গাজায় ইসরাইলি হামলায় শহীদ ফিলিস্তিনির সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়াল
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরাইলের অব্যাহত বোমা হামলায় শহীদের সংখ্যা ১০ হাজার ২২ জনে পৌঁছেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরাইলি হামলায় অন্তত ২৫২ ফিলিস্তিনি শাহাদাৎবরণ করেছেন।
এ পর্যন্ত যারা শহীদ হয়েছেন তাদের মধ্যে ৪ হাজার ১০৪টি শিশু ও ২ হাজার ৬৪১ জন নারী রয়েছেন। আর উপত্যকাটিতে পাশবিক হামলায় আহত হয়েছেন ২৫ হাজার ৪০৮ জন ফিলিস্তিনি। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আজ (সোমবার) এ তথ্য জানিয়েছে।
গাজায় ৭ অক্টোবর থেকে চলমান ইসরাইলি হামলায় শহীদ হয়েছেন ১৯২ জন চিকিৎসাকর্মী। এ সময় ১৬টি হাসপাতাল বন্ধ হয়ে গেছে। ধ্বংস হয়ে গেছে ৩২টি অ্যাম্বুলেন্স।
গতকাল রোববার গাজার আল-রানতিসি হাসপাতালে দুবার বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরাইলি বাহিনী। এতে হাসপাতালটির সোলার প্যানেল ও পানির ট্যাংকগুলো ধ্বংস হয়ে গেছে। এ ছাড়া একটি ক্যানসার চিকিৎসাকেন্দ্র ও বিশেষায়িত শিশুদের চিকিৎসাকেন্দ্রেও হামলা হয়েছে। এতে চারজন নিহত হয়েছেন। শিশুসহ আহত ৭০।
গাজা উপত্যকা ‘শিশুদের জন্য কবরস্থানে’ পরিণত হচ্ছে: জাতিসংঘ মহাসচিব
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকা ক্রমেই ‘শিশুদের জন্য কবরস্থানে’ পরিণত হচ্ছে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস। তিনি গতকাল (সোমবার) নিউ ইয়র্কে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেছেন, “গাজা শিশুদের জন্য কবরস্থানে পরিণত হচ্ছে। প্রতিদিন সেখানে শত শত বালক ও বালিকা হতাহত হচ্ছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে।”
গত এক মাস ধরে গাজা উপত্যকার বিরুদ্ধে জাতিগত শুদ্ধি অভিযান চালাচ্ছে মানবতার শত্রু ইসরাইল। ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ যোদ্ধাদের হাতে ৭ অক্টোবর ভয়াবহ পরাজয়ের মুখোমুখি হওয়ার পর থেকে গাজার নিরপরাধ বেসামরিক ফিলিস্তিনি জনগণের উপর অবিরাম বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে তেল আবিব। বর্বর এই হামলায় নিহত ফিলিস্তিনিদের সংখ্যা সোমবার ১০ হাজার অতিক্রম করেছে।
সংবাদ সম্মেলনে গুতেরেস আরো বলেন, যুদ্ধে আন্তর্জাতিক মানবিক আইন সুস্পষ্টভাবে লঙ্ঘন করা হচ্ছে। জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, ইসরাইলি বাহিনী একসঙ্গে “বেসামরিক নাগরিক, হাসপাতাল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জা এবং জাতিসংঘের স্থাপনার ওপর বোমাবর্ষণ করে যাচ্ছে। গাজায় এখন আর কেউ নিরাপদ নয়।”
গাজা উপত্যকায় এখন পর্যন্ত জাতিসংঘের ৮৯ কর্মী ইসরাইলি গণহত্যার শিকার হয়েছেন জানিয়ে গুতেরেস বলেন, জাতিসংঘের ইতিহাসে আর কখনও কোনো যুদ্ধে এত বেশি সংখ্যক কর্মী নিহত হননি। গাজায় অবিলম্বে মানবিক যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, “আমাদেরকে এই নৃশংস, ভয়ঙ্কর ও যন্ত্রণাদায়ক ধ্বংসযজ্ঞ থেকে বেরিয়ে আসার একটি উপায় খুজে বের করতে হবে।”
গুতেরেস বলেন, গাজায় মানবিক যুদ্ধবিরতির প্রয়োজন প্রতি মুহূর্তে বাড়ছে। গাজার বিরুদ্ধে ইসরাইলের চলমান যুদ্ধে বেসামরিক নাগরিকদের রক্ষা করাকে ‘সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার’ দেয়ার আহ্বান জানান জাতিসংঘ মহাসচিব।
গাজাবাসীর জন্য এখন মানবিক ত্রাণ অতি জরুরি বলেন জানান গুতেরেস। তিনি বলেন, যুদ্ধের আগে যেখানে গাজায় প্রতিদিন পণ্যবাহী ৫০০ ট্রাক ঢুকত সেখানে গত দু’সপ্তাহে সব মিলে মাত্র ৪০০ ট্রাক প্রবেশ করেছে। গুতেরেস বলেন, শুধুমাত্র রাফাহ ক্রসিং দিয়ে গাজাবাসীর সমুদ্রসম প্রয়োজন পূরণ করা সম্ভব নয়। তিনি ইসরাইলের অন্যান্য ক্রসিং খুলে দিয়ে গাজার বেসামরিক নাগরিকদের জন্য ব্যাপকভাবে ত্রাণ সরবরাহ করার সুযোগ দেয়ার আহ্বান জানান।
হিজবুল্লাহ ইহুদিবাদী ইসরাইলকে হুঁশিয়ারী
লেবাননের ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলন হিজবুল্লাহ ইহুদিবাদী ইসরাইলকে হুঁশিয়ার করে দিয়ে বলেছে, ফিলিস্তিনের ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসকে ধ্বংস হতে দেবে না হিজবুল্লাহ।
সংগঠনটি রোববার (৫ নভেম্বর) নিজের ভেরিফায়েড টেলিগ্রাম চ্যানেলে দেয়া এক বিবৃতিতে এ হুঁশিয়ারি দিয়েছে। হিজবুল্লাহর বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “গতরাতে (শনিবার রাতে) ইসরাইলি যুদ্ধমন্ত্রী ইওয়াভ গ্যালান্ট গাজা উপত্যকায় দখলদার সেনাদের স্থল অভিযানের চূড়ান্ত লক্ষ্য ঘোষণা করেছেন। সেই লক্ষ্যটি হচ্ছে, হামাসের অস্তিত্ব ধ্বংস করে দেয়া।” “কিন্তু এ ধরনের লক্ষ্য নির্ধারণের সমস্যা হলো এর মাধ্যমে যুদ্ধ জয়ের দাবি করা সম্ভব হয় না। গ্যালান্ট যে লক্ষ্য নির্ধারণ করেছেন তা অর্জন করতে হলে হামাসের সকল শীর্ষ নেতাকে হত্যা করতে এবং অবশিষ্ট যোদ্ধাদের আত্মসমর্পণে বাধ্য করতে হবে।”
হিজবুল্লাহর বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “যদি ইসরাইলি সেনাবাহিনী তা করতে ব্যর্থ হয় তাহলে তাদের লক্ষ্য অর্জিত হবে না এবং ইসরাইল যুদ্ধ জয়ের দাবি করতে পারবে না। যদি গোটা গাজা উপত্যকাও ধ্বংস হয়ে যায় এবং হামাসের অন্তত ২০ হাজার যোদ্ধাও নিহত হয় তারপরও তেল আবিব গাজা যুদ্ধে জয়ী হওয়ার দাবি করতে পারবে না।” হিজবুল্লাহ আরো বলেছে, “শেষ পর্যন্ত যদি হামাসের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের জীবিত রাখার পাশাপাশি হামাসের যোদ্ধাদেরকে অক্ষত রেখে ইসরাইলকে গাজা উপত্যকা ত্যাগ করতে হয় তাহলে কার্যত তেল আবিব যুদ্ধে পরাজিত হবে। সে অবস্থায় হামাস এই বলে বিজয়ের দাবি করবে যে, ইসরাইল তার ঘোষিত লক্ষ্য অর্জন করতে পারেনি।”
বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে, “কিন্তু এসব হিসাবের বাইরে ইসরাইলের সামনে যে বড় বাধাটি রয়েছে সেটি হচ্ছে হিজবুল্লাহ। ইসরাইল যদি সত্যিকার অর্থে গাজা সিটি দখল করার মূল্য পরিশোধ করার সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে তাহলে হামাসের নেতাদেরকে হত্যা করার মতো যুদ্ধাস্ত্র ও জনবল তার আছে। কিন্তু হিজুবল্লাহ যখন হামাসকে বাঁচিয়ে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তখন গাজা দখলের ইসরাইলি বাসনা অপূর্ণ থেকে যাবে। ইসরাইল যেমন হামাসের নেতৃত্বকে ধ্বংস করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তেমনি হামাসকে রক্ষা করার দায়িত্ব নিয়েছে হিজবুল্লাহ।”
বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে, “সেই নিরিখে যে মুহূর্তে মনে হবে হামাসের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়েছে সেই মুহূর্তে হিজবুল্লাহ তার সমস্ত শক্তি নিয়ে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়বে। কিন্তু তার আগ পর্যন্ত হিজবুল্লাহ নিজেকে লেবানন সীমান্তে সীমিত আকারের অভিযানের মধ্যে আটকে রাখবে; সেখানে কতটা ক্ষতি হলো কিংবা কত কী অর্জিত হলো সেটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়।” হিজবুল্লাহর বিবৃতিতের শেষ বাক্যে বলা হয়েছে, “ইসরাইলি সেনাবাহিনীর সামনে এখন দু’টি পথ খোলা রয়েছে। পরাজয় স্বীকার করে গাজা ত্যাগ করা অথবা লেবাননের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য প্রস্তুত থাকা। ”
তথ্যসূত্র: পার্সটুডে