কনফেশন পেজ: যেখানে মানুষ তার জীবনের সবচেয়ে গোপন বিষয়গুলো অনলাইনে শেয়ার করে
অনেকেই মনে করেন, ইন্টারনেট হচ্ছে এমন একটা জায়গা যেথানে মানুষ নিজেদের ঝাড়মোছ করে খুব পরিষ্কার-পূতপবিত্র একটা ভাবমূর্তি তুলে ধরে। নিজেদের জীবনের গোপন অনেক দিককে লুকিয়ে রাখতেই পছন্দ করেন তারা। কিন্তু ইন্টারনেটে এমন জা্য়গাও আছে যা এর একেবারে বিপরীত। এগুলোকে বলা হচ্ছে ‘কনফেশন পেজ।’ সেখানে মানুষ এসে তাদের সবচেয়ে গভীরে লুকিয়ে রাখা গোপন বিষয়গুলো শেয়ার করছেন। কিন্তু আপনার কি এরকম কোন প্ল্যাটফর্মে যোগ দেবার সাহস হবে?
নিজের মনকে ভারমুক্ত করার স্বস্তি আর কোনকিছুতে পাওয়া যায় না।কিন্তু এমন অনেক গোপন কথা আছে – যা অন্যকে বলা যায় না।
মনের গভীরতম অন্ধকারে লুকানো যেসব অনুভূতি বা ঘটনা – তা অনেকেই ভয়, লজ্জা বা ‘লোকে আমার সম্পর্কে কী ভাববে’ এই ভেবে কারো কাছে প্রকাশ করতে পারেন না।
কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা বলছেন, এভাবে কথা গোপন রাখা আসলে “অবসন্নতা, সামাজিক বিচ্ছিন্নতা এবং ভালো থাকার অনুভূতি কমিয়ে দিতে ভুমিকা রাখে।”
তাহলে কীভাবে আমরা আমাদের নিজেদের বা অন্যদের ক্ষতি না করে আমাদের গোপন কথাগুলো খুলে বলতে পারি?
ঠিক এ প্রশ্নের জবাব নিয়েই হাজির হয়েছে সামাজিক মাধ্যম এবং বেনামী ‘কনফেশন পেজ’ বা স্বীকারোক্তিমূলক ফেসবুক পাতার।
‘একটি নিরাপদ জায়গা’
শত শত বছর ধরে মানুষ স্বীকারোক্তি দেবার জন্য ধর্মগুরুদের কাছে গিয়েছে।
সাম্প্রতিক দশকগুলোতে পশ্চিমা দেশগুলোয় রেডিওতে অনেক ফোন-ইন হয়- যাতে মানুষ তাদের পরিচয় গোপন রেখে গোপন কথা মন খুলে বলতে পারে।
উনিশশ’ আশির দশকে যুক্তরাষ্ট্রের একজন শিল্পী একটি ‘অ্যাপোলজি লাইন’ চালু করেছিলেন – যা চলেছিল ১৫ বছর ধরে।
তাতে নিউ ইয়র্কের বাসিন্দারা একটা ফোনের অ্যানসারিং মেশিনে বার্তা রেখে যেতে পারতেন।
এর লক্ষ্য ছিল, কেউ যদি অন্য কোন লোকের সাথে কোন অন্যায় করে থাকেন বা কারো কোন ক্ষতি করে থাকেন – তাহলে তিনি যেন নিজেকে বিপদে না ফেলে ক্ষমা চাইতে পারেন।
সেই রেকর্ডকৃত বার্তাগুলো এখন একটা জনপ্রিয় রেডিও অনুষ্ঠানে শেয়ার করা হচ্ছে -যাতে বোঝা যায় যে অন্যদের স্বীকারোক্তি শোনার ব্যাপারে মানুষের আগ্রহ আছে।
এখন এমন যুগ এসেছে – যখন মানুষ ইনস্টাগ্রাম অ্যাকা্উন্টে খুব যত্ন করে তাদের ঝাড়মোছ করা নিখুঁত ভাবমূর্তি তুলে ধরেন।
কিন্তু এই ইন্টারনেটেই এমন একটি বিরল জায়গা আছে যেখানে মানুষ অকপটে তাদের সত্যিকারের চেহারা তুলে ধরেন -অবশ্য নিজেদের পরিচয় গোপন রেখে।
এগুলোকেই বলা হচ্ছে অনলাইনে ‘স্বীকারোক্তির পাতা’ বা ‘কনফেশন পেজ’ – যেগুলোতে ব্যবহারকারীরা তাদের নাম উহ্য রেখে তাদের গোপন কথা শেয়ার করতে পারেন।
এক সময় এধরনের কনটেন্টের জায়গা ছিল বিভিন্ন অনলাইন ফোরাম এবং চ্যাটরুম। এর পর বিভিন্ন অ্যাপেও এ ধরনের কন্টেন্ট দেথখা যেতে শুরু করে।
কিন্তু এখন এর জায়গা দথল করে নিচ্ছে সামাজিক মাধ্যমের কনফেশন পেজগুলো। এগুলো হচ্ছে সামাজিক মাধ্যমের বিভিন্ন অ্যাকাউন্ট – যা রীতিমত মডারেট করা হয়।
এতে সবরকম স্বীকারোক্তিই থাকে, যেমন থাকে মজার গল্প, তেমনি মন-খারাপ করা গল্পও থাকে। বিশেষ করে স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক কমিউনিটিগুলোর মধ্যে এর দীর্ঘ ইতিহাস আছে।
পাকিস্তানের ইসলামাদের বাস করেন মনোবিজ্ঞানী জাহরা কামাল আলম। তিনি বলছেন, “এভাবে মানুষ যদি অনলাইনে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারে – তাহলে তাদের মধ্যে নাম-পরিচয় গোপন রেখে তাদের কাহিনি শেয়ার করতে পারে, অন্য যাদের একই রকম অভিজ্ঞতা হয়েছে তাদের কাছ থেকে শিক্ষা নিতে পারে, এবং অনুভব করতে পারে যে এমনটা কারো জীবনে হতেই পারে।”
“বিশেষ করে যেসব বিষয়কে ‘ট্যাবু’ বা ‘সামাজিকভাবে নিষিদ্ধ প্রসঙ্গ’ বলা হয় – সেগুলো নিয়ে খোলাখুলি কথা বলার সুযোগ পাওয়ার অনেক উপকার রয়েছে। যেমন যৌনতা, যৌন নির্যাতন বা সহিংসতার মত বিষয়।”
তিনি বলছেন, মানসিক সমস্যার চিকিৎসার সময় রোগীরা ডাক্তারের সাথে যখন খোলাখুলি কথা বলেন সেটাও তাকে সারিয়ে তুলতে সহায়তা করে। কাজেই এতে অবাক হবার কিছু নেই যে মানুষ তাদের গোপন কথা শেয়ার করতে ইন্টারনেটের দ্বারস্থ হচ্ছে।
টুইটারে একটি জনপ্রিয় স্বীকারোক্তিমূলক পেজের কর্ণধার হচ্ছেন রব ম্যানুয়েল। পেজটির নাম ফেসহোল(Fesshole)।
এই ফেসহোলে একজন বেনামে লিখেছেন, “আমার মায়ের দ্বিতীয় স্বামী মারা গেছেন গত বছর। তো আমি তার জিনিসপত্র পরিষ্কার করতে করতে তার পাসওয়ার্ডগুলো পেয়ে গেলাম। তার পরে দেখলাম যে তিনি অনলাইনে একটা প্রেম করছিলেন। আমি আমার মাকে ব্যাপারটা কখনো বলিনি।”
ম্যানুয়েল বলছেন, “ইন্টারনেটের প্রথম যুগে আপনি একটা ফোরামে ঢুকে আপনার মনে যা আসে তাই বলতে পারতেন, তাতে আপনার কিছুই হতো না।”
“আপনার পরিবারের কেউ বা আপনার বস এটা পড়তো না। সুতরাং এটা ছিল এমন একটা জায়গা যেখানে আপনি আপনার মনকে ভারমুক্ত করতে পারতেন। তার পর কোন একদিন আপনি হয়তো বেফাঁস কিছু বলে ফেললেন, অমনি সবকিছু এক নিমিষে ভেঙে পড়লো।”
“সামাজিক মাধ্যম হচ্ছে এমন একটা জায়গা যেখানে আপনি হাজার হাজার গুরুত্বহীন “লাইক”ও পেতে পারেন, কিন্তু যদি ভুল করেন তাহলে হারাতে পারেন আপনার চাকরিটিও।”
ফেসহোল যাত্রা শুরু করেছিল আড়াই বছর আগে, আর এখন তার ফলোয়ারের সংখ্যা ৩২৫,০০০। প্রতিদিন রবের কাছে শত শত স্বীকারোক্তি আসে, এর মধ্যে থেকে মাত্র ১৬টি তিনি তার পেজে শেয়ার করেন।
“আমি একজন সম্পাদকের মত কাজ করছি” – বলেন রব ম্যানুয়েল “আমি এমন কিছু শেয়ার করিনা যা স্পষ্টতঃই মিথ্যা অথবা যা সম্মতির ভিত্তিতে ঘটেনি।”
“কিছু জিনিস আসে যা খুবই গুরুতর – কিন্তু আমি সেগুলো প্রকাশ করে তাতে উৎসাহ দিতে চাই না।”
ফেসহোলের স্বীকারোক্তিকারীদের মধ্যে আছেন একজন শিক্ষক যিনি তার ফেসমাস্ক পরা ছাত্রছাত্রীদের গালি দেন। আরেক জন আছেন যিনি ক্রসওয়ার্ড মেলানোর জন্য কাল্পনিক শব্দ বানান।
রব বলছেন, তিনি তার পাতাটি মজার হোক এটাই চান, কিন্তু কিছু আবেগপূর্ণ গল্পও তাতে থাকে – যাতে তার একাউন্টটির আওতা বড় হয়।
লজ্জা আর সংস্কারকে মোকাবিলা
সিক্রেট কীপার্স নামে একটি পেজ আছে যা ইনস্টাগ্রাম-ভিত্তিক। তাদের মূল ঝোঁক খুবই তীব্ররকমের ব্যক্তিগত স্বীকারোক্তির দিকে।
এটি পরিচালনা করে যে গ্রুপটি – তার একাংশ যুক্তরাজ্যভিত্তিক। এর একজন সদস্য হলেন অলিভিয়া পেটার।
“আমরা এমন এক দুনিয়ায় বাস করি যেখানে খুব বেশি ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে বন্ধু ও পরিবারের সাথে কথা বলা খুব কঠিন। আপনি হয়তো কিছু বিষয়ে স্পর্শকাতর কিন্তু তা প্রকাশ করতে চান না। সেক্ষেত্রে যখন আপনি নাম প্রকাশ না করে এবং অনলাইনে তা বলেন, তখন আপনি অপেক্ষাকৃত নিরাপদ বোধ করবেন।”
“এ কারণেই মানুষ থেরাপিস্টের কাছে যায়, কারণ তাদেরকে এমন কিছু বলা যায় যা আপনি বন্ধুদের কাছেও বলতে পারবেন না।”
এই পেজে একজন নারী স্বীকার করেছেন যে তিনি তার ছেলেবন্ধুকে ভালোবাসেন কিন্তু তার মতে তাদের যৌনজীবন অত্যন্ত খারাপ।
আরেক নারী লিখেছেন, তিনি যে সন্তানের মা হয়েছেন সেজন্য তিনি দুঃখিত।
সিক্রেট কীপার্সে একটি ‘ওপেন ফোরাম’ আছে যেখানে সেই পেজে শেয়ার করা স্বীকারোক্তিগুলো নিয়ে আলোচনা এবং সহমর্মিতা প্রকাশের সুযোগ আছে।
অলিভিয়া বলছেন, “গোপন কথা অন্যদের সাথে শেয়ার করলে মানুষের একাকীত্ববোধ কমে, যারা বিচ্ছিন্ন তারা অন্যদের সাথে নিজেকে বেশি যুক্ত মনে করে।”
তিনি বলছেন তাদের এই পেজটি যে মানুষের মধ্যে সাড়া ফেলেছে এবং তাদের জন্য সহায়ক হচ্ছে তাতে তারা খুবই আনন্দিত।
“আমরা আশা করি, মানুষের মনে নানা বিষয়ে যেসব বদ্ধমূল বিরূপ ধারণা আছে – সিক্রেট কীপার্স তা মোকাবিলায় ভুমিকা রাখতে পারে। এটা তুলে ধরতে পারে যে লোকের মনের এসব অনুভূতির পেছনে কারণ আছে।”
সাইবার বুলিইং
তবে এসব কনফেশন প্ল্যাটফর্মের খারাপ দিকও আছে – যদি তা নিয়ন্ত্রণে রাখা না হয়।
নাম-পরিচয় গোপন রাখার ফলে যেমন খোলাখুলি আলোচনা উৎসাহিত হয়, তেমনি এটি সেইসব লোককেও আড়াল করে রাখে যারা হঠকারী এবং নিষ্ঠুর মন্তব্য করে থাকেন।
সারাহা নামে একটি অ্যাপের বিরুদ্ধে ২০১৮ সালে অভিযোগ ওঠে যে তারা বুলিইংএর সহায়ক হচ্ছে। এর পর গুগল এবং এ্যাপল স্টোর থেকে এটিকে সরিয়ে দেয়া হয়েছিল।
সারাহা শব্দটি আরবি, যার অর্থ সততা। এটি তৈরি করা হয়েছিল প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের জন্য যাতে তাদের সহকর্মীদের সম্পর্কে খোলাখুলি প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়। কিন্তু পরে এটি সাইবার বুলিইংএর জন্য ব্যবহৃত হতে থাকে।
অপব্যবহার বন্ধ করতে না পারায় হুইসপার, সিক্রেট এবং আস্ক ডট এফএম নামের অ্যাপগুলোও গত কয়েক বছরে বন্ধ হয়ে গেছে।
জেহরা বলছিলেন, অনিয়ন্ত্রিত থাকলে অনলাইন ফোরামগুলো অপব্যবহারের শিকার হতে পারে, এবং উপকারের চাইতে ক্ষতির কারণ হতে পারে।
“মানুষ এর ফলে বিভ্রান্ত হতে পারে, ভুল বার্তা পেতে পারে, মানসিক স্বাস্থ্য-সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জ কীভাবে মোকাবিলা করতে হয় তা নিয়ে দ্বিধায় পড়ে যেতে পারে।”
বিশ্বব্যাপি ছড়াচ্ছে কনফেশন পেজ
কিন্তু তার পরও স্বীকারোক্তিমূলক পেজগেুলো একটা বৈশ্বিক ব্যাপার হয়ে উঠছে, এগুলোর সংখ্যাও ক্রমাগত বাড়ছে।
ফেসবুকে সারা বিশ্বব্যাপি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ ক্যাম্পাসে কনফেশন অ্যাকাউন্ট আছে – যেগুলো মডারেট করা হয়।
হংকং-এ রয়েছে ইনস্টাগ্রাম ভিত্তিক ‘স্টিকি রাইস লাভ’ বা ‘কাপল মার্মার’ নামে অ্যকাউন্ট। এগুলোতে স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে ফলোয়ারদের যৌনতা ও সম্পর্ক বিষয়ে পরামর্শ দেয়া হয়।
পাকিস্তানে রয়েছে ‘গম আওয়ার’ নামে টুইটার ট্রেন্ড। এখানে মাঝরাতের পর ব্যবহারকারীরা টুইট করে খোলাখুলি তাদের আবেগপূর্ণ ভাবনা জানাতে পারেন। এটা সবসময় যে নাম গোপন রেখে করা হয় তাও নয়।
দক্ষিণ কোরিয়ায় এ ধরনের ওয়েবসাইটগুলোকে বলা হয় ‘বাঁশঝাড়’ – যে নামটি দেয়া হয়েছে এক প্রাচীন রুপকথা থেকে। গল্পটি ছিল ছিল এইরকম।
এক লোক দেশের রাজা সম্পর্কে একটি গোপন কথা জানতো। কিন্তু সে তা চেপে রাখতে না পেরে জঙ্গলে এসে চিৎকার করে তা বলতো। তখন থেকে যখনই জোরে বাতাস বইতো তখনই সেই জঙ্গল সেই গোপন কথাটি বলতে থাকতো।
স্বীকারোক্তির উপকারিতা
অনেক লোকের জন্যই তাদের লুকানো গোপন কথা নাম-পরিচয় গোপন রেখে অনলাইনে খোলাখুলি বলতে পারাটা চিকিৎসার মত কাজ করে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার যে ‘মেন্টাল হেলথ গ্যাপ কর্মসূচি’ আছে তাদের মতে, নিম্ন আয়ের দেশগুলোর ৭৫ শতাংশ মানুষই নানা ধরনের মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় ভোগেন এবং তাদের মানসিক স্বাস্থ্য চিকিৎসক পাবার সুবিথা নেই।
জেহরা বলছেন, এর ফলে চিকিৎসার ক্ষেত্রে বিরাট ফাঁক রয়ে গেছে। তার মতে মানসিক চিকিৎসা নিয়ে নানা ভ্রান্ত ধারণা এর একটা কারণ।
অন্যদিকে – তিনি বলছেন, শহুরে এবং সচ্ছল পরিবারগুলোর মধ্যে মানসিক স্বাস্থ্য সেবার পাবার ক্ষেত্রে উর্ধমুখী প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।
জেহরা তার নিজের পেশাদার মানসিক স্বাস্থ্য সেবা দেবার অভিজ্ঞতা থেকে বলছেন, অনলাইনে স্বীকারোক্তিমূলক পেজে নিজের গোপনীয় কথা শেয়ার করার জন্য ‘নিরাপদ স্পেস’ সৃষ্টি করাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
“গোপন বিষয়ে কথা বলতে পারা একরকম নিরাময় দিতে পারে ঠিকই কিন্তা এটা কোন কোন সময় নেতিবাচক আবেগও জাগিয়ে তুলতে পারে।”
ফ্রান্সে “ব্যালাঁস তা পিউর” নামে একটি ইনস্টাগ্রাম অ্যকাউন্ট চালান সাইকোথেরাপিস্ট অ্যানজেলো ফোলি।
তিনি বলছেন, যারা নাম গোপন করে অনলাইনে স্বীকারোক্তি দেন তারা তো এতে লাভবান হনই, কিন্তু যারা এগুলো পড়েন তাদেরও উপকার হয়।
“অন্য লোকের স্বীকারোক্তি পড়াটা উপন্যাস পড়ার মতোই। আমরা সেখানে নিজেদেরকে স্থাপন করি, নিজেকে চিনতে পারি, অন্যের গল্প থেকে আমার নিজের মনোজাগতিক এবং আবেগগত প্রক্রিয়াগুলো জাগ্রত হয়ে ওঠে।”
অ্যানজেলোর অ্যকাউন্টটির ফলোয়ারের সংখ্যা ৭০ হাজার। সেখানে যারা তাদের সবচেয়ে গোপন ভয়ের কথা লেখেন তারা আশা করেন এতে তাদের একাকীত্ববোধ কমবে।
“মানুষের মধ্যে অন্যের সম্পর্কে, অন্যের জীবনে কি ঘটছে তা দেখার যে অনিঃশেষ কৌতুহল, তা এভাবে তৃপ্ত হয়ে থাকে। এটা মানুষের একটা মৌলিক তাড়না। আমার মধ্যে আরেকজনের ভালোটা নাকি খারাপটা আছে – তা আমরা সবসময় জানতে চাই।”
তিনি আরো বলছেন, অজ্ঞাতনামা থাকার এই সুবিধা মানুষের মধ্যে একটা সুরক্ষার বিভ্রম তৈরি করে। “আমরা মনে করি অনলাইনে অন্যরা আমার বিচার করতে পারবে না, আমার প্রিয়জনরা আমার গোপন জগতের কথা জেনে ফেলতে পারবে না।”
অ্যানজেলো নিজেই প্রথম তার অ্যকাউন্টে তার লুকানো ভয়ের কথা প্রকাশ করেছিলেন। তিনি মনে করেন, তিনি নিজে সাইকোথেরাপিস্ট বলে অনলাইনে একটি নিরাপদ স্পে তৈরির দক্ষতা তার আছে।
তার কথায়, আমাদের সবার মধ্যেই জীবনের নানা দিক নিয়ে ভয় কাজ করে।
“কিন্তু এটা নিয়ে নিজেদের ভাবনা প্রকাশ করার একটা জায়গা আগে ছিল না। আমি ইনস্টাগ্রামকে এমন একটা জায়গা তৈরি করতে সাহায্য করেছি – যেখানে মানুষকে একটা নিখুঁত এবং মিথ্যে জীবন তুলে ধরতে হয় না।”
তথ্যসূত্র: বিবিসি বাংলা, প্রতিবেদক হ্যারিয়েট ওরেল বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিস