১৯৭১ সালের মার্চ ছিল বাংলাদেশের জন্মমুহূর্তের লগ্ন।
বাংলাদেশের ইতিহাসের বাঁক পরিবর্তনের মুহূর্ত। বাংলাদেশের জন্ম এই অগ্নিঝরা মার্চেই।
আলাপচারিতা
অগ্নিঝরা মার্চের দিনগুলো ছিল বাংলার সংগ্রামী জনতার স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষায় শামিল হওয়ার ক্ষণ।
মার্চ
- মার্চ ১: ইয়াহিয়া খান জাতীয় পরিষদ-এর অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত ঘোষণা করেন। শেখ মুজিব একে ক্ষমতা হস্তান্তর না করার ষড়যন্ত্র আখ্যা দিয়ে ৩রা মার্চ দেশের সর্বত্র হরতাল পালনের আহ্বান করেন।
- মার্চ ২: শেখ মুজিবুর রহমান সংসদ স্থগিতের সিদ্ধান্ত না-মানার ঘোষণা দিয়ে ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে গণ জমায়েতের আহ্বান জানান। ঢাকায় হরতাল পালিত হয় পূর্ব ঘোষণা অনুসারে।
- মার্চ ৩: সারা দেশে পূর্ণ হরতাল পালিত হয়। চট্টগ্রামে বহু লোক সেনাবাহিনীর গুলিতে মারা যায়। অন্যদিকে সামরিক সরকার কার্ফু্ জারি করে।
- মার্চ ৪: সেনাবাহিনীর সাথে জনসাধারণের সংঘর্ষে শতাধিক লোক হতাহত হন যার ফলশ্রুতিতে ঢাকাসহ পূর্ব পাকিস্তানের প্রধান প্রধান শহরে কার্ফু জারি করা হয়।
- মার্চ ৫: ইয়াহিয়ার সঙ্গে ভুট্টোর আলোচনা চলে। অন্যদিকে ঢাকা ও টঙ্গীতে বিক্ষুব্ধ জনতার উপর সমরিক বাহিনীর গুলিবর্ষণে শতাধিক লোক নিহত এবং আরও অনেকে আহত হন।
- মার্চ ৬: প্রেসিডেণ্ট ইয়াহিয়া খান বেতারভাষণে ২৫ মার্চ ১৯৭১ তারিখে জাতীয় পরিষদের অধিবেশন আহ্বান করেন।
- মার্চ ৭: সাতই মার্চের ভাষণ – শেখ মুজিবুর রহমান – নির্বাচনে সদ্য জয়ী হওয়া আওয়ামী লীগ এর নেতা, রেসকোর্স ময়দানে ঘোষণা করেন , “এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম “।
- মার্চ ৮: সকাল সাড়ে আটটায় ঢাকা রেডিও স্টেশন থেকে শেখ মুজিবের ৭ মার্চের রেকর্ডকৃত ভাষণ প্রচার।
- মার্চ ৯: পূর্ব বাংলার স্বাধীনতা স্বীকার করে নেয়ার জন্য মওলানা ভাসানী উদাত্ত আহ্বান জানান।তিনি ১৪ দফার ভিত্তিতে আন্দোলনের ডাক দেন।
- মার্চ ১০: শেখ মুজিবকে ভুট্টোর টেলিগ্রাম প্রেরণ।
- মার্চ ১৩: মওলানা ভাসানী রাজবন্দীদের মুক্ত করার জন্য ‘জেল ভাঙ্গা’ নামে এক আন্দোলনের ডাক দেন।
- মার্চ ১৪: সামরিক আইন লঙ্ঘন করে মিছিল সভা চলতে থাকে।
- মার্চ ১৫: শেখ মুজিব আওয়ামী লীগের সংখ্যাগরিষ্ঠতার দাবিতে বাংলাদেশের শাসন নিজ হাতে নেয়ার ঘোষণা দেন এবং কাজ-কর্ম পরিচালনার জন্য ৩৫টি বিধি জারি করেন।
- মার্চ ১৫: প্রেসিডেণ্ট ইয়াহিয়া খানের ঢাকা আগমন।
- মার্চ ১৬: প্রথম দফায় শেখ মুজিবের সাথে ইয়াহিয়ার আড়াই ঘণ্টা বৈঠক হয়। চট্টগ্রাম বন্দরের শ্রমিক-কর্মচারীরা চীন থেকে আমদানি করা সমরাস্ত্রবাহী জাহাজের মাল খালাসে অস্বীকৃতি জানায়। স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ এক বিবৃতিতে পূর্ব পাকিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহার দাবি করে।
- মার্চ ১৭: মুজিব-ইয়াহিয়া বৈঠক দ্বিতীয় দফায় চলে । বেসামরিক প্রশাসনকে সাহায্য করার জন্য কোন অবস্থার প্রেক্ষিতে ২ মার্চ থেকে ৯ মার্চ পর্যন্ত সামরিক বাহিনী তলব করা হয়েছিল, সে সম্পর্কে তদন্ত করার জন্য সামরিক কর্তৃপক্ষের কমিশন নিয়োগ করা হয়।
- মার্চ ২৪: প্রেসিডেণ্ট ইয়াহিয়া খান ও আওয়ামী লীগের মধ্যে প্রতিনিধি দলের মধ্যে সর্বশেষ দফা আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। পরদিন সকালে শেখ মুজিব ও ইয়াহিয়া খানের সামনে পেশ করার জন্য দুই পক্ষের মধ্যকার ঐকমত্যের ভিত্তিতে সংবিধানের একটি খসড়া দাঁড় করানো হয়।
- মার্চ ২৫: পাকিস্তান সেনাবাহিনী ঢাকা সহ সারা দেশে অপারেশন সার্চলাইট শুরু করে, রাজনৈতিক কর্মী,ছাত্র, এবং সেনাবাহিনী ,পুলিশ ও সশস্ত্র বাহিনীর বাংলাদেশী সদস্যদের হামলা করার মধ্য দিয়ে ।
- মার্চ ২৫: ঢাকায় পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর গণহত্যা শুরুর খবর শুনে মধ্যরাতে চট্টগ্রামের ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সশস্ত্র বিদ্রোহে।
- মার্চ ২৬:২৫ মার্চ,১৯৭১ রোজ বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত দেড়টায় শেখ মুজিবুর রহমানকে ধানমন্ডির ৩২ নং বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।গ্রেপ্তার হবার পূর্বে মধ্যরাতে অর্থাৎ ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং এ ঘোষণা ওয়ারলেস যোগে চট্রগ্রামে প্রেরণ করেন।২৬ মার্চ,১৯৭১ দুপুরে আওয়ামীলীগ নেতা আব্দুল হান্নান শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র হতে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রটি প্রচার করেন।
- মার্চ ২৭: মেজর জিয়াউর রহমান চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে সকাল ১১টায় নিজেকে রাষ্ট্রপতি দাবী করে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করেন।
- মার্চ ৩০: মেজর জিয়াউর রহমান কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার আরেকটি ঘোষণাপত্র পাঠ করেন। তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনী কর্তৃক বাংলাদেশের গণহত্যা রোধে এগিয়ে আসার জন্য জাতিসংঘ এ বৃহৎ শক্তিবর্গের প্রতি মেজর জিয়াউর রহমান আহ্বান জানান।
- মার্চ ৩১: কুষ্টিয়া প্রতিরোধ শুরু।
তথ্য সূত্র: উইকিপিডিয়া