জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বৃহৎ ভূমিকা পালনকারী দেশগুলোর অন্যতম বাংলাদেশ ।।কোনো দেশের সদস্য জাতি সংঘের শান্তি বাহিনী নেয়া হয় শর্তর ভিত্তিতে
জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর গৌরবময় পথ চলা
বর্তমানে জাতিসংঘ মিশনে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীর সদস্য সংখ্যা বিশ্বে ২য় সর্বোচ্চ। বাংলাদেশ বিশ্বের প্রায় সকল প্রান্তের দুর্গত নিপীড়িত ও নিরীহ মানুষের সেবায় এই শান্তি সেনাদের হাত সর্বদা প্রসারিত। সংঘাতপূর্ণ ও প্রতিকূল পরিস্থিতিতে নিজের জীবনের চরম ঝুঁকি নিয়েও তারা আর্ত মানবতার সেবা করে চলেছেন। বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় এ পর্যন্ত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১৩১ জন বীর সন্তান নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছেন এবং ২৩৯ জন সদস্য পঙ্গুত্ব বরন করেছেন। তাদের এই ত্যাগ বিশ্ব শান্তিরক্ষায় বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেছে। আমাদের শান্তিসেনাদের এই আত্মত্যাগ ও বীরত্বের কথা বিশ্ব শান্তিরক্ষার ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।
এ পর্যন্ত (২০২৪) ৪৩ টি দেশে/অবস্থানে জাতিসংঘের ৬৩ টি শান্তি মিশনে বাংলাদেশের প্রায় ১ লাখ ৯৪ হাজার ৮৫৬ জন শান্তিরক্ষী অংশগ্রহণ করেছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর শান্তিরক্ষীর সংখ্যা ১ লাখ ৫৭ হাজার ১৮৪ জন। বর্তমানে মোট ৬ টি দেশে সর্বমোট ৬ টি মিশনে ৪ হাজার ৭০ জন সেনা সদস্য নিয়োজিত আছেন।*May 29, 2024
- বাংলাদেশ জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে।
- বাংলাদেশী শান্তিরক্ষীরা কম্বোডিয়া, সোমালিয়া, ডিআরসি, সিয়েরা লিওন, কোট ডি আইভরি, লাইবেরিয়া, এবং সুদানে বিভিন্ন মিশনে কাজ করেছে।
- সেপ্টেম্বর ২০১০ পর্যন্ত, বাংলাদেশ থেকে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে সর্বোচ্চ ১০,৮৫৫ জন সেনা এবং আইন প্রয়োগকারী অংশগ্রহণ করেছেন।
- কম্বোডিয়ায় ১৯৯২-১৯৯৩ সালে বাংলাদেশী শান্তিরক্ষী দল স্থানীয় জনগণের সাথে আচরণের ক্ষেত্রে তাদের শৃঙ্খলা এবং মানবিকতার জন্য প্রশংসা পেয়েছে।
- জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের ১৩০ জন শান্তিরক্ষী প্রাণ হারিয়েছেন।
বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশী শান্তিরক্ষীদের শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন ২০২৩ সালে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনের ৭৫তম বর্ষ উদযাপনে জাতিসংঘের পিস অপারেশনস বিভাগের আন্ডার-সেক্রেটারি-জেনারেল জ্যঁ-পিয়ের ল্যাখো শান্তিরক্ষীদের সম্পর্কে বলেন, “শান্তিরক্ষীরা সাধারণ মানুষ, যারা কঠিন এবং অনেকক্ষেত্রে বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে অসাধারণ সাফল্য অর্জনের চেষ্টা করেন”। ১৯৪৮ সাল থেকে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষীরা বিশ্বের সবচেয়ে অস্থিতিশীল রাজনৈতিক ও অনিরাপত্তামূলক পরিস্থিতিতে মানুষের জীবন রক্ষা করে চলেছেন এবং জীবন বদলে দেওয়ার কাজ করে চলেছেন।
জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বৃহৎ ভূমিকা পালনকারী দেশগুলোর অন্যতম বাংলাদেশ। ১৯৮৮ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১,৮৮,৫৫৮ জন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী ৪০টি দেশে ৬৩টি জাতিসংঘ শান্তি মিশনে অংশ নিয়েছেন; বর্তমানে ৭,৪৩৬ জন ইউনিফর্ম-পরিহিত শান্তিরক্ষী ১৩টি দেশে কর্মরত রয়েছেন।
বিগত বছরগুলোতে শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের অবিচল ও অসাধারণ অবদানের জন্য আমি এ সুযোগে দেশটির প্রতি জাতিসংঘের প্রশংসা ব্যক্ত করতে চাই। -আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবসে বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গোয়েন লুইস
তিনি বলেণ ১৯৮৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত যে ১৬৭ জন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী নিহত হয়েছেন, আমি তাদের পরিবারবর্গের প্রতি আমার গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করছি, যে ২৫৯ জন শান্তিরক্ষী দায়িত্ব পালনকালে আহত হয়েছেন তাদের প্রতি আন্তরিক সহমর্মিতা জানাচ্ছি। গত বছরই বাংলাদেশ ছয় জন নিবেদিতপ্রাণ শান্তিরক্ষীকে হারিয়েছে।
তারা হলেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সৈনিক মো. শরিফ হোসেন, সৈনিক মো. জাহাঙ্গীর আলম, সৈনিক মো. জসিম, ল্যান্স করপোরাল কফিল মজুমদার ও সার্জেন্ট মো. মনজুর রহমান এবং বাংলাদেশ পুলিশের কনস্টেবল মো. মনিরুজ্জামান। তাদের উত্তরাধিকার সকলের জন্য আরও শান্তিপূর্ণ ও নিরাপদ পৃথিবী নির্মাণের অঙ্গীকার পালনে আমাদের উদ্বুদ্ধ করবে।
বর্তমানে ৫৭২ জন বাংলাদেশি নারী শান্তিমিশনগুলোতে কর্মরত রয়েছেন। গত বছর তাদের সংখ্যা ছিল ৫১৯। এখন পর্যন্ত ২,৭২৮ জন নারী শান্তিরক্ষী সাফল্যের সঙ্গে জাতিসংঘের শান্তিমিশনগুলোতে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৯ সালের নারী, শান্তি ও নিরাপত্তা বিষয়ক জাতীয় কর্মপরিকল্পনা অনুসারে বাংলাদেশ নারী শান্তিরক্ষীদের অংশগ্রহণ বাড়ানোর অঙ্গীকার করেছে এবং জাতিসংঘ এ ক্ষেত্রে আরও বৈচিত্র্যতা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশকে সহযোগিতা করার জন্য প্রস্তুত রয়েছে।
জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনের ৭৫তম বর্ষ উদযাপনের এই লগ্নে আমরা বাংলাদেশ ও অন্যান্য দেশের সামরিক বাহিনী ও পুলিশের সদস্য এবং বেসামরিক শান্তিরক্ষীদের অভিবাদন জানাচ্ছি, যারা বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করে চলেছেন।-বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গোয়েন লুইস
জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনের ৭৫তম বর্ষ উদযাপনের এই লগ্নে আমরা বাংলাদেশ ও অন্যান্য দেশের সামরিক বাহিনী ও পুলিশের সদস্য এবং বেসামরিক শান্তিরক্ষীদের অভিবাদন জানাচ্ছি, যারা বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করে চলেছেন। ২৯ মে ২০২৩ সালে বক্ত্যবটি ১৯টি পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল ।
জাতিসংঘের শান্তি রক্ষা হচ্ছে এর শান্তি রক্ষা অপারেশন বিভাগের দ্বারা পরিচালিত,সংস্থা কর্তৃক নির্মিত একটি মোলিক এবং গতিশীল উপকরণ যা সংঘর্ষে ক্ষত বিক্ষত দেশগুলোকে শান্তিপূর্ণ অবস্থা সৃষ্টি করতে সাহায্য করার মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। এটা শান্তি বিনির্মাণ, শান্তি স্থাপন এবং শান্তি প্রয়োগ সবকিছু থেকে আলাদা।
শান্তি রক্ষীরা সংঘর্ষ পরবর্তী এলাকায়্ শান্তি প্রক্রীয়া পর্যবেক্ষণ করে এবং পূর্বের যোদ্ধাদেরকে তারা স্বাক্ষর করতে পারে এমন শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন করতে সাহায্য করে। এই ধরনের সাহায্য বিভিন্নভাবে আসতে পারে যেমন বিশ্বাস স্থাপনের পদক্ষেপ, ক্ষমতা ভাগাভাগি এর ব্যবস্থা করা, নির্বাচনী সহযোগীতা, আইনের নিয়মকে শক্তিশালী করা এবং অর্থনীতিক ও সামাজিক উন্নয়ন।ধারাবাহিকভাবে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষীরা সইন্য, পুলিশ কর্মকর্তা এবং বেসামরিক কর্মচারী সংযুক্ত করতে পারে।
কোনো দেশের সদস্য জাতি সংঘের শান্তি বাহিনী নেয়া হয় শর্তর ভিত্তিতে
জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা বাহিনীতে সদস্য দেশগুলো থেকে সৈন্য বা পুলিশ প্রেরণের জন্য কিছু নির্দিষ্ট শর্ত ও প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়। মূল শর্তগুলো হলো:
1. **স্বেচ্ছাসেবা**: কোনো দেশ জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে সৈন্য বা পুলিশ সদস্য পাঠানোর জন্য বাধ্য নয়। এটি পুরোপুরি স্বেচ্ছাসেবার ভিত্তিতে হয়ে থাকে। যে কোনো সদস্য রাষ্ট্র সম্মতি দিলে তারা শান্তিরক্ষা বাহিনীতে অংশগ্রহণ করতে পারে।
2. **প্রশিক্ষণ ও যোগ্যতা**: প্রেরণকৃত শান্তিরক্ষীদের অবশ্যই জাতিসংঘের নির্ধারিত মানদণ্ড অনুযায়ী প্রশিক্ষিত ও যোগ্য হতে হবে। তারা সাধারণত যুদ্ধক্ষেত্র, মানবাধিকার, এবং সংবেদনশীল পরিস্থিতিতে কাজ করার প্রশিক্ষণ নিয়ে থাকে।
3. **বহিরাগত সংঘাতে জড়িত না থাকা**: প্রেরণকারী দেশের নিজস্ব সংঘাতে জড়িত না থাকা উচিত। বিশেষ করে, কোনো দেশের আঞ্চলিক বা আন্তর্জাতিক সংঘাতে সক্রিয় অংশগ্রহণ থাকলে তাদের শান্তিরক্ষা বাহিনীতে পাঠানো নিয়ে জাতিসংঘ সংস্থা সাধারণত সতর্ক থাকে।
4. **নিরপেক্ষতা ও মানবাধিকার সম্মান**: শান্তিরক্ষীরা জাতিসংঘের নীতিমালা অনুযায়ী নিরপেক্ষ থাকতে বাধ্য। তাদের মানবাধিকার সংক্রান্ত আইন-কানুন ও জাতিসংঘের আচরণবিধি মেনে চলতে হবে।
5. **আর্থিক ও প্রস্ততি সমর্থন**: শান্তিরক্ষা মিশনে সৈন্য প্রেরণের ক্ষেত্রে জাতিসংঘ কিছু আর্থিক সহায়তা প্রদান করলেও, প্রেরণকারী দেশকে প্রয়োজনীয় উপকরণ এবং রসদ সরবরাহ করতে প্রস্তুত থাকতে হয়।
6. **বিশ্বস্ততা এবং পারফরম্যান্স রেকর্ড**: শান্তিরক্ষীদের জন্য আন্তর্জাতিক মানদণ্ড পূরণ করা ও পূর্ববর্তী মিশনগুলিতে সন্তোষজনক পারফরম্যান্স বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ।
জাতিসংঘ সদস্য দেশগুলোর কাছ থেকে প্রশিক্ষিত এবং নিরপেক্ষ শান্তিরক্ষী সংগ্রহের মাধ্যমে এই মিশনগুলোর কার্যকারিতা নিশ্চিত করে থাকে।
যদি কোনো দেশের সেনাবাহিনী নিজ দেশে সরকার উৎখাত বা অভ্যুত্থানে জড়িত থাকে, তাহলে জাতিসংঘ সাধারণত সেই দেশের সেনাবাহিনীকে শান্তিরক্ষা বাহিনীতে গ্রহণ করতে অনীহা প্রকাশ করে। কারণ এই ধরনের অভ্যুত্থান পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট সেনাবাহিনীর নিরপেক্ষতা, মানবাধিকার, এবং আইন মেনে চলার বিষয়টি সন্দেহজনক হতে পারে।
জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের জন্য নিরপেক্ষ, দায়িত্বশীল এবং মানবাধিকার সংরক্ষণের প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বাহিনী চায়, যারা নিজ দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতায় যুক্ত নয়। সেনাবাহিনী যদি সরকার উৎখাতের মাধ্যমে নিজেদের দেশে রাজনৈতিক ক্ষমতা পরিবর্তনে অংশ নেয়, তাহলে সেই বাহিনীকে জাতিসংঘ নিরপেক্ষ বলে মনে করে না, এবং তাদের শান্তিরক্ষী বাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করার আগে আরও কঠোর যাচাই-বাছাই করা হয়।
তবে জাতিসংঘের মিশন এ ক্ষেত্রে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় প্রেক্ষাপট এবং অভ্যুত্থানের পরিস্থিতি বিবেচনা করে থাকে।
যদি কোনো দেশের সেনাবাহিনী অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তন করে এবং সরাসরি রাষ্ট্রক্ষমতা গ্রহণ করে, তবে জাতিসংঘ সেই দেশের সেনাবাহিনীকে শান্তিরক্ষা মিশনে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে কিছু গুরুতর দিক বিবেচনায় আনে:
1. **গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ**: জাতিসংঘ সদস্য রাষ্ট্রগুলোর গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সমর্থন করে এবং জোর দেয় যে ক্ষমতা হস্তান্তর একটি বৈধ ও শান্তিপূর্ণ পদ্ধতিতে হতে হবে। কোনো দেশ যদি সশস্ত্র বাহিনীর মাধ্যমে রাজনৈতিক ক্ষমতা দখল করে, তবে জাতিসংঘ মনে করে যে সেই বাহিনী গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া লঙ্ঘন করেছে, যা জাতিসংঘের নীতির বিরুদ্ধে যায়।
2. **শান্তিরক্ষার জন্য নিরপেক্ষতা এবং আস্থা**: শান্তিরক্ষীরা নিরপেক্ষতার প্রতীক হিসেবে কাজ করে, যা স্থানীয় জনগণ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আস্থা অর্জনে সহায়তা করে। অভ্যুত্থানে জড়িত
একটি সেনাবাহিনীকে শান্তিরক্ষা বাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করলে সেই বাহিনীর নিরপেক্ষতার বিষয়ে সন্দেহ সৃষ্টি হতে পারে, এবং এতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আস্থার অভাব দেখা দিতে পারে।
3. **জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বিবেচনা**: অভ্যুত্থানকারী কোনো সেনাবাহিনীকে শান্তিরক্ষা মিশনে অন্তর্ভুক্ত করার ক্ষেত্রে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সম্মতি প্রয়োজন। নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্যরা যদি এমন বাহিনীকে শান্তিরক্ষায় অনুমোদন দিতে অস্বীকার করে, তবে সেই বাহিনীকে শান্তিরক্ষায় পাঠানো সম্ভব হবে না। নিরাপত্তা পরিষদ সাধারণত অভ্যন্তরীণ শান্তি প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থ বাহিনীকে আন্তর্জাতিক শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য অনুপযুক্ত মনে করে।
4. **প্রশাসনিক ও পরিচালনাগত ঝুঁকি**: অভ্যুত্থানে জড়িত বাহিনীর ক্ষেত্রে জাতিসংঘ আশঙ্কা করে যে তাদের শৃঙ্খলা ও নিয়ন্ত্রণে সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে, যা মিশনের সাফল্যকে হুমকির মুখে ফেলে। জাতিসংঘে শান্তিরক্ষীদের জন্য নির্দিষ্ট নীতিমালা, নির্দেশিকা, এবং কঠোর পরিচালনাগত নিয়ন্ত্রণ থাকে, যা অভ্যুত্থানকারী বাহিনী মেনে চলতে না পারে।
5. **মানবাধিকার রেকর্ড**: শান্তিরক্ষায় নিয়োজিত সেনাবাহিনীকে জাতিসংঘ মানবাধিকার রেকর্ড যাচাই করে গ্রহণ করে। অভ্যুত্থানে মানবাধিকার লঙ্ঘন হলে জাতিসংঘ সেই বাহিনীকে শান্তিরক্ষায় অন্তর্ভুক্ত করতে চায় না। জাতিসংঘ বিশ্বাস করে, মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী বাহিনী আন্তর্জাতিক পর্যায়ে শান্তি রক্ষায় সহায়ক হবে না।
6. **জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনের সুনাম**: অভ্যুত্থানকারী বাহিনীকে অন্তর্ভুক্ত করলে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনের সুনাম ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। সাধারণ জনগণের কাছে জাতিসংঘ শান্তি, নিরাপত্তা, এবং মানবাধিকার রক্ষার প্রতীক হিসেবে বিবেচিত। কোনো অভ্যুত্থানকারী বাহিনীকে শান্তিরক্ষায় পাঠানো হলে জাতিসংঘের নিরপেক্ষতা ও মর্যাদা হ্রাস পেতে পারে।
7. **আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা**: অভ্যুত্থানের জন্য যদি সংশ্লিষ্ট দেশের ওপর কোনো আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপিত হয়, তবে জাতিসংঘের নিয়ম অনুযায়ী সেই বাহিনীকে শান্তিরক্ষায় পাঠানো অসম্ভব হতে পারে। এ ধরনের নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে সাধারণত অভ্যুত্থানকারী বাহিনীকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিচ্ছিন্ন করা হয়।
8. **জাতিসংঘের আভ্যন্তরীণ মূল্যায়ন ও পর্যবেক্ষণ**: জাতিসংঘ অভ্যুত্থান পরিস্থিতি তৈরি করা কোনো বাহিনীকে শান্তিরক্ষায় অন্তর্ভুক্ত করার আগে ওই বাহিনীর আচরণ ও কার্যক্রমের ওপর নজর রাখে। অভ্যুত্থানের পর যদি বাহিনী স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা, আইন মেনে চলা, এবং আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষা নীতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ আচরণ করে, তবে পরিস্থিতি অনুযায়ী কিছু ব্যতিক্রম হতে পারে, তবে সাধারণত এটা বিরল।
তাই অভ্যুত্থানকারী সেনাবাহিনীকে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে যুক্ত করার ক্ষেত্রে অনেক কঠোর শর্ত এবং নীতিমালা কার্যকর থাকে, যাতে আন্তর্জাতিক শান্তি এবং জাতিসংঘের নিরপেক্ষতা অক্ষুণ্ণ থাকে।
রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ও অভ্যুত্থানের অংশগ্রহণ: কোনো দেশের সেনাবাহিনী যদি অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক ক্ষমতা দখল বা সরকার পরিবর্তনে সরাসরি অংশ নেয়, তাহলে সেই বাহিনীকে জাতিসংঘ নিরপেক্ষ হিসেবে বিবেচনা করতে দ্বিধা করে। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা বাহিনীতে থাকা সেনাদের নিরপেক্ষ এবং রাজনৈতিকভাবে নিরপেক্ষ থাকার শর্ত থাকে, যা এ ধরনের পরিস্থিতিতে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে।
আন্তর্জাতিক আইন ও গণতান্ত্রিক নীতির লঙ্ঘন: জাতিসংঘ সাধারণত এমন সেনাবাহিনীকে শান্তিরক্ষায় গ্রহণ করে না, যারা গণতান্ত্রিক সরকারকে উৎখাত করে। এটি জাতিসংঘের মূল নীতির সাথে সাংঘর্ষিক। জাতিসংঘ সাধারণত সদস্য রাষ্ট্রগুলোর স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের প্রতি সম্মান দেখাতে অঙ্গীকারবদ্ধ।
মানবাধিকার এবং শৃঙ্খলার মানদণ্ড: সরকার উৎখাতের প্রক্রিয়ায় যদি সেনাবাহিনী মানবাধিকার লঙ্ঘন করে বা নিরপেক্ষতার শর্ত পূরণে ব্যর্থ হয়, তবে জাতিসংঘ সেই বাহিনীকে শান্তিরক্ষা মিশনে গ্রহণ করতে চায় না। এমনকি অভ্যুত্থানের পরিস্থিতিতেও জাতিসংঘ সংস্থাটি নিরপেক্ষ ও শৃঙ্খলাবদ্ধ বাহিনী খোঁজে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া এবং নিরাপত্তা পরিষদের অনুমোদন: যদি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, বিশেষ করে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্যরা এ ধরনের ঘটনার নিন্দা জানায়, তবে জাতিসংঘ সাধারণত সেই দেশের সেনাবাহিনীকে শান্তিরক্ষা মিশনে অন্তর্ভুক্ত করতে বাধাগ্রস্ত হয়। নিরাপত্তা পরিষদ সাধারণত আন্তর্জাতিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার ওপর জোর দিয়ে থাকে, তাই অভ্যুত্থানকারী বাহিনীকে শান্তিরক্ষায় অংশ নিতে অনুমোদন দেওয়া হয় না।
জনগণের ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আস্থা অর্জনের বাধ্যবাধকতা: জাতিসংঘ এমন সেনাবাহিনীকে শান্তিরক্ষা মিশনে নিয়োগ দেয় যারা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আস্থা অর্জন করতে সক্ষম। ক্ষমতা দখলের মতো পরিস্থিতিতে আস্থা নষ্ট হয় এবং মিশনের লক্ষ্য ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা বাহিনীর সুনাম ও নিরপেক্ষতা রক্ষা: জাতিসংঘের কাছে শান্তিরক্ষীদের নিরপেক্ষতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কোনো অভ্যুত্থানকারী বাহিনীকে শান্তিরক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া হলে, জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা বাহিনীর সুনাম নষ্ট হতে পারে। জাতিসংঘ সাধারণত এমন বাহিনীকে শান্তিরক্ষা মিশনে গ্রহণ করবে না, কারণ এতে জাতিসংঘের নিরপেক্ষতা, মানবাধিকার রক্ষা, এবং গণতান্ত্রিক আদর্শের প্রতি তাদের অঙ্গীকারের লঙ্ঘন ঘটে।
তথ্য সূত্র: জাতি সংঘ, কালবেলা, উইকিপিডিয়া