ছাত্রলীগের গৌরবের ইতিহাস থাকলেও ইউনূস সরকারের আড়াই মাস পার না হতেই ৭৫ বছরের প্রাচীন এ সংগঠনটিকে নিষিদ্ধ করলো
রুহুল কুদ্দুস টিটো
গৌরবের ইতিহাস থাকলেও পরবর্তীতে নানারকম বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িত হয়ে পড়েছে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা ভাষা আন্দোলন, স্বৈরশাসন বিরোধী আন্দোলন এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনেও বড় ভূমিকা রেখেছিল ছাত্রলীগ।
বাংলাদেশ ছাত্রলীগ হলো বাংলাদেশের এখন থেকে একটি নিষিদ্ধঘোষিত সন্ত্রাসী ছাত্র সংগঠন। পূর্বে এটি পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ ও পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ নামে পরিচিত ছিল, দলটিকে সাধারণত ছাত্রলীগ নামে ডাকা হয়।
এটি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন হিসেবে স্বীকৃত।১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্তির পর ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলে শেখ মুজিবুর রহমান দলটি প্রতিষ্ঠা করেন।
বাংলাদেশ ছাত্রলীগের জন্ম হতিহাস: পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা হয় ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট। মুসলমানদের জন্য পৃথক আবাসভূমি প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে মুসলিম লীগের পাশাপাশি নিখিল বঙ্গ মুসলিম ছাত্রলীগের বড় ভূমিকা ছিল। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গোপালগঞ্জে স্কুলে পড়ার সময়েই ছাত্রলীগের নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত ছিলেন।
১৯৪২ সালে কলিকাতায় কলেজে পড়তে গিয়ে বৃহত্তর পরিসরে কাজের সুযোগ পান। বিখ্যাত ইসলামিয়া কলেজ ছাত্র সংসদ নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত হন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। ১৯৪৬ সালে, বয়স যখন মাত্র ২৬ বছর-অবিভক্ত বাংলার মুসলিম লীগ প্রাদেশিক কমিটির অন্যতম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে তাঁর নাম বিবেচিত হয়েছিল। এ সময়েই ভারতবর্ষের বিভিন্ন রাজ্যের সাধারণ নির্বাচনে তাকে বৃহত্তর ফরিদপুর জেলার (বর্তমানে পাঁচটি জেলা- ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, মাদারিপুর, শরীয়তপুর ও রাজবাড়ি) নির্বাচন পরিচালনার সর্বময় দায়িত্ব দিয়ে কলিকাতা থেকে তাকে পাঠানো হয়। ১৯৪৭ সালের প্রথম দিকে সিলেট অঞ্চলকে পাকিস্তানে অন্তুর্ভুক্ত করার জন্য যে গণভোট আয়োজন হয়েছিল-সেখানেও তিনি গিয়েছিলেন প্রায় পাঁচশ’ ছাত্রের প্রচার কর্মীর দলনেতা হিসেবে।
অথচ পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার মাত্র সাড়ে চার মাস যেতে না যেতেই তিনি প্রতিষ্ঠা করেন পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ। কেন এমন দূরদর্শী পদক্ষেপ নিয়েছিলেন? কলিকাতায় ছাত্রলীগ ও মুসলিম লীগে সক্রিয় থাকার সময় তিনি রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা পেয়েছেন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দির। তাঁর কাছে সর্ববিষয়ে পরামর্শ পেতেন, সংগঠন কীভাবে করতে হয় সেটা শিখতেন অনেকটা হাতেকলমে। কিন্তু হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দি পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর ঢাকা আসতে পারেননি। তাকে মুসলিম লীগ নেতৃত্বের একটি বড় অংশ বাধা দেয়। এমনকি শির কতল করার হুমকি দেওয়া হয়। অন্যদিকে, তরুণ শেখ মুজিব বুঝে যান তাকে এখন একাই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তখন পূর্ব বাংলাকে পদানত রাখার অভিলাষ পোষণ করছে মুসলিম লীগ নেতৃত্বের একটি অংশ। তারা কলিকাতা পাকিস্তানের অংশ হোক, সেটা চায়নি। করাচিকে রাজধানী ঘোষণা করে। মন্ত্রীসভা, প্রশাসন, সেনাবাহিনী-সব কিছু পশ্চিম পাকিস্তানকেন্দ্রিক একটি চক্রের নিয়ন্ত্রণে। তারা বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবি উপেক্ষা উর্দুকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হিসেবে চাপিয়ে দিতে সচেষ্ট হয়। ব্যবসা-বাণিজ্য তাদেরই একচেটিয়া
তরুণ শেখ মুজিবুর রহমান পূর্ব বাংলার এ বঞ্চণা মেনে নিতে পারেননি। সেই তরুণ বয়সেই বুঝে যান, কেবল বিবৃতি বা সভা-মিছিলে দাবি আদায় হবে না। সফল হতে চাই উপযুক্ত সংগঠন। পূর্ব বাংলার মুসলিম লীগ তখন পশ্চিম পকিস্তানি শাসকচক্রের অনুগামী একটি গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণে। তিনি নিজেই বার বার বলেছেন-এরা হচ্ছে ‘খানবাহাদুর-নবাব’ গোষ্ঠীর লোক-সাধারণ মানুষের দুঃখ-দুর্দশা-স্বার্থ তারা বোঝে না। বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠার দাবির ঘোর বিরোধি তারা।
বঙ্গবন্ধুর বুঝতে সমস্যা হয়নি যে পাকিস্তানের প্রতি ছাত্রদেরই প্রথম মোহভঙ্গ হতে শুরু করেছে। ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি ছাত্রলীগ নামের নতুন সংগঠন গড়ে তোলার এটাই ছিল পটভূমি। সংগঠনটি গঠিত হয় ফজলুল হক মুসলিম হলে। ১৯৪৪ সালে নিখিল বঙ্গ মুসলিম লীগ ছাত্রলীগের যে কমিটি গঠন করা হয়, তার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন শাহ আজিজুর রহমান ( ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর সহযোগী)। তিনি কেবল সংগঠনের নাম বদল করেন-নিখিল পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ। পাকিস্তান হওয়ার পর বিভিন্ন জেলা থেকে নতুন ছাত্ররা ঢাকায় আসতে শুরু করেছে। তাদের কাউকে এ সংগঠনের কমিটিতে রাখা হয়নি। তারা সংগঠনকে কোটারি করে রাখতে চাইছে।
ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠার দুই মাস যেতে না যেতেই প্রথম চ্যালেঞ্জ আসে বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে ১১ মার্চ হরতাল সফল করার। বঙ্গবন্ধু অনেক জেলা সফর করেন। এই সুযোগে ছাত্রলীগের সংগঠন গোছানোর জন্য সচেষ্ট হতে অনুরোধ করে বলেন- যে সব নতুন ছাত্রছাত্রী আন্দোলনে আসবে, তাদের সংগঠনে আনতে হবে। কমিটিতেও স্থান দিতে হবে। আন্দোলনে ছাত্রীরাও এগিয়ে আসছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তো আছেই। জগন্নাথ কলেজ, মিটফোর্ড, ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, মেডিকেল স্কুল-এ সব প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীরা রাজপথে নামার জন্য প্রস্তুত। তাদের সংগঠিতভাবে হরতাল সফল করার কাজে লাগাতে হবে। ১১ মার্চের কয়েকদিন আগে তিনি খুলনা, বরিশাল, ফরিদপুর প্রভৃতি জেলা সফরের এক ফাঁকে টুঙ্গিপাড়ায় স্ত্রী বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ও সাড় পাঁচ বয়সী কন্যা হাসিনার সঙ্গে দেখা করতে যান। স্ত্রীকে বলেন- জিন্নাহ সাহেব, নাজিমুদ্দিন সাহেব আমাদের উর্দু শেখাতে চান। তোমার মেয়ে স্কুলে গেলে বাংলা পড়বে না, উর্দুতে পড়তে হবে। মানতে পারবা? উত্তরে বেগম মুজিব বলেন-আসুক না কেউ উর্দু পড়াতে, ঝাটা পেটা করব। বাংলা ভাষার মান রাখার জন্য যা কিছু কর, আপত্তি নাই।
গোয়েন্দা সূত্র ( সিক্রেট ডকুমেন্টস অব ইন্টালিজেন্স ব্রাঞ্চ অন ফাদার অব দি নেশন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রথম খণ্ড) থেকে আমরা জানতে পারি, ১১ মার্চের হরতাল সফল করার জন্য পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ শিরোনামে যে লিফলেট বিলি করেছে সেটা ছিল শেখ মুজিবুর রহমানের নামে। এই লিফলেট স্কুল-কলেজে-দোকানে বিলি হয়।
১১ মার্চ ঢাকার রাজপথে হরতাল সফল করতে গিয়ে বঙ্গবন্ধু পিকেটিংয়ে নামেন শত শত ছাত্রের সঙ্গে। পুলিশের লাঠিচার্জে আহত এক ছাত্রকে তিনি রিকশায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পৌঁছে দিয়ে আবার পিকেটিংয়ে বসে পড়েন। কিছু সময় পর তাকে গ্রেফতার করা হয়। আরও অনেক ছাত্রছাত্রীকে আটক করে নেওয়া হয় কারাগারে।
পাকিস্তানে এটাই ছিল বঙ্গবন্ধুর প্রথম জেল। তবে এই সফল হরতালের এক সপ্তাহ যেতে না যেতেই ছিল পূর্ব বাংলায় পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর গভর্নর জেনারেল হিসেবে প্রথম সফর। এ কারণে ছাত্রনেতাদের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দীনের নেতৃত্বাধীন মুসলিম লীগ সরকার আপস করতে চায়। তারা ৮-দফা আপস প্রস্তাবের খসড়া তৈরি করে সেটা পাঠায় কারাগারে আটক শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে। বলা হয়, তিনি সম্মতি দিলে পূর্ব পাকিস্তান সরকার বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার চেষ্টা চালাবে এবং আটক সব বন্দিকে মুক্তি দেবে। এই চুক্তি তিনি অনুমোদন করেন।
১৫ মার্চ মুক্ত হয়ে তিনি পরদিন আমতলায় (বর্তমান ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালের পেছনের দিকে তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কলাভবন ছিল। তার সামনে ছিল আমতলা, ছাত্রদের সভা করার ঐতিহাসিক স্থান) অনুষ্ঠিত ছাত্রসভায় সভাপতিত্ব করেন। অসমাপ্ত আত্মজীবনী গ্রন্থে লিখেছেন- ‘বিখ্যাত আমতলায় এই আমার প্রথম সভাপতিত্ব করতে হল।’ [পৃষ্ঠা ৯৬]
স্বাধীনতার পরে অনেকের মতে নানাভাবে বিতর্কিত হয়ে উঠেছে ঐতিহ্যবাহী এই সংগঠনটি। প্রতিষ্ঠার পর থেকে সংগঠনটি ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধসহ বিভিন্ন ঐতিহাসিক আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের পর, বিশেষত ১৯৯০-এর দশকের পর, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সংগঠনটিকে তাদের অঘোষিত “লাঠিয়াল” বাহিনী হিসেবে ব্যবহার করতে শুরু করে।
বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলন, স্বৈরশাসন বিরোধী আন্দোলন এবং মুক্তিযুদ্ধে ছাত্রলীগের বড় ভূমিকা থাকলেও স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর এর ছাত্র সংগঠনের দলীয় লেজুড়বৃত্তি চর্চা শুরু হয়।
বাংলাদেশে গত ১৫ বছরে বিভিন্ন জায়গায় ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়ম, হত্যা, সন্ত্রাস, দুর্নীতি, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, অর্থের বিনিময়ে কমিটি গঠন, ধর্ষণের মতো গুরুতর অপরাধের অভিযোগ ওঠে।হত্যা মামলায় ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের মৃত্যুদণ্ডের নজিরও রয়েছে। ে২০১৯ সালে দুর্নীতি ও চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের অভিযোগে দলটির তৎকালীন কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে অব্যাহতি দেয়া হয়েছিল।
নিরাপদ সড়ক আন্দোলন, ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলন এবং ২০২৪ সালের গণ অভ্যুত্থান ঘিরে আওয়ামী লীগ সরকারের হয়ে মাঠে বিতর্কিত ভূমিকায় দেখা গেছে ছাত্রলীগকে।২০২৪ গণ অভ্যুত্থানে আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতার ওপর হামলা, গুলি চালানোর মতো ঘটনায় প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে এ সংগঠনটির কার্যক্রম।
হত্যা, নির্যাতন, গণরুমকেন্দ্রিক নিপীড়ন, ছাত্রাবাসে সিট বাণিজ্য, টেন্ডারবাজি, ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নসহ নানা ধরনের জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী কর্মকাণ্ড এবং রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক, ধ্বংসাত্মক ও উসকানিমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে ২০২৪ সালের ২৩শে অক্টোবর বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ ও সন্ত্রাসী সংগঠন ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করে অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলনের ইতিহাস গ্রন্থে ড. মোহাম্মদ হান্নান লিখেছেন, ‘ভারত ভাগ হওয়ার আগে এই অঞ্চলে ছাত্র ফেডারেশনের মাধ্যমে রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল ছাত্ররা। কিন্তু তারা ছিল গোঁড়া থেকেই ‘অসাম্প্রদায়িক ও বিপ্লবী উদ্দীপনায় ভরা ছাত্রদের সংগঠন। তাদের পক্ষে পূর্ব পাকিস্তানে কাজ করা অসম্ভব হয়ে পড়েছিল, কারণ অবিভক্ত বাংলাদেশ থাকতেই এই সংগঠন কমিউনিস্টদের দ্বারা পরিচালিত বলে চিহ্নিত হয়ে পড়েছিল।’ দেশ বিভক্ত হয়ে যে ছাত্র-সংগঠনটি সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়, তা হচ্ছে নিখিল পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ। কারণ যে লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য কর্মসূচিকে ভিত্তি করে এরা ছাত্র রাজনীতি করে এসেছে, তারই ফসল হচ্ছে পাকিস্তান।
ছাত্র ফেডারেশনের মতো নিখিল পূর্ব পাকিস্তানে মুসলিম ছাত্রলীগের নতুন কোন কমিটি হলো না। বরং ৪৭-পূর্ব কলকাতা কেন্দ্রিক নিখিল বঙ্গ মুসলিম ছাত্রলীগের জাতীয় কমিটি ঢাকায় তার কার্যালয়টুকু মাত্র স্থানান্তর করলো। শুধুমাত্র নিখিল বঙ্গ স্থানে নিখিল পূর্ব পাকিস্তান বসলো।
ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠার ইতিহাস বর্ণনা করতে গিয়ে ড. মোহাম্মদ হান্নান তার বইতে লিখেছেন, ‘কিন্তু ১৯৪৭ এর পরে এই সংগঠনের নেতৃত্বে চরম কোন্দলের সৃষ্টি হয়। ইতোমধ্যে পাকিস্তানে ভাষা প্রশ্নের বিতর্কও শুরু হয়ে যায়।ভাষা প্রশ্নে নিখিল পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ এক ন্যক্কারজনক ভূমিকা পালন করতে থাকলে সংগঠনের বিদ্রোহী অংশ শুধুমাত্র ‘নিখিল শব্দটি বাদ দিয়ে ‘পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ’ নামে একটি ভিন্ন আহবায়ক কমিটি গঠন করে।‘বাংলাদেশের
ইতিহাসে ছাত্র রাজনীতির বিশেষ অবদান রয়েছে
‘১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি এই বিদ্রোহী ছাত্রলীগের অস্থায়ী সাংগঠনিক কমিটি গঠিত হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হল মিলনায়তনে নাজমুল করিমের সভাপতিত্বে বিদ্রোহী ছাত্রলীগ কর্মীদের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ছাত্রনেতা অলি আহাদ সম্মেলনে নেতৃত্ব দেন।’
তিনি লিখেছেন – ‘সম্মেলনে নইমুদ্দিন আহমদ (রাজশাহী) কেন্দ্রীয় কমিটির আহবায়ক এবং অলি আহাদ ঢাকা শহর শাখার ছাত্রলীগের আহবায়ক নির্বাচিত হন। তবে পুনর্গঠিত এই নয়া আন্দোলন ছাত্রলীগ গঠনে মূল উদ্যোগ গ্রহণ করেন ছাত্ররাজনীতি থেকে প্রায় বিদায় গ্রহণকারী ছাত্রনেতা শেখ মুজিবুর রহমান। ‘
ড. হান্নান লিখেছেন, ‘বস্তুত ভাষা আন্দোলনের পর অসম্প্রাদায়িক ছাত্ররাজনীতির প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হতে থাকে। এর আগে ১৯৪৯ সালের জানুয়ারিতে সলিমুল্লাহ হলে অনুষ্ঠিত পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক কমিটির সভায় এ নিয়ে তীব্র বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে আরও কয়েক বছর চলে যায়।’
অবশেষে ভাষা আন্দোলন ও পরবর্তী আন্দোলনের ১৯৫৫ ছাত্রলীগের নাম থেকে ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দেয়া হয়।
স্বাধীনতা পূর্ব বাংলাদেশ বা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে সরকার বিরোধী আন্দোলনে বড় একটি ভূমিকা রেখেছিল ছাত্রলীগ ও অন্যান্য ছাত্র সংগঠন। ড. মোহাম্মদ হান্নান বিবিসি বাংলাকে বলছেন, ‘’বর্তমানে ক্ষমতায় আছে, এমন একটি রাজনৈতিক দলের অঙ্গসংগঠন হিসাবে এখন ছাত্রলীগকে যেভাবে গণমাধ্যমে মানুষ দেখছে, কিন্তু এটাই তো ছাত্রলীগের পুরো ইতিহাস না।..আমরা ছাত্রলীগকে বরাবর দেখেছি তার সংগ্রাম মুখর ভূমিকার জন্য। সেই ১৯৪৮ সালের পর থেকে যখন পূর্ববঙ্গে বা পূর্ব পাকিস্তানে কোন বিরোধী দল ছিল না, তখন ছাত্রলীগ ছিল। সেটাই বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করেছে।‘’
তিনি বলেন, ভাষা আন্দোলন থেকে সরকার বিরোধী আন্দোলনে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছিল ছাত্রলীগ।
‘’তারপরে ছাত্রলীগের মূল ভূমিকা আমরা দেখেছি ষাটের দশকে। আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনে ছাত্রলীগের সঙ্গে ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্র শক্তি নামের নানা সংগঠন ছিল, কিন্তু মূল ছিল ছাত্রলীগ।‘’
ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠার ৭৫ বছর পূর্ণ হয়েছে প্রতিষ্ঠার পর ভাঙাগড়া কম হয়নি দেশের প্রাচীনতম এই ছাত্র সংগঠনে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর একাধিকবার ভাঙন হয়েছে এ সংগঠনে। নামে অদল-বদল হয়েছে কিছু। তবু এখনো এটি টিকে আছে। স্বাধীন বাংলাদেশে এর চরিত্র বদলেছে, অনেক সমালোচনার জন্মও দিয়েছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।
” ছাত্রলীগ বাংলাদেশের ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে যায় ছয় দফা আন্দোলনের মাধ্যমে। ইতিহাসে দেখা গেছে, ছয় দফা নিয়ে সারা পাকিস্তানেই নয়, বরং আওয়ামী লীগের মধ্যেই বিরোধিতার মুখে পড়েছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান। ছয় দফাকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ তখন প্রায় ভাগ হয়ে গিয়েছিল।”
“কিন্তু ছয় দফাকে পুরোপুরি সমর্থন দান করে ছাত্রলীগ। ছয় দফাকে সারাদেশে জনপ্রিয় করে তুলেছিল ছাত্রলীগ। তারাই প্রথম এই ছয়দফার সঙ্গে ‘জয় বাংলা’ ধ্বনি তোলে।‘’
১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের পূর্বে সারা দেশে যে আন্দোলন হয়েছে, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার বিরুদ্ধে এবং শেখ মুজিবের মুক্তির দাবিতে – ছাত্রলীগ সারা দেশে সেই আন্দোলন জনপ্রিয় করে তোলে। ১৯৭০ সালের নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের প্রধান সহায়ক হয়েছিল ছাত্রলীগ।
দোসরা মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রথম স্বাধীনতার পতাকা উড়িয়েছিল ছাত্রলীগ। জাতীয় সঙ্গীত কি হবে, পতাকা কি হবে, সেটার পেছনেও ছাত্রলীগের ভূমিকা ছিল।
তারাই প্রথমে মুক্তিযুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নিতেও শুরু করেছিল। পরবর্তীতে মুজিব বাহিনী নামে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা মুক্তিযুদ্ধেও অংশ নেয়। তিনি বলছেন, জিয়াউর রহমান, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের একনায়কতান্ত্রিক শাসনের বিরুদ্ধে ছাত্রলীগ আন্দোলনে বড় ভূমিকা রেখেছিল।
কেন ছাত্রলীগ বিতর্কিত হল :লেখক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমেদ বিবিসি বাংলাকে বলছেন, ১৯৭১ সাল পর্যন্ত ছাত্রলীগ ছিল একটি সরকার বিরোধী ছাত্র সংগঠন। আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন হলেও ছাত্রলীগের মধ্যে এক ধরনের স্বাতন্ত্র্য কাজ করছিল। তাদের মধ্যে স্বকীয়তা, স্বাধীনতা ছিল। প্রায় প্রতিবছর কাউন্সিল হতো, নেতৃত্বের পরিবর্তন হতো।
‘’কিন্তু একাত্তর পরবর্তী সময়ে আমরা দেখলাম, আওয়ামী লীগ সরকারে গেল আর সরকারি দলের অঙ্গ সংগঠন হলে যা হয়, যেটা আমরা পাকিস্তান আমলে এনএসএফের (তখনকার সরকার দলীয় ছাত্র সংগঠন) মধ্যেও দেখেছি, সেই চরিত্র আস্তে আস্তে ছাত্রলীগের মধ্যে প্রবিষ্ট হতে থাকলো। ধীরে ধীরে একটা লড়াকু ছাত্র সংগঠন আস্তে আস্তে তার চরিত্র বদলে একটা ক্ষমতাসীন দলের লাঠিয়াল সংগঠনের দিকে যাত্রা শুরু করলো।‘’
স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে একাধিক বই লিখেছেন মহিউদ্দিন আহমেদ।তিনি বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, ‘’সেই সময় সংগঠনের মধ্যেই পক্ষে-বিপক্ষে নানারকম বিভক্তির শুরু হয়। এক দল মনে করলো সরকারের পক্ষে থাকবে, আরেকদল মনে করলো তারা স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখবে। এভাবে ছাত্রলীগের বিভক্তি ১৯৭২ সালে শুরু হয়। এরপর আওয়ামী লীগ ভাগ হয়েছে, ছাত্রলীগও ভাগ হয়েছে। একসময় তারা ছত্রখান হয়ে গেছে,‘’ বলছিলেন মি. আহমেদ।
লেখক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমেদ বলছেন, ”আশির দশকে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি- বিরোধী দলে ছিল। ফলে তাদের ছাত্র সংগঠনকেও সরকার বিরোধী ভূমিকা দেখা গেছে। কিন্তু সেই আন্দোলনেও ছাত্রদল বা জাসদের ছাত্রলীগ যতটা ভূমিকা রেখেছিল, প্রথম দিকে ছাত্রলীগকে তা দেখা যায়নি। কারণ আওয়ামী লীগ ১৯৮৬ সালের নির্বাচনে গিয়েছিল। ফলে সেই আন্দোলনে ছাত্রলীগের তুলনায় ছাত্রদল আগ্রাসী ভূমিকা রেখেছিল। ডাকসুতেও বাসদ এবং জাসদের ছাত্রলীগের প্রাধান্য দেখা গেছে।”
গত কয়েক বছরে দেশের নানা এলাকায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে হত্যা, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, নারী নিপীড়ন ও ধর্ষণের মতো ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে।দুর্নীতি ও চাঁদাবাজিসহ নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের অভিযোগ ওঠার পর ২০১৯ সালে ছাত্রলীগের তৎকালীন কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে অব্যাহতি দেয়া হয়েছিল।
এরপরেও বিভিন্ন সময় ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়ম, অর্থের বিনিময়ে কমিটি গঠনের মতো অভিযোগ ওঠে।
যেমন ২০১৯ সালে সিলেটের এমসি কলেজে তরুণীতে ধর্ষণের অভিযোগে ছয় ছাত্রলীগ কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। সেই বছর বুয়েটের আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে বিচার চলছে বুয়েট ছাত্রলীগের ১৯ নেতাকর্মীর।২০১২ সালের ডিসেম্বরে প্রকাশ্যে বিশ্বজিৎ দাসকে কুপিয়ে হত্যার অভিযোগে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের ২১ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়। তাদের আটজনকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে।
নিরাপদ সড়ক আন্দোলন, কোটা বিরোধী আন্দোলনের মতো একাধিক ঘটনায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা ও মারধর করার অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে।ছাত্র রাজনীতি নিয়ে ইতিহাস গ্রন্থের লেখক ড. মোহাম্মদ হান্নান বলছিলেন, ‘’যে সংগঠন ক্ষমতার স্বাদ পায়, তারা তখন তাদের বিপ্লবী চরিত্র হারিয়ে ফেলে। তখন নানারকম সুবিধাবাদ এবং সুবিধাবাদী লোকজন যুক্ত হয়। তখন সংগঠন বিতর্কিত হয়ে যায়।‘’
ছাত্রলীগের এক সময়ের নেতা এবং বর্তমান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও মন্তব্য করেছেন, অপকর্ম করবে, এমন ছাত্রলীগ চাই না। দুর্নামের ধারা থেকে সুনামের ধারায় ছাত্রলীগকে ফিরিয়ে আনতে হবে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমেদ বলছেন, ‘’এখন অবস্থা দাঁড়িয়েছে, ছাত্রলীগের কোন স্বাধীন সত্ত্বা নেই। তিন-চার বছর পরে ছাত্রলীগের কাউন্সিল হয়, নিয়মিত হয় না। কাউন্সিলে কোন নেতা নির্বাচিত হন না, নেতা নির্বাচন করে দেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সভাপতি। ফলে এটাকে কোন অর্থেই একটি ছাত্র সংগঠন আর বলা যায় না, কারণ এটা ছাত্রদের আর প্রতিনিধিত্ব করে না, এটা প্রতিনিধিত্ব করে ক্ষমতাসীন দলকে। ‘’
‘’এটাকে বলা যায় ক্যাম্পাস-ভিত্তিক আওয়ামী লীগের সংগঠন। ফলে ছাত্রলীগের যে ঐতিহ্য আমরা ৫০/৬০ এর দশকে দেখেছি, সেটা এখন পুরোপুরি অনুপস্থিত। তাদের এই ভূমিকার কারণে ছাত্র রাজনীতি পুরোপুরি তার প্রাসঙ্গিকতা হারিয়ে ফেলেছে। ‘’
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাস নিয়ে বিশ্লেষণমূলক একাধিক বই লিখেছেন মহিউদ্দিন আহমদ।মি. আহমদ মনে করছেন ছাত্র রাজনীতির নামে এতোদিন যা হয়েছে তা রাজনৈতিক দলগুলোর ক্যাম্পাসভিত্তিক অঙ্গ সংগঠন। ছাত্র সংগঠনের প্রকৃত চরিত্র থেকে সরে এসে তারা দলীয় রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েছে।
“অর্থাৎ ছাত্রলীগ মানে আওয়ামী লীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখা, ছাত্রদল মানে হচ্ছে বিএনপির বিশ্ববিদ্যালয় শাখা। আমার মনে হয় এই জিনিসটা একেবারেই বন্ধ হওয়া উচিত,” বলেন মি. আহমদ।ছাত্রদের স্বার্থ রক্ষা বা শিক্ষা সম্পর্কিত বিষয়ে কাজ করাই ছাত্র সংগঠনের কাজ হওয়া উচিত বলে মনে করেন মি. আহমদ।
তিনি বলেন,
“ নীতিগতভাবে ছাত্র সংগঠনের দলীয় রাজনীতি বা রাজনৈতিক দলের লেজুড়বৃত্তিটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একেবারেই বন্ধ হওয়া উচিত। ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ করার মধ্য দিয়ে যদি এ জিনিসটাকে সামনে নিয়ে আসা যায় আমি মনে করি যে সামনের দিনে ছাত্রদল বা শিবির এদের কার্যক্রমেও নিষেধাজ্ঞা আসা উচিত।”
তার মতে ছাত্ররা যারা রাজনীতি করতে আগ্রহী তারা সরাসরি রাজনৈতিক দলে যোগদান করতে পারে কিন্তু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দলীয় রাজনীতির জায়গা নয়।
বিশ্লেষকরা বলছেন, রাজনৈতিক দলগুলোর কোনো অঙ্গ সংগঠন বা ছাত্র সংগঠন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে থাকবে না এ বিষয়টি এখন নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় হয়েছে।
“একটা নীতিগত সিদ্ধান্তে আসা উচিত যে রাজনৈতিক দলের কোনো ছাত্র সংগঠন থাকবে না। যারা ওই দলের সমর্থক তারা সরাসরি ওই দল করবে আলাদা করে ছাত্র সংগঠন থাকবে না এটাই নীতিগত সিদ্ধান্ত হওয়া উচিত,” বলেন মি. আহমদ।
রাজনৈতিক দলগুলো এ বিষয়টি কখনো উত্থাপন করবে না। কারণ ক্ষমতায় থাকাকালে তাদের অঙ্গ সংগঠনগুলো বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলোতে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে। ফলে অন্তর্বর্তী সরকারের এ সময়ে যে সংস্কার চলছে তাতে এ বিষয়টি জোরালোভাবে আসা উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে যে যে কারণে এগুলো একেবারে কতগুলো ইমমিডিয়েট কারণে আমরা দেখলাম। গত কয়েক বছরে তারা যে সমস্ত কাণ্ডকারখানা করেছে সেটার জন্য সন্ত্রাসবিরোধী আইনের আওতায় এটা করেছে। কিন্তু এ কাজগুলো অন্যরাও করে।”
“সুতরাং ছাত্রলীগকে দিয়ে অন্যদের শেখানো না বরং আমি মনে করি ছাত্রলীগকে ধরেই এ ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্তে আসা উচিত,” বলেন মি. আহমদ।
তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, রাজনৈতিক দলগুলোর কোনো অঙ্গ সংগঠন বা ছাত্র সংগঠন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে থাকবে না এ বিষয়টি এখন নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় হয়েছে।আর ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ করার মধ্য দিয়েই যদি এ বিষয়টি করা যায়, তবে ভবিষ্যতে অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর অঙ্গসংগঠনগুলোর কাছে একটা বার্তা পৌঁছাবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। নির্বাহী প্রক্রিয়ায় নিষিদ্ধ না করে জনসমর্থনের ভিত্তিতে গণতান্ত্রিক পরিবেশে রাজনৈতিক সংগঠন নিষিদ্ধ হলে সেটি বেশি কার্যকর হবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
তথ্যসূত্র: উইকিপিডিয়া, বিবিসি বাংলা, আজকের কাগজ,দেশরুপান্তর, চ্যানেল আই