“তুমি তো বিশ্বকাপটাই ফেলে দিলে”
দক্ষিণ আফ্রিকা ২১২ (৪৯.৪ ওভারে)
অস্ট্রেলিয়া ২১৫/৭ (৪৭.২ ওভারে)
১৯৯৯ সাল। বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে অস্ট্রেলিয়া এবং দক্ষিণ আফ্রিকা। অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক স্টিভ ওয়ের ক্যাচ ফেলে দিয়েছিলেন হার্শেল গিবস। যার পরেই নাকি স্টিভ বলেছিলেন, “তুমি তো বিশ্বকাপটাই ফেলে দিলে।”
২০২৩ সাল। বিশ্বকাপের ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে সেই অস্ট্রেলিয়া এবং দক্ষিণ আফ্রিকা। বৃহস্পতিবার ইডেনে অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক প্যাট কামিন্সের ক্যাচ ফেলে দিলেন কুইন্টন ডি’কক।
দু’টি ম্যাচের মধ্যে মিল হয়তো খুবই কম। ২৪ বছর আগের সেই ম্যাচে মিড উইকেটে দাঁড়ানো গিবস যখন ক্যাচ ফেলেছিলেন, তখন অস্ট্রেলিয়ার জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ১২৩ রান। গিবস ক্যাচ ফেলার পর ওয় শতরান করে দলকে জিতিয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার সেখানে উইকেটরক্ষক ডি’কক যখন ক্যাচ ফেলেন, তখন অস্ট্রেলিয়ার জয়ের জন্য মাত্র ৯ রান বাকি। কিন্তু ৪৫তম ওভারে মার্করামের বলে কামিন্সের উইকেট হারালে অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে শেষ ৯ রান করাও কঠিন হত। ইডেনের পিচে রান করা তখন বেশ কঠিন হয়ে উঠেছিল। অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটারদের অসুবিধা হচ্ছিল। বোলারদের পক্ষে সেখানে নেমেই রান করে দেওয়া কঠিন হত। একটা সুযোগ অন্তত দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে থাকত। কিন্তু ডি’কক ক্যাচ ফেলে দেওয়ায় তেমন কোনও সম্ভাবনাই তৈরি হল না। গোটা ম্যাচে যদিও দক্ষিণ আফ্রিকার ফিল্ডারেরা একাধিক ক্যাচ ফেলেছে।
অধিনায়কের সিদ্ধান্তের ফসল ঘরে তুলতে পারল না দক্ষিণ আফ্রিকা। ২১২ রানেই শেষ হয়ে গেল তাদের ইনিংস। ডেভিড মিলার ১০১ রানের লড়াকু ইনিংস না খেলতে পারলে এবং হেনরিক ক্লাসেন ৪৭ রান না করলে বড় লজ্জায় পড়তে হত দক্ষিণ আফ্রিকাকে। দলের ইনিংসের ধস শুরু বাভুমাকে (শূন্য) দিয়েই। অবসরের সিদ্ধান্ত নিয়ে বিশ্বকাপ খেলতে এসেছেন কুইন্টন ডি’কক। গোটা প্রতিযোগিতায় দারুণ ফর্মে ছিলেন তিনি। সেমিফাইনালে ডি’ককও (৪) পারলেন না। ব্যর্থ তিন নম্বরে নামা ভ্যান ডার ডুসেনও (৬)। ভরসা দিতে পারলেন না এডেন মার্করামও (১০)। জস হ্যাজলউডদের দাপটে ১১.৫ ওভারে ২৪ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে শুরুতেই চাপে পড়ে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা। তাদের এই রান বিশ্বকাপের ইতিহাসে এত খারাপ ভাবে কখনও ইনিংস শুরু করেনি তারা। ১০ ওভারে রান ছিল ১৮/২। যা শেষ চারটি বিশ্বকাপে পাওয়ার প্লেতে যুগ্ম দ্বিতীয় সর্বনিম্ন রান। ২০১১ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ও ১০ ওভারে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ১৮ রানে ৩ উইকেট হারিয়েছিল। আর ২০১৫ বিশ্বকাপে প্রথম ১০ ওভারে পাকিস্তান ১৪ রানে ২ উইকেট হারিয়েছিল জ়িম্বাবোয়ের পর।
রবিবার ভারত-অস্ট্রেলিয়া ফাইনালে
আগামী রবিবার খেতাবের লড়াইয়ে রোহিত শর্মাদের প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া। বৃহস্পতিবার ইডেনে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে অষ্টম বার বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠলেন কামিন্সেরা।
অস্ট্রেলিয়া বৃহস্পতিবার জিতল ৩ উইকেটে। দক্ষিণ আফ্রিকা পঞ্চম বার বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে হারল। অস্ট্রেলিয়া অষ্টম বার বিশ্বকাপের ফাইনালে। সামনে এ বার ভারত। রবিবারের অপেক্ষায় দিন গুনছে ক্রিকেট দুনিয়া।
ভারতীয় দল ৩৩ দিন আগে আমদাবাদে ছিল। সে দিন পাকিস্তানকে হারিয়েছিল তারা। বৃহস্পতিবার বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলতে আবার সেই শহরেই পৌঁছে গিয়েছেন রোহিত শর্মারা। হাতে আর দু’দিন। রবিবার ভারত-অস্ট্রেলিয়া ফাইনালে ঠিক এ বারের বিশ্বকাপ জিতবে কোন দেশ।
বুধবার মুম্বইয়ে নিউ জ়িল্যান্ডকে হারিয়ে দেয় ভারত। পরের দিনই আমদাবাদে চলে গেলেন রোহিতেরা। বুধবার রাতে দলের সঙ্গে ছিলেন না বিরাট কোহলি। বৃহস্পতিবার যদিও তাঁকে দেখা গেল দলের সঙ্গে আমদাবাদে পৌঁছে যেতে। শুক্রবার অনুশীলন করবে ভারত। তবে তা ঐচ্ছিক অনুশীলন। তাই সকলকে সেখানে দেখা না-ও যেতে পারে। টানা ম্যাচ খেলে চলেছেন বিরাটেরা। শুক্রবার বিশ্রাম নিতে পারেন তাঁরা। শনিবার অনুশীলনের সুযোগ রয়েছে তাদের কাছে।
বুধবার বিরাট এবং শ্রেয়স আয়ার মুম্বইয়ে শতরান করেন। মহম্মদ শামি নেন সাত উইকেট। তাঁদের দাপটে কিউইদের হারিয়ে বিশ্বকাপের ফাইনালে পৌঁছে যায় ভারত। বৃহস্পতিবার দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে ফাইনালে অস্ট্রেলিয়াও। ২০০৩ সালের পর আবার এই দুই এক দিনের বিশ্বকাপের ফাইনালে মুখোমুখি হল।
৩ উইকেটে জিতে বিশ্বকাপ ফাইনালে ভারতের সামনে অস্ট্রেলিয়া। তবে যতটা সহজে অস্ট্রেলিয়া সেমিফাইনাল জিতবে বলে মনে করা হচ্ছিল ম্যাচের প্রথমার্ধে, ততটা সহজ হল না পাঁচ বারের বিশ্বজয়ীদের জয়। ইডেন গার্ডেন্সের মন্থর হয়ে যাওয়া উইকেটে যথেষ্ট খেটে জিততে হল তাদের। পাঁচ বার বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে উঠে পাঁচ বারই হারল দক্ষিণ আফ্রিকা।
নেতৃত্ব ছাড়ার ঘোষণা বাবরের
পাকিস্তানের শেষ ম্যাচ ছিল ইডেনে। সেই ম্যাচের আগে বাবর আজ়ম এবং রামিজ় রাজার কথা হয়। তখনই নেতৃত্ব ছাড়ার কথা জানিয়েছিলেন বাবর। বলেছিলেন, বোর্ডও চায় না তাঁকে অধিনায়ক হিসাবে। পাকিস্তানের প্রাক্তন বোর্ড কর্তা ফাঁস করে দিলেন তাঁর সঙ্গে বাবরের কথোপকথন।
বুধবার সমাজমাধ্যমে পোস্ট করে নেতৃত্ব ছাড়ার ঘোষণা করেন বাবর। কিন্তু ইডেনে বিশ্বকাপের শেষ ম্যাচ খেলতে নামার আগেই ঠিক করে ফেলেছিলেন যে, তিনি আর অধিনায়ক থাকবেন না। রামিজ় বলেন, “বাবরের নেতৃত্ব ছেড়ে দেওয়া ছিল শুধুই সময়ের অপেক্ষা। আমি যখন ইডেনে ওর সঙ্গে দেখা করি, তখনই জানিয়েছিল যে ও হতাশ। বাবর বলেছিল যে, ওর নেতৃত্ব দিতে ভাল লাগছে না। সেই সঙ্গে বাবর বলে যে, বোর্ডও ঠিক করে ফেলেছে ওকে অধিনায়ক রাখবে না।”
বুধবার বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল ম্যাচ চলছিল ভারত-নিউ জ়িল্যান্ডের মধ্যে। সেই ম্যাচে বিরাট কোহলি এক দিনের ক্রিকেটে ৫০তম শতরান করেছিলেন। সেই ঘটনার কিছু ক্ষণের মধ্যেই সমাজমাধ্যমে নেতৃত্ব ছাড়ার সিদ্ধান্ত জানিয়েছিলেন বাবর। তিনি লিখেছিলেন, “তিন ফরম্যাটের ক্রিকেটে পাকিস্তানের নেতৃত্ব ছাড়ছি। এই সিদ্ধান্ত নেওয়া খুব কঠিন ছিল কিন্তু আমার মনে হয় এটাই সঠিক সময়। নেতৃত্ব ছাড়লেও আমি পাকিস্তানের হয়ে তিন ফরম্যাটেই ক্রিকেট খেলব। নতুন অধিনায়ককে সব রকম সাহায্য করব। আমার সব অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেব তাঁর সঙ্গে।”
২০১৯ সালে বাবরকে অধিনায়ক করা হয়েছিল। সেই ঘটনার কথাও নিজের পোস্টে উল্লেখ করেছিলেন তিনি। বাবর লিখেছিলেন, “২০১৯ সালে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের তরফে আমাকে ফোন করা হয়। সেই ঘটনা আমার স্পষ্ট মনে আছে। আমাকে অধিনায়ক করা হয়। চার বছর ধরে আমি নেতৃত্ব দিয়েছি। মাঠে এবং মাঠের বাইরে অনেক ভাল এবং খারাপ সময়ের মধ্যে দিয়ে গিয়েছি। সব সময় চেষ্টা করেছি ক্রিকেট বিশ্বে পাকিস্তানকে গর্বিত করতে।”
বাবর দায়িত্ব ছাড়ার ৯৩ মিনিট পর সমাজমাধ্যমে নতুন অধিনায়কদের নাম জানিয়ে দিয়েছিল পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে অধিনায়ক শাহিন শাহ আফ্রিদি। টেস্টে অধিনায়ক করা হয় শান মাসুদকে। এক দিনের ক্রিকেটের অধিনায়কের নাম এখনও ঘোষণা করা হয়নি।
তথ্য সূত্র: আনন্দবাজারপত্রিকা