ভ্রমণের মাধ্যমে আল্লাহর অপরূপ সৃষ্টির নিদর্শনগুলো মানুষকে তাঁর বড়ত্ব ও মাহাত্ম্য সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা দেয়
রুহুল কুদ্দুস টিটো
ভ্রমণের মাধ্যমে আল্লাহর অপরূপ সৃষ্টির নিদর্শনগুলো মানুষকে তাঁর বড়ত্ব ও মাহাত্ম্য সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা দেয়। এ জন্য মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের পৃথিবীতে ভ্রমণের নির্দেশ দিয়েছেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘বলো, পৃথিবীতে পরিভ্রমণ করো এবং অনুধাবন করো কিভাবে তিনি সৃষ্টি শুরু করেছেন? অতঃপর আল্লাহ পুনর্বার সৃষ্টি করবেন পরবর্তী সৃষ্টি। আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান। (সুরা : আনকাবুত, আয়াত : ২০)
ভ্রমণ শুধু আল্লাহকে চিনতে সহায়ক নয়, বরং এটি মানুষকে নতুন করে ভাবতে শেখায়। বিভিন্ন জনপদের উন্নতি ও উন্নতির মাধ্যম, নতুন নতুন প্রযুক্তি, অবনতি ও অবনতির কারণ সম্পর্কে ধারণা দেয়। ফলে মানুষ এগুলো থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে নিজেদের উন্নয়নে সঠিক পদক্ষেপ নিতে পারে।
পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ এ ব্যাপারে ইরশাদ করেন, ‘আর তারা কি জমিনে ভ্রমণ করে না? তাহলে তারা দেখত, কেমন ছিল তাদের পূর্ববর্তীদের পরিণাম।
প্রতিটি মানুষেরই উচিত মাঝে মাঝে ভ্রমণের চেষ্টা করা। কারণ ভ্রমণ মানুষের চিন্তার জগতকে প্রসারিত করে। জ্ঞানের পরিধিকে বিস্তৃত করে। নতুন নতুন জাতিগোষ্ঠী ও প্রযুক্তির সঙ্গে পরিচিত করে।
সংসার ও কর্মজীবনে একঘেয়েমি কাজে আছে ক্লান্তি। শরীরের ক্লান্তি দূর করতে কাজের ফাঁকে একটু সময় তো আপনাকে বের করে নিতেই হবে। পরিবারের সকলকে সাথে নিয়ে বা একাকি অথবা বন্ধুদের সাথে আপনার শরীর ও মনকে চাঙা করতে ভ্রমণের জুড়ি নেই ।বিশেষজ্ঞদের মতে , ভ্রমণের ফলে স্বাস্থ্যের অনেক উন্নতি হয়। এতে মানসিক চাপ, উদ্বেগসহ আরও অনেক সমস্যা দূর হয়। বেড়াতে যাওয়া শুধুই বিলাসিতা নয়, ভ্রমণ স্বাস্থ্যের জন্যও অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। ভ্রমণের ফলে যেসব উপকারিতা পাওয়া যায়-
- ভ্রমণের ফলে মানুষ অনেক বেশি স্বনির্ভর হতে পারে। এতে আত্মবিশ্বাসের পাশাপাশি দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা বাড়ে।
- স্বাস্থ্যের অনেক উপকার পাওয়া যায় ভ্রমণের ফলে। প্রতিদিন এক সময়ে ঘুম থেকে ওঠা কিংবা ঘুমাতে যাওয়ার অভ্যাস থেকে কিছুটা রেহাই পাওয়া যায়। প্রতিদিন সকালে উঠে নাশতা তৈরি কিংবা স্কুলে ছোটা অথবা অফিসের জন্য দৌড়নোর হাত থেকে কিছুটা মুক্তি পাওয়া যায়। শারীরিক ও মানসিক ক্লান্তি থেকে মুক্তি পাওয়া যায় ভ্রমণের ফলে। একঘেয়ে জীবনের হাত থেকেও রেহাই মেলে।
- বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, ভ্রমণের ফলে ইতিবাচক প্রভাব পড়ে স্বাস্থ্যে। এতে হৃৎপিণ্ড সুস্থ থাকে। যারা নিয়মিত নানা জায়গায় বেড়াতে যান তাদের হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেকটাই কমে। নানা জায়গায় বেড়াতে গেলে আবহাওয়ার প্রভাব শরীরে পড়ায় রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে।
- বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানসিক চাপ মারাত্মক হারে কমে ভ্রমণের ফলে। তাদের মতে, কাজের ব্যস্ততার মাঝেও সময় পেলেই বেড়াতে যাওয়া দরকার। এতে মস্তিষ্ক অনেক বেশি সচল থাকে। কর্মক্ষমতা বাড়ে।
- ভ্রমণের অভ্যাস রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। নানা জীবানু এবং ব্যাকটেরিয়ার সঙ্গে লড়াই করার শক্তি বাড়িয়ে দেয় শরীরে। তাই যারা নিয়মিত বেড়াতে যান, তারা হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পড়েন না বা তাদের সংক্রমণ কম হয়।
- বিশেষজ্ঞদের মতে, ভ্রমণের ফলে মন ভালো থাকে। আর মন ভালো থাকলে তার ইতিবাচক প্রভাব পড়ে শরীরেও। ফলে শরীরও সুস্থ থাকে।
ইচ্ছে শক্তি থােকলে আপনার পছন্দের কোনো জায়গা থেকে ঘুরে আসতে পারেন সহজেই। সেটা হতে পারে দেশে বা দেশের বাইরে। প্রকৃতির মায়াভরা অবারিত সবুজ ঘেরা দেশে বা বিদেশে ঘোরাঘুরি আপনার দেহে ও মনে ভরে দেবে প্রশান্তিতে। ভ্রমণের ফলে বিভিন্ন জায়গায় নিত্যনতুন অভিজ্ঞতা হবে আপনার, যা পরবর্তী জীবনে অনেক কাজে দেবে।
দেহ ও মনে প্রশান্তি
প্রকৃতির মায়াভরা অবারিত সবুজ দেখতে কার না ভালো লাগে বলুন। ঘুরতে গিয়ে অনেক বিষয় আপনাকে মুগ্ধ করবে। আর দেহ ও মনে আনবে প্রশান্তির ছায়া। ফলে পরবর্তী কাজে আপনি অনেক বেশি উদ্যমী হবেন।
অজানাকে জানতে:দেশে ও দেশের বাইরে বিভিন্ন জায়গায় ঘোরাঘুরির ফলে আপনার অনেক অভিজ্ঞতা হবে, যা কখনো আপনি অর্জন করেনি। এছাড়া ছাড়া পৃথিবীতে কত কিছুই দেখার আছে আপনার।
জ্ঞানের পাল্লা ভারি করবে:ভ্রমণ আপনার জ্ঞানের পাল্লা ভারি করবে। যেমন মিসরে নীল নদ হয়তো অনেক বইতে পড়েছেন। কিন্তু আপনি যদি একবার নীল নদ ঘুরে আসেন তবেই বুঝতে পারবেন চোখে দেখা অভিজ্ঞতা বইয়ের চেয়ে কতটা গুরুত্বপূর্ণ।
নতুন বন্ধু পাওয়ার সুযোগ:নতুন জায়গায় ভ্রমণ করলে অনেক ধরনের মানুষের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সুযোগ থাকে। ভ্রমণ করতে গিয়ে পথেঘাটে বিভিন্ন জনের সঙ্গে আপনার গড়ে উঠতে পারে ভালো বন্ধুত্ব।
ভবিষ্যতের ভাবনা:একা ভ্রমণ করলে ভবিষ্যৎ নিয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়ার সুযোগ পাবেন। নিজের প্রতি মনোনিবেশ করার সুযোগ পাবেন। একা ভ্রমণের মাধ্যমে নিজের অনেক গুণ আবিষ্কার করতে পারেন, যা আপনার কর্মদক্ষতা বাড়িয়ে দেবে বহুগুণে। নতুন অনেক ধরনের অভিজ্ঞতা অর্জনের কারণে ভবিষ্যৎ নিয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়ার দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে।
এটা ঠিক যে দেশের মধ্য বা বাইরে ভ্রমণ আপনাকে শিক্ষা দেবে কী করা উচিত আর কী করা উচিত নয়। এ ছাড়া নিজেকে ভালোবাসার মতো শিক্ষা পাবেন একা ভ্রমণের মাধ্যমে।