রাজা তৃতীয় চার্লস যুক্তরাজ্যের রাষ্ট্রপ্রধান, কিন্তু তার ক্ষমতা একেবারেই প্রতীকি এবং আলংকারিক
২০২২ সালের ৮ সেপ্টেম্বরে যেদিন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ মারা যান, তার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই ব্রিটেনের নতুন রাজা হিসেবে দায়িত্ব নেন চার্লস। এরও আট মাস পর ৭ মে আনুষ্ঠানিকভাবে মুকুট পরিয়ে তার অভিষেক সম্পন্ন হলো। রাজা তৃতীয় চার্লসের বয়স এখন ৭৪। তিনি ব্রিটেনের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি বয়সে রাজা হয়েছেন।
নির্বাহী বিভাগ ব্রিটিশ শাসন ব্যবস্থার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। ব্রিটেনের শাসন ব্যবস্থা কোন সুপরিকল্পনার ফল নয়। কোন
বিশেষ ব্যক্তি বা সংস্থা কর্তৃক এ শাসন ব্যবস্থা সৃষ্টি হয় নি। দেশ ও দেশবাসীর ভৌগোলিক অবস্থা, সামাজিক অর্থনৈতিক
কাঠামো ও মূল্যবোধের পরিপ্রেক্ষিতে শাসনব্যবস্থা গড়ে উঠেছে।
ব্রিটেনের শাসন ব্যবস্থা সংসদীয় শাসন ব্যবস্থার একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এ ধরনের শাসন বিভাগের শীর্ষে আছেন রাজা বা রানী। ব্রিটিশ শাসন বিভাগ বলতে রাজা বা রানী;প্রধানমন্ত্রী ও পার্লামেন্টকে বুঝায়। রাজা বা রানী এ ব্যবস্থায় নামমাত্র প্রধান। সরকারের যাবতীয় ক্ষমতা তার নামেইপ্রয়োগ করা হয়। প্রকৃতপক্ষে প্রধানমন্ত্রীই শাসন ব্যবস্থার মূল চালিকা শক্তি। রাজা বা রানী সহ পার্লামেন্টের সকল ক্ষমতা বাস্তবে মন্ত্রিসভার নামেই পরিচালিত। বস্তুত পক্ষে ‘রাজা বা রানী’ সহ পার্লামেন্ট, প্রিভিকাউন্সিল, ক্যাবিনেট এবং স্থায়ী
রাজকর্মচারীদের নিয়ে ব্রিটেনের শাসন বিভাগ গঠিত। ব্রিটেনের শাসনবিভাগ তথা শাসন ব্যবস্থা হল সংসদীয় শাসন
ব্যবস্থার মডেল স্বরূপ।
রাজা বা রানী ব্রিটেনের শাসন ব্যবস্থার নাম মাত্র প্রধান। যাবতীয় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার উৎস হল রাজা বা রানী।
দেশের ভিতরে তাঁর এই বিপুল শক্তির উৎস হল দু’টি:
পার্লামেন্টের বিধিবদ্ধ আইন
পার্লামেন্টের বিধিবদ্ধ আইন ব্রিটেনের রাজশক্তি ক্ষমতার প্রধান
উৎস। পার্লামেন্টের কাছ থেকে রাজা বিধিবদ্ধভাবে কতকগুলো ক্ষমতা পেয়েছেন। এ ক্ষমতারভিত্তিতে তিনি বিভিন্ন বিভাগের মাধ্যমে কার্যাদি সম্পন্ন করেন। এছাড়া অর্পিত ক্ষমতা প্রসূত আইন(Delegated legislation) -এর মাধ্যমে শাসন-বিভাগীয় মন্ত্রীদের কার্যাদি সম্পর্কে রাজা প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করতে পারেন। এগুলোই হল পার্লামেন্টের বিধিবদ্ধ আইন।
বিশেষাধিকার বিশেষা
ধিকার ব্রিটেনের রাজা বা রানীর ক্ষমতার দ্বিতীয় উৎস। ব্রিটেনের রাজশক্তিরক্ষমতার একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস হল বিশেষাধিকার i (Prerogatives) রাজার এই বিশেষাধিকারগুলো চিরাচরিত প্রথার মাধ্যমে প্রাপ্ত। এগুলো তার ক্ষমতার ভিত্তি স্বরূপ।“রাজা কোন অন্যায় করতে পারেন না” (ঞযব করহম পধহ ফড় হড় ৎিড়হম) এ প্রবাদটি ব্রিটেনে ব্যক্তি রাজারক্ষেত্রে নয়, প্রতিষ্ঠান রাজার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। সুদূর অতীতে রাজার অবাধ ক্ষমতা ছিল এবং তাঁকে বিধাতারপ্রতিনিধি হিসেবে গণ্য করা হত। সে সময় রাজার ক্ষমতাকে সন্দেহাতীতভাবে মেনে নেওয়া হত। রাজা সব দোষ ত্রæটির উর্ধ্বে বলে ধরে নেয়া হত। কিন্তু বর্তমান রাজার নিজস্ব ব্যক্তিগত কোন ক্ষমতা নেই।
নিজ দায়িত্বে তিনি কিছুই করেন না। যাবতীয় কাজকর্ম তার নামেই পরিচালিত হয়। তাই তিনি কোন অন্যায় করেন না। এ কারণে তাঁকে কোন অন্যায়-অবিচারের জন্য দায়ী করা যায় না। সরকারী কাজের জন্য সাধারণত মন্ত্রীরাই দায়ী থাকেন। রাজার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ আনা যায় না। ব্রিটেনে দিনে দিনে নানা রকম সরকারী ক্ষমতা ব্যক্তি রাজার হাত থেকে নিয়মতান্ত্রিকভাবে সীমিত ক্ষমতার অধিকারী প্রাতিষ্ঠানিক রাজার হাতে চলে যায়। বর্তমানে ব্রিটেনে দায়িত্বশীল সংসদীয় সরকার বিদ্যমান।এ ধরনের সরকারী ব্যবস্থায় যাবতীয় দায়-দায়িত্ব সরকার প্রধানের হাতে ন্যাস্ত। রাজা এখানে নামে মাত্র প্রধান। রাজা বা রানী মন্ত্রিসভার পরামর্শক্রমে নির্ধারিত যাবতীয় কার্যাদি পালন করেন। রাজার ঘোষণাপত্রে যে কোন একজন মন্ত্রীর প্রতি স্বাক্ষর আবশ্যক। অন্যথায় এ ঘোষণা কার্যকরী হয় না। সকল দায় দায়িত্ব
মন্ত্রীসভার উপর ন্যাস্ত। রাজা কোন ভুল করলে তা অন্যদের উপর বর্তায়।
ব্রিটেনে রাজশক্তির ক্ষমতা ও কার্যাবলী সাংবিধানিকভাবে ব্রিটেনের সকল ক্ষমতা রাজা বা রানীর নামে পরিচালিত হয়। তত্ত¡গত বিচারে ব্রিটেনের রাজশক্তি হল যাবতীয় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার উৎস। রাজা বা রানী ব্রিটেনের শাসন বিভাগ, আইন বিভাগ ও
বিচার বিভাগের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
গত বছরের ৮ সেপ্টেম্বরে যেদিন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ মারা যান, তার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই ব্রিটেনের নতুন রাজা হিসেবে দায়িত্ব নেন চার্লস। এরও আট মাস পর ৭ মে আনুষ্ঠানিকভাবে মুকুট পরিয়ে তার অভিষেক সম্পন্ন হলো।
রাজপরিবারের সদস্যদের মধ্যে জনপ্রিয়তার সূচকে অনেক বছর চার্লস ছিলেন তিন নম্বরে, রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ, এবং তার নিজের ছেলে প্রিন্স উইলিয়ামের পেছনে। রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুর পর নতুন রাজার প্রতি সমর্থন কিছুটা বেড়েছে বলে দেখা যাচ্ছে বিবিসির জরিপে।
রাজা তৃতীয় চার্লস হচ্ছেন যুক্তরাজ্যের রাষ্ট্রপ্রধান। কিন্তু ব্রিটেনের সাংবিধানিক রাজতন্ত্রে তার ক্ষমতা খুবই সীমিত, তিনি প্রতীকী এবং আলংকারিক কিছু ক্ষমতা ভোগ করেন। কাজেই রাজপরিবারের সদস্যদের রাজনৈতিকভাবে নিরপেক্ষ অবস্থানে থাকতে হয়।
রাজা তৃতীয় চার্লস এর মতে, পার্লামেন্ট হচ্ছে ব্রিটিশ গণতন্ত্রের “জীবন্ত অঙ্গ।”
রাজা তৃতীয় চার্লস তার মায়ের মৃত্যুর পর এখন কমনওয়েলথের নতুন প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন। কমনওয়েলথ হচ্ছে ৫৬টি দেশের একটি রাজনৈতিক জোট, যাদের বেশিরভাগই আসলে সাবেক ব্রিটিশ উপনিবেশ। তিনি একই সঙ্গে যুক্তরাজ্য ছাড়াও আরও ১৪টি দেশের রাষ্ট্রপ্রধান। এর মধ্যে আছে অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, জ্যামাইকা এবং নিউজিল্যান্ডের মতো দেশ।
রাজার বিশেষ অধিকার সমূহ
রাজা ব্রিটেনের শাসন ব্যবস্থার আনুষ্ঠানিক প্রধান। শাসন ব্যবস্থায় রাজা বা রানী বিশেষ মর্যাদাবান ব্যক্তি।রাজার বিশেষ অধিকার প্রসঙ্গে ডাইসি বলেন, “The residue of discretionary or arbitrary authority which at any time is legally left in the hands of the crown” ব্রিটেনের রাজা বা রানীর বিশেষ অধিকার সম্পর্কেশাসনতান্ত্রিকভাবে বলা আছে যে, ‘পরামর্শ দান, উৎসাহ দান করাই হল রাজা বা রানীর
বিশেষ অধিকার।’
পরামর্শদান
পরামর্শদান ব্রিটেনের রাজা বা রানীর প্রথম অধিকার। পরামর্শদানের অধিকার অর্থ হল যে রাজাকে রাষ্ট্রীয় বিষয়ে সব সময় অবহিত রাখা হয়, আইন ও অন্যান্য সরকারী কাজে রাজা বা রানীর সম্মতির প্রয়োজন হয়। মন্ত্রিসভা গুরুত্বপূর্ণবিষয়ে রাজা বা রানীর সাথে পরামর্শ করে নেন। মন্ত্রীরা তাদের গুরুত্বপূর্ণসিদ্ধান্তনেয়ার আগে অবশ্যই রাজা বা রানীর সাথে আলোচনা বা পরামর্শ করতে বাধ্য থাকেন।এভাবে রাজা বা রানীর তার পরামর্শদানের অধিকার ভোগ করেন।
উৎসাহ দান
উৎসাহদানের অধিকার ব্রিটেনের রাজা বা রানীর একটি বিশেষ অধিকার। ব্রিটেনে ক্যাবিনেট ব্যবস্থা বিদ্যমান। তিনি গুরুত্বপূর্ণবিষয়ে ক্যাবিনেটকে উৎসাহ দেন। তাকে জনকল্যাণ নীতি ও সিদ্ধন্তের বিষয়ে অবহিত করতে হয়। বিশেষ করে তিনি জনকল্যাণ বিষয়ে সিদ্ধান্তনিতে ক্যাবিনেটকে উৎসাহ প্রদান করেন।তাঁর এ উৎসাহ ক্যাবিনেটের মনস্তাত্তিক শক্তি বৃদ্ধি করে।
সতর্ককরা
সতর্ক করা ব্রিটেনের রাজা বা রাণীর অন্যতম অধিকার। তিনি বিভিন্ন বিষয়ে মন্ত্রিসভাকেসতর্ককরে দেন। কোন জনস্বার্থ সম্পর্কিত সিদ্ধান্তনিতে হলে তাঁকে অবহিত করতে হয়। রাজা কোনজনস্বার্থ বিরোধী সিদ্ধান্তমেনে নেন না। রাজার এরূপ সতর্ক বাণী ক্যাবিনেটের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ।রাজাএ সকল সতর্কমূলক ব্যবস্থা নিতে প্রধানমন্ত্রীসহ মন্ত্রিসভাকে সতর্ক করে দেন।
প্রবীণ বয়সে রাজদায়িত্ব
রাজা তৃতীয় চার্লসের বয়স এখন ৭৪। তিনি ব্রিটেনের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি বয়সে রাজা হয়েছেন। তার প্রতিদিনের রাজকার্য পরিচালনার সময় যে প্রশ্নটি উঠবে, তা হলো, রাজকীয় দায়িত্বের যে বিপুল ভার, তার কতটা তিনি নিজে পালন করতে পারবেন।
এমন জল্পনা চলছে যে, তার বড় ছেলে এবং সিংহাসনের উত্তরাধিকারী প্রিন্স উইলিয়ামকে এক্ষেত্রে কিছু দায়িত্ব পালনের ভার নেয়ার জন্য এগিয়ে আসতে হবে। বিশেষ করে বিদেশ ভ্রমণের বেলায়। রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথও আশির কোঠায় পা দেয়ার পর তার এরকম বিদেশ ভ্রমণ বন্ধ করেছিলেন।
“রাজা চার্লস একজন বৃদ্ধ রাজা। তিনি নিজে একা সব করতে পারবেন না”, বলছিলেন ইতিহাসবিদ কেলি সোয়াব।
“আমার মনে হয়, এ কারণে বিভিন্ন দায়িত্বে আমরা প্রিন্স উইলিয়ামকে অনেক বেশি দেখতে পাবো।”
রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুর পর সারাদেশে যেরকম শোকের ছায়া পড়েছিল, তাতে বোঝা যায় তিনি বেশ জনপ্রিয় ছিলেন।
সেটাও রাজা তৃতীয় চার্লসের জন্য একটা চ্যালেঞ্জ।
ইতিহাসবিদ ইভালিন ব্রুটন এর মতে, এই চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করা কঠিন নয়।
এক্ষেত্রে ১৯০১ সালে রানি ভিক্টোরিয়ার মৃত্যুর পর রাজা সপ্তম এডওয়ার্ড যে পটভূমিতে সিংহাসনে আসেন, তার কথা উল্লেখ করছেন। রানি ভিক্টোরিয়াও বেশ জনপ্রিয় ছিলেন।
“ভিক্টোরিয়ান যুগের অবসান হয়েছিল যখন, তার সঙ্গে আমাদের বর্তমান সময়ের অনেক মজার মিল আছে” বলছিলেন তিনি।
“সপ্তম এডওয়ার্ড এবং তৃতীয় চার্লস, দুজনেই এমন সময়ে দায়িত্বে এসেছেন, যখন ব্রিটেনে অনেক সামাজিক পরিবর্তন ঘটছে। এবং দুজনেই তাদের পূর্বসূরি তাদের মায়েদের মতো অত জনপ্রিয় নন।”
সপ্তম এডওয়ার্ড সিংহাসনে ছিলেন মাত্র নয় বছর (১৯০১-১৯১০)। তবে তিনি নানা কারণে স্মরণীয় হয়ে আছেন। বিশেষ করে রাজা হিসেবে যুক্তরাজ্য এবং ফ্রান্সের মধ্যে সমঝোতা প্রতিষ্ঠায় তিনি যে কূটনৈতিক ভূমিকা রাখেন। ১৯০৪ সালে যুক্তরাজ্য এবং ফ্রান্সের মধ্যে এই সমঝোতা স্বাক্ষরিত হয়।
“শেষ পর্যন্ত সপ্তম এডওয়ার্ড বেশ ভালোই দায়িত্ব পালন করেছিলেন। কাজেই রাজা তৃতীয় চার্লসকেও যে একই ভাবে মানুষ মনে রাখবে না, সেটা মনে করার কোন কারণ নেই”, বলছেন ইতিহাসবিদ ইভালিন ব্রুটন।
ব্রিটেনের রাজতন্ত্রটিকে থাকার কারণ
ব্রিটেনের রাজতন্ত্রএকদিনে গড়ে উঠেনি। ধীরে ধীরে প্রথাগত বিধানের দ্বারা রাজতন্ত্রপ্রতিষ্ঠিত হয়।সময়ের প্রেক্ষিতে ব্রিটেনের রাজতন্ত্রটিকে থাকার কথা ছিল না। কিন্তআজও ব্রিটেনে রাজতন্ত্রটিকে আছে।এর পিছনে কারণ বিদ্যমান রয়েছে স্যার আইভর জেনিংস সহ বিভিন্ন রাষ্ট্রচিন্তাবিদ এর বহুবিধ কারণের কথা বলেছেন।
রক্ষণশীলতা
রক্ষণশীলতা রাজতন্ত্রটিকে থাকার প্রথম কারণ। ইংরেজ জাতি অধিক মাত্রায়রক্ষণশীল। তারা কোন মৌলিক পরিবর্তনে আগ্রহী নয়। সনাতন ঐতিহ্যের প্রতি ইংরেজ জাতিরআন্তরিক টান অনেক দিনের। দীর্ঘ দিন ধরে বিদ্যমান সকল প্রথা, রীতিনীতি ও প্রতিষ্ঠানকে ইংরেজ জাতি মনে প্রাণে ভালোবাসে। রাজতন্ত্রহল ব্রিটেনের তেমনি একটি প্রতিষ্ঠান। স্বভাবতই এর প্রতি
তাদের শ্রদ্ধা জড়িত।
গণতন্ত্রীকরণ
গণতন্ত্রীকরণের কারণে ব্রিটেনে রাজতন্ত্রআজও টিকে আছে। ব্রিটেনের রাজতন্ত্র আজ নিয়মতান্ত্রিক রাজতন্ত্রেপরিণত রয়েছে। এ রাজতন্ত্রব্রিটেনের গণতন্ত্রের পথে কোন বাধা সৃষ্টি করেনি। গণতান্ত্রিক ধ্যান-ধারণার সঙ্গে তাল মিলিয়ে রাজতন্ত্রপ্রবাহমান। এ ব্যবস্থা সংসদীয় গণতন্ত্রের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলেছে। গৌরবময় বিপ্লবের (১৬৮৮) পর থেকে রাজা পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব মেনে নিয়েছে।
সংসদীয় ব্যবস্থার সমর্থক
ব্রিটেনে সংসদীয় ব্যবস্থা বিদ্যমান। রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে রাজা বা রানীরগুরুত্ব কম নয়। তিনি মন্ত্রিসভাকে সর্বত্রই সহায়তা করেন। তত্ত¡গতভাবে সকল ক্ষমতা রাজার নামেপরিচালিত হয়। বাস্তবে প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভা সকল ক্ষমতা প্রয়োগ করেন। রাজা বা রানী এ ধরনের শাসন ব্যবস্থায় কোন সমস্যা সৃষ্টি করছে না। এ কারণে রাজতন্ত্রটিকে আছে।
রাজপদের ব্যবহারিক মূল্য
রাজপদের ব্যবহারিক মূল্যের কারণে ব্রিটেনে রাজতন্ত্রবিদ্যমান।ব্রিটেনে মন্ত্রিসভার পরামর্শদাতা হিসেবে রাজশক্তির ব্যবহারিক মূল্য অনেক। তিনি নীতি নির্ধারণে মন্ত্রিসভাকে পরামর্শ দেন। এক্ষেত্রে তার গুরুত্ব অপরিসীম। তারা নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসেন
মনস্তাত্তিক কারণ
মনস্তাত্তিক কারণে ব্রিটেনে আজও রাজতন্ত্রটিকে আছে। এটি রাজতন্ত্রটিকে থাকার সব চেয়ে বড় কারণ। মনস্তাত্তিক দিক থেকে ব্রিটেনে রাজতন্ত্রের গুরুত্ব অপরিসীম। ব্রিটেনের রাজা বা রানী জনগণের কাছে পিতা-মাতার ন্যায় প্রতিভাত হন। তিনি সর্বদা বিভিন্ন সমস্যা ও তার সমাধান সম্পর্কেআন্তরিকভাবে আলাপ আলোচনা করেন। প্রয়োজন মত বিভিন্ন পরামর্শ দেন।
ঐক্যের প্রতীক
ব্রিটেনের রাজা বা রানী ঐক্যের প্রতীকরূপে খ্যাত। তাকে ঐক্যের প্রতীক হিসেবে গণ্য করা হয়। তিনি ঐক্যের ধারক ও আশা-আকাক্সক্ষার কেন্দ্রস্থল। রাজা বা রানী সমগ্রদেশ ও দেশবাসীর অনুকুলে কথা বলেন। এ ভাবে তিনি ঐক্যের বন্ধন সৃষ্টি করেন।
সংযোগ সৃষ্টি
ব্রিটেনের রাজতন্ত্রকমনওয়েলথের সঙ্গে সংযোগ রক্ষা করে থাকে। রাজা বা রানী হলেন কমনওয়েলথের প্রধান। ডোমিনিয়ন স্টেটগুলোর মধ্যে তিনি যোগসূত্র স্বরূপ। কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলো পূর্বে গ্রেট ব্রিটেনের উপনিবেশ ছিল। রাজশক্তির মাধ্যমে এই দেশগুলোর সঙ্গে সংযোগ
সৃষ্টি হয়।
আনুষ্ঠানিকতা
আনুষ্ঠানিকতা ব্রিটেনের শাসনব্যবস্থার একটি বৈশিষ্ট্য। ব্রিটেনের প্রশাসনিক ক্ষেত্রে রাজা বা রানী আনুষ্ঠানিক ভূমিকা পালন করেন। এখানে যাবতীয় কাজকর্ম রাজা বা রানীর নামে সম্পাদিত। বিচারকার্যও তাঁর নামে সম্পাদিত হয়। তার নামে যুদ্ধ ঘোষণা করা হয়। জনগণ ব্যক্তি হিসেবে রাজায় প্রতি অনুরক্ত। তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে তার দায়িত্ব পালন করেন।
নিরপেক্ষতা
নিরপেক্ষতা ব্রিটেনের রাজতন্ত্রের পিছনে ইন্ধন যোগায়। রাজা বা রানী ব্রিটেনের শাসন ব্যবস্থায় নিরপেক্ষ ব্যক্তি। তিনি নিরপেক্ষভাবে তাঁর দায়িত্ব পালন করেন। রাজা বা রানী দলাদলির উর্ধ্বে থাকেন। তাঁর এ নিরপেক্ষতা রাজতন্ত্রকে বহাল রেখেছে।
তথ্য সূত্র:বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় পাঠক্রম/ বিবিসি বাংলা