ভারতে হিন্দুধর্ম ও হিন্দুত্ববাদ
ভারতে ইদানীং হিন্দুধর্ম ও হিন্দুত্ববাদ নিয়ে জোর বিতর্ক চলছে। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতায় আসার পর তার দল বিজেপি তথা সংঘ পরিবারের মূল দর্শন হিন্দুত্ববাদ প্রতিষ্ঠার প্রয়াস নিয়ে দেশজুড়ে তুলকালাম অবস্থা সৃষ্টি হয়। গোমাংস খাওয়া বা খেয়েছে বলে সন্দেহ করা নিয়ে মানুষ এমনকি শিশুদের পর্যন্ত হত্যা করা হয়েছে। ছাত্ররা নিগৃহীত হয়েছে। সামাজিক ন্যায়বিচারের পক্ষে কাজ করতে এবং কুসংস্কার দূর করতে গিয়ে বুদ্ধিজীবী ও যুক্তিবাদীরা হত্যার শিকার হয়েছে। এতে হিন্দুধর্ম সম্পর্কে একটা বিরূপ ধারণা ভিন্ন ধর্মের মানুষের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে হিন্দুধর্ম এবং সংঘ পরিবার প্রচারিত হিন্দুত্ববাদের মধ্যে পার্থক্য আছে। হিন্দুধর্ম এক সনাতন ধর্ম।
এটি ভারত ও নেপালের প্রধান ধর্ম। এ ছাড়া ইন্দোনেশিয়া, কম্বোডিয়া, শ্রীলঙ্কা, ফিলিপিন্স, দক্ষিণ আফ্রিকা, বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আরও কিছু স্থানের মানুষও হিন্দুধর্ম চর্চা করে থাকে। সারা পৃথিবীতে হিন্দুর সংখ্যা ১২৫ কোটি কি তারও বেশি। ওদিকে হিন্দুত্ববাদ শব্দটির উৎপত্তি হিন্দু থেকে হলেও হিন্দুধর্ম ও হিন্দুত্ববাদের মধ্যে মৌলিক ও ব্যবহারিক পার্থক্য রয়ে গেছে। কোন কোন ক্ষেত্রে ধারণা, প্রয়োগ ও পরিণতির দিক দিয়ে হিন্দুধর্ম ও হিন্দুত্ববাদ একে অপরের বিরোধী। হিন্দুধর্মের উৎপত্তি আড়াই হাজার বছরেরও আগের। এই সনাতন ধর্ম অন্তর্নিহিত অর্থ, ব্যঞ্জনা ও গুরুত্বের দিক দিয়ে আর দশটি ধর্মের মতোই একটি ধর্ম।
হিন্দুধর্মের মূল কথা পরমেশ্বরের সঙ্গে মিলিত হওয়ার একটা পদক্ষেপ হিসেবে আত্মার বিশুদ্ধতা অর্জন এবং সেটা ভক্তি, জ্ঞান ও কর্ম বা সৎ কাজের দ্বারা অর্জিত হতে পারে। হিন্দুধর্মে বিশ্বাস করতে হলে বেদ, পুরাণ, শাস্ত্র ও শ্লোকে বিশ্বাস করতে হয়।
তাই বলে ধর্মীয় আচার মানা না মানার ব্যাপারে কঠোর বাধ্যবাধকতা নেই। কেউ হয়ত পূজা করে না, মন্দিরে যায় না, এমনকি সে যদি নাস্তিকও হয়, তার পরও তার হিন্দুত্ব খারিজ হয়ে যায় না। এর জাতিভেদ প্রথা তথা জাতপাতের অভিশপ্ত ব্যাপারটা ছাড়া ক্ষতিকর দিক তেমন নেই। অন্যদিকে হিন্দুত্ববাদ কথাটা প্রথম প্রয়োগ করেন হিন্দু জাতীয়তাবাদী নেতা ও হিন্দু স্বার্থের প্রবক্তা বিনায়ক দামোদার সাভারকার। ১৯২৩ সালে তার এই সংক্রান্ত একটি পুস্তিকা বের হয়Ñ ‘হিন্দুত্ব : কে হিন্দু?’ তার ব্যাখ্যা মতে হিন্দুত্ববাদ একটা মতাদর্শ, যা হিন্দু মূল্যবোধের আলোকে ভারতীয় সংস্কৃতির সঙ্গে অবিচ্ছিন্নভাবে যুক্ত।
‘হিন্দুত্ববাদ’ শব্দটা ভারতের সর্ববৃহৎ হিন্দু জাতীয়তাবাদী জোট ‘সংঘ পরিবার’ ও এর অঙ্গ সংগঠনগুলো জনপ্রিয় করে তুলেছে। সংঘ পরিবার হিন্দুত্ববাদ শব্দটা ব্যাপক অর্থে বুঝিয়ে ব্যবহার করে থাকে, যার মধ্যে দেশজভাবে ভারতীয় এমন সবকিছুই অন্তর্গত এবং প্রাচীন ভারতের ভৌগোলিক সীমান্তের বাইরে থেকে আগত অন্যান্য ধর্ম ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে আর যা কিছু আমদানি হয়েছে ধর্মসহ, সে সবকিছুই পরিত্যাজ্য। হিন্দুধর্ম একটা ধর্মীয় বিশ্বাসমাত্র। এটি একটি জীবনধারা এবং অরাজনৈতিক। অর্থাৎ রাজনীতির সঙ্গে এর কোন সম্পৃক্ততা নেই। অন্যদিকে হিন্দুত্ববাদ শব্দের অর্থ, ব্যঞ্জনা ও গুরুত্ব অধিকতর রাজনৈতিক। ‘সংঘ পরিবারের’ মতো গোঁড়া হিন্দু রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক ছত্রছায়ায় সংগঠনগুলো হিন্দুত্ববাদকে অতি শক্তিশালী রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। অসংখ্য অঙ্গ সংগঠনের মাধ্যমে এই সংঘ পরিবার এমন এক রাজনৈতিক ও সামাজিক ব্যবস্থা কায়েম করতে চায় যেখানে হিন্দুদের একাধিপত্য থাকবে।
হিন্দুধর্ম অন্যান্য ধর্মের প্রতি সহনশীল। অন্যদিকে যে হিন্দু নয় বা হিন্দুদের আধিপত্য মেনে নেয় না, তার কোন স্থান হিন্দুত্ববাদে নেই। হিন্দুধর্ম চরিত্রগতভাবে গণতান্ত্রিক এবং এমন এক বহুদলীয় ও বৈচিত্র্যময় সমাজের সমার্থক, যা অন্যান্য গোষ্ঠীর মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। অন্যদিকে হিন্দুত্ববাদ মনোলিথিক সমাজে বিশ্বাসী, যেখানে হিন্দু ধর্মীয় রীতিনীতি, আচার, প্রথা ও ঐতিহ্যের বাইরে অন্য কিছু থাকবে না। ভারতীয় জনগণের প্রায় ৮২ শতাংশ হিন্দুধর্মের অনুসারী। তবে তারা সবাই হিন্দুত্ব মতবাদের সমর্থক নয়। জনগোষ্ঠীর ক্ষুদ্র এক অংশই মাত্র হিন্দুত্ববাদের সমর্থক। হিন্দুধর্মের অনেক শাখা-প্রশাখা এবং অনেক সনাতনী ধর্মীয় আচার আছে। এই ধর্মের বিভিন্ন জাত-পাতের লোকেরা বিভিন্ন দেবদেবীর পূজা আর্চনা করে। সব ধরনের দেবদেবীই হিন্দুধর্মে পূজিত। অন্যদিকে হিন্দুত্ববাদ এই বৈচিত্র্যে বিশ্বাসী হলেও রামচন্দ্রকেই হিন্দুত্বের আইকন হিসেবে তুলে ধরে।
হিন্দুধর্ম এক অরাজনৈতিক জীবনধারা। এর কোন সংগঠন নেই, কাঠামো নেই, প্রাতিষ্ঠানিক গঠনতন্ত্র নেই। অন্যদিকে, হিন্দুত্ববাদ ধর্মীয় ও রাজনৈতিক বিশ্বাসের এক জটিল মিশ্রণ থেকে সৃষ্ট একটি রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় জাতীয়তাবাদী মতবাদ। এটা ধর্মও নয়, আবার জীবনধারাও নয়।
এটা এক সাম্প্রতিক ও আগ্রাসী রাজনৈতিক দর্শন যার, মধ্যে জিঙ্গোইজম বা উগ্র স্বদেশপ্রেম, উৎকট জাতীয়তাবাদ ও ধর্মীয় সত্তা জটিলভাবে মিশে আছে। হিন্দুত্ববাদ জাতীয়তাবাদকে একটা নির্দিষ্ট ধর্মীয় বিশ্বাস ও আনুগত্যের সঙ্গে মিশিয়ে ফেলে এবং ধর্মনিরপেক্ষতার বিরুদ্ধে দাঁড়ায়। হিন্দুধর্ম সহিষ্ণু, হিন্দুত্ব অসহিষ্ণু। হিন্দুত্ববাদ ভারতজুড়ে বিভেদ ও ভীতির আগুন জ্বালিয়ে দিচ্ছে। হিন্দুধর্ম অন্যমত মেনে নেয় এবং নিজেকে অন্যমতের সঙ্গে মিশিয়ে ফেলে। হিন্দুত্ববাদ বিচ্ছিন্ন ও বিভাজন করে। হিন্দুধর্মে অহিংস নীতি পরম ধর্ম। হিন্দুত্ববাদ জঙ্গী ও চরমপন্থী।
হিন্দুধর্ম অরাজনৈতিক, হিন্দুত্ববাদ রাজনৈতিক। হিন্দুধর্ম ব্যক্তিগত বিশ্বাসের ব্যাপার, হিন্দুত্ববাদ গোষ্ঠী স্বার্থভিত্তিক। হিন্দুধর্ম মৌলবাদী নয়; হিন্দুত্ববাদ মৌলবাদী। কংগ্রেস দলীয় এমপি শশী থারুর সম্প্রতি একটি বই লিখেছেন- ‘হোয়াই আই এ্যাম এ হিন্দু।’ তাতে তিনি বলেছেন, হিন্দুধর্ম নিজেকে একমাত্র সত্য বা প্রকৃত ধর্ম বলে দাবি করে না। হিন্দুধর্ম জোর দিয়ে বলে যে বিশ্বাসের সমস্ত পথই সমান বৈধ। থারুরের মতে, অন্যদিকে সংঘ পরিবারের বিশ্বাস হিন্দুত্ব এই ধারণার ওপর প্রতিষ্ঠিত যে ভারত প্রাচীনকাল থেকেই হিন্দুদের ভূমি। তার পরিচয় ও সত্তা একে অপরের সঙ্গে অবিচ্ছেদ্যভাবে যুক্ত।
হিন্দু সংস্কৃতি ও সভ্যতা স্মরণাতীতকাল থেকে ভারতীয় জীবনের সারবস্তু। তাই সংঘে পরিবারের দাবি অনুযায়ী ভারতীয় জাতীয়তাবাদ আসলে হিন্দু জাতীয়তাবাদ। ভারতের ইতিহাস এই প্রাচীন ভূমির মালিক ও রক্ষক হিন্দুদের ধর্ম ও সংস্কৃতিকে বৈরী বিদেশী হানাদারদের আঘাত থেকে রক্ষা করার সংগ্রামের ইতিহাস। সংঘ পরিবার আরও বলে যে ভারতে অহিন্দুরাও আছে, তবে তারা হানাদার। ভারতের প্রতি তাদের আনুগত্যের ওপর নির্ভর করে তাদের সহ্য করা যেতে পারে, তবে হিন্দুদের শ্রেষ্ঠত্ব মেনে নিয়ে হিন্দু ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি গ্রহণ না করলে তাদের হিন্দুদের সমান বলে গণ্য করা যেতে পারে না।
সোজা কথায় তাদের হিন্দুধর্ম গ্রহণ করতে হবে। সংঘ পরিবার বলে যে, যেসব রাজনৈতিক শক্তি এই বক্তব্য মানে না বরং তাদের এই মতাদর্শের বিরোধী, তারা জাতি-বিরোধী। জাতির সংখ্যাগরিষ্ঠের স্বার্থ দেখার চাইতে নির্বাচনে সংখ্যালঘুদের ভোটে জেতার স্বার্থবাদী আগ্রহ দ্বারা তারা চালিত। সে কারণে হিন্দু ঐক্য ও সংহতি অপরিহার্য বলে সংঘ পরিবার মনে করে। বিশ্বাস করে যে, হিন্দুরা আর সবার বিরুদ্ধে। থারুরের মতে, সংঘ পরিবারের এই মতবাদের দ্বারা হিন্দু ধর্মের প্রকৃত বাস্তবতা অস্বীকার করা হয়। হিন্দু ধর্মের অসাধারণ শক্তি হলো, একটিমাত্র পবিত্র গ্রন্থের মতবাদের মধ্যে নিজেকে আবদ্ধ না রেখে নানা ধরনের বিশ্বাস ও রীতিনীতি মেনে নেয়ার ক্ষমতা। সংঘবাদীরা হিন্দুধর্মের মেরুকরণ ঘটাচ্ছে। থারুর বলেন, নিজে হিন্দু ধর্মে বিশ্বাসী হিসেবে তিনি হিন্দুত্ববাদীদের বক্তব্যের সঙ্গে একমত হতে পারেন না। বরং হিন্দু ধর্মের নামে তারা যা করছে বলে দাবি করে তার জন্য তিনি লজ্জিতবোধ না করে পারেন না। তাদের কর্মকা-ের পরিণতিতে যে সহিংসতা হচ্ছে সেটা বিশেষভাবে পীড়াদায়ক। সহিংসতার প্রতিবাদে ভারতজুড়ে হাজার হাজার লোক প্ল্যাকার্ড হাতে বিক্ষোভ করেছে। প্ল্যাকার্ডের বক্তব্য ছিল ‘আমার নামে নয়।’
হিন্দুত্ববাদীরা বেদ, উপনিষদকে তুচ্ছ গোঁড়ামি রাজনীতির হাতিয়ারে পরিণত করেছে। গুন্ডামি, অসহিষ্ণুতা, জাত্যাভিমানী তা-বের উপশম বানিয়েছে। বাবরি মসজিদ ধ্বংস করেছে। থারুর লিখেছেন, হিন্দুধর্ম হলো সেই যা স্বামী বিবেকানন্দ প্রচার করেছেন। বিবেকানন্দের সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ উক্তির একটি হলো, হিন্দুধর্ম একই সঙ্গে সহনশীলতা ও সর্বজনীন গ্রহণযোগ্যতার পক্ষে এবং একই সঙ্গে তা সব ধর্মকে সত্য বলে মেনে নেয়। অন্যদিকে হিন্দুত্ব মতাদর্শ হলো হিন্দুধর্মের ক্ষতিকর বিকৃতি। ধর্ম জাতিত্বের নির্ধারক এই ধারণাটাই পরিত্যাজ্য। থারুর উল্লেখ করেছেন, আমার সহধর্মের লোকেরা মুসলমানদের বাড়িঘর-দোকানপাট আক্রমণ করছে, ধ্বংস করেছে, মুসলমানদের মেয়েদের ধর্ষণ করছে- তার জন্য আমি গর্বিত নই।
আমি গর্ববোধ করি সেই সব হিন্দুর জন্য যারা বলে যে, হিন্দু ও মুসলমানকে রাম ও লক্ষ্মণের মতো ভারতে বাস করতে হবে। অহিন্দুদের নিজেদের আভাসভূমিতে দ্বিতীয় শ্রেণীর মর্যাদা দেয়া অচিন্তনীয় ব্যাপার। সেটা হবে দ্বিতীয় ভারত বিভাজন। সেটা হবে ভারতের আত্মার বিভাজন। কিরণ নাগরকার এক নিবন্ধে বলেছেন, সংঘ পরিবারের হিন্দুত্ববাদী প্রকল্প হিন্দুধর্মের উদার ও সর্বব্যাপী মূল্যবোধ মুছে ফেলছে। তিনি বলেন, কংগ্রেস ও বিজেপি উভয়েই জোর গলায় দাবি করে থাকে যে, তারা বর্ণ হিন্দু ও দলিতদের মধ্যে কোন রকম পার্থক্য করে না। বস্তুতপক্ষে তারা উভয়েই পার্থক্য করে থাকে। নরেন্দ্র মোদি আজ তিন বছরেরও অধিককাল ধরে প্রধানমন্ত্রী পদে আসীন। আরএসএসএর সঙ্গে তার সম্পর্ক আরও বেশি বিযোজিত ও উচ্চবিত্তই শুধু নয়, বরং তার মধ্য দিয়ে হিন্দুত্ববাদের এক নতুন ও অতিমাত্রায় আগ্রাসী অবতারের আবির্ভাব ঘটেছে। তার আমলে এ পর্যন্ত দেশে মুসলমানবিরোধী কোন দাঙ্গা হয়নি বটে, কিন্তু সরকারের পরোক্ষ সমর্থনে তার চাইতে আরও বেশি মারাত্মক কিছু ঘটে চলছে।
ঔপন্যাসিক, নাট্যকার ও নাট্যসমালোচক কিরণ নাগারকার লিখেছেন, হিন্দুত্ববাদীদের কাছে দেশের সংবিধান অত পবিত্র নয়, যত পবিত্র হচ্ছে গরু। এতই পবিত্র যে, এই অবলা জীবদের অনেক সময় রাস্তার ধারে অনাহারে-অবহেলায় রেখে দেয়া হয় এবং বিষাক্ত প্লাস্টিকের বর্জ্য খেতে বাধ্য করা হয়। অন্যদিকে, বিজেপি সরকার গোহত্যা, গোমাংস খাওয়া ও বিক্রি আমলযোগ্য অপরাধ বলে গণ্য করেছে। যদিও এর ফলে হাজার হাজার মুসলমান রাতারাতি তাদের জীবিকা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। বলা বাহুল্য ভারতের কোন নাগরিক কি খায় না খায় সেটা ভারতের সংবিধানের প্রাইভেসি ধারার আওতায় পড়ে। গরু রাজনীতির দুঃখতম দিকটা হলো এটা হিন্দুত্ববাদী ঔদ্ধত্য ও অহঙ্কারের আরেক দৃষ্টান্ত।
কিরণ নাগারকার আরেক জায়গায় লিখেছেন, কোন কোন হিন্দুত্ববাদী প-িত এই দাবি করার পেছনে কোন সমস্যা দেখেন না যে, তাজমহল গোড়াতে ছিল একটা মন্দির। উপরাষ্ট্রপতি বেনকাইয়া নাইডু ভারতে লুটপাট ও ধ্বংসের জন্য মুঘলদের শাণিত সমালোচনা করেছেন। লাগাতার লিখেছেন, কেউ কি তাকে স্মরণ করিয়ে দেবেন যে, ১৮৫৭ সালের অভ্যুত্থানের সময় এক লাখ ব্রাহ্মণ সৈন্য শেষ মুঘল সম্রাটের সমর্থনে কুচকাওয়াজ করে দিল্লীতে এসে তাকে দিল্লীর সিংহাসনে বসিয়ে দিয়েছিল? গোহত্যার ওপর নিষেধাজ্ঞা গোরাজনীতি ছাড়া আর কিছু নয়।
মুসলমানরা গোহত্যা করে আইন ভঙ্গ করছে, এই অজুহাতে তাদের নির্যাতন ও হত্যা করার একটা মওকা ছাড়াও আর কিছু নয়। নাগারকার আরও লিখেছেন যে গোরাজনীতির সবচেয়ে বেদনাদায়ক দিকটা হলো, এটা ধর্মীয় গ্রন্থাবলী, সংস্কৃতি, ইতিহাস, ঐতিহ্য সম্পর্কে হিন্দুত্ববাদীদের অজ্ঞতার আরেক দৃষ্টান্ত। যেমন, গোহত্যা ভারতের অনেক ধর্মীয় অনুষ্ঠানের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ ছিল, এ কথা বেদে বর্ণিত আছে। কিন্তু বেদের এই বক্তব্যে হিন্দুত্ববাদীদের কিছুই যায় আসে না।
প্রতাপ এ্যান্টনি সোশ্যাল সায়েন্সেস ম্যাগাজিনে ‘হিন্দুত্ব ইজ ডিফারেন্ট ফ্রম হিন্দুইজম’ শিরোনামে এক নিবন্ধে লিখেছেন, হিন্দুধর্ম ও হিন্দুত্ববাদ দুটো আলাদা বিষয়। হিন্দুত্ববাদ হলো মৌলবাদ। হিন্দুত্ববাদের সঙ্গে জড়িয়ে আছে ঘৃণা, বিভক্তি ও অ-আধ্যাত্মিক ক্রিয়াকলাপ। ভারতে অন্যান্য ধর্মের অনুসারীদের ওপর হামলা, সহিংসতা ও ভয়ভীতির পরিবেশ সৃষ্টি এসব কার্যকলাপের জন্য দায়ী হলো হিন্দুত্ববাদী মৌলবাদ। এটা ফ্যাসিবাদেরই বহির্প্রকাশ, যা ভারতে আজ চলছে।
সূত্র : ইন্ডিয়া টুডে, দৈনিক জনকন্ঠে প্রকাশিত হয় : ০৩:৪৭, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮