আ. স. ম. আবদুর রব বাংলাদশের জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) এর নেতা।
আলাপচারিতা
আ. স. ম. আবদুর রব তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম সংগঠক। তৎকালীন ডাকসুর ভিপি, আ স ম আবদুর রব এর নেতৃত্বে ১৯৭১ সালের ২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হাজার হাজার ছাত্র জনতার মাঝে প্রথম স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন।
ছবি: বিবিসি বাংলাথেকে সংগৃহীত
বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত যে পতাকা সেই পতাকা সর্ব প্রথম উত্তোলন করেন আ স ম আবদুর রব।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহাসিক বটতলায় শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে বাংলাদেশের পতাকা তুলে দেন। ১৯৭১ সালের ৩ মার্চ তিনি পল্টন ময়দানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে “জাতির জনক” উপাধি প্রদান করেন।
তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম সংগঠক। ছাত্রলীগ নেতা নূরে আলম সিদ্দিকী, আব্দুল কুদ্দুস মাখন, এ এস এম আবদুর রব ও শাজাহান সিরাজের নেতৃত্বে ১৯৭১ সালের ২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়। স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা প্রথম উদ্বোধন করেন আ স ম আবদুর রব। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহাসিক বটতলায় শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে বাংলাদেশের পতাকা তুলে দেন আ স ম আবদুর রব এবং শেখ মুজিবুর রহমান কে বঙ্গবন্ধু নামে ভূষিত করে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর রব বামপন্থী জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) গঠন করেন। তিনি সিরাজুল আলম খান ও শাজাহান সিরাজের সাথে শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। তিনি ১৭ মার্চ ১৯৭৪ তারিখে রমনায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাসভবনের দিকে জাতীয় রক্ষী বাহিনীর নেতৃত্বে জনতার উপর গুলি চালানোর মধ্যে সমাবেশের নেতৃত্ব দেন। রব ১৯৭৪ সালের রমনা হত্যাকাণ্ডের একজন জীবিত ব্যক্তি।
বাংলাদেশে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের শাসনামলে সামরিক আদালতে সাজাপ্রাপ্ত রাজনীতিক আ স ম আব্দুর রবকে চিকিৎসার জন্য জার্মানি পাঠানো হয়েছিল।
সে সময় মি: রব অবিভক্ত জাসদের অন্যতম একজন নেতা ছিলেন। এখন তিনি জেএসডি সভাপতি।
রবের সাজা ছিল যে মামলায়
১৯৭৫ সালের ১৫ই অগাষ্ট বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার ঘটনার পর নভেম্বর মাসে সেনাবাহিনীতে অভ্যুত্থান পাল্টা-অভ্যুত্থান চলে।
তখন জাসদের তৎপরতায় একটি অভ্যুত্থান হয় ৭ই নভেম্বর। কিন্তু সেই অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতার কেন্দ্রে চলে আসেন মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান।
জেনারেল রহমান ক্ষমতা নেয়ার পর ১৯৭৬ সালের জুলাই মাসে সামরিক আদালতে বিচারের মুখোমুখি করা হয়েছিল কর্নেল আবু তাহের সহ জাসদের ১৭জন নেতাকে।
এই অভিযুক্তদের মধ্যে একজন ছিলেন আ স ম আব্দুর রব।
তাদের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীতে অভ্যুত্থান এবং সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনা হয়েছিল। এরপর ১৯৭৬ এর জুলাই মাসেই সামরিক আদালতের বিচারে কর্নেল তাহেরকে ফাঁসি দেয়া হয়েছিল।
আর আ স ম আব্দুর রবের দশ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং জাসদের অন্য নেতাদের বিভিন্ন মেয়াদে জেল হয়েছিল।
সামরিক আদালতের রায় অনুযায়ী আ স ম আব্দুর রব জেল খাটছিলেন। তিনি কারাগারে ছিলেন ১৯৭৫ সালের নভেম্বর মাসে জিয়াউর রহমান ক্ষমতা নেয়ার পর থেকেই।
সাজা মওকুফ না করেই বিদেশ
জেল খাটার সময় ১৯৭৯ সালের এপ্রিল মাসে আ স ম আব্দুর রব অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে তখন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দেয়া হয়।
মি: রব জানিয়েছেন, একপর্যায়ে তার অসুস্থতা গুরুতর হয়, তখন ব্রেইন টিউমার হয়েছে, এমন আশংকা করা হয়েছিল।
তিনি বলেছেন, ‘অবস্থা গুরুতর হলে আমার সাজা মওকুফ না করেই আমাকে ১৯৭৯ সালের পহেলা মে চিকিৎসার জন্য তৎকালীন পশ্চিম জার্মানিতে পাঠানো হয়। তখন জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় ছিলেন।”
“বিদেশে পাঠানোর আগে আমি আমার দাদির কবর জিয়ারত করতে চেয়েছিলাম। তখন কড়া পুলিশী পাহারায় হেলিকপ্টারে করে আমাকে আমার এলাকা লক্ষীপুরের রামগতিতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে আমি দাদির কবর জিয়ারত করার পর আবার আমাকে একই হেলিকপ্টারে করে ঢাকায় এনে ৭৯ এর পহেলা মে তারিখেই পশ্চিম জার্মানি পাঠানো হয়” বলেন আ স ম আব্দুর রব।
তিনি আরও বলেছেন, তার পাসপোর্ট তখন সরকার জরুরি ভিত্তিতে তৈরি করে দিয়েছিল।
তাকে বিদেশে পাহারা দেয়ার জন্য একজন পুলিশ কর্মকর্তাকেও পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু পশ্চিম জার্মানির হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মি: রবের সাথে কোনো পুলিশ সদস্যকে থাকতে দিতে রাজি হয় নি। তখন জিয়া সরকার সেই পুলিশ কর্মকর্তাকে ফেরত এনেছিল।
আ স ম আব্দুর রব আরও জানিয়েছেন, পশ্চিম জার্মানিতে চিকিৎসাধীন থেকেও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড করলে ছয় মাস পর বাংলাদেশ সরকার তার চিকিৎসা খরচ বন্ধ করে দিয়ে তাকে ফেরত আনার চেষ্টা করে।
কিন্তু তিনি ফেরত না এসে জার্মানি প্রবাসী বাংলাদেশি ও জাসদের নেতা কর্মীদের অর্থ সহায়তায় চিকিৎসা শেষ করেন এবং এক বছর পর ১৯৮০ সালের পহেলা মে ঢাকায় ফেরেন।
মি: রব বলেছেন, সাজা মাথায় নিয়ে তাকে পশ্চিম জার্মানি যেতে হয়েছিল।
তবে তিনি ফেরত আসার কিছুদিন আগে তার সাথে আরও কয়েকজন জাসদ নেতার সাজা মওকুফ করেছিল জিয়া সরকার।
১৯৭৫ সালের নভেম্বরে অভ্যুত্থানে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জড়িত থাকার কারণে রাষ্ট্রপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম, এম. এ. জলিল ও রবকে ক্ষমতা গ্রহণের পর মুক্তি দেন।
আ স ম আব্দুর রব ১৯৮৮ সালে বিরোধী দলের নেতা হন এবং ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত শেখ হাসিনার মন্ত্রিসভায় নৌপরিবহন মন্ত্রী এবং পরে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
আ স ম আব্দুর রব ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে তিনি লক্ষ্মীপুর-৪ (রামগতি-কমলনগর) আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ঐ নির্বাচনের পর জাসদ আওয়ামী লীগকে সমর্থন দেয়। ফলশ্রুতিতে তিনি আওয়ামী লীগ সরকারের নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হন।
আ. স. ম. আবদুর রব বাংলাদশের জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) এর নেতা। ১৯৭২ সালের ৩১ অক্টোবর জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল ১৯৭২ সালে ৩১ অক্টোবর আ.স.ম. আব্দুর রব ও শাজাহান সিরাজের উদ্যোগে জাসদ গঠিত হয়। ২৩ ডিসেম্বর দলের প্রথম জাতীয় সম্মেলনে মেজর জলিল সভাপতি, আ.স.ম. আব্দুর রব সাধারণ সম্পাদক এবং শাজাহান সিরাজ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, সহ-সভাপতি হাসানুল হক ইনু নির্বাচিত হন। জাসদের জন্ম হয়েছিল সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার প্রত্যয় নিয়ে, বিপ্লবী পথে। তিনি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম নেতা।
তথ্য সূত্র: বিবিসি বাংলা, উইকিপিডিয়া