বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল কুদ্দুস মাখন ছিলেন মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ।। চার খলিফার মধ্য তিনি একজন।। ইতিহাসের পাতা থেকে
রুহুল কুদ্দুস টিটো
আবদুল কুদ্দুস মাখন ১৯৭১ সালের স্বাধীন বাংলা কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের চার সদস্যের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি।
বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল কুদ্দুস মাখন ছিলেন মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, সাবেক সংসদ সদস্য, স্বাধীন বাংলা কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতা ও ডাকসুর সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং রাজনীতিবিদ। দেশে সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ আন্দোলনে তিনি অগ্রণী ভূমিকা রেখেছিলেন। ১৯৬৬ সালে শেখ মুজিবুর রহমানের ছয় দফা আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছিলেন তিনি। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পূর্বাঞ্চলীয় সেক্টরের অধীনে তিনি মুজিব বাহিনীর অন্যতম সংগঠক ছিলেন।
তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া কলেজ থেকে উচ্চ-মাধ্যমিক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন। ১৯৬৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগে অনার্স ক্লাশে ভর্তি হন। ১৯৬৯ সালে এমএ পাশ করে আইনবিভাগে ভর্তি হন। ১৯৬৬-৬৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হল ছাত্রসংসদের সহসাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৬৮-৬৯ সালে ফজলুল হক হল ছাত্রসংসদের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ছাত্রনেতা হিসাবে ৬৯’র গণঅভ্যুত্থানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।১৯৭০ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র ইউনিয়নের (ডাকসু) সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন।
১৯৭১ সালের ১ মার্চ, তিনি নূরে আলম সিদ্দিকী, আ.স.ম আবদুর রব ও শাহজাহান সিরাজ প্রমুখ ছাত্রনেতাদের পাশাপাশি স্বাধীন বাংলা ছাত্রসংগ্রাম পরিষদ গঠনে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছিলেন। ১৯৭১ সালের ২ মার্চ, স্বাধীনতা যুদ্ধের পূর্বমুহূর্তে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের অন্যান্য নেতা সহকারে আবদুল কুদ্দুস মাখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবন চত্বরে স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলন করেন। পরদিন ৩ মার্চ তিনি তাঁর সহকর্মীসহ শেখ মুজিবুর রহমানকে জাতির জনক ঘোষণা দেন।মুক্তিযুদ্ধে পূর্বাঞ্চলীয় এলাকায় দায়িত্ব পালন করেন। পূর্বাঞ্চলীয় লিবারেশন কাউন্সিলের ছাত্র প্রতিনিধি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন।
আবদুল কুদ্দুস মাখন ১৯৪৭ সালের ১ জুলাই ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার পুনিয়াউটে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মোহাম্মদ আবদুল আলী। মাতা আমেনা খাতুন। সাত ভাই দুই বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন তৃতীয়। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন এই বীর মুক্তিযোদ্ধা।
আবদুল কুদ্দুস মাখন ছিলেন ছাত্রনেতা এবং রাজনীতিক। সত্তরের দশকের শুরুতে দেশে সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ আন্দোলনে তিনি অগ্রণী ভূমিকা রেখেছিলেন। ১৯৬৬ সালে শেখ মুজিবুর রহমানের ছয় দফা আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছিলেন তিনি। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পূর্বাঞ্চলীয় সেক্টরের অধীনে তিনি মুজিব বাহিনীর অন্যতম সংগঠক ছিলেন। মাখন ১৯৭৩ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা থেকে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
১৯৭২ সালে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্বপালন কালে শেখ মুজিবুর রহমানকে ডাকসুর আজীবন সদস্যপদ প্রদান করা হয়। ভারতের কলকাতায় ভারত বাংলাদেশ মৈত্রী মেলায় বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন। ১৯৭৩ সালে ছাত্রনেতা হিসেবে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভ্রমণ করেন। ১৯৭৩ সালের প্রথম সাধারণ নির্বাচনে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া-নবীনগর নির্বাচনী এলাকা থেকে। ১৯৭৪ সালে বার্লিনে আন্তর্জাতিক বিশ্ব যুব উৎসবে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন।
স্বাধীনতা যুদ্ধেও আব্দুল কুদ্দুস মাখনের ছিল অসামান্য অবদান। তিনি ছিলেন পূর্বাঞ্চলীয় লিবারেশন কাউন্সিলের ছাত্র বিষয়ক প্রতিনিধি। সকল মুক্তিযোদ্ধাদের রিক্রুমেন্ট, ট্রেনিং ও অস্ত্র সরবরাহের দায়িত্ব ছিলো তাঁর কাছে। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে সুসংগঠিত করার কাজে কলকাতায় অনুষ্ঠিত ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী মেলায় বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক ও তাঁর পরিবারকে হত্যার পর যে রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হয়েছিল তাতে গা ভাসাননি আব্দুল কুদ্দুস মাখন। ১৯৭৫সালের ২৩ আগষ্ট রাতে তাকে গ্রেফতার করা হয়। সামরিক আইনে সাজাও হয়েছিল তার। ১৯৭৮ সালের ১২ নভেম্বর তিনি জেল থেকে মুক্তি পান।
আবদুল কুদ্দুস মাখন আওয়ামী রাজনীতিতে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। মৃত্যুর আগে তিনি আওয়ামীলীগের জাতীয় পরিষদের সদস্যও ছিলেন। আজীবন সংগ্রামী এই নেতা ১৯৯০ সালে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
ছবি: মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে মাখনের কবর
১৯৯৪ সালে ১০ ফেব্রুয়ারি হেপাটাইটিস বি ভাইরাসজনিত জন্ডিসরোগে আক্রান্ত হয়ে লিভার সিরোসিসে আমেরিকার ফ্লোরিডায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।
তথ্য সূত্র: উইকিপিডিয়া