
প্রায় সব আসনে আওয়ামী লীগের বিকল্প প্রার্থী মাঠে নেমেছেন। মেহেরপুর সহ দেশের প্রতি আসনেই আওয়ামী লীগ বনাম আওয়ামী লীগের ভোটযুদ্ধ হওয়ার অবস্থা তৈরি হয়েছে।
আওয়ামী লীগ বনাম আওয়ামী লীগ মেহেরপুর
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মেহেরপুর-১ আসনে ১০ প্রার্থী তাদের মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার মনোনয়নপত্র জমা দানের শেষ দিনে মনোনয়নপত্র জমাদনকারীদের মধ্যে রয়েছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মেহেরপুর জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ফরহাদ হোসেন, সাবেক সংসদ সদস্য প্রফেসর আব্দুল মান্নান, মোঃ জয়নাল আবেদিন, মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট মিয়াজান আলী, আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট ইয়ারুল ইসলাম, এছাড়া অন্যান্যরা হলেন জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি মোঃ আব্দুল হামিদ, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির জেলা সহ-সভাপতি মোঃ তরিকুল ইসলাম লিটন, কৃষক মুক্তি জোট কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম আহবায়ক মোঃ বাবুল জম, মেহেরপুর জেলা জাকের পার্টির সভাপতি মোঃ সাইদুল আলম, মুজিবনগর উপজেলা জাতীয় পার্টি (জেপি)আহবায়ক মোঃ মওলাদ আলী খান ।
সারা দেশে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বিতার যে ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়ে আছে এর ফলাফল কী হবে?
দলের পক্ষ থেকে প্রকাশিত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনের জন্য আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীর সংখ্যা প্রায় ৩ হাজার ৩০০। দলটির মনোনয়ন ফরম বিক্রি হয়েছে ৩ হাজার ৩৬২টি। এর মধ্যে বেশ কয়েকজন
প্রার্থী একাধিক আসনের জন্য মনোনয়ন ফরম কিনেছেন। হিসাব অনুযায়ী, প্রতিটি আসনের জন্য মনোনয়ন ফরম কিনেছেন ১১ জন। তবে ২০১৮ সালের তুলনায় এবার প্রায় সাড়ে ৭০০ ফরম কম বিক্রি হয়েছে বলে জানা গেছে।
কয়েকটি আসনের চিত্র বিস্ময়কর। যেমন কুমিল্লা-৫ আসনের জন্য মনোনয়ন ফরম কিনেছেন ২৯ জন প্রার্থী। চট্টগ্রাম-৮ আসনের জন্য ফরম কিনেছেন ২৬ জন। ২২ জন প্রার্থী ফরম কিনেছেন নেত্রকোনা-১ আসনের জন্য। ২১ জন কিনেছেন নড়াইল-২ আসনের জন্য।
চট্টগ্রাম-১০ আসনের জন্য কিনেছেন ২০ জন। হিসাব করে দেখা যায় অধিকাংশ মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী এবং দলের জ্যেষ্ঠ নেতার আসনেই এ রকম প্রার্থীর ছড়াছড়ি। এর মধ্যে একেবারে নবীন প্রার্থী যেমন রয়েছেন, তেমনি আছেন প্রবীণ এবং দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত নেতাও। তাঁরা সবাই যে মনোনয়ন পাবেন ধরে নিয়ে প্রার্থী হওয়ার প্রত্যাশী হয়েছেন, তেমন নয়; বিশেষ করে নবীনেরা। তাঁদের অনেকেরই লক্ষ্য ভবিষ্যতের সিরিয়ালে অন্তর্ভুক্ত হওয়া। তবে প্রবীণ ও পরীক্ষিত নেতাদের বিষয়টি ভিন্ন। তাঁরা প্রকৃতই মনোনয়নপ্রত্যাশী। দলীয় কোন্দল, বিদ্যমান সংসদ সদস্যের বদনাম, বঞ্চনার অবসান প্রভৃতি কারণে তাঁরা দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন বলেই প্রার্থী হতে চাইছেন।
কিন্তু এ কথা সবার মতো তাঁরাও জানেন যে তাঁদের অনেকেই দলের মনোনয়ন না-ও পেতে পারেন। সে ক্ষেত্রে তাঁরা কী করবেন? তাঁরা সবাই কি দলের নির্দেশনা মেনে দলীয় প্রতীক পাওয়া প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনে নেমে পড়বেন? নাকি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বিদ্রোহী অভিধা নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেবেন? অতীতের অভিজ্ঞতা ও দৃষ্টান্ত থেকে এ কথা বলা যেতেই পারে, কেউ কেউ দলের প্রতি আনুগত্যবশত দলীয় প্রতীক পাওয়া প্রার্থীর পক্ষেই নির্বাচনে অংশ নেবেন; কিংবা অভিমানবশত চুপচাপ থাকবেন। নির্বাচনে বিশেষ কোনো ভূমিকা নেবেন না। আবার অনেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হবেন। জয়-পরাজয়ের কথা না ভেবে, দলের স্বার্থের কথা না ভেবে কিংবা হতে পারে দলের বৃহত্তর স্বার্থেই দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্বাচন করবেন।
প্রতিটি সংসদীয় আসনের জন্য গড়ে আওয়ামী লীগের যে ১১ জন নেতা মনোনয়ন প্রত্যাশা করেছেন, তাঁদের মধ্যে দলীয় মনোনয়ন পাবেন তো একজনই। যাঁরা দলীয় মনোনয়ন পাবেন না, তাঁদের মধ্যে গড়ে দুজন যদি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেন এবং সেই সব আসনে যদি স্বতন্ত্র হিসেবে বিএনপি-জামায়াতের প্রার্থী থাকেন কিংবা থাকেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী এবং ভোট যদি সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হয়, তাহলে সেখানে কে জিতবেন তা বলা যায় না। কারণ সে ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের ভোট ভাগাভাগি হবে। এই যে আওয়ামী লীগ বনাম আওয়ামী লীগ প্রতিদ্বন্দ্বিতার একটা ক্ষেত্র তৈরি হয়ে আছে, এটা নির্বাচনী ফলাফলে একটা নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।