মস্কোর কাছে এক কনসার্ট হলে বন্দুকধারীর হামলায় এ পর্যন্ত অন্তত ১৪৩ জন নিহত হয়েছে
মস্কোর কনসার্ট হলে হামলায় মৃতের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে হল ১৪৩। আহত অন্তত ১৪০ জন। শনিবার সকালে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে দেশের নিরাপত্তা বাহিনী এফএসবি-র প্রধান জানিয়েছেন, এই ঘটনায় ১১ জনকে আটক করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন চার অভিযুক্তও, যাঁরা সরাসরি হামলায় জড়িত। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে সে কথা প্রকাশিত হয়েছে।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যম বিএনও নিউজ জানিয়েছে, শুক্রবার রাতে মস্কোর ক্রকাস সিটি হলে গুলি চালিয়েছেন চার জন। তাঁদের মধ্যে দুই আততায়ী এলোপাথাড়ি গুলি চালিয়ে ৬০ জনকে হত্যা করেছেন বলে অভিযোগ। আহত হয়েছেন বহু। রুশ সংবাদমাধ্যম জানায়, হামলার পর সাদা গাড়িতে চেপে পালিয়ে যান চার থেকে ছ’জন জঙ্গি। ধাওয়া করে ব্রায়ানস্ক অঞ্চলে সেই গাড়িটিকে ধরে ফেলে পুলিশ। চার জঙ্গিকেও ধরা হয়। গাড়ি থেকে অস্ত্র উদ্ধার করেছে পুলিশ। গাড়ির ছবি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।
শুক্রবার সন্ধ্যায় মস্কোর ক্রকাস সিটি হলে চলছিল রাশিয়ার রক ব্যান্ড ‘পিকনিক’-এর অনুষ্ঠান। ওই প্রেক্ষাগৃহে হাজার দর্শক এঁটে যেতে পারেন। ফৌজিদের পোশাক পরে কনসার্ট হলে ঢুকেছিলেন জঙ্গিরা। তার পর এলোপাথাড়ি গুলি ছুড়তে থাকেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, গ্রেনেড এবং বোমাও ছোড়া হয়। ভিডিয়োতে দেখা গিয়েছে, কনসার্ট হল ধোঁয়ায় ভরে গিয়েছে। সেখান থেকে কালো ধোঁয়া গলগল করে বার হচ্ছে। আগুন নেভাতে তিনটি হেলিকপ্টার থেকে জল ছোড়া হয়। অনেকেই বাঁচতে চেয়ারের পিছনে লুকিয়ে পড়েন। কেউ কেউ দৌড়ে বেসমেন্টে বা ছাদেও উঠে পড়েন। এই হামলার নিন্দা করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ফ্রান্স, স্পেন, ইটালি। আমেরিকার দাবি, এই হামলার নেপথ্যে রয়েছে আইএসের খোরাসান শাখা। আইএসের ওই শাখাও হামলার দায় স্বীকার করেছে। হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, চলতি মাসের শুরুতে এই নিয়ে তারা মস্কোকে সতর্কও করেছিল। যদিও পুতিন সরকার এই নিয়ে কোনও মন্তব্য করেনি। তবে আমেরিকা স্পষ্ট জানিয়েছে, ইউক্রেনের যুদ্ধের সঙ্গে এর কোনও যোগ নেই। ইউক্রেনও দায় অস্বীকার করেছে।
ক্রোকাস সিটি হলে বন্দুকধারীরা যখন এর প্রবেশ মুখে এবং পরে থিয়েটারের ভেতরে বিস্ফোরণ ঘটায়, তখন সেখানে একটি রক কনসার্ট আয়োজন করা হচ্ছিল।
ভবনের বেশিরভাগ অংশ আগুনে পুড়ে গেছে এবং ছাদের কিছু অংশ ধসে পড়েছে।রুশ বাহিনীর কর্মকর্তারা কনসার্ট হলটি পরিদর্শন করেছেন। জরুরি পরিষেবা প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংসস্তুপ পরিস্কারের কাজ শুরু করেছে।
একই সাথে তথ্য প্রমাণ জব্দ ও সিটি সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহের কাজ করছে তদন্ত কর্মকর্তারা।রুশ নিরাপত্তা বাহিনীর বলছে, কনসার্ট হলে আগুন লাগাতে দাহ্য পদার্থ ব্যবহার করেছিলো হামলাকারীরা।রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একে একটি ‘সন্ত্রাসী হামলা’ বলে অভিহিত করে নিন্দা জানিয়েছে।
এই ঘটনায় এখনও প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্য করেননি পুতিন। তাঁর এক সহযোগী জানিয়েছেন, আহতদের দ্রুত আরোগ্যকামনা করেছেন তিনি। এই হামলার পর সারা দেশে কড়া নিরাপত্তা জারি করা হয়েছে। আগামী বেশ কয়েক দিন সমস্ত রকম অনুষ্ঠানও বাতিল করা হয়েছে। ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে ফরেন্সিক দল। হামলায় ব্যবহৃত অস্ত্রও হাতে এসেছে পুলিশের।
তথ্যসূত্র: বিবিসি, আনন্দবাজারপত্রিকা