কোনো কোনো সূত্র দাবি করছে, স্থল হামলা স্থগিত রাখার আরেকটা কারণ হলো গাজায় এখনও অনেক বিদেশি নাগরিক রয়েছে। আমেরিকা রাফাহ ক্রসিং পয়েন্ট দিয়ে এসব বিদেশি নাগরিককে গাজা থেকে বের করে নেয়ার চেষ্টার করছে। অবশ্য এটাও কোনো কারণ নয়।
মূল কারণ হলো- গাজায় স্থল হামলার সম্ভাব্য পরিণতি। ইসরাইলি বাহিনী এটা ভালো করেই জানে, হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজায় একবার ঢুকলে সেখান থেকে জ্যান্ত বের হয়ে আসা তাদের জন্য কঠিন হবে। তারা জানে, গাজায় স্থল যুদ্ধের চূড়ান্ত ফলাফলটা যার পক্ষেই যাক না কেন, লড়াইটা নিশ্চিতভাবে দীর্ঘস্থায়ী হবে।
গাজায় হামাসসহ প্রতিরোধ সংগ্রামীদের রয়েছে বিশাল টানেল বা সুড়ঙ্গ নেটওয়ার্ক এবং চোরাগোপ্তা হামলার বহু কেন্দ্র। দখলদার ইসরাইলের গুপ্তচর নেটওয়ার্ক হামাসের এই নেটওয়ার্ক সম্পর্কে পুরোপুরি অন্ধকারে। এবারের আল-আকসা তুফান অভিযান সম্পর্কে ইসরাইলি গুপ্তচরেরা আগে থেকে কিছুই আঁচ করতে পারেনি। এর ফলে ইসরাইলি বাহিনী তাদের গুপ্তচরদের ওপর কোনোভাবেই আস্থা রাখতে পারছে না।
এ অবস্থায় বিশাল বিশাল ট্যাংক ও সাজোয়া যানের বহর নিয়ে গাজায় ঢোকার পর তারা হামাসের নানা ফাঁদে আটকে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছে দখলদার ইসরাইল ও তাদের মিত্র দেশগুলো।
এছাড়া, গাজায় বড় ধরণের স্থল যুদ্ধ শুরু হলে পশ্চিম তীর ও লেবানন সীমান্ত দিয়ে প্রতিরোধ সংগ্রামীরা দখলদার ইসরাইলের ভেতরে ঢুকে অভিযান শুরু করতে পারে। এমনটি হলে কয়েকটি ফ্রন্টে একসঙ্গে যুদ্ধ চালানো ইসরাইলের জন্য কঠিন হয়ে পড়বে।
ইসরাইলের জন্য গাজায় স্থল হামলার অভিজ্ঞতা বরাবরই খারাপ। ২০০৮ ও ২০১৪ সালে স্থল ও নৌ পথে গাজায় ঢুকতে গিয়ে তারা ফিলিস্তিনিদের নানা ফাঁদে পড়ে নাস্তানাবুদ হয়। বহু আগ্রাসী সেনার প্রাণহানি ঘটে। চরম পরিণতির আশঙ্কার কারণেই এখন পর্যন্ত স্থগিত রয়েছে ইসরাইলি স্থল হামলা।
তবে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ সংগ্রামীদের পরিচালিত আল-আকসা তুফান অভিযানের মাধ্যমে ইসরাইলের দর্প যেভাবে চূর্ণ হয়েছে, সেই গ্লানি মোছার জন্য অনেক বড় কিছু করে বিশ্বকে দেখিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা ইসরাইলের রয়েছে। কারণ তারাও জানে, গাজায় লাখো সাধারণ মানুষকে হত্যা করে রক্তের বন্যা বইয়ে দিলেও তাদের সেই গ্লানি মুছে যাবে না, সবাই জানে নারী ও শিশুসহ বেসামরিক মানুষ হত্যায় বীরত্ব নেই, এটা কেবলি কাপুরুষতা। এ কারণে দখলদার ইসরাইলি বাহিনী শেষ পর্যন্ত গাজায় বড় ধরণের স্থল হামলা শুরু করতেও পারে, তবে তা তাদের পরাজয়ের গ্লানি মোচনের চেয়ে গ্লানি আরও বাড়িয়ে তুলবে বলে সামরিক বিশ্লেষকদের ধারণা।
তথ্যসূত্র: পার্সটুডে