গম্ভীরা উৎসবের নাট্যিক পরিবেশনা: ছদ্মবেশী
মুহম্মদ আলমগীর পিএইচডি*
লেখাটি ধারাবাহিক ভাবে আলাপচারিতায় প্রকাশ করা হবে
Abstract: The popular Gambhira song of Maldah of West Bengal (India) and Chapai Nawabganj of Bangladesh has attained a significant place in the rich heritage of Bengali drama. In the Maldah region it is used as a kind of performance, in the form of Chadmabeshi, to observe Caitra Sankranti (the last day of Bengali year and the beginning of the new year). It is related to the life of Shiva. The background, subject matter, characteristics and intention of the concerned people expressed through the ritualishtic performance of Chadmabeshi have added a distinct dimenssion to the already rich tradition of Bengali drama. The relation between Chadmabeshi and the Shiva festival of Caitra Sangkranti and related subject matters to it are discussed in this paper.
ভূমিকা
সাধারণভাবে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মালদহ এবং বাংলাদেশের চাঁপাইনবাবগঞ্জ অঞ্চলের জনপ্রিয় একটিঐতিহ্যবাহী নাট্যাঙ্গিক ‘গম্ভীরা।’১বিশেষভাবে মালদহ অঞ্চলে ক্সচত্রসংক্রান্তির আগে ও পরে শিবকেন্দ্রিক যে ধর্মীয় উৎসব পালিত হয় তাই গম্ভীরা। গম্ভীরা উৎসব প্রধানত চার দিনের। তবে একদিন থেকে সাতদিনপর্যন্ত এ পূজা ও উৎসবের প্রচলন লক্ষ করা যায়।২আদ্যের গম্ভীরার লেখক হরিদাস পালিত প্রদত্ত গম্ভীরাউৎসবের সূচি এরূপ- ২৬, ২৭, ২৮, ২৯ ও ৩০শে ক্সচত্র যথাক্রমে ‘ঘটভরা’, ‘ছোট তামাসা’, ‘বড় তামাসা’,
‘আহারা’ ও ‘চড়ক পূজা।’ তবে ক্সচত্রমাস ৩১ তারিখের হলে উৎসবের সূচি একদিন পিছিয়ে ২৭ তারিখথেকে শুরু হয়।৩উক্ত উৎসবের ধারাবাহিকতায় মালদহ জেলার মালদহ থানার (যা পুরাতন মালদহ নামেপরিচিত) পুরাতন মালদহ পে․রসভার ৩, ৪, ও ৫ নম্বর ওয়ার্ডে ২৮, ২৯, ৩০, ৩১ শে বৈশাখ ও ০১ লা জৈষ্ঠ (অথবা তার অনতি পরে যে কোনো একদিন) মোট ০৫ দিন গম্ভীরা উৎসব পালিত হয়।৪
পাঁচদিনব্যাপী এই উৎসবের চতুর্থদিন (আহারা) অর্থাৎ-৩১শে ক্সবশাখ বিকাল ৫-৬টা (সন্ধ্যার প্রাক্কাল হতে) রাত ৮-৯ টা পর্যন্ত শোভাযাত্রাসহ সঙ জাতীয় যে গান-বাদ্য-অভিনয়াদি হয়ে থাকে তাকে স্থানীয়ভাবে বলা হয়‘ছদ্মবেশী।’৫ ছদ্মবেশী শেষে রাত ১০ টার পর শুরু হয় গম্ভীরা নাচ ও গম্ভীরা সঙ্গীত। ছদ্মবেশীতে বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষ বিভিন্ন বেশ ধারণ করে পে․রাণিক-ঐতিহাসিক-সামাজিক-রাজ‣নতিক ইত্যাদি বিষয়কে উপজীব্য করে কখনো নির্বাক কখনো বা সবাক অভিনয়ের মাধ্যমে খ- খ- নাট্য পরিবেশন করে। প্রদ্যোতঘোষ, শচীকান্ত দাস প্রমুখ গম্ভীরা গবেষকগণ এই পরিবেশনাকে ৃঅং ুড়ঁ ষরশব‟ অভিধায় অভিহিতকরেছেন।৬অন্যদিকে গম্ভীরা গবেষক পুষ্পজিৎ রায় স্থানীয় জনমতকে প্রাধান্য দিয়ে এই পরিবেশনাকে‘ছদ্মবেশী’ অভিধা প্রদানে আগ্রহী-যা যথার্থ ও যে․ক্তিক।৭গম্ভীরা উৎসবের ছদ্মবেশী পরিবেশনার উক্তপ্রেক্ষাপটে স্বাভাবিকভাবেই অনুসন্ধিৎসু মনে বেশ কিছু প্রশ্নের উদয় হয়। যেমন: ‘ছদ্মবেশী’ গম্ভীরা উৎসবের কোন অঙ্গের রূপান্তর? ছদ্মবেশী পরিবেশনার সঙ্গে যুক্ত পা-ুলিপি, মঞ্চ, প্রপস, পোশাক পরিকল্পনা, সেট,মেকআপ, আলো ইত্যাদির প্রকৃতি কেমন? একটি বিশেষ অঞ্চলে ছদ্মবেশী প্রচলনের কারণ কী? ছদ্মবেশীর আকর্ষণ ও জনপ্রিয়তার কারণ কী? ইত্যাদি। গম্ভীরা উৎসবের গবেষণার ক্ষেত্রে উক্ত বিষয়াদি সম্পর্কে সার্বিক কোনো পর্যালোচনা পরিলক্ষিত হয় না। সংগত কারণে বিষয়টি আলোচনার অপেক্ষা রাখে এবংক্ষেত্রসমীক্ষণের মাধ্যমে গম্ভীরা উৎসবের নিবিড় পর্যবেক্ষণ ও পর্যবেক্ষণকৃত প্রাপ্ত তথ্যসমূহ বিশ্লেষণ করে উক্ত জিজ্ঞাসাসমূহের জবাব আলোচ্য প্রবন্ধে অনুসন্ধান করা হয়েছে। ধর্মীয়ভাবে পালিত গম্ভীরা-উৎসবে পরিবেশিত হয় বলে ‘ছদ্মবেশী’ প্রত্যয়টি সম্যক উপলব্ধি ও বিশ্লেষণের জন্য গম্ভীরা এবং গম্ভীরা-ঐতিহ্যের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত অঞ্চল, সংশ্লিষ্ট জনগোষ্ঠী, গাজনের শোভাযাত্রা ও সঙ সজ্জা, ছদ্মবেশ ইত্যাদি বিষয়ে আলোকপাত করা প্রয়োজন।
গম্ভীরা‘গম্ভীরা’ শব্দের অর্থ নিয়ে বিতর্ক আছে।৮গম্ভীরার আদি গবেষক হরিদাস পালিত বাংলার সাং¯‥ৃতিক ঐতিহ্য
অনুসন্ধান করে গম্ভীর শব্দের তিনটি অর্থ পেয়েছেন- শিব, শিবমন্দির ও পদ্মফুল। সুতরাং তাঁর মতে“…‘গম্ভীর’ শোভিত ‘গম্ভীর’ মধ্যে ‘গম্ভীর’ দেবের পূজাস্থল বলিয়া এই মহোৎসবের নাম গম্ভীরা উৎসব এবংএই উৎসব স্থলের নাম গম্ভীরা হওয়াই সম্ভব।”৯ গবেষক প্রদ্যোত ঘোষ প্রমাণ করতে চেষ্টা করেছেনÑ উত্তরবঙ্গের ধর্মঠাকুরের পূজারীবৃন্দ ধর্মঠাকুরের পূজায় গামারী (সং¯‥ৃত গম্ভারী, বসবষরহধ ধৎনড়ৎবধ) কাঠেরপিঁড়ি ব্যবহার করে এবং উক্ত সূত্রেই ‘গম্ভারী’ থেকে ‘গম্ভীরা’ শব্দ ব্যুৎপন্ন হয়েছে।১০ এ প্রসঙ্গে গবেষকপুষ্পজিৎ রায়ের অভিমতএই (গম্ভীরা) উৎসবের কেন্দ্রবিন্দু ছিল শিব। সেই শিবের পূজা গম্ভীরা নামক ম-পে বা গৃহে। আরউৎসবের অঙ্গ নাচ, গান, আনুষঙ্গিক ক্রিয়াকর্ম ইত্যাদি হত গম্ভীরা ম-প লাগোয়া উঠোনে। সেই সূত্রে শিবের পুজো অনুষ্ঠান ইত্যাদি বা শিব কেন্দ্রিক এই উৎসব লোক মুখে এক সময় গম্ভীরা নামে পরিচিত লাভ করে।১১ গম্ভীরা উৎসবের ৪র্থ দিন অর্থাৎ আহারার রাতে মালদহ অঞ্চলে প্রচলিত গম্ভীরাগান পরিবেশিত হয়। গম্ভীরাগান আদিতে ‘বোলবাই’, ‘বোলবাহি’, ‘বোলাই’ ইত্যাদি নামে পরিচিত ছিল। হরিদাস পালিত ‘বোলবাহি’নামীয় ‘গম্ভীরা-সঙ্গীতে’ বন্দনা, ঠুংরিগান, চারিয়াড়ি, বোলাই ইত্যাদি গানের প্রচলন লক্ষ করেছেন।১২পুষ্পজিৎ রায় ‘বোলবাই’, ‘বোলবাহি’ ইত্যাদি শব্দের ব্যুৎপত্তি, অর্থ ও প্রয়োগ বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন ‘…সংকীর্ণ ও সীমিত ধারার বোলবাহি গান গম্ভীরাগানের বিশাল ব্যাপ্তিতে’ সমন্বিত হয়েছে।১৩ প্রদ্যোত ঘোষের মতে ‘আলকাপ, রামপ্রসাদী, বাউল, কীর্তন’ ইত্যাদি গানের সুরের সমন্বয়ে গম্ভীরাগানের সুর সৃষ্টি হয়েছে।১৪গম্ভীরার গবেষকগণ গম্ভীরাগানের ছয়টি অঙ্গের কথা বলেছেন- মুখপাদ, বন্দনা, ডুয়েট (ক্সদ্বতসঙ্গীত),চারইয়ারী (চারজনের একসঙ্গে গান), পালাবন্দীগান, খবর বা রিপোর্ট।১৫ পুষ্পজিৎ রায়ের পর্যবেক্ষণে গম্ভীরাগানের প্রধান চারটি অঙ্গ-বন্দনা, ডুয়েট, চারইয়ারী ও রিপোর্ট। এর বাইরে অনিয়িমিতভাবে একাধিক
চরিত্র সমন্বয়ে ছোটো ছোটো লোকধর্মী পালাগান পরিবেশিত হয়।১৬পশ্চিমবঙ্গের মালদহ অঞ্চলে বর্তমানে সাধারণভাবে যে গম্ভীরাগান পরিবেশিত হয় তার পাঁচটি অঙ্গÑবন্দনা,ডুয়েট, চারইয়ারী, রিপোর্ট ও টন্টিং- যা গম্ভীরা উৎসবের গানের প্রায় অনুরূপ।১৭ তবে সম্প্রতি একসাক্ষাৎকারে মালদহের খ্যতিমান গম্ভীরা ব্যক্তিত্ব অমর ম-ল, অসীম রায় প্রমুখ এই মতামত প্রদান করেছেন যে, বর্তমানে গম্ভীরার উক্ত ৫টি অঙ্গ একত্রে প্রায় কোনো আসরেই পরিবেশিত হয় না। অর্থাৎ একই আসরে পাঁচটি অঙ্গের ৩ বা ৪টি পরিবেশিত হয় এবং বন্দনা অবশ্যই থাকে।১৮ আর ১৯৪৭ সালে মালদহ থেকে বিচ্ছিন্ন বাংলাদেশের চাঁপাইনবাবগঞ্জ অঞ্চলে যে গম্ভীরা গান পরিবেশিত হয় তা উক্ত গানের ডুয়েট বা ক্সদ্বত সঙ্গীত মাত্র।১৯ বর্তমানে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও তৎসংলগ্ন অঞ্চলে প্রচলিত দুই চরিত্র বিশিষ্ট গম্ভীরাগান ঐতিহ্যগত দিক থেকে গম্ভীরা উৎসবের অংশ হলেও বিষয় ও পরিবেশনার দিক বিবেচনায় তা গম্ভীরা উৎসবের ডুয়েট থেকে এতই দূরবর্তী যে তাকে এখন গম্ভীরা উৎসবের অংশ হিসেবে অস্বীকার করার প্রবণতাদেখা যাচ্ছে।২০ প্রদ্যোত ঘোষ মনে করেন- চাঁপাইনবাবগঞ্জ অঞ্চলের গম্ভীরাগানের মুসলিম লেখক-গায়কগণতাঁদের ধর্মীয় সং¯‥ৃতির শব্দ হিসেবে গম্ভীরায় শিবের পরিবর্তে ‘নানা’ ব্যবহার করেছেন।২১ গম্ভীরায় শিবের গম্ভীরা উৎসবের নাট্যিক পরিবেশনা: ছদ্মবেশী ৩পরিবর্তে ‘নানা’ শব্দের ব্যবহারের ক্ষেত্রে অন্য একটি ব্যাখ্যাও প্রণিধানযোগ্য। মালদহ অঞ্চলের মানুষ গঙ্গার গর্ভজাত পলিদ্বারা গঠিত গঙ্গা-মহানন্দার মধ্যবর্তী এই অঞ্চলকে মাতৃজ্ঞানে পূজা করে। সুতরাং গঙ্গা হচ্ছেমায়ের মাÑ‘নানি।’ তাই গঙ্গাপতি শিব হচ্ছে মালদহবাসীর ‘নানা।’২২
সংশ্লিষ্ট জনগোষ্ঠী সাধারণত গঙ্গা ও পদ্মার পূর্বতীর তথা পূর্বভাগে গম্ভীরা উৎসব পালিত হয়। অবশ্য গঙ্গা-পদ্মার পশ্চিমতীরেও
অল্পবিস্তর অনুরূপ অনুষ্ঠান হয়ে থাকে। হরিদাস পালিতের পর্যবেক্ষণে জানা যায়, নদী ভাঙন বা অন্য কোনো
কারণে গঙ্গা-পদ্মার পূর্ব ভাগ থেকে যারা পশ্চিমভাগে চলে আসতে বাধ্য হয়েছে কেবল তারাই গম্ভীরা উৎসব
পালন করে।২৩ হরিদাস পালিত যখন গম্ভীরার তথ্য উপাত্ত সংগ্রহে তৎপর ছিলেন তখন অনেকেই গম্ভীরাকে ‘কোঁচ-প’লের
গান ও উৎসব’ রূপে উপহাস করেছে। তিনি গম্ভীরা উৎসবে ‘নাগর, ধানুক, চাঁই, রাজবংশী এবং ব্রাহ্মণ,কায়স্থ, ক্সবদ্য-গণের’ উপস্থিতির কথা উল্লেখ করলেও ‘পে․-্রক বা পে․-্র ক্ষত্রিয়গণের উৎসাহাধিক্য’ লক্ষ্য করেছেন।২৪ প্রদ্যোত ঘোষ মাঠ পর্যায়ের পরিসংখ্যানের মাধ্যমে মালদহ জেলার ১৯৪টি গম্ভীরা উৎসবে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ‘তিওর, নাগর, চাঁই, বিন্দ, সদগোপ, পোলিয়া ও রাজবংশী’দের সংখ্যাধিক্যেরউল্লেখ করেছেন।২৫ পুষ্পজিৎ রায় গম্ভীরা উৎসবকে বলেছেন- ‘…কোচ-ক্ষত্রিয়-রাজবংশি-দেশি-পলি-গোষ্ঠীর সম্মিলিত উৎসব…।’২৬ গে․রী শংকর ভট্টাচার্য ‘রাজবংশী, চাঁই, কোচ, মহলী ও ভূমিজ সম্প্রদায়ের মধ্যে’ গম্ভীরা উৎসব পালিত হতে দেখেছেন।২৭
গাজনগাজন মূলত ‘ক্সচত্রসংক্রান্তিতে অনুষ্ঠিত শিব বিষয়ক কৃত্য।’২৮ হরিদাস পালিতের অভিমত এই যে,কোলাহল, সন্ন্যাসী ও ঢক্কাদি বাদ্যের ঐকতানে এই উৎসব সম্পাদিত হয় বলে তা গাজন নামে অভিহিত।২৯শিবের গাজন বা আদ্যের গাজনই বাংলার দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে নীলের গাজন বা নীলপূজা, পশ্চিমবঙ্গে দেলপূজা।৩০ উত্তরবঙ্গের জলপাইগুড়ি অঞ্চলে তা ‘গমীরা’ নামে পরিচিত।৩১ এই পূজা ক্সচত্র মাসে হয় বলে দেশ ভাগের (১৯৪৭) ফলে টাঙ্গাইল থেকে পশ্চিমবঙ্গের নদিয়ার ফুলিয়ায় অভিবাসনকারী তাঁতিসমাজে তা
ক্সচত্রপূজা।৩২ গাজন সাধারণত ক্সচত্র মাসের দ্বিতীয় পক্ষেই অনুষ্ঠিত হয়। তবে ক্সবশাখ ও ক্সজ্যষ্ঠসংক্রান্তিকে
কেন্দ্র করেও কোথাও কোথাও এই অনুষ্ঠান হতে দেখা যায়। বাংলার যে সকল গ্রামে ‘শিব মন্দির’ বা‘শিবথান’ আছে সেই গ্রামের প্রচলিত প্রথা অনুযায়ী উক্ত তিন সংক্রান্তির যে কোনো একটিতে গ্রামবাসীবাৎসরিক উৎসব রূপে গাজনের অনুষ্ঠান করে। সাধারণত ক্সচত্রের শেষ দিনে গাজন শেষ হয়।৩৩ গাজন উৎসবের সূচনায় কেবল নিয়ম রক্ষার্থেই শিবের বন্দনা গীত হয়। বন্দনার পর গাজনের মূল প্রতিপাদ্য
হিসেবে সমকালীন সামাজিক ও রাজ‣নতিক ঘটনাবহুল প্রায় ত্রিশ চল্লিশটি খ- খ- বিষয় পরিবেশিত হয়।৩৪
শোভাযাত্রা ও সঙ ভারতীয় ধর্মীয় ঐতিহ্যে নৃত্যগীতসহ সচল সামাজিক ও ধর্মানুষ্ঠানকে ‘যাত্রা’ বলা হয়- যেমন: রথযাত্রা, ¯œানযাত্রা, দোলযাত্রা ইত্যাদি। স¤্রাট অশোক এইসব যাত্রার বিপক্ষে অনুশাসন জারি করা সত্ত্বেও পরবর্তী পর্যায়ে বে․দ্ধ ও ব্রাহ্মণ্য সমাজে তা স্বীকৃত হয়েছে।৩৫ ক্সচত্রসংক্রান্তির সূর্যোৎসবকে কেন্দ্র করে সংক্রান্তির দিন বিভিন্ন গ্রামের শোভাযাত্রা সেই অঞ্চলের বিখ্যাত কোনো শিবমন্দিরে গিয়ে সমবেত হয়। যেমন- একসময় কলকাতা ও হুগলী থেকে ৪০ কি. মি. দূরে তারকেশ্বরের শিবমন্দির ছিল সকলের গন্তব্য। এই সময়শিব ভক্তগণ ‘হরগে․রী, শিব, কালী, ভূত প্রেতিনী, ভল্লুক, সন্ন্যাসী, ফকির’ ইত্যাদি বেশে শোভাযাত্রায়
অংশগ্রহণ করতো।৩৬ আবার ‘এই সময়টিই বাংলার শ্রেষ্ঠ লে․কিক নৃত্যোৎসবের কাল।’ কারণ-৪ গবেষণা পত্রিকা (কলা অনুষদ) রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় বাংলার পূর্ব থেকে পশ্চিম, এক প্রান্ত থেকে আর এক প্রান্ত পর্যন্ত, সর্বশ্রেণীর অধিবাসীর মধ্যে তার
(শিবের) গাজন অনুষ্ঠান হয় এবং এই উপলক্ষে নানা প্রকার গীত-নৃত্যেরও আয়োজন হয়ে থাকে। এই সময় প্রায় সর্বত্রই, কেবল ছে․ এবং গম্ভীরার অঞ্চল ছাড়া, মুখোস পরার পরিবর্তে নানা ধরনের নৃত্যে যোগদানকারীরা তাদের মুখে রঙ মেখে নানা পে․রাণিক চরিত্র অনুযায়ী সাজসজ্জা গ্রহণ করে।৩৭গাজন কেন্দ্রিক কৃত্য ‘সঙ’ শব্দের অর্থে ক্সবচিত্র্য দেখা যায়।৩৮ সেলিম আল দীনের মতে সঙ হচ্ছেÑ ‘অদ্ভুত
পোশাক পরিহিত কে․তুককারী।’৩৯ সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের মত অনুযায়ী সঙের উদ্দেশ্য হলো বৎসরব্যাপী ঘটে যাওয়া সমাজের প্রচলিত নিয়মের সঙ্গে সামঞ্জস্যহীন ঘটনার ব্যঙ্গাত্মক উপস্থাপনা।৪০ গাজন চলাকালীন প্রায় প্রতিদিন সন্ধ্যারাতে পে․রাণিক ধারায় ধর্মীয় নিয়ম মেনে সঙসজ্জা অনুষ্ঠিত হয় এবং মাত্র একদিনÑ ক্সচত্রসংক্রান্তির পূর্ব দিন ধর্মীয় আবহের বাইরে লে․কিক ধারায় সঙযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। এইদিন একদল হর-গে․রী সেজে পাড়ায় পাড়ায় নেচে ‘ভুক্তা’ (সিধা হিসেবে তোলা চাল, ডাল, তেল, আনাজপাতি
ইত্যাদি) তুলে। অন্যদল ‘যেমন খুশি সেজে’ ((as you like?) অর্থাৎ ছদ্মবেশে সমগ্র এলাকায় নাচ-গান-
কৌতুক ইত্যাদি প্রদর্শনের মাধ্যমে অর্থ আদায় করে।৪১
ছদ্মবেশ
সুবলচন্দ্র মিত্র সংকলিত সরল বাঙ্গালা অভিধানে ছদ্মবেশ শব্দের প্রদত্ত অর্থ সমন্বিত করে পাওয়া যায়Ñ অন্য
লোক বা লোকসমাজের সঙ্গে প্রতারণার অভিপ্রায়ে নিজ রূপ বা ভাব গোপন রেখে অন্যের রূপ বা ভাব
ধারণ।৪২ বাংলা একাডেমির বিবর্তনমূলক বাংলা অভিধানে ছদ্ম শব্দজাত ছদ্মবেশ সংক্রান্ত শব্দ নি¤œরূপ অর্থে
ব্যবহৃত হয়েছেÑ
ছদ্মবেশ- পরিচয় গোপন করার জন্য কৃত্রিম বেশ ধারণ, ভ-ামি, লুকানো অবস্থা; ছদ্মবেশধারী- কপট বেশ
ধারণকারী; ছদ্মবেশী- কপট লোক, কপট বেশ ধারণকারী; ছদ্মব্যবহার- কপট আচরণ; ছদ্মভাবে- গোপনে;
ছদ্ম-লক্ষণ- ভুয়া ক্সবশিষ্ট্য; ছদ্মসাজ- পরিচয় গোপন করার উপযুক্ত সাজ; ছদ্মী- ছদ্মবেশধারী।৪৩
ভারতীয় পুরাণে ছদ্মবেশের ব্যাপক উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। ভারতীয় পুরাণে শিব যুগপৎ অরূপ ও সরূপ।
উপনিষদে আছেÑ
তাঁহার হাত নাই, তথাপি তিনি সমস্ত গ্রহণ করেন অর্থাৎ সমস্ত ধারণ করিয়া আছেন, তাঁহার পা নাই অথচ
তিনি দূরগামী, তাঁহার চক্ষু নাই অথচ তিনি সমস্ত দেখেন, তাঁহার কান নাই অথচ তিনি সমস্ত শোনেন
যদিও সমস্ত জ্ঞাতব্য বিষয় তিনি জানেন, কিন্তু তাঁহাকে কেহ জানে না। ব্রহ্মবিদগণ তাঁহাকে মহান ও আদি
পুরুষ বলিয়া থাকেন।৪৪
এই কথার প্রতিধ্বনি পাওয়া যায় শিবপুরাণেÑ ‘তিনি (শিব) সরূপ অর্থাৎ তাঁর দেহ, হাত, পা প্রভৃতি সকল
অঙ্গই তাঁর আছে। আবার তিনি অরূপ, তাঁর কোন প্রকৃতরূপ নেই।’৪৫ শিবকে নানারূপে পূজা করার
মাহাত্ম্য ও ছদ্মবেশের গুরুত্ব উক্ত সূত্রেই নিহিত। হরিদাস পালিত ছদ্মবেশের শাস্ত্রীয় প্রমাণ শেষে
ছদ্মবেশীদের অভিনয়াদিতে ‘শিবের অনির্ব্বচনীয় প্রীতিলাভে’র কথা বলেছেন।’৪৬ উক্ত প্রেক্ষিতে ভারতীয়
পুরাণ বিশেষ করে শিব পুরাণ থেকে শিবের কয়েকটি ছদ্মবেশ ধারণ উদাহৃত হতে পারে। শিবকে পতিরূপে
পাবার জন্য পার্বতীর কঠোর তপস্যা দেখে দেবগণ ও ঋষিগণ শিবকে তা জানালে তিনি পার্বতীকে পরীক্ষা
করার জন্য জটিল নাম ধারণ করে বৃদ্ধ ব্রাহ্মণের ছদ্মবেশে ঢুলু ঢুলু পদক্ষেপে পার্বতীর সামনে হাজির হন।
জটিলরূপী বৃদ্ধশিব পার্বতীকে শিবের রূপ ও গুণ সম্পর্কে নানা অপকথা বললেও ক্রুদ্ধ পার্বতী ঘোষণা করে
‘শিব যে রূপই হন না কেন, তিনি আমার সর্বাপেক্ষা অভিলষিত। একমাত্র তিনিই আমার অভীষ্টতম পতি।’
পার্বতীর আচরণে সন্তুষ্ট শিব তখন বৃদ্ধের ছদ্মবেশ পরিত্যাগ করে স্বরূপ ধারণ করেন।৪৭
পরবর্তী পর্যায়ে শিব মহাসমারোহে পার্বতীকে বিয়ে করতে আসার পথে পার্বতীর মাতা মেনকা জামাই
দেখার জন্য গৃহের ছাদে অবস্থান করছিলেন। ক্সদববলে শিব মেনকার ‘অহংকারের কথা’ জানতে পেরে
প্রথমে নিজের আটপে․রে রূপটি দেখালেন এবং তা দেখে মেনকা শিবের সঙ্গে মেয়ের বিয়ে দিতে অস্বীকার
করেন। অবশেষে অপরূপ সজ্জিত শিবকে দেখে মেনকার মনে হলো- ‘… এহেন পুরুষকেও (শিবকে) যে
আমার কন্যা বশীভূত করতে সক্ষম হয়েছে, ধন্য সেই কন্যা পার্বতী।’ অবশ্য শিবের প্রতি বিরূপ আচরণের
জন্য মেনকা এবং মেনকার সঙ্গে ছলনা করার জন্য শিব লজ্জিত হয়েছেন।৪৮ এই পুরাণেই শিব-অর্জুনের
যুদ্ধে শিব ব্যাধের বেশে অর্জুনের সম্মুখীন হয়েছে।৪৯
শিবের ছদ্মবেশ ধারণের অন্য একটি প্রসঙ্গে দেখা যায়নিজেদের শ্রেষ্টত্ব ও প্রভুত্ব নিয়ে ব্রহ্মা ও বিষ্ণু প্রবল দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়লে এর প্রতিবিধান কল্পে শিব উভয়ের‘রণস্থলের সন্নিকটে গিয়ে শূন্যে গুপ্তভাবে অবস্থান করতে লাগলেন। তাঁর ইচ্ছায় সহসা আদি অন্তহীন বিশালএক অনলস্তম্ভ ব্রহ্মা ও বিষ্ণুর মাঝখানে স্থাপিত হলো।’ উক্ত অনলস্তম্ভই শিব লিঙ্গ। পরে সেই অনলস্তম্ভন থেকে শিব নিজরূপে আবির্ভূত হন।৫০ শিবের ছদ্মবেশ ধারণের পরবর্তী বিষয়টি তার পরকীয়ার সঙ্গে জড়িত-আড়ি ক্সদত্য হিমালয়ে ঘুরতে ঘুরতে একদা শিব-পার্বতীর গুহার নিকট চলে আসে। সে শিব-পার্বতীর বিহার দেখার ইচ্ছে প্রকাশ করলে পার্বতীর দুই সখী ও শিবের অনুচর বীরক তাকে বাধা দেয়। পরে আড়ি ক্সদত্য সাপের বেশে গুহার মধ্যে প্রবেশ করে গে․রীরূপ ধারণ করে শিবকে শয্যায় আহ্বান করে। শয্যায়
গিয়ে শিব বুঝতে পারে তাঁর শয্যাসঙ্গিনী গে․রীতো নয়ই এমনকি কোনো নারীই নয়। শিব ছদ্মবেশধারী
আড়ি ক্সদত্যকে চিনতে পেরে হত্যা করে। পরে আড়ি ক্সদত্যের ভাই গে․রীরূপেই শিব সন্নিধানে গেলে এবার
শিব প্রথমেই গে․রীরূপী ক্সদত্যকে চিনতে পারে। কিন্তু ইতোমধ্যেই পার্বতীর এক সহচরী শিবের সঙ্গে অন্য
নারীকে দেখে গুহার বাইরে গিয়ে পার্বতীকে জানায়। শিবকে কামাচারে সহায়তা করার জন্য গে․রী বীরককে
মর্তে জন্মগ্রহণের শাপ দেয়। কিন্তু গুহায় ফিরে সেখানে কোনো নারীকে না দেখে পার্বতী তার ভুল বুঝতে
পেরে বীরককে শাপমোচনের পথ বাতলে দেয়। বীরকের শাপমোচনকৃত রূপই নন্দী।৫১
ভারতীয় পুরাণের ঐতিহ্য মেনেই বাংলার মধ্যযুগের গেয় কাব্য মঙ্গলকাব্য ধারায় শিব-গে․রীর ছদ্মবেশের
নানা কা- পরিলক্ষিত হয়। রামেশ্বরের শিব-সঙ্কীর্তন বা শিবায়নে দেখা যায়Ñ পদ্মার সঙ্গে পরামর্শক্রমে
গে․রী ‘মূর্ত্তি ফের্যা’ বাগদিনী রূপ ধারণ করে এবং বাগদিনী বেশেই শিবের মন হরণ করে উপহার হিসেবে
শিবের আংটি গ্রহণ করে।৫২ পরে বাগদিনী প্রসঙ্গ ও শাঁখা পরাকে কেন্দ্র করে শিব রাগের বশে কার্তিক
গণেশসহ গে․রীকে বাপেরবাড়ি পাঠিয়ে দিয়ে মনঃকষ্টে ভোগে।৫৩ উক্ত পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণের আশায়
নারদের পরামর্শে শিব গে․রীর পিত্রালয় গমন ঠেকানোর জন্য পথে বাঘরূপ ধারণ করে। এই প্রয়াস ব্যর্থ
হলে শিব ঝড় বৃষ্টি সৃষ্টির মাধ্যমে পথে একখানা ঘরে গে․রীর অবস্থান নিশ্চত করে নিজে বৃদ্ধবেশে গে․রীর
সঙ্গে কথা বলে।৫৪ তাতেও কাজ হলো না দেখে শিব মাঝির ছদ্মবেশে সন্তানসহ গে․রীকে নে․কায় মায়া নদী
পার করার সময় ছলনা করে।৫৫ শেষ পর্যন্ত গে․রী পিত্রালয়ে গমন করার পর শিব শাঁখারি বেশে গে․রীর
পিত্রালয়ে চলে আসে। দাম্পত্য কলহ শেষে হর গে․রীকে বাগদিনী বেশে শয্যায় আমন্ত্রণ জানালে বাগদিনী
বেশেই গে․রী হরকে তৃপ্ত করে।৫৬
জগজ্জীবন ঘোষালের মনসামঙ্গল কাব্যে দেখা যায় দুর্গা গোয়ালিনী ও কুচুনীর ছদ্মবেশে শিবের ঔরসে
যথাক্রমে গণেশ ও কার্তিকের জন্ম দেয় এবং উভয়ক্ষেত্রেই শিব তার ভ্রষ্টাচার স্বীকার করে নিতে বাধ্য
হয়।৫৭ বিপ্রদাসের মনসাবিজয়-এ শিব ডোমনিবেশী গে․রীকে শয্যায় গ্রহণ করে এবং যথারীতি শিব গে․রীর
হাতে বমাল ধরা পড়ে যায়। দেবেশ রায় শিবের ভ্রষ্টাচার প্রসঙ্গে মন্তব্য করেন- ‘শিবের এমন কা-কারখানা
হয়তো লে․কিক ধারার সঙ্গে পে․রাণিক ধারার মিশ্রণে খানিকটা গ্রাহ্যও ছিল।’ কিন্তু মনসাবিজয়-এ বিপ্রদাস
কেবল শিবের ভ্রষ্টাচার প্রদর্শনেই ক্ষান্ত ছিলেন না। তিনি দেখিয়েছেন, অপমানের প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য
শিব ইঁদুরের বেশ ধারণ করে গে․রীর কাঁচুলি কেটে দেয় এবং কারিগরের বেশে সেই কাঁচুলি রিপু করার জন্য
৬ গবেষণা পত্রিকা (কলা অনুষদ) রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
গে․রীর দরজায় উপস্থিত হয়। গে․রী রিপু করাতে সম্মত হলে শিবরূপী কারিগর রিপুর মূল্য হিসেবে গে․রীর
রতিক্রিয়া দাবি করে। উক্ত বিনিময়ের শর্তে রিপু কর্মের পর গে․রী কারিগরের সঙ্গে রতিকর্ম সম্পন্ন করে।
গে․রীর ভ্রষ্টাচার সম্পর্কে দেবেশ রায় মন্তব্য করেন ‘গে․রীর পাতিব্রত্যের পে․রাণিকতা বিপ্রদাস অনায়াসে
ধ্বসিয়ে দিলেন।’৫৮
ছদ্মবেশী পরিবেশনা
১৪২৫ (২০১৮) ও ১৪২৬ (২০১৯) বঙ্গাব্দের ৩১ শে ক্সবশাখ অর্থাৎ ক্সবশাখ সংক্রান্তিতে পশ্চিমবঙ্গের মালদহ
জেলার মালদহ থানার (যা পুরাতন মালদহ নামে পরিচিত) পুরাতন মালদহ পে․রসভার ৩, ৪ ও ৫ নম্বর
ওয়ার্ডে অনুষ্ঠিত ‘ছদ্মবেশ’ ধারণ ও প্রতিযোগিতা ক্ষেত্রসমীক্ষণের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করা হয়।
পর্যবেক্ষণে দেখা যায় উক্ত ৩টি ওয়ার্ডে প্রায় ৪ কি.মি. রাস্তায় ছদ্মবেশের শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং প্রধান দুটি
রাস্তা সংলগ্ন ১৫টি মন্দিরের সামনে ছদ্মবেশীগণ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছে। প্রতিযোগীগণ নিজ বাড়ি থেকে
ছদ্মবেশ ধারণ করে যে কোনো মন্দিরের সামনে গিয়ে তার পরিবেশনা প্রদর্শন শেষে অন্য মন্দিরের দিকে
চলে যায়। এক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কোনো নিয়ম নেই। কোনো প্রতিযোগী যদি দেখেন এক মন্দিরের সামনে
প্রতিযোগীর সংখ্যা বেশি তবে সে পাশের মন্দিরের দিকে গমন করে। পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে সংখ্যাধিক্যের
কারণে সব সময় সকল প্রতিযোগী ১৫টি মন্দিরের সব কয়টিতেই তাদের পরিবেশনা প্রদর্শন করতে পারে
না। এক্ষেত্রে বর্তমানে শোভাযাত্রা বা সঙসজ্জার আড়ালে প্রতিযোগীদের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য থাকে
প্রতিযোগিতা। বয়স অনুযায়ী ছদ্মবেশ প্রতিযোগিতায় দুটি দলÑ অনুর্ধ ১৫ এবং তদুর্ধ। পুর¯‥ার প্রদান করা
হয় দুটি বিষয়েÑ ভা¯‥র্য ও সাধারণ ছদ্মবেশ। ১৪২৬ বঙ্গাব্দের ১৫টি প্রতিযোগিতায় সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে
চ্যাম্পিয়ন অব দা চ্যাম্পিয়ন হয়েছে সতীর দেহত্যাগছদ্মবেশধারী ৮ বছরের সঞ্চিতা কু-ু। অবশ্য ১৫টি
মন্দিরেই ১ম, ২য়, ৩য় স্থান অধিকারীকে পুর¯‥ৃত করা হয়।ছদ্মবেশীর বিষয় ও আঙ্গিক অনুধাবনের জন্য ১৪২৫বঙ্গাব্দের (২০১৮) পরিবেশিত কয়েকটি ছদ্মবেশেরনমুনা মনোনিবেশ দাবি করে। উল্লেখ্য যে, পুরাতন
মালদহের শর্বরী মহল্লার দুর্গামন্দির সংলগ্ন খোলা জায়গায় এবং উপর শর্বরী মহল্লার দামোদর মন্দিরের
সামনে থেকে ছদ্মবেশীদের পরিবেশনা গৃহীত হয়েছে। উক্ত দুই জায়গায় ছদ্মবেশ পরিবেশনার পৃষ্ঠপোষক
যথাক্রমে পুরাতন মালদহ পে․রসভা ও পশ্চিমবঙ্গ গণতান্ত্রিক লেখক শিল্পী সংঘ, মালদহ জেলা শাখা।
নমুনাসমূহের নামকরণের ক্ষেত্রে অভিনয়াদির বিষয়, বিচারকবৃন্দের বিচারকার্যে ব্যবহৃত শিরোনাম এবং
ক্ষেত্রসমীক্ষকের বোধ সমন্বিত হয়েছে।
গম্ভীরা উৎসবের নাট্যিক পরিবেশনা: ছদ্মবেশী
১. ভাগাড় কা–১
মেয়ে: কাক্কু, তোমাকে আজ আমার বাড়ি যেতে হবে। তোমাকে এক্ষণি যেতে হবে কাক্কু।
কালকে রাত্রের বেলা আমার বর আমাকে ঘর থেকে বের করে দিয়েছে। এই হাবুদার বউ আছে
না, ওই যা আমার বরকে বলেছে আমি কলকাতায় গেছিলাম, কলকাতায় আমি হোটেল ভাত মাংস
কিছুই খাইনি। ও মিথ্যা কথা আমার বরকে বলে দিয়েছে হাবু দার বে․। আর আমার বর আমাকে
বার করে দিয়েছে। তুমি যায়ে বুঝায় কাকু, চলো কাকু, চলো কাকু বুঝায় গা। আমি দু দিন থেকে
খাইনি কাকু না খেয়ে আছি, তুমি চলো কাকু, চলো কাকু, তুমার পা ধরছি, কাকু চলো, কাকু চলো।
২. ভাগাড় কা–২
দিনমজুরী: আমার মালিক আমাকে দিয়ে পাঠালো বড়ো বড়ো রেস্টুরেন্টে, বড়ো বড়ো
হোটেলে, আমি যেখানে যেতাম সেখান থেকে আমাকে পুলিশ ধাওয়া করেছে। মালিক বিদেশে
পালিয়ে গেছে। আমাকে একটু বাঁচান না বাবুরা,আপনারা। আমি আর কুনু দিন এ কাজ করবো
না দাদা। আমি এবার কথা দিচ্ছি দাদা, আমিএবার থেকে রেকসা চালিয়ে খাবো, তবুও আমি
হোটেলে রেস্টুরেন্টে এইসব মরা মুরগি আর বেচবো না। আমার মালিক পালিয়ে গেছে
দাদা। আজকের পর থেকে আমি আর এসব বেচবো না। আমি কথা দিচ্ছি স্যার- আমি আর এ কাজ
করবো না। আমি এ আর ব্যাচবো না। আমাকে পুলিশ খুঁজছে……. চলবে
গবেষণা পত্রিকা (কলা অনুষদ) রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ২৯তম সংখ্যা, জুন-২০২০, ISSN 1813-0402 থেকে সংগৃহীত গবেষক মুহম্মদ আলমগীর পিএইচডি* এর অনুমতিক্রমে প্রকাশিত