পিঠে বা পিঠা বাংলার নিজস্ব আদিম আভিজাত্যপূর্ণ খাদ্যদ্রব্য
এপার বাংলায় ওপার বাংলায় পশ্চিমবঙ্গে শীতের আগমণীতে পিঠে পার্বনকে ঘিরে দারুণ উত্সব আমেজ তৈরী হয় ঘরে ঘরে।
আলাপচারিতা Ruhul Quddus Tito
পিঠা চালের গুঁড়ো, আটা, ময়দা, অথবা অন্য কোনও শস্যজাত গুঁড়ো দিয়ে তৈরি করা হয়। অঞ্চলভেদে পিঠের ভিন্ন ভিন্ন বৈচিত্র্য দেখা যায়। গ্রামাঞ্চলে সাধারণত নতুন ধান তোলার পর থেকেই পিঠা তৈরির আয়োজন করা হয়।
বাঙালীর লোক ইতিহাস-ঐতিহ্যে পিঠা-পুলি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে বহুকাল ধরে। এটি লোকজ ও নান্দনিক সংস্কৃতিরই বহিঃপ্রকাশ। সাধারণতঃ পিঠা শীতকালের রসনাজাতীয় খাবার হিসেবে অত্যন্ত পরিচিত। মুখরোচক খাদ্য হিসেবে বাঙালী সমাজে বিশেষ আদরণীয়। এছাড়াও, আত্মীয়-স্বজন ও মানুষে-মানুষের পারস্পরিক সম্পর্কের বন্ধনকে আরো দৃঢ় ও মজবুত করে তুলতে পিঠা-পুলি আয়োজনের উৎসব সবিশেষ ভূমিকা পালন করে।
পৌষ পার্বণে পিঠা খেতে বসি খুশীতে বিষম খেয়ে
আরও উল্লাস বাড়িয়াছে মনে মায়ের বকুনি পেয়ে।
শীতকালে বাংলাদেশে পিঠা-পুলি খাওয়ার ধুম পড়ে যায়। আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা সবার প্রিয় খাবার এ পিঠা। পিঠার আবার বিভিন্ন রকম স্বাদ থাকে। কোন পিঠা মিষ্টি, কোনটিবা ঝাল আবার কোন কোন পিঠা টকও হয়ে থাকে।
শুধুমাত্র শীতেই নয়, সারাবছর পিঠা খাবার সুযোগ রয়েছে। শহুরে ব্যস্ত জীবনে পিঠা তৈরী করা বেশ কষ্টসাধ্য ব্যাপার। তাই, বেশ কিছু জায়গায় গড়ে উঠেছে পিঠাঘর। সেখানে পিঠা বিক্রী করা হয়। সাধারণতঃ অধিকাংশ পিঠাই সংখ্যা বা পিস হিসেবে বিক্রী হয়। এছাড়াও, খাবার ব্যবস্থাও রয়েছে খাদ্যরশিকদের জন্য। পাশাপাশি গায়ে-হলুদ, জন্মদিন, বিয়ে-শাদীসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে পিঠা সরবরাহেরও ব্যবস্থা করে থাকে পিঠাঘরগুলো।
অতিপরিচিত ভাপা পিঠা
বাংলাদেশ ও ভারতের একটি ঐতিহ্যবাহী পিঠা যা প্রধানত শীত মৌসুমে প্রস্তুত ও খাওয়া হয়। এটি প্রধানত চালের গুঁড়া দিয়ে জলীয় বাষ্পের আঁচে তৈরী করা হয়। মিষ্টি করার জন্য দেয়া হয় গুড়। স্বাদ বৃদ্ধির জন্য নারকেলের শাঁস দেয়া হয়।ঐতিহ্যগতভাবে এটি একটি গ্রামীণ নাশতা হলেও বিংশ শতকের শেষভাগে প্রধানত শহরে আসা গ্রামীণ মানুষদের খাদ্য হিসাবে এটি শহরে বহুল প্রচলিত হয়েছে। রাস্তাঘাটে এমনকী রেস্তোরাঁতে আজকাল ভাপা পিঠা পাওয়া যায়। এই পিঠা অনেক অঞ্চলে ধুপি নামেও পরিচিত।
শরীয়তপুরের বিখ্যাত বিবিখানা পিঠা
এ পিঠা মূলত তালের জ্বাল দেয়া ঘন রস দিয়ে তৈরি হয়। চালের গুড়া, ময়দা, গুঁড়াদুধ, ঘন তরল দুধ, চিনি, তেল, ডিম, এলাচগুঁড়া এর প্রধান উপাদান। চালের গুঁড়া, ময়দা, গুঁড়াদুধ, এলাচগুঁড়া একসঙ্গে মিশিয়ে তাতে ডিম ফাটিয়ে মিশ্রণ তৈরি করা হয়। এ মিশ্রণে আবার দুধ, চিনি, তেল দিয়ে সেগুলো মিশিয়ে নিতে হয়। এ মিশ্রণে চিনির রস গলে গেলে তাতে তালের রস মেশানো হয়। এ পিঠা অত্যন্ত সুস্বাদু।
খেজুর রসের জনপ্রিয় চিতই পিঠা
শীতকালের একটি জনপ্রিয় পিঠা। শীতকালে খুব ভোরে খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করা হয়ে থাকে। এর মাঝে দুধ, চিনি বা, গুড়ের সঙ্গে চিতই পিঠা ভিজিয়ে রেখে এ পিঠা তৈরি করা হয়।
চিতই পিঠার উৎপত্তিস্থল হিসেবে বাংলাদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গ উভয় স্থানেরই নাম শোনা যায়। এ পিঠা আকৃতিতে গোলাকার এবং চ্যাপ্টা। এ পিঠা সারা দেশে প্রিয় পিঠা।চিতই পিঠাচালের গুঁড়া, লবণ আর পানির মিশ্রণ তৈরি করতে হয়। মাটির খোলা চুলায় দিয়ে গরম করে নিতে হয়। খোলায় কিছু তেল মাখিয়ে নিতে হবে। এ এক চামচ তরল মিশ্রণ নিয়ে খোলায় ঢেলে দিয়ে ঢাকনা দিয়ে ঢেকে দিতে হয়। ঢাকনার উপড় খুব সামান্য পানির ছিটা দিতে হয়। ৪ থেকে ৫ মিনিট অপেক্ষা করে পিঠা তুলে ফেলতে হয়।চিতই পিঠা গুড় বা, খেজুরের রস দিয়ে খেতে বেশ মজা।
ঢাকাবাসীর পিঠার চাহিদা মেটাতে রাস্তার মোড়ে, অলিগলিতে, বাসস্ট্যান্ডে বসে ছোট ছোট পিঠার দোকান। দোকানগুলোতে নানান রকম শীতের পিঠা বিক্রয় করা হয়। যেখানে বেশি চোখে পড়ে চিতই আর ভাপা। নানা পেশার লোকজনের ভিড় দেখা যায় এ দোকানগুলো ঘিরে। আর এভাবেই শহরবাসী শীতের পিঠার আস্বাদন গ্রহণ করে।
শহরগুলোতে পিঠার জনপ্রিয়তা বেড়েই চলেছে। শহুরে জীবনের কর্মব্যস্ততার মধ্যে একটুখানি নিজের দেশের ঐতিহ্যের কাছাকাছি বা ফ্যামিলির সদস্যদের সাথে কিছু সময় একসাথে কাটানোই এর মূল কারণ। এসব কারণেই শহরেও বর্তমানে বিভিন্ন পিঠা উৎসব, পিঠার মেলার আয়োজনগুলোয় মানুষজনও ছুটে যায় দেশের ঐতিহ্যের টানে।
নানা রকমের পিঠা এলাকা ভেদে বিভিন্ন নামের পিঠা
|
|
|
|
|
এরকম অসংখ্য নামের পিঠার দেশ আমাদের এ বাংলাদেশ।