জেপি মরগানের সিইও জেমি ডিমন সাম্প্রতিক এক বক্তব্যে সতর্ক করেছেন যে, বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের সম্ভাবনা প্রকট হয়ে উঠছে
রুহুল কুদ্দুস টিটো
জেমি ডিমনের তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ সম্পর্কিত মন্তব্য গুরুত্ব বহন করে কারণ তিনি বৈশ্বিক অর্থনীতি ও নিরাপত্তার উপর তার গভীর অভিজ্ঞতা থেকে ভবিষ্যত সংকটের ইঙ্গিত দিয়েছেন। ডিমন এমন একটি সময়ে এই মন্তব্য করেছেন যখন বিশ্বব্যাপী রাজনৈতিক ও সামরিক উত্তেজনা বাড়ছে, বিশেষ করে রাশিয়া, চীন, এবং অন্যান্য দেশগুলির মধ্যে।
তার বক্তব্য এমন একটি শক্তিশালী আর্থিক অবস্থান থেকে আসে, যা বৈশ্বিক নেতাদের জন্য সতর্কতার সংকেত হিসেবে কাজ করে।
জেপি মরগান কোম্পানির শিকড় ১৮৭১ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়া একটি বিনিয়োগ ব্যাংক থেকে, যা পরবর্তীতে বিশিষ্ট ব্যাংকার জন পিয়ারপন্ট মরগান (J.P. Morgan) দ্বারা নেতৃত্ব পায়।
ছবি:J.P. Morgan
এটির বর্তমান রূপ, জেপি মরগান চেজ অ্যান্ড কো., গঠিত হয়েছিল ২০০০ সালে যখন জেপি মরগান এবং চেজ ম্যানহাটান কর্পোরেশন একীভূত হয়।
তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে বিভিন্ন বিশেষজ্ঞের মতামত মিশ্র। বর্তমান বিশ্ব রাজনীতি, ভূরাজনীতি, অর্থনৈতিক সংকট, জলবায়ু পরিবর্তন, এবং ক্ষমতাধর দেশগুলোর মধ্যে সংঘাতের অবস্থা দেখে অনেকেই উদ্বিগ্ন। তবে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এবং কূটনীতি সাধারণত বড় আকারের যুদ্ধ এড়াতে সহায়ক হয়।
নিচে এই বিষয়ে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক উল্লেখ করা হলো:
১. শক্তিশালী পরমাণু অস্ত্রাগার: অনেক দেশই এখন পরমাণু অস্ত্রের মালিক, যার ফলে বড় আকারের যুদ্ধ হলে তা মানবজাতির জন্য মহাবিপদ ডেকে আনতে পারে। তাই, বড় পরিসরের যুদ্ধ বাধানোর আগে দেশগুলো কয়েকবার ভাববে।
২. অর্থনৈতিক সম্পর্ক: বর্তমান বিশ্বে বিভিন্ন দেশ পরস্পরের অর্থনৈতিক উন্নয়নের উপর নির্ভরশীল। যুদ্ধের ফলে অর্থনৈতিক ধস নেমে আসবে, যা বিশ্বব্যাপী সমস্যার সৃষ্টি করবে।
৩. কূটনৈতিক প্রচেষ্টা: জাতিসংঘ এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলি শান্তি প্রতিষ্ঠায় সক্রিয় ভূমিকা রাখছে। বিশেষ করে, সংঘাত মোকাবিলার জন্য বড় দেশগুলো কূটনৈতিক পথ অনুসরণ করছে।
৪. আঞ্চলিক সংঘাত: যদিও বিশ্বযুদ্ধের আশঙ্কা কম, তবে ছোট ছোট আঞ্চলিক সংঘাত ঘটতে পারে, যা বৃহৎ যুদ্ধের দিকে এগিয়ে যেতে পারে। যেমন রাশিয়া-ইউক্রেন এবং ইসরাইল-ফিলিস্তিন সংঘাত নিয়ে আশঙ্কা রয়েছে।
তবে, বর্তমান পরিস্থিতিতে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের সম্ভাবনা একেবারে এড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না, তবে বিশ্বশক্তিগুলো এ বিষয়টি নিয়ে সতর্ক।
জেপি মরগানের সিইও জেমি ডিমন সাম্প্রতিক এক বক্তব্যে
ছবি: জেমি ডিমন সিইও জেপি মরগান কোম্পানি
সতর্ক করেছেন যে, বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের সম্ভাবনা প্রকট হয়ে উঠছে,
জেপি মরগানের সিইও জেমি ডিমন সাম্প্রতিক এক বক্তব্যে সতর্ক করেছেন যে, বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের সম্ভাবনা প্রকট হয়ে উঠছে। তিনি বলেছেন, ইউক্রেন এবং মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাত, রাশিয়া, চীন, ইরান, ও উত্তর কোরিয়ার জোটবদ্ধ হওয়ার সম্ভাবনা, এবং বিভিন্ন অঞ্চলে চলমান অস্থিরতা এমন একটি বিশ্বব্যবস্থা তৈরি করছে যা নতুন ধরনের বিশ্বযুদ্ধের দিকে যেতে পারে। এই পরিস্থিতি বৈশ্বিক অর্থনীতির জন্য বড় হুমকি হিসেবে দাঁড়াচ্ছে, যা উচ্চ তেলের দাম, সরবরাহ চেইনের ব্যাঘাত, এবং অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে পারে।
জেপি মরগানের সিইও জেমি ডিমনের মতে, বর্তমান বৈশ্বিক সংকটগুলো আসলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের মতোই গভীর ও উদ্বেগজনক। ইউক্রেনের যুদ্ধ, মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিতিশীলতা, এবং চীন, রাশিয়া, ইরান ও উত্তর কোরিয়ার মতো দেশগুলোর মধ্যে সমর্থনমূলক সম্পর্ক গড়ে উঠছে, যা বিশ্বশান্তির জন্য বড় হুমকি হিসেবে দেখা দিচ্ছে। এই পরিস্থিতি বৈশ্বিক অর্থনীতিতে সরাসরি প্রভাব ফেলতে পারে, যেমন তেলের দাম বৃদ্ধি, সরবরাহ চেইনের ব্যাঘাত, এবং মুদ্রাস্ফীতি, যা বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক সংকটকে আরো তীব্র করবে।
জেমি ডিমন বিশ্বব্যাপী ক্রমবর্ধমান সংঘাতের প্রেক্ষাপটে সম্ভাব্য তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের আশঙ্কার বিষয়টি তুলে ধরেছেন। তিনি বলছেন যে রাশিয়া, চীন, ইরান এবং উত্তর কোরিয়ার মধ্যে সহযোগিতা এবং পশ্চিমা বিশ্বের সাথে দ্বন্দ্ব বিশ্বের নিরাপত্তা ও অর্থনীতির জন্য বড় হুমকি সৃষ্টি করছে। এসব সংঘাতের কারণে তেলের মূল্য এবং মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধি পাবে, যার ফলে আন্তর্জাতিক সরবরাহ চেইন ব্যাহত হবে এবং সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি পাবে। ডিমনের মতে, এই সংকট থেকে উত্তরণের জন্য বিশ্বনেতাদের দ্রুত কূটনৈতিক সমাধানের দিকে অগ্রসর হতে হবে।
জেমি ডিমন আরও বলছেন যে বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন আঞ্চলিক সংঘাতের জটিলতা এবং নতুন জোটগুলো বর্তমান বিশ্বে “নতুন ধরণের যুদ্ধ” সৃষ্টি করছে। তার মতে, রাশিয়া ও চীনের সামরিক শক্তির বৃদ্ধি, ইরান ও উত্তর কোরিয়ার আক্রমণাত্মক ভূমিকা, এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্বের প্রতিক্রিয়া এই সংকটকে বাড়িয়ে তুলছে। বিশ্ব নেতারা যদি সংঘাত নিরসনের জন্য কার্যকর কূটনৈতিক উদ্যোগ না নেন, তাহলে ভবিষ্যতে বড় আকারের যুদ্ধের সম্ভাবনা রয়েছে, যা বৈশ্বিক অর্থনীতি এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
জেপি মরগান সিইও জেমি ডিমনের তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ সম্পর্কিত মন্তব্য গুরুত্বপূর্ণ কারণ তিনি যে বিশ্বব্যাপী অস্থিরতার দিকে ইঙ্গিত করছেন, তা বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতি ও সংঘাতের মধ্যে তুলনা করে। ডিমন, চীন, রাশিয়া, এবং অন্যান্য রাষ্ট্রগুলির মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা এবং শক্তির পুনর্গঠনের ফলে একটি নতুন ধরনের বৈশ্বিক সংঘাতের আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তার মন্তব্যের গুরুত্ব বাড়ে কারণ তিনি বিশ্বব্যাপী আর্থিক বাজার, কৌশলগত সিদ্ধান্ত, এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের উপর ব্যাপক প্রভাব ফেলার ক্ষমতা রাখেন।
তথ্যসূত্র: ceoto day magazine