কাবাডি উপমহাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় খেলা
আলাপচারিতা
কাবাডি উপমহাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় খেলা।বর্তমানে কাবাডি আন্তর্জাতিক ভাবেও বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। এই খেলা সাধারণত কিশোর থেকে শুরু করে প্রাপ্তবয়স্ক সব ধরনের ছেলে এবং মেয়েরা খেলে থাকে। সাধারণত বিশেষ উৎসব বা পালা-পার্বণে বেশ আড়ম্বরপূর্ণ ভাবে কাবাডি খেলার আয়োজন করা হয়। কাবাডি বাংলাদেশের জাতীয় খেলা।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর বাংলাদেশে কাবাডি ফেডারেশন গঠিত হয়েছে। পূর্বে কেবল মাত্র গ্রামে এই কাবাডি খেলার প্রচলন দেখা গেলেও বর্তমানে সব জায়গায় কাবাডি খেলা প্রচলিত হয়েছে।১৯৭৮সালেভারত, বাংলাদেশ, নেপাল, শ্রীলঙ্কা ও বার্মার প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে এশিয়ান কাবাডি ফেডারেশন গঠিত হয়। ১৯৮০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে কলকাতায় প্রথম এশিয়ান কাবাডি প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। এভাবে আস্তে আস্তে কাবাডি খেলা জনপ্রিয় হয়ে উঠে।
কাবাডি উপমহাদেশের একটি জনপ্রিয় খেলা। কাবাডি ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়া (কেএফআই) ১৯৫০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং এটি একটি আদর্শ পদ্ধতি সংকলন করেছিল। পাকিস্তানের কাবাডির পরিচালনার জন্য কমিটি হল পাকিস্তান কাবাডি ফেডারেশন।
বাংলাদেশে খেলাটি হা-ডু-ডু নামে পরিচিত, যা কাবাডির সাথে ভিন্নতা রয়েছে, যা প্রাচীন কালে ফিরে আসে। হা-ডু-ডু এর কোনও নির্দিষ্ট বিধি নেই এবং বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন বিধি দিয়ে খেলা হয়। কাবাডি হল বাংলাদেশের জাতীয় খেলা, ১৯৭২ সালে অফিসিয়াল স্ট্যাটাস দেওয়া হয়। ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশের অপেশাদার কাবাডি ফেডারেশন গঠিত হয়েছিল।
১৯৯৬ সালে ইরানে কাবাডির সম্প্রদায় গঠিত হয়েছিল, একই বছর তারা এশিয়ান কাবাডি ফেডারেশনে যোগদান করেছিল এবং ২০০১ সালে তারা আন্তর্জাতিক কাবাডি ফেডারেশনে যোগদান করেছিল। ইরান অপেশাদার কাবাডি ফেডারেশন ২০০৪ সালে গঠিত হয়েছিল।
কাবাডি নেপালের অন্যতম জাতীয় খেলা। তৃতীয় শ্রেণিতে বা বেশিরভাগ নেপালি স্কুলে শুরু হওয়া বেশিরভাগ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে খুব কম বয়সেই কাবাডি খেলানো এবং শেখানো হয়। মজাকরা, ফিট রাখার জন্য এবং ব্রিটিশ এশীয় সম্প্রদায়ের সৈন্যদের নিয়োগের প্রলোভন হিসাবে কাবাডিকে ব্রিটিশ সেনাবাহিনীও খেলত। কাবাডি ভারতীয়, বাংলাদেশী এবং পাকিস্তানি অভিবাসীরা যুক্তরাজ্যে নিয়ে এসেছিলেন। যুক্তরাজ্যের কাবাডির পরিচালনা কমিটি হল ইংল্যান্ড কাবাডি ফেডারেশন যুক্তরাজ্য।
কাবাডি খেলার নিয়ম
- মাঠঃ কাবাডি খেলার বালকদের মাঠ লম্বায় ১২.৫০ মিটার চওড়ায় ১০ মিটার হয়। এবং বালিকাদের কাবাডি খেলার মাঠ লম্বায় ১১ মিটার এবং চওড়ায় ৮ মিটার হয়। খেলার মাঠের ঠিক মাঝখানে একটি লাইন টানা থাকে যাকে মধ্যরেখা বা চড়াই লাইন বলে। এই মধ্য রেখার দুই দিকে দুই অর্ধে দুটি লাইন টানা হয় যাকে কোল লাইন বলে। মৃত বা আউট খেলোয়াড়দের জন্য মাঠের দুই পাশে ১ মিটার দূরে দুটি লাইন থাকে যাকে লবি বলা হয়।
- সদস্যঃ প্রতি দলে ১২ জন খেলোয়াড় অংশ নেয়। কিন্তু প্রতি দলের ৭ জন খেলোয়াড় একসাথে মাঠে নামে। বাকি ৫ জন অতিরিক্ত খেলোয়াড় হিসেবে থাকে। খেলা চলাকালীন সর্বাধিক তিন জন খেলোয়াড় পরিব্রর্তন করা যাবে।
- সময়ঃ ৫ মিনিট বিরতি সহ দুই অর্ধে পুরুষদের ২৫ মিনিট করে এবং মেয়েদের ২০ মিনিট করে খেলা হবে। খেলা শেষে যেই দল বেশি পয়েন্ট পাবে সাই দলই জয়ী হবে। দুদলের পয়েন্ট সমান হলে দুঅর্ধে আরও ৫ মিনিট করে খেলা হবে। এরপরেও যদি পয়েন্ট সমান থাকে তবে যে দল প্রথম পয়েন্ট অর্জন করেছিল সে দলই জয়ী হবে।
- পয়েন্টঃ যদি কোন খেলোয়াড় মাঠের বাহিরে চলে যায় তাহলে সে আউট হবে। এভাবে একটি দলের সবাই আউট হলে বিপক্ষ দল একটি লোনা(অতিরিক্ত ২ পয়েন্ট) পাবে। মধ্যরেখা থেকে দম নিয়ে বিপক্ষ দলের কোন খেলোয়াড়কে(একাধিক হতে পারে)স্পর্শ করে এক নিঃশাসে নিরাপদে নিজেদের কোর্টে ফিরে আসতে পারলে, যাদের কে স্পর্শ করবে সে বা তারা কয় জনই আউট হবে। এভাবে যতজন আউট হবে তাদের প্রত্যেকের জন্য এক পয়েন্ট পাওয়া যাবে।
- সতর্কতাঃ এক নিঃশাসে স্পষ্ট ভাবে পুণঃপুণঃ কাবাডি বলে ডাক দেওয়াকে “দম নেওয়া” বলে। এই দম মধ্যরেখা থেকে শুরু করতে হবে।বিপক্ষ কোর্টে একসাথে একাধিক আক্রমণকারী যেতে পারবে না। কোন আক্রমণকারী বিপক্ষ দলের কোর্টে দম হারালে এবং বিপক্ষ দলের খেলোয়াড় তাকে স্পর্শ করতে পারলে সে আক্রমণকারী আউট বলে গণ্য হবে।