নাইট্রোজেন গ্যাস প্রয়োগ করে কেনেথের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয় ।। ২২ মিনিট ধরে যেন এক ভয়ঙ্কর নাটক মঞ্চস্থ হচ্ছিল-কেনেথের আধ্যাত্মিক উপদেষ্টা রেভারেন্ড জেফ স্মিথ
২২ মিনিট ধরে যেন এক ভয়ঙ্কর নাটক মঞ্চস্থ হচ্ছিল বলে জানিয়েছেন কেনেথের আধ্যাত্মিক উপদেষ্টা রেভারেন্ড জেফ স্মিথ। তিনি জানিয়েছেন, ভয়াবহ সেই ঘটনা দেখে কারাকর্মীরা পর্যন্ত হতবাক হয়ে গিয়েছিলেন।
পেশায় তিনি ছিলেন ভাড়াটে খুনি। আশির দশকে এক মহিলাকে খুনের অভিযোগে কেনেথ ইউজিন স্মিথ নামে এক ব্যক্তিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল আমেরিকার আদালত। কী ভাবে তাঁকে ‘মারা’ হবে, তা নিয়ে বিস্তর টানাপড়েনের পর শেষমেশ নাইট্রোজেন গ্যাস প্রয়োগ করে গত বৃহস্পতিবার কেনেথের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়, যা আমেরিকা তো বটেই, বিশ্বের ইতিহাসে এই প্রথম। মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ার আগে যন্ত্রণায় কাটা ছাগলের মতো ছটফট করছিলেন কেনেথ।
নাইট্রোজেন গ্যাস প্রয়োগ করে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার এই পদ্ধতি নিয়ে ইতিমধ্যেই শোরগোল পড়ে গেছে। রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবাধিকার কর্মীরা এই পদ্ধতির বিরোধিতায় পথে নেমেছেন। যদিও মার্কিন প্রশাসনের দাবি, এই পদ্ধতির মৃত্যুদণ্ডের জন্য সবচেয়ে ব্যথাহীন। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দেখা গেছে, নাইট্রোজেন মাস্ক পরানো থেকে শুরু করে হৃদ্যন্ত্র কাজ করা বন্ধ করে দেওয়া পর্যন্ত ২২ মিনিট যন্ত্রণায় আর্তনাদ করেছেন ৫৮ বছরের ভাড়াটে খুনি কেনেথ।
সেই ২২ মিনিট ধরে যেন এক ভয়ঙ্কর নাটক মঞ্চস্থ হচ্ছিল বলে জানিয়েছেন কেনেথের আধ্যাত্মিক উপদেষ্টা রেভারেন্ড জেফ স্মিথ। মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার ঘটনার সাক্ষী ছিলেন তিনি। রেভারেন্ড জানিয়েছেন, ভয়াবহ সেই ঘটনা দেখে কারাকর্মীরা পর্যন্ত হতবাক হয়ে গিয়েছিলেন।
রেভারেন্ড বলেছেন, ‘‘ওদের মুখে বিস্ময় এবং ধাক্কার ছাপ ছিল স্পষ্ট। ওই পরিস্থিতিতে কী যে হচ্ছিল তা বুঝিয়ে বলা মুশকিল, কিন্তু ওখানে সেই সময় যারা উপস্থিত ছিল, তাদের চোখে-মুখে আমি আতঙ্ক দেখেছি। কেনেথ যখন শ্বাস নেওয়ার জন্য ছটফট করছেন, তখন সকলে আতঙ্কে ঢোঁক গিলছিল। পুরোটা যেন হলিউডের কোনও সিনেমা। যা দেখেছি, কোনও দিন ভুলব না।’’
আমেরিকার অঙ্গরাজ্য আলাবামার হোলম্যান কারাগারে কেনেথের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। তার মুখে একটি মাস্ক পরিয়ে দেওয়া হয়। ঠিক যে ভাবে কোনও রোগীকে মাস্কের মাধ্যমে অক্সিজেন দেওয়া হয়, সেই প্রক্রিয়াই কেনেথের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়েছিল। শুধু অক্সিজেনের পরিবর্তে ছিল নাইট্রোজেন। অক্সিজেন চলাচলের সব রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল।
কেনেথকে পরীক্ষামূলক ভাবেই নাইট্রোজেন গ্যাস প্রয়োগে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। রেভারেন্ডের অভিযোগ, কারা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল, এই পদ্ধতিতে মৃত্যু হবে একেবারে ব্যথাহীন, চোখের পলক ফেলার আগে সম্পন্ন হয়ে যাবে পুরো প্রক্রিয়া। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে হয়েছে ঠিক উল্টো। মিনিটের পর মিনিট ধরে নারকীয় হত্যালীলা দেখতে হয়েছে তাঁকে, কেনেথের স্ত্রী-পুত্র ও কারাকর্মীদের, জানিয়েছেন রেভারেন্ড। তাঁর কথায়, কেনেথ জল থেকে ডাঙ্গায় তুলে আনা মাছের মতো আছাড়়ি-পিছাড়ি খাচ্ছিলেন।
শনিবার হোয়াইট হাউসের তরফে জানানো হয়েছে, এ ভাবে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করায় তারা ‘গভীরভাবে উদ্বিগ্ন’। রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবাধিকার প্রধান ভলকার তুর্ক, ইউরোপীয় ইউনিয়ান এবং নাগরিক স্বাধীনতা গোষ্ঠীও কেনেথের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার পদ্ধতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
তথ্যসূত্র: আনন্দবাজারপত্রিকা