নেতিবাচক তথ্য এসেছে বর্তমান এমপি বা মন্ত্রী হলেও তাদের মনোনয়ন দেয়া হচ্ছে না।। জাতীয় পার্টি ‘যুক্তফ্রন্ট’ নির্বাচনে অংশ নেবার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা
রুহুল কুদ্দুস টিটো
আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১০টায় রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে এ সভা অনুষ্ঠিত হবে বলে প্রকশিত সংবাদে জানা যায়। ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের তেজগাঁওয়ের কার্যালয়ে এ সভা অনুষ্ঠিত হবে। সভায় সভাপতিত্ব করবেন মনোনয়ন বোর্ডের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এর আগে আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সংসদীয় দলের বৈঠকে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছিলন, যোগ্যতা দিয়ে এবার মনোনয়ন পেতে হবে। এই সংসদে যারা আছেন তাদের অনেকে মনোনয়ন নাও পেতে পারেন। তাতে কেউ দলীয় প্রার্থীর বিরোধিতা বা বিদ্রোহী কর্মকাণ্ড করবেন না। যারা করবেন তার রাজনীতি শেষ হয়ে যাবে। নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে, এটি নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। সবাইকে নিজ যোগ্যতায় জয়ী হয়ে আসতে হবে।
দলীয় মনোনয়ন চূড়ান্ত করতে আজ বৈঠকে বসছে আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ড। এই সভার মাধ্যমেই জাতীয় নির্বাচনের দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত হবে। জানাগেছে নানা দিক বিবেচনা করে এবার মনোনয়ন দেয়া হবে। বাদ পড়তে পারেন অনেক মন্ত্রী-এমপি। এ অবস্থায় দলীয় মনোনয়ন পাবেন কিনা এ নিয়ে অনেকে চিন্তায় রয়েছেন।
দলের বিভিন্ন সূত্র বলছেন কে কি করেছেন সব জানা আছে নেত্রীর। তাই জনপ্রিয়তা ও যোগ্যতা অনুযায়ী এবার মনোনয়ন দেয়া হবে। এদিকে দলীয় মনোনয়নপত্র বিতরণ শুরুর পর থেকে দলের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা ঢাকায় অবস্থান করছেন। প্রার্থী চূড়ান্ত হওয়ার পর তাদের অনেকে এলাকায় যাবেন। মনোনয়নপ্রত্যাশীরা এখন ভিড় করছেন কেন্দ্রীয় নেতাদের বাসা এবং কার্যালয়ে। মনোনয়ন বোর্ডে আছেন এমন নেতাদের কাছেও ভিড় করছেন তারা।
জোট- মহাজোটের জটিল সমীকরণের কারণে দলের অনেকের মনোনয়ন ঝুঁকিতে আছে। এ ছাড়া জরিপ রিপোর্টে যাদের বিষয়ে নেতিবাচক তথ্য এসেছে বর্তমান এমপি বা মন্ত্রী হলেও তাদের মনোনয়ন দেয়া হচ্ছে না দলীয় সূত্র বলছে ।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মনোনয়নে বেশকিছু চমক থাকবে। অনেক আসনে আসবে নতুন মুখ। প্রার্থী তালিকায় উল্লেখযোগ্যসংখ্যক সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব, সাবেক আমলা, সেনা ও পুলিশ কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী ও সাংবাদিকসহ বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের শীর্ষ ব্যক্তি স্থান পেতে পারেন।
নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে নির্বাচন বিমুখ দল ও নেতাদের উপর নানামুখী চাপ আসছে পত্র পত্রিকার সংবাদে প্রকাশিত হয়েছে। দল ও নেতাদের উপর নানামুখী চাপ আসছে তেমন দেয়া হচ্ছে নানা প্রস্তাব। কেউ কেউ এই প্রস্তুব লুফে নিচ্ছেন আবার কেউ কেউ প্রত্যাখ্যান করছেন।
যারা নির্বাচনে যাওয়ার প্রস্তাব ফিরিয়ে দিচ্ছেন তাদের বিরূপ পরিস্থিতির মুখে পড়তে হচ্ছে। চাপ এড়াতে আত্মগোপনে যাওয়া বা দেশ ছাড়ার ঘটনাও আছে। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আগামী ৩০শে নভেম্বর মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার শেষ দিন।
সংবাদ পত্রগুলি বলছে সামনের কয়েকদিনে দলগুলোকে নির্বাচনমুখী করতে আরও তৎপরতা দেখা যেতে পারে।
গতকাল জাতীয় পার্টি ও মেজর জেনারেল অব. সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিমের নেতৃত্বাধীন নতুন জোট ‘যুক্তফ্রন্ট’ নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। তফসিল ঘোষণার আগে থেকেই জাতীয় পার্টি নির্বাচনের পরিবেশ নেই এমন কথা বলে আসছিল। দলটির নেতারা এটাও বলেছেন, নির্বাচনে গেলে যেমন বিপদ হতে পারে না গেলেও বিপদ হবে।
জাতীয় পার্টি নির্বাচনে অংশ নেবার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছে
সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে জাতীয় পার্টি আসন্ন সাধারণ নির্বাচনে অংশ নেয়ার কথা ঘোষণা করেছে। কারণ হিসেবে তারা বলছে, নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে বলে বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদের কাছ থেকে আশ্বাস রয়েছে।
বাংলাদেশে আগামী ৭ই জানুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনে অংশ নেবার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছে জাতীয় পার্টি। বুধবার সন্ধ্যায় দলটির মহাসচিব মজিবুল চুন্নু এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এ ঘোষণা দেন। তিনি জানান, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের তাকে এই ঘোষণা দেবার জন্য বলেছেন।
“নির্বাচন কমিশনসহ সরকারের বিভিন্ন মহল থেকে বিভিন্নভাবে আমাদের আশ্বস্ত করা হয়েছে যে আগামী নির্বাচন ফ্রি এন্ড ফেয়ার হবে। সেখানে কোন রকম হস্তক্ষেপ করা হবে না। ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে এসে তাদের অধিকার প্রয়োগ করতে পারবে,” সংবাদ সম্মেলনে বলেন মি. চুন্নু।
“আমি নাম বলবো না, সংশ্লিষ্ট মহল আমাদের আশ্বস্ত করেছেন। তাদের প্রতিশ্রুতির প্রতি আমাদের বিশ্বাস হবার মতো অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।” জাতীয় পার্টি মহাসচিব বলেন, তারা কোন জোটের মাধ্যমে নির্বাচন করবেন না। জাতীয় পার্টি ৩০০ আসনে এককভাবে প্রার্থী দেবে।
এখনো পর্যন্ত দলটি প্রায় ১৪০০’র মতো মনোনয়ন ফর্ম বিক্রি করেছে জানিয়ে মি. চুন্নু সংবাদ সম্মেলনে বলেন, জাতীয় পার্টি কারো সাথে আসন সমঝোতার চিন্তা করবে না।
তিন দলের জোট ‘যুক্তফ্রন্ট’ বুধবার নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে
সর্বশেষ নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দেয়া কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম সরকার পতনের দাবিতে আন্দোলন করা ১২ দলীয় জোটের মুখপাত্র ছিলেন। হঠাৎ ওই জোট ছেড়ে নতুন জোট গঠন এবং নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে বেশ কৌতুহল দেখা দিয়েছে।
সরকার পতন চেয়ে আন্দোলনরত দলগুলোর অনেকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে বেশি আগ্রহী।
এত দিন বিএনপির সঙ্গে হরতাল-অবরোধ কর্মসূচিতে থাকা মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিমের কল্যাণ পার্টির নেতৃত্বে তিন দলের জোট ‘যুক্তফ্রন্ট’ বুধবার নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
আরো কয়েকটি দলকে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় যুক্ত করার চেষ্টা চলছে। আন্দোলনের এই পর্যায়ে সরকারবিরোধী হিসেবে পরিচিত দলগুলোর নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণায় রাজনৈতিক দৃশ্যপটে বেশ পরিবর্তন আসতে শুরু করেছে।
সমমনা দলগুলোর শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা জানান, রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বদল ও নির্বাচনে জিতে আসার সম্ভাবনা থাকায় তারা মত পাল্টেছেন। এত দিন ধরে ৩৬টি রাজনৈতিক দল নিয়ে যুগপৎ আন্দোলন করছিল বিএনপি।
এখন কয়েকজন রাজনৈতিক নেতা আন্দোলনের মাঠে অনুপস্থিত, কারো কারো হঠাত্ আড়াল হয়ে যাওয়ার বিষয়টিও নানা আলোচনার জন্ম দিচ্ছে।
বিএনপির সাবেক নেতাদের নিয়ে ‘সরকারের সহযোগিতা’য় গঠিত কিংস পার্টি
সরকার পতনের এক দফা দাবিতে চূড়ান্ত আন্দোলন করতে গিয়ে কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি রাজপথের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি।
এরিমধ্যে নাশকতার মামলায় দলের শীর্ষ নেতাসহ অনেকেই কারাগারে, কেউ আত্মগোপনে, আবার কেউবা নিশ্চুপ। কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঝুলছে তালা। গণগ্রেপ্তারের পাশাপাশি পুরোনো মামলায় গণহারে সাজা হয়েছে।হরতাল-অবরোধ কর্মসূচির ডাক দিয়ে আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দু ঢাকাতেই নেতাকর্মীরা বেশ ঢিলেঢালা মেজাজে আছেন।
দলের বেশ কয়েকজন বিক্ষুব্ধ নেতা, সাবেক সংসদ সদস্য ও সমমনা দলের কেউ কেউ নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। কেউ কেউ যোগ দিয়েছেন বিএনপির সাবেক নেতাদের নিয়ে ‘সরকারের সহযোগিতা’য় গঠিত কিংস পার্টি উপাধি পাওয়া সংগঠনে।
বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী গতকাল বলেছেন, কিংস পার্টিতে যোগ দিতে নেতাদের চাপ ও ভয় দেখানো হচ্ছে।
তৃণমূল বিএনপি নির্বাচন করতে পারেন
নির্বাচনে না আসার সিদ্ধান্তে অটল বিএনপি ও সমমনা দলগুলো আন্দোলন অব্যাহত রেখেছে। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন কি দশম সংসদের পথে হাঁটছে, এমন আলোচনাও চলছে।
নির্বাচন কমিশনে রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন পাওয়ার পর থেকে আলোচনায় তৃণমূল বিএনপি ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম)। দল দুটি নির্বাচনে ৩০০ আসনে প্রার্থী দিতে তৎপরতা চালাচ্ছেন।রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা আছে বিরোধী দলগুলোর পরিচিত নেতাদের কেউ কেউ এই দুই দলে যুক্ত হয়ে নির্বাচন করতে পারেন। গত ১০ই আগস্ট বিএনএম নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন পায়।
তথ্যসূত্র : বিবিসি নিউজ বাংলা, মানবজমিন, ইত্তেফাক,যুগান্তর