বিশ্বকাপ ফুটবল-২০২২
প্রসঙ্গ কথা
ফুটবল বিশ্বকাপের ৯২ বছরের ইতিহাসে এবারই প্রথমবারের মতো বছরের মাঝামাঝি সময়ের বদলে নভেম্বর-ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছেবিশ্বকাপ ফুটবল । ক্রীড়া জগতের সবচেয়ে জাঁকজমকপূর্ণ আসর নিয়ে ক্রীড়াপ্রেমীদের কৌতূহলেরও শেষ নেই।
এই প্রথম কোনো আরবদেশে বসতে যাচ্ছে ফুটবল বিশ্বকাপের আসর। বিশ্বকাপ মধ্যপ্রাচ্যের দেশে কাতারে প্রথম বিশ্বকাপ নিয়ে উন্মাদনা যেমন আছে, তেমনি আছে বিতর্কও, যে বিতর্ক শুরু হয়েছিল কাতার বিশ্বকাপের আয়োজক হওয়ার পর থেকেই। গত বছর গার্ডিয়ানের এক খবরে বলা হয়, কাতারে বিশ্বকাপের স্টেডিয়াম, মেট্রোরেল, রাস্তা ও হোটেল নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত সাড়ে ছয় হাজার শ্রমিক মারা গেছেন।
- এ ছাড়া নারীদের অধিকার ও সমলিঙ্গের সম্পর্কের বিষয়ে কাতারের অবস্থান নিয়েও প্রশ্ন অনেক দিনের। কাতার বিশ্বকাপের প্রতিটি স্টেডিয়ামেই শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে, যার প্রভাব পড়তে পারে জলবায়ু পরিবর্তনেও। এসব অভিযোগে কারণে কাতারে বিশ্বকাপ হওয়ায় অনেকেই প্রতিবাদ করেছেন। বিশ্বকাপ দোরগোড়ায় এলেও সেই আন্দোলন এখনো চলছে।
- বুন্দেসলিগায় গত অক্টোবরে বরুসিয়া ডর্টমুন্ড ও স্টুটগার্টের মধ্যকার ম্যাচে বড় প্ল্যাকার্ড হাতে হাজার হাজার দর্শক কাতার বিশ্বকাপকে বয়কট করার আহ্বান জানান। তাঁদের হাতে থাকা প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল ‘বয়কট কাতার ২০২২’। এই ক্যাম্পেইনের উদ্যোক্তা স্টেভান শিমার—তিনি নিজে খেলেন জার্মানির একটি অপেশাদার লিগে।
- কাতার বিশ্বকাপ শুধু যে ফুটবল সম্প্রদায়ের প্রতিবাদের মুখে পড়েছে, তা নয়, গত অক্টোবরে জার্মানির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ন্যানসি ফাইসির কাতারে বিশ্বকাপ আয়োজনের প্রতিবাদ জানান।
ফিফা মাঠের বাইরের বিতর্ক ভুলে সবাইকে ফুটবলে মনোযোগ দেওয়ার কথা বলেছিল। এমনকি ফরাসি কিংবদন্তি জিনেদিন জিদান ফিফার সুরেই কথা বলেছেন। তাতে কিছুটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলতে চাইলেও পারছে না কাতার। কারণ, এরই মধ্যে ইংল্যান্ডের কোচ গ্যারেথ সাউথগেট জানিয়ে দিয়েছেন, ফিফার কথায় তাঁরা চুপ থাকবেন না। মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে তাঁরা কথা বলবেন।
দ্বিতীয়বারের মতো এশিয়া মহাদেশে বসতে যাচ্ছে ফুটবলের এই বিশ্ব আসর। ২০ বছর আগে জাপান -কোরিয়ার যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয়েছিলো ফুটবল বিশ্বকাপ।বিশ্বকাপের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো শীতকালে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে এই মেগা ইভেন্ট। সাধারণত মে – জুলাই মাসের মধ্যে আয়োজন করা হয় বিশ্বকাপ। কিন্তু সেইসময় কাতারে অস্বাভাবিক তাপমাত্রা থাকায় তা নভেম্বর ডিসেম্বর মাসে সরিয়ে আনা হয়।
- জনসংখ্যা এবং আয়তন দুইদিক থেকেই এখন পর্যন্ত কাতার সবচেয়ে ছোট আয়োজক দেশ হিসেবে রেকর্ড করেছে।ফুটবল বিশ্বকাপের ইতিহাসে সবচেয়ে ব্যয়বহুল হতে যাচ্ছে এবারের সংস্করণটি। আয়োজক কর্তৃপক্ষ প্রায় ২২০ বিলিয়ন ইউএস ডলার খরচ করেছে এই বিশ্বকাপ আয়োজন করার জন্যে।এই বিশ্বকাপে রেকর্ড কমসংখ্যক ভেন্যুতে খেলা হবে (৮টি)। এই ৮ টি মাঠে মোট ৬৫ টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে।
- তার আগে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক ভেন্যুতে খেলা হয়েছিল ২০০২ সালের কোরিয়া – জাপান বিশ্বকাপে (২০ টি)
- কাতার বিশ্বকাপের ৮ টি ভেন্যু ৬০ কিলোমিটারের মধ্যে অবস্থিত। যেখানে দর্শকদের এক মাঠ থেকে আরেক মাঠে যেতে লাগবে গড়ে ৯০ মিনিটের মতো!
- এবারের সংস্করণটি সবচেয়ে কমদিনের মধ্যে সম্পূর্ন হবে। মাত্র ২৮ দিনে শেষ হয়ে যাবে বিশ্বকাপের এই জাকজমকপূর্ন মেগা ইভেন্ট।
- বিশ্বকাপকে কেন্দ্র করে রেকর্ড দেড় মিলিয়ন মানুষ কাতারে সশরীরে উপস্থিত থাকবে।
- কাতার এক মাত্র আয়োজক দেশ যারা এর আগে কখনোই ফুটবল বিশ্বকাপের মূল পর্বে উঠতে পারেনি!
- এবারের বিশ্বকাপের মাস্কটের নাম La’eeb এবং বলের নাম Al Rihla
- কাতারের দুই ভেন্যু Al – Bayt এবং Al-Wakrah এর মধ্যে দূরত্ব মাত্র ৯০ মাইলের
- এবারের আসরে প্রতিটি স্টেডিয়ামে রয়েছে এয়ার কন্ডিশনের ব্যবস্থা যা এর আগে কখনো দেখা যায়নি কোনো ফুটবল আসরের।
- বিশ্বকাপের আটটি মাঠের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ধারণক্ষমতা সম্পন্ন মাঠ হচ্ছে লুসাইল স্টেডিয়াম (৮০,০০০)
বিশ্বকাপ চলাকালীন কাতারে শীতকাল থাকবে। তবে গ্রীষ্মকালে এ দেশটিতে দিনের বেলা তাপমাত্রা থাকে গড়ে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর নভেম্বরের মাঝামাঝিতে কাতারে দিনেরবেলা তাপমাত্রা থাকবে গড়ে সর্বোচ্চ ২৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর ডিসেম্বরে তাপমাত্রা আরও নিচে নেমে আসে।
ফুটবলের সবচেয়ে বড় আয়োজনকে কেন্দ্র করে এক মিলিয়ন ভক্ত দোহায় থাকবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে, এবং প্রতিবেশী দেশগুলোতেও সাময়িক আশ্রয় নেবেন অনেকে। হুট করেই এই বিপুল জনসংখ্যার চাপ সামলানো আয়োজকদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। গত মাসে কাতার কর্তৃপক্ষ সাধারণ মানুষের বুক করে রাখা হাজার হাজার হোটেল কক্ষ খালি করতে শুরু করে। অক্টোবরে কাতার সরকারের এক মুখপাত্র জানিয়েছিলেন, টুর্নামেন্ট উপলক্ষে ১৩০,০০০ কক্ষ ভক্তদের জন্য থাকছে এবং ১১৭,০০০ কক্ষ এখন সহজলভ্য।
তবে হোটেল ঘর না পেলেও, সাময়িক তাঁবু টানিয়ে বা ঘর বানিয়েও থাকা যেতে পারে। সেই সাথে দুটি জাহাজে থাকবে ৪০০০ কেবিনের ব্যবস্থা, সেখানেও চাইলে থাকতে পারবেন কাতারে আগত সমর্থকরা।
পোশাকের ক্ষেত্রে কিছু নিয়ম
জনসম্মুখে নারী-পুরুষ সবারই হাঁটু ঢাকা পোশাক পরতে হবে। শপিং মল, পার্ক, রাস্তায় বা বিভিন্ন অফিসে এই ড্রেস কোড না মেনে গেলে ঢুকতে দেওয়া হবে না। তবে অত্যন্ত বিলাসবহুল হোটেলগুলোতে এ নিয়মের ব্যত্যয় দেখা যায় এবং সেখানে সাঁতারের পোশাক পরে পুলে নামলেও কেউ প্রশ্ন তুলতে পারে না।
কাতারে থাকা ব্যায়
এই প্রতিবেদন লেখার মুহূর্তে এক মার্কিন ডলার সমান ৩.৬৪ কাতারি রিয়াল। মুদ্রাস্ফীতির কারণে সারা বিশ্বই যেখানে এলোমেলো, সেখানে দ্রব্যমূল্যের দাম বৃদ্ধিও স্বাভাবিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিগ ম্যাক ইনডেক্স অনুযায়ী, কাতারে একটি বিগ ম্যাকের দাম ৩ দশমিক ৫৭ ডলার, অর্থাৎ ব্রিটেন, যুক্তরাষ্ট্র বা ইউরোপের অন্যান্য অঞ্চল থেকে সস্তা। কাতারের শহরগুলোতে সর্বত্রই মুদ্রা ভাঙিয়ে নেওয়ার এক্সচেঞ্জ শপ রয়েছে, তবে ক্রেডিট কার্ড ও ডেবিট কার্ড ব্যবহার করাই সেখানে সহজ উপায়। -সূত্র: দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট