মুন্সী শেখ জমিরউদ্দীন (১৮৭০-১৯৩৭)ধর্ম প্রচারক, লেখক ও সমাজসেবক। জন্ম গাঁড়াডোব গ্রাম, মেহেরপুর ১৫ মাঘ, ১২৭৭ (১৮৭০)। নিষ্ঠাবান মুসলিম পরিবারে জন্ম। বাল্যকালে নামাজ-রোজা ইত্যাদি ইসলামিক বিধিবিধান নিয়মিতভাবে পালন।
শেখ জমিরুদ্দীন ১৮৭০ সালে মেহেরপুরের গাংনীর গাঁড়াডোব (বাহাদুরপুর) গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি মেহেরপুর আমঝুপি খৃীষ্টিয়ান স্কুলে ও কৃষ্ণনগর নর্মাল স্কুলে পড়াশোনা করেছেন। ১৮৮৭ সালে তিনি খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করেন।খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণের পর তিনি নিজের নাম পরিবর্তন করেন জন জমিরুদ্দীন রাখেন।জন জমিরুদ্দীন ১৮৯১ সালে এলাহাবাদ সেন্ট পলস ডিভিনিটি কলেজ থেকে ধর্মতত্ত্বে স্নাতক হন।পরবর্তীতে, তিনি কলকাতার ডিভিনিটি কলেজে ভর্তি হন। তিনি সেখানে খ্রিষ্টধর্মতত্ত্ব, সংস্কৃত, আরবি, গ্রিক এবং হিব্রু সাহিত্য ও ব্যাকরণ নিয়ে পড়াশোনা করেছিলেন। তিনি বাংলা, ইংরেজি, উর্দু, ফার্সি ও লাতিন ভাষা জানতেন।
জন জমিরুদ্দীন ১৮৯২ সালের জুন মাসে খ্রিষ্টীয় বান্ধব পত্রিকায় আসল কোরআন কোথায় শিরোনামের একটি নিবন্ধ লেখেন। এর জবাবে মুনশি মোহাম্মদ মেহেরুল্লাহ ঈসায়ি বা খ্রিষ্টানি ধোকাভঞ্জন শিরোনামের একটি নিবন্ধ লেখেন যা ১৮৯২ সালের ২০ ও ২৭ জুন সুধাকর এ প্রকাশিত হয়েছিল। প্রবন্ধটিতে তিনি জন জমিরুদ্দীনের ছয়টি প্রশ্নের জবাব দিয়েছিলেন।
এরপর, জন জমিরুদ্দীন সুধাকর এ একটি নিবন্ধ লেখেন এর জবাবে মুনশি মোহাম্মদ মেহেরুল্লাহ আসল কোরআন সর্বত্র শিরোনামের একটি নিবন্ধ লেখেন। নিবন্ধটি পরে জন জমিরুদ্দীন ইসলাম গ্রহণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।
তিনি কৃষ্ণনগর নার্মাল স্কৃলে পাঠকালে খ্রিস্টান মিশনারিদের সংস্পর্শে এসে ১৮৮৭-তে খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ। নর্মাল পাঠসমাপ্ত করে খ্রিস্টান পাদ্রিদের সহায়তায় ১৮৯১-তে এলাহাবাদ সেন্ট পলস ডিভিনিটি কলেজে ভর্তি। এ কলেজ থেকে প্রথম বিভাগে হায়ার গ্রেড অব থিয়লজি ডিগ্রি লাভ (১৮৯৩)। কলকাতা ক্যাথিড্রাল মিশন ডিভিনিটি কলেজে কিছুকাল অধ্যয়ন। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের খ্রিস্টধর্ম তত্ত্ব এবং সংস্কৃত, আরবি, গ্রিক, হিব্র“ ভাষা ও সাহিত্য শিক্ষা গ্রহণ। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা শেষ করে খ্রিস্টধর্ম প্রচারে আত্মনিয়োগ। কিছুকাল পরে বাইবেলের অকৃত্রিমতা সম্বন্ধে মনে সংশয় দেখা দেয়ার খ্রিস্টধর্ম ত্যাগ করে আবার ইসলাম ধর্মে দীক্ষা গ্রহণ। এরপর স্বীয় গ্রামের স্কুলে শিক্ষকতার কর্মে যোগদান। কিছুকাল পর এ কর্ম ত্যাগ করে মুুন্সী মেহেরুল্লাহর সহচর হিসেবে ইসলাম ধর্ম প্রচারে মনোনিবেশ। খ্রিস্টানমিশনারিরা ইসলাম ধর্মকে আক্রমণ করে যে সব পুস্তক -পুস্তিকা প্রকাশ করেন তার প্রতিবাদে পুস্তক রচনা করে খ্যাতি অর্জন। ইসলামের সত্য ও সৌন্দর্যের অন্বেষণই তাঁর লেখার বিষয়বস্তু। গ্রন্থ: আমার জীবনী ও ইসলাম গ্রহণ বৃত্তান্ত (১৩০৪), হজরত ইসা কে? (১৩০৬), ইসলামী বক্তৃতা (১৩১৪)
শেখ জমিরুদ্দীন ধর্মীয় বিষয়ে গ্রন্থ রচনা করেছেন। এছাড়া, তিনি সামাজিক বিষয়ক গ্রন্থ রচনা করেছেন ও অনুবাদ করেছেন। তিনি হযরত ঈসাকে, মেহের চরিত, ইসলামী বক্তৃতা, শ্রেষ্ঠ নবী হজরত মোহাম্মদ (স.) ও পাদরীর ধোঁকাভঞ্জন এর মত গ্রন্থ রচনা করেছেন।[১] তিনি আমার জীবনী ও ইসলাম গ্রহণ বৃত্তান্ত শিরোনামে আত্মজীবনীও রচনা করেছেন।
মেহের-চরিত (১৩১৫), শ্রেষ্ঠ নবী হজরত মোহাম্মদ (দঃ) ও পাদরীর ধোকাভঞ্জন (১৩২৩), ইঞ্জিলে হজরত মোহাম্মদ (দঃ) ও পাদরী ওয়েঙ্গার সাহেবের সাক্ষ্য (১৩২৩), ইঞ্জিলে হজরত মোহাম্মদ (দঃ) ও পাদরী রাউস সাহেবের সাক্ষ্য (১৩৩২) ইত্যাদি। ইসলাম ধর্মের একজন বিশিষ্ট প্রচারক ও সেবক। তেজস্বী ওয়াজকারী হিসেবে প্রসিদ্ধি লাভ। ইসলামের আদর্শ প্রচার ও খৃষ্টান ধর্মের অসারতা প্রমান করে তিনি ৪৫টি গ্রন্থ রচনা করেছিলেন। ঐসব গ্রন্থের মাধ্যমে তিনি মুসলমান সমাজকে রক্ষা করার জন্য যে উদ্যোগ গ্রহণ করতে সক্ষম হয়েছিলেন, তা খুবই উল্লেখযোগ্য। এ অঞ্চলের মুসলিম সমাজ তার কাছে চিরঋণী।
মৃত্যু গাঁড়াডোব, ২ জুন, ১৯৩৭ (আষাঢ় ১৩৪৪)।
তথ্যসূত্র: উইকিপিডিয়া,রবিউল আলম