গত আটাশে অক্টোবরে নয়াপল্টনের সমাবেশ পণ্ড হওয়ার পরদিন হরতাল পালন শেষে তিনদিনের সর্বাত্মক অবরোধের কর্মসূচি দিয়েছিলো বিএনপি।তিনদিনের অবরোধ কর্মসূচি শেষে আজ বৃহস্পতিবার আবার ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচি দেয়া হয়েছে যা রোববার সকাল ছয়টা থেকে শুরু হওয়ার কথা।
দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে নতুন করে এই অবরোধ কর্মসূচির ঘোষণা দিয়ে বলেছেন রোববার সকাল ছয়টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ছয়টা পর্যন্ত দেশজুড়ে এই কর্মসূচি পালন করবে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো।
একই সঙ্গে আটাশে অক্টোবরের মহাসমাবেশ থেকে এ পর্যন্ত সহিংসতায় নিহতদের স্মরণে শুক্রবার জুমার নামাজের পর সারাদেশ মসজিদগুলো দোয়া ও মোনাজাতের ঘোষণাও দিয়েছেন তিনি।
গত ২৮শে অক্টোবর মহাসমাবেশ এবং পরের দিন হরতালের পর গত মঙ্গলবার থেকে তিন দিনের সর্বাত্মক এই অবরোধের ডাক দেয় বিএনপি।
গত দুই দিনে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সংঘর্ষ, গাড়িতে আগুন দেয়া, হামলা এবং ভাংচুরের খবর পাওয়া যায়।
বুধবার অবরোধের দ্বিতীয় দিনে ঢাকা ও চট্টগ্রামে কয়েকটি বাস ও ট্রাকে আগুন দেয়া হয়। এদিন কর্মী মারা যাওয়ার ঘটনায় সিলেট বিভাগের চার জেলায় এবং কিশোরগঞ্জে অবরোধের পাশাপাশি হরতাল পালন করেছে বিএনপি।
বিএনপি তাদের দাবি আদায়ে আওয়ামী লীগ সরকারকে বাধ্য করতে সামনে ‘পরিস্থিতি বুঝে আরও শক্ত কর্মসূচি’র দিতে পারে।
দলটির নেতারা প্রথম দফায় তিন দিনের অবরোধ কর্মসূচি নিয়ে বেশ সন্তুষ্ট। কারণ তারা মনে করছেন ইউনিয়ন থেকে কেন্দ্রীয় পর্যায় পর্যন্ত নেতা ও সংগঠকদের ব্যাপক ধরপাকড় সত্ত্বেও সড়ক-মহাসড়ক কার্যত অচল ছিলো, এমনকি রাজধানী ঢাকাতেও রাস্তাঘাটে লোক চলাচল ছিলো ‘তুলনামূলকভাবে অনেক কম’।
অবরোধের মধ্যেই গত চব্বিশ ঘণ্টায় কেন্দ্রীয় নেতা জহির উদ্দিন স্বপন ও ঢাকা মহানগর সদস্য সচিব আমিনুল হকসহ অন্তত ২৭২ জনকে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আটক করেছে বলে তথ্য দিয়েছে বিএনপি।
নেতাদের ঘরবাড়িছাড়া করে কার সঙ্গে সংলাপ
২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশ ঘিরে বিএনপি নেতা–কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ শীর্ষ পর্যায়ের বেশ কয়েকজন নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে চূড়ান্ত আলোচনায় বসতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ওই আলোচনায় আমন্ত্রণ জানাতে ইসির একজন বার্তাবাহক আজ একটি চিঠি তালাবদ্ধ বিএনপি কার্যালয়ে রেখে এসেছেন।
নির্বাচন কমিশনের এই চিঠি পাঠানোর সমালোচনা করে রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘কিসের সংলাপ, কার জন্য সংলাপ? নির্বাচন কমিশন লোক দেখানোর জন্য এই তামাশা করছে। চিঠি দেবেন, মহাসচিব কারাগারে। সরকারের নির্দেশে এই তামাশা, ইয়ার্কি করা হচ্ছে।’
বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব বলেন, বিএনপির মহাসচিবসহ শীর্ষস্থানীয় নেতাদের ঘরবাড়িছাড়া করে কার সঙ্গে সংলাপ করতে চায় (ইসি), যেখানে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের কর্মচারী পর্যন্ত যেতে পারছে না। সবাই আতঙ্ক-শঙ্কার মধ্যে দিনাতিপাত করছেন। কেন্দ্রীয় কার্যালয়কে ‘ক্রাইম সিন’ করে ক্ষমতাসীনেরা বিএনপিকে একটি সন্ত্রাসী দল হিসেবে চিহ্নিত করতে চায় বলে অভিযোগ করেন তিনি।
এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর অতীত-বর্তমান বিভিন্ন বক্তব্য উল্লেখ করেন রিজভী । তিনি বলেন, ‘একটা লাশ পড়লে ১০ লাশ পড়বে, অতীতে এমন কথা তো তিনি বলেছেন। এখনো বলছেন, হাত ভেঙে দেব, পুড়িয়ে দেব—এগুলো কোনো ভদ্রলোকের ভাষা হতে পারে না।’
ইসির সমালোচনা করে রুহুল কবির রিজভী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে যে তালিকা দেওয়া হবে, তাঁকে বিজয়ী ঘোষণা করা ছাড়া তিনি (সিইসি) কিছুই করতে পারবেন না।
রিজভী বলেন, ‘এত নিপীড়ন, হত্যা, নির্যাতনের মুখেও বিএনপির নেতা-কর্মীরা সাহসিকতার সঙ্গে অস্ত্র ও গুলির মুখে কর্মসূচি পালন করছেন।’ ২৮ অক্টোবর ‘শান্তিপূর্ণ’ মহাসমাবেশে হামলা এবং ওই কর্মসূচি পণ্ড করার জন্য আবারও সরকারকে দায়ী করেন রিজভী।
তিনি বলেন, ‘অত্যন্ত ঠান্ডা মাথায় পরিকল্পনা করে মহাসমাবেশ পণ্ড করা হয়েছে। এমন পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে যে সরকারের প্রতিটি পদক্ষেপ প্রমাণ করে, এটা ছিল পূর্বপরিকল্পিত।
এখন দেশে–বিদেশের বিশেষজ্ঞরা সেটাই বলছেন। এমনকি জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনও বলছে, সরকারি দলের লোকেরা আক্রমণ করেছে। এই আক্রমণের হিংস্র রূপ দেশবাসী এবং বিশ্ব দেখেছে। ক্ষমতাসীনেরা এমন ভয়ংকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে।’