গাজাবাসীদের ওপর পরমাণু বোমা ফেলতে চায় ইসরাইল!
অবরুদ্ধ গাজার অধিবাসীদের বিরুদ্ধে ইহুদিবাদী শাসক গোষ্ঠীর মন্ত্রিসভার একজন সদস্যের পারমাণবিক বোমা ব্যবহারের হুমকির মাধ্যমে আবারও এই শাসক গোষ্ঠীর নৃশংস ও অমানবিক চরিত্রের বর্হিপ্রকাশ ঘটেছে।
ইসরাইলে নেতানিয়াহু সরকারের কথিত ঐতিহ্য বিষয়ক মন্ত্রী অ্যামিচাই এলিইয়াহু এক সাক্ষাৎকারে হুমকি দিয়ে বলেছেন, গাজার ওপর পরমাণু বোমা ফেলার একটি সম্ভাবনা রয়েছে। একটি টিভি শোতে উপস্থিত হয়ে, ইলিইয়াহু ইসরাইলের মাধ্যমে গাজাবাসীদের হত্যার কথা স্বীকার করে বলেন যে ৬০ ভাগ হামলা হামাসের বিরুদ্ধে ছিল। একইসঙ্গে তিনি বলেন যে পারমাণবিক বোমার ব্যবহার গাজাকে আরও মারাত্মকভাবে আঘাত করার অন্যতম উপায়।
এর আগে ইহুদিবাদী শাসক গোষ্ঠীর পার্লামেন্টের সাবেক সদস্য ‘মোশে ভিগলিন’ও গাজার বিরুদ্ধে পারমাণবিক বোমা ব্যবহারের আহ্বান জানিয়েছিলেন। তিনি “হিংসাত্মক প্রতিশোধ” শিরোনামে একটি টুইটে লিখেছিলেন, জেরিকো মিসাইল! জেরিকো মিসাইল! কৌশলগত সতর্কতা। গাজায় স্থল সেনা পাঠানোর কথা ভাবার আগে সেখানে কেয়ামতের অস্ত্র ব্যবহার করুন। এটা আমার মতামত।জেরিকো মিসাইল একটি আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র যা পারমাণবিক ওয়ারহেড বহন করতে সক্ষম এবং এর পাল্লা প্রায় ৬,৫০০ কিমি।
বর্তমান মন্ত্রী এবং ইসরায়েলি পার্লামেন্টের সাবেক সদস্য এমন পরিস্থিতিতে গাজাকে পারমাণবিক বোমার হুমকি দিচ্ছেন যেখানে চার সপ্তাহে ইহুদিবাদী শাসক গাজায় যে পরিমাণ বোমা ফেলেছে তা আমেরিকা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপানের হিরোসিমা নাগাসাকিতে যে দুটি পারমাণবিক বোমা ফেলেছে তার শক্তির সমান।
এ পর্যন্ত গাজার প্রায় দশ হাজার নিরাশ্রয় মানুষ বোমাবর্ষণে শহীদ হয়েছে এবং তাদের এক তৃতীয়াংশেরও বেশি শিশু। ইসরাইলের পাশবিক হামলায় এ পর্যন্ত প্রায় ২৭ হাজার মানুষ আহত হয়েছেন। বেসামরিক নাগরিকদের উপর বর্বরোচিত বিমান হামলা এবং এসব হামলায় ইসরাইলি সেনারা গাজায় ফসফরাস বোমার মতো নিষিদ্ধ অস্ত্রও ব্যবহার করছে। যাইহোক, ইহুদিবাদী মন্ত্রী গাজার জনগণকে “নাৎসি” বলেছেন এবং এমনকি বিশ্বাস করেন যে গাজার সমস্ত মানুষ ইসরায়েলের সাথে যুদ্ধে জড়িত। ইসরায়েলের মন্ত্রিপরিষদ মন্ত্রীর বক্তব্য এতটাই ভয়াবহ ছিল যে, চরমপন্থি ইহুদিবাদী প্রধানমন্ত্রী ও যুদ্ধবাজ জল্লাদ বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু তা বুঝতে পারেননি এবং অবিলম্বে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে তার মন্ত্রিসভায় তার সদস্যপদ স্থগিত করে বলেন যে মন্ত্রিপরিষদ মনে করে মন্ত্রীর কথা বাস্তবতা থেকে অনেক দূরে।
নেতানিয়াহু সরকারের এই মন্ত্রির বিবৃতি একদিকে এই বিষয়টি পরিষ্কার হয়েছে যে ইহুদিবাদী শাসকদের পারমাণবিক অস্ত্র রাখার ক্ষমতা নেই এবং তারা আরও বেশি মারাত্মক পরাজয়ের সম্মুখীন হলে সেগুলি ব্যবহার করার সম্ভাবনা রয়েছে এবং অন্যদিকে এই সরকার যেটি রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের প্রকৃষ্ট উদাহরণ তারা মানবিক মূল্যবোধে বিশ্বাসী নন। এ প্রসঙ্গে সৌদি আরবের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই ইহুদিবাদী মন্ত্রীর বক্তব্যের নিন্দা জানিয়ে জোর দিয়ে বলেছে যে, এই মন্ত্রীকে বরখাস্ত না করে তার সদস্যপদ কেবল স্থগিত রাখার মাধ্যমে মানবিক মূল্যবোধের প্রতি ইহুদিবাদী সরকারের মন্ত্রিসভার উদাসীনতার পরিচয় পাওয়া যায়।
ইসলাম জিহাদ আন্দোলন এবং হামাসও গাজা উপত্যকায় পারমাণবিক বোমা ব্যবহারের সম্ভাবনা সম্পর্কে ইহুদিবাদী চরমপন্থী মন্ত্রীর বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। ইসলামী জিহাদ আন্দোলন বলেছে, ইলিইয়াহু যা বলেছে ইসরাইল ধীরে ধীরে তা করছে। হামাস এ বিষয়ে জোর দিয়ে বলেছে গাজায় পারমাণবিক বোমা ফেলার সম্ভাবনা সম্পর্কে দখলদার সরকারের একজন মন্ত্রীর বক্তব্য আমাদের জাতির বিরুদ্ধে ইসরাইলের রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসবাদকে তুলে ধরছে।
শেষ কথা হল গাজার জনগণকে পারমাণবিক বোমা ব্যবহার করার হুমকি গাজার বিরুদ্ধে যুদ্ধে ইহুদিবাদী শাসকদের লক্ষ্য পূরণে তাদের অক্ষমতা এবং ব্যর্থতার চিত্রই ফুটে উঠেছে।-পার্সটুডে
গাজা ভূখণ্ডে ইজরায়েলি আগ্রাসন নিয়ে ভারত এবং ইরানের ফোন আলাপ
গাজা ভূখণ্ডে ইজরায়েলি আগ্রাসন রুখতে নিজেদের ‘সর্বোচ্চ ক্ষমতা’ প্রয়োগ করুক ভারত! ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছে এমনটাই আর্জি ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রইসের। সোমবার রইসের সঙ্গে টেলিফোনে ইজরায়েল-হামাস যুদ্ধের গতিবিধি নিয়ে আলোচনা করেন মোদী। সেই সময়ই মোদীর কাছে রইস ‘ক্ষমতা’ প্রয়োগের এই আহ্বান জানিয়েছেন বলে ইরানের তরফে এক বিবৃতি প্রকাশ করে দাবি করা হয়েছে।
দুই রাষ্ট্রনেতার মধ্যে যুদ্ধ সংক্রান্ত আলাপ-আলোচনার সময় ঔপনিবেশিকতার বিরুদ্ধে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রসঙ্গও তুলে আনেন রইস। জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনে ভারতের ভূমিকার কথাও তিনি মোদীকে স্মরণ করিয়ে দেন বলে বিবৃতিতে বলা হয়েছে। এর পরই নাকি তিনি মোদীকে ‘সর্বোচ্চ ক্ষমতা’ প্রয়োগ করার আহ্বান জানান। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘‘গাজার নিপীড়িত জনগণের বিরুদ্ধে ইহুদিদের অত্যাচার বন্ধ করতে ভারত তার সমস্ত ক্ষমতা ব্যবহার করবে বলে আশা করা হচ্ছে।’’
পাশাপাশি, অবিলম্বে ইজরায়েল-হামাস যুদ্ধবিরতি এবং গাজ়ার নিপীড়িত জনগণকে সহায়তা প্রদানের জন্য যে কোনও বৈশ্বিক যৌথ প্রচেষ্টাকে সমর্থনের ডাক দিয়েছেন রইস। বিবৃতি অনুযায়ী, রইসি বলেছেন, ‘‘প্যালেস্তাইনের জনগণকে নির্বিচারে হত্যার ঘটনা বিশ্বের সমস্ত স্বাধীন দেশকে ক্ষুব্ধ করেছে এবং এর প্রভাব অনেক দূর পর্যন্ত পড়বে।’’
মোদীর সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলার সময় রইস গাজার নিরপরাধ নারী ও শিশুদের হত্যা, হাসপাতাল, স্কুল, মসজিদ, গির্জা ও আবাসিক এলাকায় ইজরায়েলি হামলার নিন্দা করেছেন। সূত্রের খবর, ইজ়রায়েলি হামলায় সাধারণ প্যালেস্তিনীয় নাগরিকদের মৃত্যু নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মোদীও। সেই সঙ্গে রইসকে তিনি জানিয়েছেন, হামাসের হামলার নিন্দা করলেও নয়াদিল্লি তার পুরনো অবস্থান অনুসরণ করেই প্যালেস্তাইনের জনগণের পাশে রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর দফতর জানিয়েছে, মোদী ইরানের প্রেসিডেন্টকে বলেছেন, ‘‘ভারত চায় ইজ়রায়েল-প্যালেস্তাইন সমস্যার স্থায়ী সমাধান এবং শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান।’’ দুই নেতার মধ্যে কথোপকথনের সময়, ভারত এবং ইরানের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নিয়েও কথা হয়েছে বলে সূত্রের খবর। – আনন্দবাজার পত্রিকা
বিক্ষোভকারীরা অস্ত্রবাহী মার্কিন জাহাজ আটকে দিলেন
যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন অঙ্গরাজ্যের বন্দর থেকে ইসরাইলমুখী অস্ত্রবাহী জাহাজ আটকে দিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা। তারা বলেছেন, যুদ্ধাস্ত্র বোঝাই করে এই যুদ্ধজাহাজ যুক্তরাষ্ট্র থেকে ইসরাইল যাচ্ছিল।
বিক্ষোভকারীদের আরও বলেছেন, এই যুদ্ধজাহাজে বোঝাই করে নেওয়া অস্ত্র ইসরাইল চলমান সংঘাতে গাজার নিরীহ মানুষের বিরুদ্ধে ব্যবহার করবে। ৩২ দিন ধরে চলা ইসরাইলের নির্বিচার হামলায় প্রায় ৬ হাজার নারী-শিশুসহ ১০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন।
টাকোমায় বিক্ষোভে অংশ নেওয়া ওয়াসিম হেজ বলেছেন, ‘আমরা এখন যুদ্ধবিরতি চাই। আমরা এখন মানুষ হত্যা বন্ধ করাতে চাই। আমরা এখন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির আসল পরীক্ষা দেখতে চাই। আমরা দেখতে চাই, ইসরাইলে যুক্তরাষ্ট্রের তহবিল দেওয়া বন্ধ হয়েছে।’ আরব রিসোর্সেস অরগানাইজিং সেন্টারে (এআরওসি) ওয়াসিম হেজ কেস ম্যানেজার ও কমিউনিটি আউটরিচ সমন্বয়ক হিসেবে কাজ করছেন। সংগঠনটি গতকাল টাকোমা বন্দরে প্রতিবাদ বিক্ষোভের আয়োজন করেছে। হেজ বলেন, একটি গোপন সূত্রে এআরওসি জানতে পেরেছে, এই জাহাজে অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম বোঝাই করা হবে। এখান থেকে জাহাজটি ইসরায়েল যাবে। এই ইসরাইলেই গাজায় অনবরত বোমা বর্ষণ করে যাচ্ছে।
পেন্টাগনের মুখপাত্র জেফ জারগেনসন বলেছেন, আসলেই জাহাজটি মার্কিন সামরিক পণ্য পরিবহনে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। জারগেনসন আর কোনো তথ্য জানাতে অস্বীকৃতি জানান। তিনি বলেছেন, প্রতিরক্ষা দপ্তরের নানা কর্মকাণ্ডের গোপনীয়তার খাতিরে সামরিক পণ্য পরিবহনে ব্যবহৃত জাহাজ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দেওয়া যাবে না।
১৯৪৮ সালে ফিলিস্তিনের ভূখণ্ড জবরদখল করে অবৈধভাবে ইসরাইল প্রতিষ্ঠার পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলকে সবচেয়ে বেশি সামরিক সহায়তা দিয়ে আসছে। তাদের ঘোষিত তথ্য থেকেই এটা স্পষ্ট, ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাজেটের ১৬ শতাংশ সহায়তা দিয়ে থাকে যুক্তরাষ্ট্র। তবে প্রকৃতপক্ষে এই সংখ্যা আরও বেশি।