তরুণ নামের জয়-মুকুট শুধু তাহার—যাহার শক্তি অপরিমাণ।। মেহেরপুরের তরুণ প্রজন্মের একজন আবু মোহাম্মদ সালেহ
রুহুল কুদ্দুস টিটো
মেহেরপুরের তরুণ প্রজন্মের একজন আবু মোহাম্মদ সালেহ অনেক চড়াই উৎরাই পেরিয়ে তার বিপুল আশা আর ক্লান্তিহীন উৎসাহ নিয়ে পথ চলে কাঙ্খিত সপ্নের সারথি জাহাজের ক্যাপ্টেন আবু মোহাম্মদ সালেহ শুভ।
তরুণ নামের জয়-মুকুট শুধু তাহার—যাহার শক্তি অপরিমাণ, গতি-বেগ ঝঞ্ঝার ন্যায়, তেজ নির্মেঘ আষাঢ়-মধ্যাহ্নের মার্তণ্ড-প্রায়, বিপুল যাহার আশা, ক্লান্তিহীন যাহার উৎসাহ, বিরাট যাহার ঔদার্য, অফুরন্ত যাহার প্রাণ, অতল যাহার সাধনা, মৃত্যু যাহার মুঠিতলে। তারুণ্য দেখিয়াছি আরবের বেদুঈনের মাঝে, তারুণ্য দেখিয়াছি মহাসমরের সৈনিকের মুখে, কালাপাহাড়ের অসিতে, কামাল-করিম-জগলুল সানইয়াৎ-লেনিনের শক্তিতে। যৌবন দেখিয়াছি তাহাদের মাঝে—যাহারা বৈমানিক-রূপে অনন্ত আকাশের সীমা খুঁজিতে গিয়া প্রাণ হারায়, আবিষ্কারক রূপে নব পৃথিবীর সন্ধানে গিয়া আর ফিরে না, গৌরীশৃঙ্গ কাঞ্চনজঙ্ঘার শীর্ষদেশ অধিকার করিতে গিয়া যাহারা তুষার ঢাকা পড়ে, অতল সমুদ্রের নীল মঞ্জুষার মণি আহরণ করিতে গিয়া সলিল সমাধি লাভ করে, মঙ্গলগ্রহে, চন্দ্রলোকে যাইবার পথ আবিষ্কার করিতে গিয়া নিরুদ্দেশ হইয়া যায়, পবন গতিকে পশ্চাতে ফেলিয়া যাহারা উড়িয়া যাইতে চায়, নব নব গ্রহ নক্ষত্রের সন্ধান করিতে করিতে যাহাদের নয়ন-মণি নিভিয়া যায়—যৌবন দেখিয়াছি সেই দুরন্তদের মাঝে। যৌবনের মাতৃরূপ দেখিয়াছি—শব বহন করিয়া যখন সে যায় শ্মশান-ঘাটে, গোরস্তানে, অনাহারে থাকিয়া যখন সে অন্ন পরিবেশন করে দুর্ভিক্ষ-বন্যা-পীড়িতদের মুখে, বন্ধুহীন রোগীর শয্যাপার্শ্বে যখন রাত্রির পর রাত্রি জাগিয়া পরিচর্যা করে, যখন সে পথে পথে গান গাহিয়া, ভিখারি সাজিয়া দুর্দশাগ্রস্তদের জন্য ভিক্ষা করে, যখন সে দুর্বলের পাশে বল হইয়া দাঁড়ায়, হতাশার বুকে আশা জাগায়।
ইহাই যৌবন, এই ধর্ম যাহাদের—তাহারাই তরুণ। আমাদের দেশ নাই, জাতি নাই, অন্য ধর্ম নাই। দেশ-কাল-জাতি-ধর্মের সীমার ঊর্ধ্বে ইহাদের সেনানিবাস। -কাজী নজরুল ইসলাম
সম্প্রতি মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ক্যাপ্টেন হিসেবে পদোন্নতী পেয়েছে মেহেরপুরের কৃতি সন্তান আবু মোহাম্মদ সালেহ শুভ। ২০০৩ সালে মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং প্রবেশন অফিসার হিসেবে যোগদান করার পর ধাপে ধাপে তিনি পদোন্নতী লাভ করে সর্বশেষ ক্যাপ্টেন হিসেবে পদোন্নতী পান।
শুভ-র মতে সাগর পাড়ি দিতে ইচ্ছুক, কঠোর পরিশ্রমে আগ্রহী, সাহসী, বাণিজ্যিক জাহাজে কাজ করতে চান এমন ব্যক্তিদের জন্য মেরিন পেশাটি বেশ পছন্দের পেশা। এটি একটি চ্যালেঞ্জিং পেশা। এই পেশায় বিভিন্ন দেশ ভ্রমণের সুযোগ পাওয়া যায়। সেই সাথে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মানুষের শিক্ষা, সংস্কৃতি, আচার, আচরণ সম্বন্ধে জ্ঞান অর্জন করা যায়। বাংলাদেশি মেরিনাররা প্রতি বছর দেশের জন্য প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় করে দেশের অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখছে। এদের মধ্যে মেহেরপুরের তরুণ প্রজন্মের সন্তান ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ সালেহ শুভ ।
শুভ লিখেছে ভ্রমণ কথা
বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল যা শয়তানের ত্রিভুজ নামে পরিচিত। এটি উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরের একটি ব্যস্ততম অঞ্চল। বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল নিয়ে বেশ কয়েকজন লেখক বই লিখেছেন। ১৯৫০ সালে প্রথম বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল নিয়ে খবর প্রকাশিত হয়। বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল নিয়ে অনেক রহস্যের কথা শোনা যায়। উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরে বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল অবস্থিত।
শুভ জানান আমার সি ক্যারিয়ারে বেশ কয়েকবার শিপ নিয়ে বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল অতিক্রম করার সুযোগ হয়েছে। আমি সর্বশেষ ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে শিপ নিয়ে বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল পার হয়ে ইউএসএ এর একটি পোর্ট নিউ ইয়রলেন্স গিয়েছিলাম।
এখান দিয়ে শিপ যাওয়ার সময় সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলে শিপ নিখোঁজ হওয়ার পেছনে যে কারণগুলোর থাকতে পারে সেগুলো হল :
- চৌম্বকীয় অনিয়মিততা।পৃথিবীর চুম্বকীয় ক্ষেত্রে একটি স্থানীয় পরিবর্তনের কারণে শিপ এর ম্যাগনেটিক কম্পাস বা দিকদর্শন যন্ত্র সঠিকভাবে কাজ নাও করতে পারে।
- চতুর্মুখী কারেন্ট বা জলস্রোত।
- পানির নিচে থাকা বিপদজনক রিফ বা প্রবাল প্রাচীর।
- সমুদ্রে সৃষ্ট হারিকেন বা ঘূর্ণিঝড় এর প্রভাব।
এছাড়াও অনেক অজানা কারণ থাকতে পারে। উপরে উল্লেখিত কারণে সামুদ্রিক জাহাজ বা উড়োজাহাজ বিপদে পড়তে পারে। তবে এও জানা যায় কিছু কিছু লেখক বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল নিয়ে অতিরঞ্জিত ভাবে লিখেছেন যা এখনো রহস্য আবৃত।
তবে একবিংশ শতাব্দীতে জাহাজের অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি,টেলিযোগাযোগ, রেডার, জিপিএস, স্যাটেলাইট প্রযুক্তির কারণে এসব অঞ্চলে দুর্ঘটনা অনেকটাই কমে এসেছে। বর্তমানে জাহাজে প্রযুক্তির উন্নয়নের কারণে আবহাওয়া এবং ঘূর্ণিঝড় সম্পর্কে অনেক আগে থেকেই পূর্বাভাস পাওয়া যায় এবং সেভাবেই জাহাজ পরিচালনা করা হয়। জাহাজের নাবিক ও জাহাজের নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনবোধে জাহাজের রুট পরিবর্তন করা হয়।
ক্যাপ্টেন হতে হলে কতটা পথ পাড়ি দিতে হয়
১৯৯৭ সালে মেহেরপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস (স্টারমার্ক এবং ফার্স্ট ডিভিশন) ১৯৯৯ সালে মেহেরপুর সরকারি কলেজ থেকে এইচ এস সি পাস করেন (ফার্স্ট ডিভিশন) এরপর ভর্তি হন বাংলাদেশ মেরিন একাডেমী চট্টগ্রামে। সে সময় দেশে একমাত্র মেরিন একাডেমি ছিল চট্টগ্রামে। চট্টগ্রাম মেরিন একাডেমি থেকে ২০০৩ সালে ব্যাচেলার অফ মেরিটাইম সাইন্স ডিগ্রি অর্জন করেন (ফার্স্ট ক্লাস) এবং বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের একটি জাহাজে ডেক ক্যাডেট হিসেবে যোগদান করেন। এভাবেই তার কর্মজীবন শুরু হয়।
ডেক ক্যাডেট হিসেবে জাহাজে চাকরি শুরু করে ধাপে ধাপে সি টাইম সম্পূর্ণ করেন এবং প্রতিটি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন তিনি। যথাক্রমে থার্ড অফিসার, সেকেন্ড অফিসার, চিফ অফিসার হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। চিফ অফিসার হিসাবে প্রায় দশ বছর জাহাজে চাকরি করার পর সর্বশেষ ২০২২ সালে জাহাজের ক্যাপ্টেন হিসেবে পদোন্নতি পান তিনি।
# আলাপচারিতায় আগামী মঙ্গলবার ১৬ জানুয়ারী ২০২৪ রাত ৮: ৩০ মিনিটে Tito Quddus Facebook আইডিতে এবং আলাপচারিতা Ruhul Quddus Tito ক্যাপ্টেন আবু মোহাম্মদ সালেহ শুভ এর সাথে সরাসরি স্প্রচারিত হবে।
১ মন্তব্য
ধন্যবাদ সিনিয়র সাংবাদিক রুহুল কুদ্দুস টিটো আঙ্কেল কে মেরিন পেশা এবং আমাকে নিয়ে লেখার জন্য। আশাকরি তরুণ প্রজন্ম লেখাটি পড়ে মেরিন পেশা সম্বন্ধে কিছুটা ধারণা পাবে।