কলকাতায় দুর্গাপুজো ।। বাইশগজের লড়াই পঞ্চমীতে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ।।পদ্মার ইলিশ,দুর্গা পুজোর নির্ঘণ্ট ।।
আলাপচারিতা
প্রতি বছর দুর্গার আগমন ও গমন হয় আলাদা আলাদা বাহনে চড়ে। তাই নিয়ম অনুসারে, এবছর দেবী দুর্গার আগমন হবে গজের উপর চড়ে। আর পায়ে হেঁটে প্রস্থান। এ বছর পুজো দেরিতে শুরু হলেও রয়েছে ‘ডবল’ চমক! বাঙালি আর ক্রিকেটের টুইস্ট নিয়ে এবারের দুর্গাপুজো একেবারে জমে যাবে অনেকে মনে করছে।
বাইশগজের লড়াই এবার প্রতি পুজো মণ্ডপগুলিতে পালন করবে আপামর বাঙালি। পুজোর সময় এমনিতেই কলকাতা-সহ গোটা বাংলা যেমন রঙিন হয়ে ওঠে। এ বছর হয়তো রঙের ছটা একটু বেশিই উজ্জ্বল হয়ে উঠবে। কারণ অক্টোবরেই শুরু হয়েছে ক্রিকেটের মহাযুদ্ধ, ২০২৩ সালের ওয়ানডে ক্রিকেট বিশ্বকাপ। জোড়া সেলিব্রেশন নিয়ে ক্রিকেটপ্রেমী তথা বাঙালি হৃদয় যে বেশ আন্দোলিত হচ্ছে , তা বলাই বাহুল্য।
পঞ্চমীতে এবার লড়াই বাংলাদেশের বিরুদ্ধে। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভারতীয় ব্যাটিং লাইনআপে বিরাট কোহলি গুরুত্বপূর্ণ একজন। বিশ্বকাপের ইতিহাসে বিরাট কোহলি এখনও পর্যন্ত বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ৩ ম্যাচে ৬৪.৫০ গড়ে ১২৯ রান করেছেন।বিশ্বকাপে এই নিয়ে পাঁচ নম্বর ম্যাচে ভারতের বিরুদ্ধে খেলবেন শাকিব আল হাসান। তিনি বিশ্বের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডারদের মধ্যে একজন।বিশ্বকাপে ভারতরে বিরুদ্ধে চারটি ম্যাচে ১৮৪ রান করেছেন শাকিব। উইকেট নিয়েছেন তিনটি।এবারের বিশ্বকাপে এখনও পর্যন্ত তিনটি ম্যাচের মধ্যে রোহিত শর্মা একটি সেঞ্চুরি ও একটি হাফ সেঞ্চুরি করে ফেলেছেন। দুরন্ত ফর্মে রয়েছেন তিনি।চলতি বছরের ভারতের বিরুদ্ধে দুর্দান্ত পারফর্ম করেছিলেন মেহেদি হাসান মিরাজ।ডান হাতি মেহেদি বোলার হিসেবেও ভাল। তাঁর অফ ব্রেক ভারতীয় ব্যাটারদের বিপদে ফেলতে পারে।যে কোনও দলের বিরুদ্ধেই জসপ্রিত বুমরাহ ভারতীয় দলের বড় অস্ত্র।আরও একজন ক্রিকেটারের উপর এই ম্যাচে নজর থাকবে। তিনি শুভমান গিল।
বিশ্বকাপে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে এখনও পর্যন্ত ২টি সেঞ্চুরি করেছেন রোহিত শর্মা।২০২৩ ওডিআই বিশ্বকাপে টানা ৩টি ম্যাচ জিতেছে ভারতীয় দল।
বিশ্বকর্মা পুজো মানেই দুর্গাপুজো প্রায় দোরগোড়ায়। ভাদ্র শেষে আশ্বিন মাসে শুক্লপক্ষ থেকেই শুরু হ দেবীপক্ষ।কালিকা পুরাণ ও বৃহদ্ধর্ম পুরাণ মতে, শ্রীরাম ও রাবণের তুমুল যুদ্ধের সময় এই শরতেই দেবী দুর্গাকে আরাধনা করা হয়। এই দুই পুরাণেই উল্লেখ রয়েছে, যুদ্ধে রামকে সাহায্য করা জন্য ব্রহ্মা ও মহাদেব দুর্গার বোধন ও পুজো করেছিলেন। তবে তন্ত্রশাস্ত্র মতে, সকল স্থানই হল দেবী দুর্গার, সকল সময়ই হল দুর্গাপুজোর।
বোধনের আগেই বাঙালির মনে মনে পুজো এসে গিয়েছে। অনেক মণ্ডপেও। দেখতে দেখতে ক’দিন কেটে যাবে। তবে বাঙালির কাছে পুজোর শেষ মানে পরের বছরের পুজো শুরু। মনে মনে তো বটেই পুজো উদ্যোক্তাদের কাছেও এক বিজয়ার দিন থেকে পরের বোধনের প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায়।
এবার মহালয়া পড়েছে ২ অক্টোবর, গান্ধীজয়ন্তীর দিনে। ফলে একটা ছুটি নষ্ট। পঞ্চমী ৮ অক্টোবর মঙ্গলবার। বোধন ৯ অক্টোবর বুধবার। ১০ অক্টোবর, বৃহস্পতিবার সপ্তমী আর ১১ অক্টোবর শুক্রবারে অষ্টমী। নবমী ও দশমী পড়েছে শনি ও রবিবারে। ১২ ও ১৩ অক্টোবর।
মহালয়া থেকে ঠাকুর দেখা শুরু হয়ে গিয়েছে কলকাতায়। আর কলকাতার এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে সবচেয়ে কম সময়ে পৌঁছে যাওয়ার একমাত্র উপায় কলকাতা মেট্রো। কলকাতা মেট্রোতে গিজগিজ করছে ভিড়। যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড় মেট্রো ব্লু লাইনে। মেট্রো রেল সূত্রে যে পরিসংখ্য়ান সামনে এসেছে তাতে বোঝাই যাচ্ছে পুজোর দিনগুলোতে কী পরিস্থিতি হতে পারে।
যাত্রীদের সুবিধার জন্য পুজোর দিন অর্থাৎ সপ্তমী, অষ্টমী এবং নবমীতে নর্থ-সাউথ করিডোরে সারা রাত মেট্রো পরিষেবা সচল থাকবে। পাশাপাশি ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো করিডোরে মধ্যরাত পর্যন্ত চালু থাকবে মেট্রো পরিষেবা।
ইউনেস্কোর ‘ইনট্যানজিব্ল কালচারাল হেরিটেজ’ তকমা পাওয়া দুর্গাপুজোর আনন্দ
ইউনেস্কো কলকাতার দুর্গাপুজোকে স্বীকৃতি দেওয়ায় বিদেশিদের কাছে আকর্ষণ বেড়েছে। পুজোর এবার বিদেশিদের ঢল নামতে পারে বলে কলকাতার পত্রপত্রিকা বলছে। পর্যটন দফতরের অনুমান প্রায় ১৭ হাজার পর্যটক যেতে পারেন কলকাতায় ঠাকুর দেখতে।
এমনিতে কলকাতার দুর্গোৎসব বরাবরই পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্র বিন্দু। তবে ইউনেস্কোর স্বীকৃতি পাওয়ার পর আকর্ষণ আরও বেড়েছে। রাজ্য সরকারের হিসাব অনুযায়ী ১৭ হাজার পর্যটক এই উৎসেব অংশ নিতে পারেন। মহালয়া থেকে দেওয়ালি পর্যন্ত পাঁচ লক্ষ মানুষ অংশ নিতে পারেন এই উৎসবে।
শুধু বাংলা নয়, দুর্গা পুজোর জলসায় মেতে উঠেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও। প্রতি বছরের মতো বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসবে মেতেছে দেশবিদেশের বাঙালিরা।
গত বছর পর্তুগালের লিসবনে কুমোরটুলি থেকে মাতৃপ্রতিমা এনে দুর্গোৎসবের সুচনা হয়েছিল। এ বছর আরও উৎসাহ নিয়ে ‘ভূমি— ইন্ডিয়ান কালচারাল অ্যান্ড ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’-এর পরিচালনায়, লিসবনের ভারতীয় দূতাবাস ও আরয়োস প্যারিশ কাউন্সিল (লিসবন)-এর সহযোগিতায় পুজোর আয়োজন আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।
মাতৃ আরাধনায় শামিল হওয়ার পাশাপাশি নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, খাওয়াদাওয়া ও মেলা আমাদের কাছে এক বিশেষ প্রাপ্তি। এ বছর পুজোর দিনগুলো সপ্তাহান্তে, তাই পরিকল্পনা ও আনন্দের মাত্রা সীমা ছাড়াতে চায়। গত বছরের মতো এ বছরও আমাদের দুর্গাপুজোর আয়োজন তিন দিনের। ষষ্ঠী আর সপ্তমীর পুজো হবে ২১শে অক্টোবর, শনিবার। অষ্টমী ২২শে অক্টোবর, রবিবার। নবমী আর দশমীর পুজো ২৩ শে অক্টোবর, সোমবার।
ইউনেস্কোর ‘ইনট্যানজিব্ল কালচারাল হেরিটেজ’ তকমা পাওয়া দুর্গাপুজোর আনন্দকে আমরা, পর্তুগালবাসীরা, এখানকার সব বাঙালি, অবাঙালি ও বিদেশিদের মধ্যে ভাগ করে নিয়ে এই পুজোকে আক্ষরিক অর্থে বিশ্বজনীন করে তোলার চেষ্টা করি।
মন ভাল করা পুজোর দিনগুলোতে ছোট-বড়, দেশি-বিদেশি সবাই মিলে আনন্দ উৎসবে মেতে উঠে সৌহার্দ্যের বার্তা এবং খুশির রং চার দিকে ছড়িয়ে দেওয়াই আমাদের পুজোর মূলমন্ত্র।
পুজো পদ্মার ইলিশ সংবাদ
পুজোর আগেই বাংলাদেশ থেকে ভারতে আসার কথা ছিল প্রায় ৪ হাজার টন ইলিশের। কিন্তু বাংলাদেশ দিল মাত্র ৫৬০ টন ইলিশ। শুক্রবার থেকে আগামী ২ নভেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশে ইলিশ মাছ ধরা, বাজারে বিক্রি বা রফতানি করার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে বাংলাদেশের মৎস্য দফতর। ফলে, ইলিশ রফতানির জন্য আরও সময় থাকলেও এই নিষেধের কারণে বাংলাদেশ আর ইলিশ পাঠাতে পারবে না।সীমান্ত পার হয়ে, যে পরিমাণ ইলিশ আসার কথা কথা ছিল তার মাত্র সাত ভাগের একভাগ এসেছে। ‘যে ইলিশ বাংলাদেশ দিয়েছে তার ৯০ শতাংশই বিক্রি হয়ে গিয়েছে। ফলে পুজোর দিনে পদ্মার ইলিশ পাওয়া যাবে না।’- এ সময়
মহালয়া- ১৪ অক্টোবর। এদিন পিতৃপক্ষের অবসান ঘটে। দেবীপক্ষের সূচনা হয় সেদিন থেকেই। মহালয়ার পরের দিন ১৫ অক্টোবর দেবীপক্ষের প্রতিপদ তিথি শুরু হয়।
২০২৩ সালের দুর্গা পুজোর নির্ঘণ্ট
মহাষষ্ঠী- ২০ অক্টোবর, ২০২৩, শুক্রবার
মহাসপ্তমী- ২১ অক্টোবর, ২০২৩, শনিবার
মহাঅষ্টমী – ২২ অক্টোবর, ২৩২৩, রবিবার
মহানবমী- ২৩ অক্টোবর, ২০২৩, সোমবার
বিজয়া দশমী- ২৪ অক্টোবর, ২০২৩, মঙ্গলবার
কোজাগরী লক্ষ্মীপুজো- ২৮ অক্টোবর, ২০২৩, শনিবার
কালীপুজো – ১২ নভেম্বর, ২০২৩, রবিবার।
ভাইফোঁটা- ১৪ নভেম্বর, ২০২৩, মঙ্গলবার