নামাজ পড়াকে কেন্দ্র করে ভারতে কি হচ্ছে ? দুটি ঘটনা ” ভারতের ভিতরে মুসলিম বিরোধী বিদ্বেষ ভারতের ভাবমূর্তিকে নষ্ট করছে”
“খুব ভয়ে আছি আমরা। চিন্তা করছি পড়াশোনাটুকু কীভাবে শেষ করব?”, বিবিসি গুজরাটি বিভাগের সংবাদদাতার সঙ্গে কথোপকথনের সময় গুজরাট বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বিদেশি শিক্ষার্থী এভাবেই তার উদ্বেগ ব্যক্ত করলেন।
এর আগে গুজরাট বিশ্ববিদ্যালয়ের শনিবার রাতে হোস্টেল প্রাঙ্গণে নামাজ পড়াকে কেন্দ্র করে বিদেশি শিক্ষার্থীদের উপর হামলার অভিযোগ ওঠে। সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পাসে আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।
অভিযোগ, শনিবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের হোস্টেলের এ ব্লকে আফগানিস্তান, উজবেকিস্তান, তাজিকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও আফ্রিকার কয়েকটি দেশের মুসলিম শিক্ষার্থীদের উপর হামলা চালায় ২৫জনের একটি দল। এই ঘটনায় দুজন শিক্ষার্থী আহত হন।
তাদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় এবং পরে ছেড়ে দেওয়া হয়।
গুজরাট পুলিশের ডিসিপি (জোন ৭) তরুণ দুগ্গলের সঙ্গে মঙ্গলবার যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “আমরা বিষয়টি তদন্ত করছি। এখনও পর্যন্ত এই ঘটনায় পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।”
সমাজমাধ্যমে একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে যেখানে কয়েকজন বিদেশি পড়ুয়ার গাড়ি লক্ষ্য করে পাথর ছুঁড়তে দেখা যাচ্ছে কিছু ব্যক্তিকে। ধর্মীয় স্লোগানও দিতে দেখা গিয়েছে।
এই ভিডিওটি গুজরাট বিশ্ববিদ্যালয়য়ের বিদেশি পড়ুয়াদের উপর আক্রমণের ঘটনার সঙ্গে সম্পর্কিত বলে দাবিও করা হয়েছে।
ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর নিন্দায় সরব হয়েছেন অনেকেই। বিরোধীরাও তোপ দেগেছে বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে।
সরব হয়েছেন এআইএমআইএম নেতা আসাদউদ্দিন ওয়াইসি এবং গুজরাটের কংগ্রেস নেতা গিয়াসুদ্দিন শেখও। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে।
প্রসঙ্গত, সমাজমাধ্যমে একটি পাল্টা ভিডিও দেখা গিয়েছে। সেই ভিডিওকে সামনে রেখে দাবি করা হয়েছে বচসা শুরু হওয়ার আগে যে যুবকরা হোস্টেলে নামাজ পড়া নিয়ে আপত্তি জানিয়েছিলেন তাদের মধ্যে একজনকে থাপ্পড় মারে অপর পক্ষের এক ব্যক্তি।
সেই ভিডিওটি আপাতত গুজরাট পুলিশের তদন্তাধীন। ডিসিপি তরুণ দুগ্গল বলেন, “ওই ভিডিওর সত্যতা আমরা যাচাই করে দেখছি।”বিশ্ব হিন্দু পরিষদের ড. সুরিন্দর জৈনকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, “এই ঘটনার সত্যতা যাচাই করতে গেলে আমাদের আরও গভীরে গিয়ে খতিয়ে দেখতে হবে।”
“শুধুমাত্র দু’টি ভিডিওর নিরিখে বিচার করলে চলবে না। সেই অংশটাও দেখতে হবে যেটা ভিডিওতে রেকর্ড হয়নি”, বলেন তিনি।
তার দাবি অভিযুক্তদের শাস্তির পাশাপাশি কেন এই বচসার সূত্রপাত, সেই বিষয়টিও তদন্তসাপেক্ষ।
“বিষয়টা নামাজ পড়া নিয়ে নয়, খোলা জায়গায় নামাজ পড়া নিয়ে। খোলা জায়গায় নামাজ পড়া নিয়ে আপত্তি জানালেই কেউ মারমুখী হয়ে যাবে এটা ঠিক নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছেই তো মসজিদ আছে, এতদিন সেখানেই পড়ুয়ারা যেতেন।”
“বচসার সূত্রপাত কে করেছে, কে প্রথম মারামারি শুরু করে এই সমস্ত বিষয় নিয়ে পুলিশ তদন্ত করছে। দোষী যেমন শাস্তি পাবে তেমনই এই বচসা যারা শুরু করেছিল তাদেরও শাস্তি পাওয়া উচিত,” বলেছেন ড. জৈন।
‘আগেও দুর্ব্যবহার করা হয়েছে’
বিবিসি গুজরাটির সংবাদদাতা যখন হোস্টেল ব্লকে পৌঁছন তখন সেখানে সর্বত্র পুলিশ এবং বিশ্ববিদ্যালয়য়ের কর্মকর্তাদের ভিড়।
ঘটনাস্থলে পাথর ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে ছিল। আর ছিল ভাঙা গাড়ি যা ইঙ্গিত দেয় সেখানে পাথর ছোঁড়া হয়েছিল।
হোস্টেলের ছাত্ররা তখনও আতঙ্কিত ও হতাশাগ্রস্ত হয়ে ছিলেন।
আফগানিস্তান থেকে আসা শিক্ষার্থী নোমান বিবিসিকে বলেন, “আমাদের মতো পড়ুয়াদের জন্য এখন এখানে থাকাটা বড় চ্যালেঞ্জ।”
“এই হোস্টেলটা আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য। ওই লোকগুলো কীভাবে দলে দলে এখানে ঢুকে পড়ল তা নিয়ে তদন্ত হওয়া উচিত।”তার অভিযোগ, “এই ধরনের লোকেরা প্রায়শই এখানে এসে হুমকি দেয় ‘জয় শ্রীরাম’ বল, না হলে তারা ছুরি মারব। এর আগেও এমন ঘটনা ঘটেছে। অন্য দেশের শিক্ষার্থীদের জন্য এখানে বহু ঝুঁকি রয়েছে।”
এই ঘটনায় এফআইআর দায়ের করেছে আহমেদাবাদ পুলিশ। এখনও পর্যন্ত পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
‘পুরনো মতপার্থক্য ছিল’
কংগ্রেস বিধায়ক ইমরান খেদাওয়ালা এবং প্রাক্তন বিধায়ক গিয়াসুদ্দিন শেখও ঘটনাস্থলে পৌঁছান ও হাসপাতালে ভর্তি পড়ুয়াদের সঙ্গে দেখা করেন।
ওই দুই নেতা এই ঘটনার নিন্দা করেছেন এবং গুজরাট পুলিশ ও সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
প্রাক্তন বিধায়ক গিয়াসুদ্দিন শেখ সমাজ মাধ্যম এক্স-এ (সাবেক টুইটার) লিখেছেন, ‘গণতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ ভারতে বসুধৈব কুটুম্বকমের স্লোগান তোলা ব্যক্তিদের শাসনকালে গুজরাট বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদেশি মুসলিম শিক্ষার্থীদের উপর হামলার ঘটনায় আমি এবং বিধায়ক ইমরান খেড়াওয়ালা ন্যায় বিচার চাই।’
গুজরাট বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নীরজা গুপ্তা অবশ্য গোটা বিষয়টিকে ‘দুই গোষ্ঠীর মধ্যে আগে থেকেই বিদ্যমান মতপার্থক্য’ বলে ব্যাখ্যা করেছেন।
তিনি বলেন, “দুই গোষ্ঠীর মধ্যে আগে থেকেই মতপার্থক্য চলছিল এবং এরপরই এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসে। ঠিক কেন এই ঘটনা ঘটল, সেটা তদন্তের বিষয়।”
“এ পর্যন্ত যা জানা গিয়েছে, তা হল কয়েকজন ছাত্র হোস্টেলের বাইরে নামাজ পড়ছিল এবং তারপর তারা জনতার সাথে তর্কে জড়িয়ে পড়ে।”
“বিশ্ববিদ্যালয় পুরো বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখছে এবং পুলিশ সেই রাতেই এফআইআর দায়ের করেছে”, জানিয়েছেন উপাচার্য।
পুলিশ কী বলছে?
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, এই ঘটনায় শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছে রাজ্য সরকারের স্বরাষ্ট্র দফতর। তবে স্বাধীনভাবে এই খবরের সত্যতা যাচাই করা সম্ভব হয়নি।
অভিযুক্তদের ধরতে নয়টি দল গঠন করা হয়েছিল। মোট পাঁচজন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিদের খোঁজ চালাচ্ছে পুলিশ।
রবিবার পুরো ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর আহমেদাবাদ সিটি পুলিশ কমিশনার জি এস মালিকও ঘটনাস্থলে পৌঁছন।
সংবাদমাধ্যমকে তিনি জানান, “এই হোস্টেলে প্রায় ৭৫ জন শিক্ষার্থী থাকেন। রাতে কয়েকজন ছাত্র হোস্টেল ভবনের বাইরে মসজিদ চত্বরে নামাজ আদায় করছিলেন।”
“সেই সময় কিছু লোক এসে পড়ুয়াদের কাছে জানতে চায় কেন তারা এখানে নমাজ পড়ছে।”
পুলিশ কমিশনারের মতে উভয় পক্ষের মধ্যে তুমুল বাদানুবাদ হয়েছিল, যার পরে বিষয়টি হাতাহাতির পর্যায়ে পৌঁছয়।
পুলিশের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, রাত ১০টা ৫১ মিনিটে পুলিশ কন্ট্রোল রুমে একটি বার্তা আসে, তারপরই ঘটনাস্থলে পৌঁছন কর্মকর্তারা।
পুলিশ সূত্রে খবর, এই ঘটনায় অভিযোগ জানিয়েছিলেন হোস্টেলের নিরাপত্তারক্ষী। মোট ২৫ জন ঘটনাস্থলে পাথর ছোঁড়ে বলে অভিযোগ।
পুলিশ কমিশনার বলেন, “২০-২৫ জনের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হয়েছে এবং আমাদের নয়টি দল তদন্ত করছে।”
“যারা এর সঙ্গে জড়িত, তাদের গ্রেফতার করা হবে এবং কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে”,আরও জানান তিনি।
কমিশনার আরও বলেন, হাসপাতালে দুই শিক্ষার্থীকে ভর্তি করা হয়েছে, যাদের একজন শ্রীলঙ্কা ও অন্যজন তাজিকিস্তানের।
অভিযোগ দায়ের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ডিসিপি (জোন ৭) তরুণ দুগ্গল।
প্রশ্ন আসাদউদ্দিন ওয়েইসির
ফ্যাক্ট চেকিং নিউজ ওয়েবসাইট অল্ট নিউজের প্রতিনিধি মোহামেদ জুবায়ের সমাজ মাধ্যম এক্স-এ (সাবেক টুইটার) এই ঘটনায় ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিও পোস্ট করেছেন।
এর পরে, এআইএমআইএম দলের এমপি আসাদউদ্দিন ওয়াইসিও বিষয়টির কড়া সমালোচনা করেন।
তিনি লেখেন, “কী লজ্জার কথা। বিশ্বাস এবং ধর্মীয় স্লোগানগুলি শুধুমাত্র তখনই প্রকাশ পায় যখন মুসলমানরা শান্তিপূর্ণভাবে তাদের ধর্ম অনুশীলন করেন। মুসলমানদের এক ঝলক দেখলেই আপনার ভীষণ রাগ হয়।”
“এটা যদি ব্যাপক আকারের চরমপন্থা না হয়, তাহলে কী? এটা অমিত শাহ এবং নরেন্দ্র মোদীর নিজের রাজ্য, তারা কি হস্তক্ষেপ করে কড়া বার্তা দেবেন? আমার কোনও আশা নেই।”
এই পোস্টে তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করকে ট্যাগ করে লেখেন, “ডঃ এস জয়শঙ্কর, ভারতের ভিতরে মুসলিম বিরোধী বিদ্বেষ ভারতের ভাবমূর্তিকে নষ্ট করছে।”
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কী বলছে?
গুজরাট বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক পড়ুয়াদের উপর হামলার অভিযোগের ঘটনায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল একটি বিবৃতি দিয়েছেন।
তিনি বলেন, “শনিবার) আহমেদাবাদের গুজরাট বিশ্ববিদ্যালয়ে হিংসার ঘটনা ঘটেছে। অপরাধীদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিচ্ছে রাজ্য সরকার।”
“সংঘর্ষে দুজন বিদেশি শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে একজনকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।”
তিনি বলেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গুজরাট সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে।
ভিডিওটিতে দেখা যাচ্ছে, রাস্তায় অনেকে একসঙ্গে নামাজ পড়ছিলেন। তারা যখন সিজদা করছেন, তখনই এক পুলিশ কর্মী নামাজিদের লাথি মেরে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন।
মুহূর্তেই ঘটনাস্থলে হাজির অনেক নামাজি ওই পুলিশ কর্মীকে ঘিরে ধরে তার সঙ্গে তর্ক করতে শুরু করেন।
সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারীরা ওই ঘটনার নিন্দা করছেন এবং দোষী পুলিশ কর্মীর কঠোর শাস্তির দাবি তুলছেন।
নামাজিদের লাথি মেরে সাসপেন্ড দিল্লির এক পুলিশ
শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ওই এলাকার মেট্রো রেল স্টেশনের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন স্থানীয় মানুষরা।
কী বলছে পুলিশ?
দিল্লি পুলিশ ওই ঘটনার জন্য দায়ী সাব-ইন্সপেক্টর মনোজ তোমারকে সাময়িক ভাবে বরখাস্ত, অর্থাৎ সাসপেন্ড করেছে।
দিল্লি পুলিশের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ওই ঘটনায় অভিযুক্ত পুলিশ কর্মীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত শুরু হয়েছে। তাকে তাৎক্ষণিকভাবে সাসপেন্ড করা হয়েছে।
উত্তর দিল্লির ডেপুটি পুলিশ কমিশনার মনোজ কুমার মিনা সংবাদ সংস্থা এএনআইকে বলেছেন, “একটি ভিডিওটি প্রকাশ্যে এসেছে। সেই ভিডিও ভাইরাল হয়ে যায়। ভিডিওটিতে যে পুলিশ কর্মীকে দেখা গেছে, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্বে ছিলেন যে পুলিশ কর্মী, তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
“শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক হয়েছে। স্থানীয় জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আমরা সবার কাছে এই বার্তা পৌঁছে দিয়েছি যে, এলাকার আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে হবে,” জানিয়েছেন মি. মিনা।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা
ঘটনাস্থলে উপস্থিত এক ব্যক্তি বলেন, “দিল্লি পুলিশ এটা খুবই খারাপ করেছে। তারা নামাজিদের মারল! এখানে এমন ঘটনা আগে কখনও ঘটেনি।“
“যে পুলিশ কর্মী এই কাজ করেছে, তাকে সাসপেন্ড না করে চিরতরে বরখাস্ত করা উচিত। যদি তা না করা হয়, তাহলে অন্য পুলিশ সদস্যরাও একই কাজ করতে পারেন,” বলছিলেন ঘটনাস্থলে হাজির এক যুবক।
এই ঘটনার পর কংগ্রেসের রাজ্যসভার সংসদ সদস্য ইমরান প্রতাপগঢ়ি সামাজিক মাধ্যম এক্স-এ লেখেন, “নামাজ পড়ার সময় এক ব্যক্তিকে লাথি মারছিলেন দিল্লি পুলিশের যে সদস্য, তার সম্ভবত মানবিকতা নিয়ে কোনও ধারণাই নেই।
“নিজের মনে এ কোন ঘৃণা পুষে রেখেছেন তিনি! দিল্লি পুলিশকে অনুরোধ ওই পুলিশ কর্মীর বিরুদ্ধে উপযুক্ত ধারায় মামলা দায়ের করা হোক এবং তাঁর চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হোক,” লিখেছেন মি. প্রতাপগঢ়ি।
কংগ্রেস নেত্রী সুপ্রিয়া শ্রীনাতে তার এক্স হ্যান্ডেলে লিখেছেন, “অমিত শাহের দিল্লি পুলিশের একটি নীতিবাক্য রয়েছে শান্তি, সেবা, ন্যায়। পূর্ণ নিষ্ঠা সহকারে পালন করছে তারা।“
মিস্টার হক নামে এক সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারী কাওঁরিয়াদের (যারা কাঁধে করে হিন্দুদের ভগবানের মাথায় ঢালার জন্য পবিত্র জল বয়ে নিয়ে যায় পায়ে হেঁটে, মিছিল করে) ওপরে পুলিশ সদস্যদের ফুল বর্ষণের একটি ভিডিও পোস্ট করে লিখেছেন, “দুটো ভারত। দিল্লির ইন্দ্রলোকে নামাজিদের লাথি মারছে দিল্লি পুলিশ। আর রাস্তায় কাওঁরিয়াদের ফুল দিয়ে স্বাগত জানায় তারা।“
জিনেল অ্যান গালা নামে আরেকজন লিখেছেন, “দিল্লির রাস্তায় নির্লজ্জ কর্তৃত্ববাদ। দিল্লি পুলিশ এত অসংবেদনশীল কেন? মুসলমানদের সঙ্গে তারা যে আচরণ করে, তা কি অন্য ধর্মীয় গোষ্ঠীর মানুষদের সঙ্গে করবে?”
অশোক কুমার পাণ্ডে নমাজ পড়ার সময় ওই যুবককে লাথি মারার একটি ভিডিও পোস্ট করেছেন।
তিনি লিখেছেন, “আমি কিছুক্ষণের জন্য হতবাক হয়ে গিয়েছিলাম। এমন হীন আচরণ আশা করি নি। আমি ভাবছি যখন এই ভিডিওটি সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়বে তখন আমার দেশের কী ভাবমূর্তি তৈরি হবে। লজ্জাজনক, লজ্জাজনক।“
প্রকাশ্যে নামাজ পড়া নিয়ে আগেও বিতর্ক
বেশ কিছুদিন ধরেই রাস্তায় নামাজ পড়া নিয়ে বিতর্কের খবর পাওয়া যাচ্ছে।
দিল্লি লাগোয়া গুরুগ্রামে (আগেকার গুরগাঁও) রাস্তায় নামাজের বিরোধিতাকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে।
গত বছর প্রকাশ্যে নামাজ পড়া নিয়ে বিবাদের জেরে হরিয়ানার গুরুগ্রামে একটি মসজিদে হামলা চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হলে ২৬ বছর বয়সী এক ইমাম নিহত হন।
এরপর দক্ষিণ হরিয়ানায় শুরু হওয়া সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় পাঁচজনের মৃত্যু হয়।
ওই গুরুগ্রামেই খোলা জায়গায় নামাজ পড়া নিয়ে বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল ২০১৮ সালে। আলোচনার পর মুসলমান গোষ্ঠীগুলি খোলা জায়গায় নামাজ পড়ার স্থানের সংখ্যা ১০৮ থেকে কমিয়ে ৩৭-এ নামিয়ে আনতে সম্মত হয়।
রাজনৈতিক ইসলামের গবেষক হিলাল আহমেদ বিবিসিকে বলেন, “কিছু উগ্র গোষ্ঠী ধর্মীয় উন্মাদনা ছড়ানোর জন্য একটি নাগরিক সমস্যাকে ব্যবহার করছে। তারা নামাজিদের বলছে মসজিদে গিয়ে নামাজ আদায় করতে। তবে সমস্যাটা হচ্ছে পর্যাপ্ত মসজিদই তো নেই।“
তিনি বলেন, “গুরুগ্রামে মাত্র ১৩টি মসজিদ রয়েছে, যার মধ্যে মাত্র একটি রয়েছে শহরের নতুন গড়ে ওঠা এলাকায়। শহরের বেশিরভাগ অভিবাসী শ্রমিক ওখানেই বাস করে, সেখানেই তাদের কাজ।
ওয়াকফ বোর্ডের স্থানীয় সদস্য জামালউদ্দিন বলেন, “বোর্ডের বেশিরভাগ জমি শহরের উপকণ্ঠে যেখানে মুসলমানদের জনসংখ্যা খুব কম। ওইসব এলাকায় পর্যাপ্ত নামাজি না থাকায় ১৯টি মসজিদ বন্ধ করে দিতে হয়েছে।“
তাঁর মতে, গুরুগ্রামের ব্যয়বহুল এলাকায় জমি কেনার মতো পর্যাপ্ত টাকা বোর্ডের হাতে নেই।
তথ্যসূত্র: বিবিসি