ঢাকায় অবস্থানরত বিদেশি কূটনীতিকদের কাছে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি তুলে ধরে বিএনপি জানিয়েছে, বর্তমান পরিস্থিতি সুষ্ঠু নির্বাচনের অনুকূলে নেই।
বিবিসি বাংলায় প্রকাশিত সংবাদ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে
বুধবার বিকালে ঢাকার একটি হোটেলে ২৫টি দেশের কূটনীতিকদের সঙ্গে প্রায় এক ঘণ্টা ধরে বৈঠক করেছে বিএনপির নেতারা। সেখানে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ জ্যেষ্ঠ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
এই বৈঠককে তারা ‘ব্রিফিং’ বলে উল্লেখ করেছেন।
বিএনপির নেতারা বলেছেন, দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি কূটনীতিকদের জানাতে তারা এখন থেকে নিয়মিত এই ‘ব্রিফিং’ করবেন।
বুধবারের বৈঠকে বিদেশি দূতাবাসগুলোর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জার্মানি, জাপান, ডেনমার্ক, ইরান, চীন, রাশিয়াসহ বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরা অংশ নিয়েছেন। তাদের কাছে বক্তব্য তুলে ধরেন মি. আলমগীর।
বৈঠক শেষে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও বৈদেশিক সম্পর্ক বিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, ‘’বর্তমান রাজনৈতিক ঘটনাবলী কী ঘটছে, ২৯ তারিখে আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচীতে সরকার ও সরকারি দলের অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের যে যৌথ কর্মকাণ্ড, মিথ্যা মামলা, গ্রেপ্তার- এই বিষয়গুলো আমরা তাদের বলেছি।”
” বাংলাদেশে যারা গণতন্ত্র দেখতে চায়, গণতান্ত্রিক অর্ডার দেখতে চায়, মানবাধিকার দেখতে চায়, একটা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচীতে পুলিশ, আনসার বাহিনী, র্যাব যেভাবে আক্রমণ করেছে, এটা তাদের জানা দরকার।‘’
মি. চৌধুরী বলেন, ‘’আমরা কূটনীতিকদের বলেছি, জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে সরকার ভীতি সৃষ্টি করতেই ২৯শে জুলাই সহিংস আক্রমণ করেছে। যাদের আক্রমণ করেছে, তাদের বিরুদ্ধে উল্টো মামলা করা হয়েছে, এমনকি অনেকে হজে আছে, মৃত ব্যক্তির নামেও মামলা হয়েছে।‘’
তিনি বলেন, যত ঘটনা ঘটবে, আমরা আপনাদের কাছে তুলে ধরব, সকলকে বলব।
‘’কারণ ওরা জানতে চায় কী হচ্ছে বাংলাদেশে? নির্বাচনকে সামনে রেখে বাংলাদেশ যে পথে চলছে…২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচন আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়। সেই প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে। বিচার বিভাগকে ব্যবহার করা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবহার করা, সরকারি কর্মকর্তাদের ব্যবহার করা, প্রতিনিয়ত হচ্ছে,’’ বলেন আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
এসব শোনার পর বিদেশি কূটনীতিকরা কী বলেছেন, জানতে চাওয়া হলে মি. চৌধুরী বলেন, ‘’আমরা তাদের সার্বিক পরিস্থিতি জানিয়েছি। উনাদের তো বলার বিষয় নয়।‘’
বৈঠকে অংশ নেয়া বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন, গত শুক্রবার ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশ ঘিরে নানারকম তল্লাশি, পরদিন শনিবার ঢাকার প্রবেশ মুখে অবস্থান কর্মসূচীতে পুলিশ ও সরকারি দলের হামলা, গুলিবর্ষণ, টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ, মামলা ও গ্রেপ্তারের বিষয়ে কূটনীতিকদের বিস্তারিত জানানো হয়েছে।
সেখানে বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, নির্বাচন নিয়ে বিএনপির অবস্থান ও পর্যবেক্ষণও তুলে ধরা হয়।
এর আগেও বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক এবং দূতাবাসের কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক করেছেন বিএনপির নেতারা। সেখানেও তাদের অভিযোগ ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়েছে।
বাংলাদেশের নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে, পশ্চিমা দেশগুলোর তরফ থেকে কূটনৈতিক তৎপরতাও অনেক বেড়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের পক্ষ থেকে একাধিক প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফর করেছে।
অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বাংলাদেশকে একাধিকবার বার্তা দেয়ার পাশাপাশি নির্বাচনে বাধা দানকারীদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা জারি করার নীতিমালাও ঘোষণা করা হয়েছে।
সূত্র. বিবিসি বাংলা