মেহেরপুর ১ আসনের ১৯৮৬ থেকে ২০১৮ নির্বাচিত সাংসদদের প্রাপ্ত ভোটের হিসাব নিকাশের ইতিহাস
রুহুল কুদ্দুস টিটো
মেহেরপুর-১ হল বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের ৩০০টি নির্বাচনী এলাকার একটি। এটি মেহেরপুর জেলায় অবস্থিত জাতীয় সংসদের ৭৩নং আসন।
মোহাম্মদ সহিউদ্দিন মেহেরপুর আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন। ১৯৫৮ সালে তিনি মেহেরপুর পৌরসভার প্রথম চেয়ারম্যান নির্বাচত হন। ১৯৬৬ সালে তিনি ছয়দফা আন্দোলনে ভুমিকা রাখেন। ১৯৭০ সালের পাকিস্তান জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হিসেবে জাতীয় পরিষদ সদস্য (এমএনএ) নির্বাচিত হন।
তিনি ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৭৫ সালে বাকশাল সরকারে মেহেরপুরের গভর্নর ছিলেন। ১৯৭৩ সালের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে তিনি তৎকালীন কুষ্টিয়া-৫ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এর পর তিনি ১৯৮৬ সালের তৃতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সম্মিলিত বিরোধীদলের হয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে মেহেরপুর-১ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
আহম্মদ আলী মেহেরপুর জেলার একজন রাজনীতিবিদ ছিলেন যিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন। তিনি তিনবার সাংসদ হিসেবে নির্বাচিত ছিলেন। তার পুত্র মাসুদ অরুণ মেহেরপুর-১ আসনের সাবেক সাংসদ। ভাষা আন্দোলনে ভূমিকা রাখার জন্য তাকে ১৯৮০ সালে একুশে পদক প্রদান করা হয়।
আহম্মদ আলী ছাত্র জীবন থেকে রাজনীতি শুরু করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রবস্থায় ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। ১৯৫৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের যুগ্ম আহবায়ক নির্বাচিত হন। তিনি ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির বৃহত্তর কুষ্টিয়া জেলার সাধারণ সম্পাদক এবং কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন।
ভাষা আন্দোলনে ভূমিকা রাখার জন্য তাকে ১৯৮০ সালে একুশে পদক প্রদান করা হয়। ১৯৭১ সালে তিনি মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।
তিনি মেহেরপুর জেলা বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন। ১৯৭৯ সালে কুষ্টিয়া-১ আসন থেকে তিনি সাংসদ হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন।পরবর্তীতে, তিনি ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মেহেরপুর-১ আসন থেকে সাংসদ হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও মেহেরপুর-১ আসনের সাংসদ হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন।
রমজান আলী বাংলাদেশের মেহেরপুর জেলার রাজনীতিবিদ ও মেহেরপুর-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য।রমজান ১৯৮৮ সালের চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে মেহেরপুর-১ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯১ সালের পঞ্চম ও ১২ জুন ১৯৯৬ সালের সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে মেহেরপুর-১ আসন থেকে পরাজিত হয়েছিলেন।
আব্দুল মান্নান ( অধ্যাপক আব্দুল মান্নান নামেও পরিচিত)হলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের একজন রাজনীতিবিদ। তিনি ১৯৯১-১৯৯৬, ১৯৯৯-২০০১ সালে মেহেরপুর-১ আসন থেকে জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন।
মাসুদ অরুণ জাতীয়তাবাদী দল রাজনীতিবিদ এবং মেহেরপুর-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য। তার বাবা আহম্মদ আলীও একজন সাংসদ ছিলেন।অরুণ ২০০১ সালে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল এর প্রার্থী হিসাবে মেহেরপুর-১ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।
মোঃ জয়নাল আবেদীন বাংলাদেশের মেহেরপুর জেলার একজন রাজনীতিবিদ। বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের নেতা ও মেহেরপুর-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য।জয়নাল আবেদীন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের একজন রাজনীতিবিদ। তিনি মেহেরপুর-১ (মেহেরপুর সদর–মুজিবনগর) আসন থেকে ২০০৮ সালে নির্বাচিত সাবেক সংসদ সদস্য। নবম জাতীয় সংসদে তিনি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য ছিলেন।
তার বাবা ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর, মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের অন্যতম প্রধান সংগঠক ছহিউদ্দীন বিশ্বাস। ফরহাদ হোসেন বি এল কলেজ , ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অধ্যায়ন করেন। তিনি রাজনৈতিক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছেন এং সেই সুত্র ধরেই ১১ তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মেহেরপুর-১ আসনের হয়ে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পান এবং জয় লাভ করেন।তার পিতা মোহাম্মদ সহিউদ্দিন মুক্তিযুদ্ধা ছিলেন। তিনি (মোহাম্মদ সহিউদ্দিন) তৎকালীন কুষ্টিয়া-৫ ও মেহেরপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন।
নির্বাচিত সাংসদ
নির্বাচন | সদস্য | দল | |
---|---|---|---|
১৯৮৬ | মোহাম্মদ সহিউদ্দিন | বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ | |
১৯৮৮ | রমজান আলী | জাতীয় পার্টি | |
১৯৯১ | আব্দুল মান্নান | বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ | |
ফেব্রুয়ারি ১৯৯৬ | আহম্মদ আলী | বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল | |
জুন ১৯৯৬ | আহম্মদ আলী | বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল | |
১৯৯৯ উপ-নির্বাচন | আব্দুল মান্নান | বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ | |
২০০১ | মাসুদ অরুণ | বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল | |
২০০৮ | জয়নাল আবেদীন | বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ | |
২০১৪ | ফরহাদ হোসেন | বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ | |
২০১৮ | ফরহাদ হোসেন | বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ |
নির্বাচন
২০১০-এর দশকে নির্বাচন
সাধারণ নির্বাচন ২০১৪: মেহেরপুর-১ | |||||
---|---|---|---|---|---|
দল | প্রার্থী | ভোট | % | ±% | |
আওয়ামী লীগ | ফরহাদ হোসেন | ৮০,১৪৬ | ৮৫.২ | +৩২.১ | |
স্বতন্ত্র | মোঃ ইয়ারুল ইসলাম | ১৩,৯১৯ | ১৪.৮ | প্র/না | |
সংখ্যাগরিষ্ঠতা | ৬৬,২২৭ | ৭০.৪ | +৪৮.৩ | ||
ভোটার উপস্থিতি | ৯৪,০৬৫ | ৩৭.৮ | -৫২.৮ | ||
আওয়ামী লীগ নির্বাচনী এলাকা ধরে রাখে |
২০০০-এর দশকে নির্বাচন
সাধারণ নির্বাচন ২০০৮: মেহেরপুর-১ | ||||||
---|---|---|---|---|---|---|
দল | প্রার্থী | ভোট | % | ±% | ||
আওয়ামী লীগ | জয়নাল আবেদীন | ১,০৭,৪৯২ | ৫৩.১ | +১৪.০ | ||
বিএনপি | মাসুদ অরুণ | ৬২,৭৪৫ | ৩১.০ | -২৬.০ | ||
জামায়াতে ইসলামী | সামির উদ্দিন | ৩০,৭৫৬ | ১৫.২ | প্র/না | ||
ইসলামী আন্দোলন | মোঃ আবুল কালাম কাশেমী | ১,৫০৬ | ০.৭ | প্র/না | ||
সংখ্যাগরিষ্ঠতা | ৪৪,৭৪৭ | ২২.১ | +৪.২ | |||
ভোটার উপস্থিতি | ২,০২,৪৯৯ | ৯০.৬ | -১.৩ | |||
বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগ অর্জন করে |
সাধারণ নির্বাচন ২০০১: মেহেরপুর-১ | ||||||
---|---|---|---|---|---|---|
দল | প্রার্থী | ভোট | % | ±% | ||
বিএনপি | মাসুদ অরুণ | ১,০২,০২৮ | ৫৭.০ | প্র/না | ||
আওয়ামী লীগ | আব্দুল মান্নান | ৬৯,৯৭১ | ৩৯.১ | -২১.৪ | ||
ইসলামী জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট | মোতাসিম বিল্লাহ | ৫,৫৩২ | ৩.১ | প্র/না | ||
স্বতন্ত্র | মোঃ শাহাবুদ্দিন | ১,৪২৪ | ০.৮ | প্র/না | ||
স্বতন্ত্র | মোঃ আব্দুল হামিদ | ১০৯ | ০.১ | প্র/না | ||
স্বতন্ত্র | মোঃ আব্দুল হালিম মোল্যা | ৭৯ | ০.০ | প্র/না | ||
সংখ্যাগরিষ্ঠতা | ৩২,০৫৭ | ১৭.৯ | -৪.৬ | |||
ভোটার উপস্থিতি | ১,৭৯,১৪৩ | ৮৯.৩ | +৬৩.৬ | |||
আওয়ামী লীগ থেকে বিএনপি অর্জন করে |
আহমেদ আলী অফিসে মারা যান।মে ১৯৯৯ সালের উপ-নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের আব্দুল মান্নান নির্বাচিত হন।
মেহেরপুর-১ উপ-নির্বাচন, মে ১৯৯৯ | ||||||
---|---|---|---|---|---|---|
দল | প্রার্থী | ভোট | % | ±% | ||
আওয়ামী লীগ | আব্দুল মান্নান | ২৬,৭১৭ | ৬০.৫ | +২৩.৩ | ||
স্বতন্ত্র | হিসাব উদ্দিন | ১৬,৭৮৫ | ৩৮.০ | প্র/না | ||
স্বতন্ত্র | সাঈদ হুমায়ূন কবীর আরজু | ৩৭৯ | ০.৯ | প্র/না | ||
স্বতন্ত্র | মোতাসিম বিল্লাহ | ১৭৪ | ০.৪ | প্র/না | ||
বিকেএসএমএ | কৃষক মোঃ সাদেক | ৭৯ | ০.২ | প্র/না | ||
সংখ্যাগরিষ্ঠতা | ৯,৯৩২ | ২২.৫ | +১৫.৮ | |||
ভোটার উপস্থিতি | ৪৪,১৩৪ | ২৫.৭ | -৬১.৪ | |||
বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগ অর্জন করে |
১৯৯০-এর দশকে নির্বাচন
সাধারণ নির্বাচন জুন ১৯৯৬: মেহেরপুর-১ | ||||||
---|---|---|---|---|---|---|
দল | প্রার্থী | ভোট | % | ±% | ||
বিএনপি | আহম্মদ আলী | ৬০,৬২১ | ৪৩.৯ | +৮.৬ | ||
আওয়ামী লীগ | জোহরা তাজউদ্দীন | ৫১,৩৬৬ | ৩৭.২ | +১.২ | ||
জামায়াতে ইসলামী | সামির উদ্দিন | ২৩,৯২৯ | ১৭.৩ | -৮.৯ | ||
জাতীয় পার্টি | রমজান আলী | ১,৬৫৯ | ১.২ | +০.২ | ||
জাকের পার্টি | এম.এম.এ. হাসিব | ৩৯০ | ০.৩ | ০.০ | ||
গণফোরাম | আল আমিন | ১২৩ | ০.১ | প্র/না | ||
সংখ্যাগরিষ্ঠতা | ৯,২৫৫ | ৬.৭ | +৬.০ | |||
ভোটার উপস্থিতি | ১,৩৮,০৮৮ | ৮৭.১ | +১১.২ | |||
আওয়ামী লীগ থেকে বিএনপি অর্জন করে |
সাধারণ নির্বাচন ১৯৯১: মেহেরপুর-১ | ||||||
---|---|---|---|---|---|---|
দল | প্রার্থী | ভোট | % | ±% | ||
আওয়ামী লীগ | আব্দুল মান্নান | ৪০,৪৭৪ | ৩৬.০ | |||
বিএনপি | আহম্মদ আলী | ৩৯,৬৩২ | ৩৫.৩ | |||
জামায়াতে ইসলামী | সিরাজুল হক | ২৯,৪৮১ | ২৬.২ | |||
ধূমপান ও মাদকদ্রব্য নিবারণকারী মানবসেবা সংস্থা | মোজাম্মেল হক | ১,১০২ | ১.০ | |||
জাতীয় পার্টি | রমজান আলী | ১,০৮৩ | ১.০ | |||
জাকের পার্টি | এম.এম.এ. হাসিব | ৩৬৪ | ০.৩ | |||
ওয়ার্কার্স পার্টি | আকবর আলী | ২৬৯ | ০.২ | |||
সংখ্যাগরিষ্ঠতা | ৮৪২ | ০.৭ | ||||
ভোটার উপস্থিতি | ১,১২,৪০৫ | ৭৫.৯ | ||||
জাতীয় পার্টি থেকে আওয়ামী লীগ অর্জন করে |
তথ্যসূত্র: উইকিপিডয়া