গণমাধ্যমে ১৫ আগস্ট।। ‘শেখ মুজিব নিহত হলেন তাঁর নিজেরই সেনাবাহিনীর হাতে। অথচ তাঁকে হত্যা করতে পাকিস্তানিরা সংকোচবোধ করেছে।’-বিবিসি
আলাপচারিতা
পচাঁত্তরের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার খবরে স্তম্ভিত হয়ে পড়ে বিশ্বসম্প্রদায় ও গণমাধ্যমগুলো। গুরুত্ব সহকারে প্রকাশিত হয়েছিলো শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার খবরটি।
ফিন্যান্সিয়াল টাইমস তাদের প্রতিবেদনে বলে, ‘মুজিব না থাকলে বাংলাদেশ কখনই জন্ম নিত না।’
পশ্চিম জার্মানির পত্রিকায় বলা হয়েছিল, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে চতুর্দশ লুইয়ের সঙ্গে তুলনা করা যায়। জনগণ তাঁর কাছে এত জনপ্রিয় ছিল যে, লুইয়ের মতো তিনি এ দাবি করতে পারেন যে, আমিই রাষ্ট্র।’
ব্রিটিশ ব্রডকাস্টিং করপোরেশন-বিবিসি প্রকাশ করে, ‘শেখ মুজিব নিহত হলেন তাঁর নিজেরই সেনাবাহিনীর হাতে। অথচ তাঁকে হত্যা করতে পাকিস্তানিরা সংকোচবোধ করেছে।’
ভারতীয় বেতার ‘আকাশ বাণী’১৯৭৫ সালের ১৬ আগস্ট তাদের সংবাদ পর্যালোচনা অনুষ্ঠানে বলে, ‘যিশু মারা গেছেন। এখন লাখ লাখ লোক ক্রস ধারণ করে তাঁকে স্মরণ করছেন। মূলত এক দিন মুজিবই হবেন যিশুর মতো।’
সেদিনের দৈনিক বাংলা পত্রিকায় প্রধান সংবাদ ছিল ‘খোন্দকার মোশতাক নয়া রাষ্ট্রপতি। পত্রিকাটির সম্পাদকীয়তেও শেখ মুজিবের পতন ঘটিয়ে মোশতাকের ক্ষমতা গ্রহণকে ‘ঐতিহাসিক পদক্ষেপ’ বলা হয়েছিলো। হত্যাকাণ্ডের কোনো বিস্তারিত বর্ণনা ছিলো না, হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি স্থান পেয়েছিল এভাবে, ‘শেখ মুজিব নিহত: সামরিক আইন ও সান্ধ্য আইন জারি: সশস্ত্র বাহিনীর আনুগত্য প্রকাশ’।
১৯৭৩ সালে আলজেরিয়ায় অনুষ্ঠিত হয় জোটনিরপেক্ষ সম্মেলন। সেখানে ভাষণ দিতে গিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন, ‘পৃথিবী আজ দুই ভাগে বিভক্ত। এক ভাগে শোষক শ্রেণি, আরেক ভাগে শোষিত। আমি শোষিতের দলে।’ সেই ভাষণের পর কিউবার প্রেসিডেন্ট ফিদেল কাস্ত্রো শেখ মুজিবুর রহমানকে বলেছিলেন, ‘তুমি আজ যে ভাষণ দিলে, এখন থেকে সাবধানে থেক। আজ থেকে তোমাকে হত্যার জন্য একটি বুলেট তোমার পিছু নিয়েছে।’
ঠিক দুই বছরের মাথায়, ফিদেল কাস্ত্রোর সেদিনের কথাটিই সত্য হয়ে যায়। ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট ভোর, পুরো বাংলাদেশ যখন ঘুমে, ঠিক তখনই ঘটে গেলো ইতিহাসের সবচেয়ে নির্মম ঘটনা। বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা-রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানকে ধানমণ্ডি ৩২ নম্বর বাসায় সপরিবারে হত্যা করা হলো। এরকম ঘটনার পর দেশের কোন প্রচার মাধ্যম এমনকি চলচ্চিত্রেও তাঁর নাম বা ছবি প্রকাশ হতে দেখা যায়নি।
লন্ডন থেকে প্রকাশিত ডেইলি টেলিগ্রাফে বলা হয়, ‘বাংলাদেশের লাখ লাখ লোক শেখ মুজিবের জঘন্য হত্যাকাণ্ডকে অপূরণীয় ক্ষতি হিসেবে বিবেচনা করবে।’
দ্য গার্ডিয়ানে লেখা হয়— ‘শেখ মুজিব ছিলেন এক বিস্ময়কর ব্যক্তিত্ব’।
নিউজ উইকে বঙ্গবন্ধুকে ‘পয়েট অব পলিটিক্স’ বলে আখ্যা দেওয়া হয়।
এদিকে, বঙ্গবন্ধুর নিহত হওয়ার সংবাদ শুনে মিসরের প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাত খুব দুঃখ পেয়েছিলেন। তিনি আক্ষেপ করে বলেছিলেন ‘তোমরা আমারই দেওয়া ট্যাঙ্ক দিয়ে আমার বন্ধু মুজিবকে হত্যা করেছ! আমি নিজেই নিজেকে অভিশাপ দিচ্ছি।’
ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বলেছিলেন- ‘শেখ মুজিব নিহত হওয়ার খবরে আমি মর্মাহত। তিনি একজন মহান নেতা ছিলেন। তাঁর অনন্যসাধারণ সাহসিকতা এশিয়া ও আফ্রিকার জনগণের জন্য প্রেরণাদায়ক ছিল।’
ব্রিটিশ লর্ড ফেন্যার ব্রোকওয়ে বলেছিলেন- ‘শেখ মুজিব জর্জ ওয়াশিংটন, গান্ধী এবং দ্য ভ্যালেরার থেকেও মহান নেতা ছিলেন।’
ব্রিটিশ এমপি জেমসলামন্ড বলেছিলেন- ‘বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডে বাংলাদেশই শুধু এতিম হয়নি, বিশ্ববাসী হারিয়েছে একজন মহান সন্তানকে।’
ইরাকের সাবেক প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনের ভাষ্য ছিলো- ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হচ্ছেন সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের প্রথম শহীদ। তাই তিনি অমর।’
জাম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট কেনেথা কাউন্ডা বলেছিলেন- ‘শেখ মুজিবুর রহমান ভিয়েতনামী জনগণকে অনুপ্রাণিত করেছিলেন।’
বিপ্লবী ফিদেল কাস্ত্রো বলেছিলেন- ‘আমি হিমালয় দেখিনি, বঙ্গবন্ধুকে দেখেছি। শেখ মুজিবের মৃত্যুতে বিশ্বের শোষিত মানুষ হারাল তাদের একজন মহান নেতাকে, আমি হারালাম একজন অকৃত্রিম বিশাল হৃদয়ের বন্ধুকে।’
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার সময়ে দেশের বাইরে ছিলেন তার দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। সে কারণেই পরিবারের সব সদস্য সে দিন নিহত হলেও তাঁরা দু’জনে প্রাণে বেঁচে গিয়েছিলেন।
১৯৭৫-এর ১৫ অগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের কয়েক ঘন্টা পরেই উল্টো পথে চলা শুরু হয়েছিল সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের। মুক্তিযুদ্ধের রণধ্বনী, বাংলাদেশের জাতীয় স্লোগান ‘জয় বাংলা’ বদলে গিয়েছিল— বাংলাদেশ জিন্দাবাদ। ‘বাংলাদেশ বেতার’ হয়েছিল ‘রেডিও বাংলাদেশ’। একই সঙ্গে আক্রান্ত হচ্ছিল বাঙালিয়ানার সেই ভিত্তিগুলো, ১৯৭১ সালে যাদের উপর দাঁড়িয়ে মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল। দেশের জেলখানাগুলো পূর্ণ হয়ে গিয়েছিল মুক্তিযোদ্ধা আর প্রগতিশীল মানুষে। শেখ মুজিবুর রহমানকে ১৫ অগস্টের পর থেকে বঙ্গবন্ধু হিসেবে ভুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা শুরু হয়। সব পাঠ্যপুস্তক থেকেই মুছে ফেলা হয় বঙ্গবন্ধুর নাম। আওয়ামি লিগ-সহ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের রাজনৈতিক দলগুলোর উপরে চলে ধারাবাহিক নির্যাতন।
সেই সময়ের বাংলাদেশ হয়ে উঠেছিল পাকিস্তানপন্থী দর্শনে বিশ্বাসীদের অভয় উত্থানের উর্বর জনপদ। সে এক অন্ধকার বাংলাদেশ— নাম আর জাতীয় পতাকা ছাড়া দেশটির সব আবহেই পাকিস্তানী ভাবধারার জয়জয়কার। অন্য দিকে চিনের পাকিস্তান প্রীতি বাংলাদেশ প্রশ্নে এত বেশি ছিল যে, বঙ্গবন্ধুর জীবিতকালে তারা স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে বাংলাদেশের স্বীকৃতিও দেয়নি। ১৫ অগস্ট স্বপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর চিন বাংলাদেশকে ১৯৭৫ সালের ৩১ অগস্ট স্বীকৃতি দেয়।
এক দিকে মুখ থুবড়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, অন্য দিকে প্রশাসন-রাজনীতি সব জায়গায় সদম্ভে পাকিস্তানী ভূত। জাতির জনকের হত্যার এক বছরের মাঝেই জেলখানা থেকে স্বদম্ভে বেড়িয়ে আসে মুক্তিযুদ্ধের সময়ে মানবতা বিরোধী অপরাধে জড়িত প্রায় ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী— আলবদর রাজাকার। ১৯৭৫-এর ২৬ সেপ্টেম্বর তারিখে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের রক্ষার জন্য ইনডেমনিটি (দায়মুক্তি) অধ্যাদেশ জারি করে রাষ্ট্র। বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারবর্গ ওই হত্যার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের আইনি শাস্তি যাতে কখনওই না দেওয়া যায়, সেই ব্যবস্থা করতেই বাংলাদেশে ‘ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ’ আইনটি প্রণয়ন করা হয়। এই আইনটির পরবর্তী কালে সাংবিধানিক বৈধতা দিয়েছিলেন জেনারেল জিয়াউর রহমান। বঙ্গবন্ধু হত্যার সঙ্গে এই সেনাশাসকের সম্পর্ক নিয়েও আলোচনা আছে বাংলাদেশের রাজনৈতিক গবেষকদের মাঝে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার সময়ে দেশের বাইরে ছিলেন তার দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। সে কারণেই পরিবারের সব সদস্য সে দিন নিহত হলেও তাঁরা দু’জনে প্রাণে বেঁচে গিয়েছিলেন। বড় মেয়ে শেখ হাসিনা স্বামী, সন্তান-সহ ছ’বছর বিদেশে কাটিয়ে দুই শিশু সন্তান সজীব ওয়াজেদ জয় এবং সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে লন্ডনে ছোট বোন শেখ রেহানার কাছে রেখে ১৯৮১ সালের ১৭ মে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাংলাদেশে ফেরেন।
দীর্ঘ দিন পরে দেশে ফেরা শেখ হাসিনার জন্য মোটেও আনন্দের ছিল না। ছিল বেদনা আর আবেগের। তার ফিরে আসার দিনটিইও যেন সেই সময়ের বাংলাদেশের রাজনীতির মতোই। প্রকৃতিও যেন একাত্ম হয়ে গিয়েছিল শেখ হাসিনা আর বাঙালির আবেগের সঙ্গে। ১৯৮১-র ১৭ মে সকাল থেকেই কালবৈশাখীর প্রবল ঝোড়ো হাওয়া। ঝড়-বৃষ্টি মাথায় সে দিন বিমানবন্দরমুখী লাখো মানুষ। প্রবল বৃষ্টি তাদের সরাতে পারেনি বিমানবন্দর থেকে। সাড়ে ছ’বছর পর দেশের মাটিতে পা দিয়েই শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘‘সব হারিয়ে আমি আপনাদের মাঝে এসেছি। বঙ্গবন্ধু নির্দেশিত পথে তার আদর্শ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে জাতির জনকের হত্যার প্রতিশোধ গ্রহণে আমি জীবন উৎসর্গ করতে চাই।’’
বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর নির্বাসিত প্রবাস জীবন কাটাতে হয় আজকের বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। সেই সময়ে ১৯৮১ সালে অনুষ্ঠিত আওয়ামি লিগের কাউন্সিলে দলের নেতারা শেখ হাসিনাকে সভাপতি নির্বাচিত করেন। দেশে ফেরার পর তিনি দায়িত্ব নেন আওয়ামি লিগের। দেশে ফেরার প্রথম দিনেই শেখ হাসিনা ছুটে গিয়েছিলেন ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাড়িতে, যেখানে ঘাতকরা হত্যা করেছিল তাঁর বাবা শেখ মুজিবুর রহমান, মা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, ভাই শেখ কামাল, শেখ জামাল, শেখ রাসেল আর দুই ভাইয়ের স্ত্রীকে। তবে তৎকালীন জিয়াউর রহমানের সরকার তাঁকে সে দিন ঢুকতে দেয়নি স্বজনের রক্তে ভেজা সেই বাড়িতে। বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে দোয়া পড়ে ফিরে যেতে হয়েছিল তাঁকে। সে দিন শেখ হাসিনার চোখের জল আর বৃষ্টির জলে একাকার হয়ে ভিজেছিল বাংলাদেশের মাটি।
বিচারপতি সায়েম রাষ্ট্রপতি থাকাকালীন ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ নেন। ১৯৭৬ সালের ২৯ এপ্রিল সায়েম জেনারেল জিয়াউর রহমানের কাছে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের দায়িত্ব হস্তান্তর করেন। ১৯৭৭ সালের ২১ এপ্রিল সায়েমকে পদত্যাগ করিয়ে রাষ্ট্রপতি হন জিয়াউর রহমান। ১৯৭৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি সামরিক আইনের অধীনে বাংলাদেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। বিতর্কিত এ নির্বাচনে জিয়াউর রহমানের দল বিএনপি দুই-তৃতীয়াংশ আসন পায়। সেই সংসদেই ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট থেকে ১৯৭৯ সালের ৯ এপ্রিল পর্যন্ত ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ-সহ সামরিক আইনের আওতায় সব অধ্যাদেশ, ঘোষণাকে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে আইনি বৈধতা দেওয়া হয়। এক দিকে আইনি সুরক্ষা দিয়েই বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচারের পথ বন্ধ করা হয়। সঙ্গে সঙ্গে তাদের বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করা হয়।
১৯৯৬ সালে সংসদ নির্বাচনে আওয়ামি লিগ বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করে। বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার করতে ১৯৯৬ সালের ১৪ নভেম্বর সংসদে ইনডেমিনিটি আইন বাতিল করা হয়৷ ১৯৯৬ সালের ২ অক্টোবর বঙ্গবন্ধুর আবাসিক একান্ত সহকারি (পিএ) মোহিতুল ইসলাম ১৯৭৫ সালের ১৫ অগস্ট সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় থানায় একটি এফআইআর দায়ের করেন৷ ৩ অক্টোবর বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা সিআইডির কাছে হস্তান্তর করা হলে তারা মামলার তদন্ত শুরু করে। ১৯৯৭ সালের ১৫ জানুয়ারী সিআইডি এই মামলায় ২০ জনকে অভিযুক্ত করে মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে চার্জশিট দাখিল করে৷ ১৯৯৮ সালের ৮ নভেম্বর মামলার রায়ে বিচারক কাজি গোলাম রসুল ১৫ জন সাবেক সেনা কর্মকর্তাকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করেন৷ তবে, ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়ে থেমে যায় বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিচার।
২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামি লিগের নেতৃত্বে মহাজোট সরকার গঠনের পর গতি ফেরে মামলায়। উচ্চ আদালতে ২৯ দিন শুনানির পর ২০০৯ সালের ১৯ নভেম্বর ঘোষণা হয় সেই ঐতিহাসিক রায়। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ হাইকোর্টের দেওয়া রায়, পঁচাত্তরের ১৫ অগস্ট সপরিবারে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা মামলায় ১২ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন উচ্চ আদালত। ২০১০ সালের ২৮ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর ঘাতকদের মধ্যে সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, আর্টিলারি মুহিউদ্দিন আহমদ, বজলুল হুদা এবং ল্যান্সার এ কে এম মহিউদ্দিনের ফাঁসি কার্যকর করা হয়।
অন্য দিকে বঙ্গবন্ধুর ঘাতকদের ৬ জন এখনও বিদেশে পলাতক। বিভিন্ন সূত্রের তথ্য, যুক্তরাষ্ট্রে আছেন রাশেদ চৌধুরী এবং রিসালদার মোসলেমউদ্দিন। নূর চৌধুরী আছেন কানাডায়। অন্য ঘাতক খন্দকার আব্দুর রশিদ লিবিয়া অথবা কেনিয়ায়, শরিফুল হক ডালিম পাকিস্তান এবং আব্দুল মাজেদ ভারতে। বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কিছু দিন আগে জানিয়েছিলেন, বঙ্গবন্ধুর খুনিদের গ্রেফতারে রেড অ্যালার্ট এখনও বহাল। খুনীদের অবস্থান নিশ্চিত করে দ্রুত তাদের দেশে আনা সম্ভব হবে।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ছিল শতভাগ রাজনৈতিক চেতনার যুদ্ধ। সেই যুদ্ধের যে শপথ ছিল, সেই শপথের পথ থেকে মাঝে অনেকটাই বেপথু হয়েছিল বাংলাদেশ। মুজিবকন্যা শেখ হাসিনা লড়ছেন মুক্তিযুদ্ধের পথে দেশটি আনতে, আর সে কারণেই ২০০৪-এর ২১ অগস্ট-সহ ২৩ বারের বেশি তাঁকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। পিতা বঙ্গবন্ধু যে স্বপ্ন আর শপথ নিয়ে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার নেতৃত্ব দিয়েছেন, তাঁর কন্যা এখন বাবার সেই স্বপ্নের পথেই ধাবমান করছেন ২০১৯ এর বাংলাদেশ। বাংলাদেশ তার নিজস্ব পরিচয়ে বিশ্বসভায় উজ্জ্বল। দেশটির সব ঔজ্জ্বল্য আর সাহসের ভিত্তি একটিই নামের উচ্চারণ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।- আজকের আনন্দবাজার পত্রিকা থেকে