মানুষ তো তার বিবেক দিয়ে সব বুঝতে সক্ষম ।।শয়তান যত অশ্লিতা এবং হারাম কাজ আমাদের কাছে শোভন করে তোলে
রুহুল কুদ্দুস টিটো
মানুষ তো তার বিবেক দিয়ে সব বুঝতে সক্ষম । প্রতিটি মোমিন জানে কোনটি মন্দ কোনটি ভালো তারপরও খুব কমসংখ্যক মানুষ আমরা মেনে চলি । শয়তান আমাদের তার সাথে দোযোখে নিতে চায় তাই সে যত অশ্লিতা এবং হারাম কাজ আমাদের কাছে শোভন করে তোলে আর আমরা সহজে সে পথে অগ্রসর হই জান্তে বা অজান্তে ।
মানুষ জাতির সত্তাবাচক বৈশিষ্ট্য হচ্ছে- ‘দোষে-গুণে মানুষ’। অধিকাংশ মানুষের দোষ বেশি, গুণ কম। সে কারণেই বোধহয় মানুষজাতি সম্পর্কে সাধারণ ধারণা দোষ-গুণে মানুষ। মানুষ দোষ করবে না- এমন উদাহরণ নেই বললেই চলে।
পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ ইনসাফ, ইহসান ও আত্মীয়-স্বজনকে দান করার নির্দেশ দেন এবং তিনি অশ্লীলতা, অসৎ কাজ ও সীমা লঙ্ঘন করতে নিষেধ করেন।তিনি তোমাদের উপদেশ দেন, যেন তোমরা শিক্ষা গ্রহণ করো।’(সুরা : নাহল, আয়াত :৯০)
মহান আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই যারা মুমিনদের মধ্যে অশ্লীলতার প্রসার কামনা করে, তাদের জন্য আছে দুনিয়া ও আখিরাতে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। আর আল্লাহ জানেন, তোমরা জানো না।’ (সুরা : নুর, আয়াত : ১৯)
বর্তমান বিশ্বে প্রযুক্তির কল্যাণে ইন্টারনেটে ইউটিউব, ফেইসবুক, টুইটার ইত্যাদি মাধ্যমে পর্ণো ভিডিও ও কুরুচিপূর্ণ ছবি অতিদ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে বর্তমানে তরুণ-যুবকরা অতিমাত্রায় আসক্ত হয়ে পড়েছে। এসবের কারণে যুবক-তরুণদের চরিত্র নষ্ট হচ্ছে। জড়িয়ে পড়ছে অবৈধ সম্পর্কে। অনেকে অবৈধ বিবাহে জড়াচ্ছে। বাংলাদেশেও পর্ণোর ব্যবসা কম নয়। জুলাই’১৩-তে প্রকাশিত বাসসের এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, ঢাকার বিভিন্ন সাইবার ক্যাফেতে প্রতি মাসে ৩ কোটি টাকা মূল্যের পর্ণো ডাউনলোড করা হয়। এ সকল পর্ণোর ভিজিটরদের মধ্যে ৭৭ শতাংশই স্কুল-কলেজ পড়ুয়া ছেলেমেয়ে! বর্তমানে নিঃসন্দেহে এই পরিমাণ অনেক বেশী।
হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, জারির বিন আবদুল্লাহ বিন জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি কোনো উত্তম পন্থার প্রচলন করল এবং লোকে তদনুযায়ী কাজ করল, তার জন্য তার নিজের পুরস্কার রয়েছে, উপরন্তু যারা তদনুযায়ী কাজ করেছে তাদের সমপরিমাণ পুরস্কারও সে পাবে, এতে তাদের পুরস্কার মোটেও হ্রাস পাবে না। আর যে ব্যক্তি কোনো মন্দ প্রথার প্রচলন করল এবং লোকেরা তদনুযায়ী কাজ করল, তার জন্য তার নিজের পাপ তো আছেই, উপরন্তু যারা তদনুযায়ী কাজ করেছে, তাদের সমপরিমাণ পাপও সে পাবে, এতে তাদের পাপ থেকে মোটেও হ্রাস পাবে না। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২০৩)
আল্লাহ বলেন, হে মুহাম্মদ (স.) বলুন- আমার রব হারাম করেছেন যাবতীয় প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য অশ্লীলতা, পাপ কাজ, অসংগত বিরোধিতা, আল্লাহর সাথে এমন কিছু শরীক করা যার কোন প্রমাণ তিনি নাযিল করেননি এবং আল্লাহর প্রতি এমন কথা আরোপ করা যা তোমরা জান না ।
এই আয়াতের ব্যাখ্যায় রয়েছে আরো ২৩ টি আয়াত। শয়তান মানুষকে অশ্লীল কাজের প্ররোচনা দেয়- আল্লাহ তা’আলা বলেন, হে মানুষ! পৃথিবীতে যা কিছু হালাল ও পবিত্র বস্তু আছে তা থেকে তোমরা আহার কর আর শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ কর না।
সে তো তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। সে তো তোমাদের নির্দেশ দেয় মন্দ ও অশ্লীল কাজ করতে এবং আল্লাহ সম্বন্ধে এমন সব বিষয় বলতে বলে যা তোমরা জান না।
অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, শয়তান তোমাদের অভাব-অনটনের ভয় দেখায় এবং অশ্লীলতার হুকুম দেয়। আর আল্লাহ তোমাদের প্রতিশ্রুতি দেন তার ক্ষমার এবং অনুগ্রহের। আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ।
ব্যভিচার নিঃসন্দেহে অশ্লীলতা। আল্লাহ বলেন, তোমরা ব্যভিচারের কাছেও যেও না। অবশ্যই এটা অশ্লীল কাজ ও নিকৃষ্ট পন্থা।
অন্য আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, তোমাদের নারীদের মধ্যে যারা ব্যভিচার করে তাদের বিরুদ্ধে তোমাদের মধ্য থেকে চারজন, সাক্ষী উপস্থিত করবে, যদি তারা সাক্ষ্য প্রদান করে তবে ব্যভিচারিণীদেরকে ঘরে আবদ্ধ করে রাখবে যে পর্যন্ত না তাদের মৃত্যু হয় অথবা আল্লাহ্ তাদের জন্য অন্য কোন ব্যবস্থা করেন।
অশ্লীলতা পুনরাবৃত্তি না করা- আল্লাহ তায়ালা বলেন- আর যারা বেঁচে থাকে কবিরা গুনাহ ও অশ্লীল কাজ থেকে এবং ক্রোধাণ্বিত হয়েও ক্ষমা করে দেয়।
অন্য আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন- তারা এরূপ যে, কবীরা গুনাহ থেকে এবং অশ্লীল কার্য থেকে বেঁচে থাকে, সগীরা গুনাহ ব্যতিরেকে। নিশ্চয় আপনার রব ব্যাপক ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের সর্ম্পকে ভাল জানেন-যখন তিনি তোমাদেরকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছিলেন এবং যখন তোমরা ভ্রূণরূপে তোমাদের মাতৃগর্ভে ছিলে।
অতএব, তোমরা নিজেদেরকে পবিত্র মনে কর না। তিনিই ভাল জানেন মোত্তাকী কে। আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন- এবং যারা কখনও কোন অশ্লীল কাজ করে ফেললে অথবা নিজেদের প্রতি জুলুম করলে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং ক্ষমা প্রার্থনা করে নিজেদের অপরাধের জন্য।
অব্যাহতভাবে গুনাহ করা এবং সে জন্য কোনো অনুতাপ, অনুশোচনা না করা এবং তা ত্যাগ করার কথাও চিন্তা না করা। এটা শয়তানের বৈশিষ্ট্য; কোনোরকম গুনাহ হয়ে গেলে অনুতপ্ত হওয়া এবং ভবিষ্যতে গুনাহ না করার জন্য দৃঢ় সংকল্প করা। এটা মানবজাতির বৈশিষ্ট্য। এরই নাম তাওবা।
আল্লাহ ছাড়া কে আছে যে অপরাধ মার্জনা করেবে? তারা যা করে ফেলে, জেনে-শুনে তার পুনরাবৃত্তি করে না। আল্লাহ তাআলা গাফফার-মহা ক্ষমাশীল; তিনি ক্ষমা করতেই ভালোবাসেন। তাই তো ক্ষমার জন্য তিনি রেখেছেন- বিভিন্ন উপলক্ষ; এই উপলক্ষে সেই উপলক্ষে তিনি বান্দাকে ক্ষমা করেন। পৃথিবী-ভর্তি গোনাহও তিনি ক্ষমা করে দেন। প্রয়োজন শুধু ফিরে আসা। তওবার মাধ্যমে তাঁর ক্ষমার দুয়ারে ধরনা দেওয়া। ব্যস, বান্দার ক্ষমা চাইতে দেরি, ক্ষমা করতে দেরি নেই। আর শুধু ক্ষমা নয়, ক্ষমা করে তিনি টেনে নেন রহমতের ছায়ায়; এমনকি কখনো পাপের সংখ্যা পরিবর্তন করে দেন পুণ্য দিয়ে।
বান্দাকে হতে হবে ‘তাওয়াব’-গোনাহ হয়ে গেলেই সাথে সাথে তওবা করতে হবে। তওবা করতে হবে দিল থেকে, অনুশোচনার সাথে। তাহলেই লাভ করা যাবে ‘গাফফার’-এর ক্ষমা। হাদীস শরীফে ইরশাদ- প্রতিটি বনী আদম ‘খাত্তা’-বারংবার পাপকারী। তবে ‘খাইরুল খাত্তাঈন’ অর্থাৎ পাপকারীদের মধ্যে উত্তম হল তারা, যারা ‘তাওয়াবূন’ অর্থাৎ যারা বেশি বেশি তওবা করে; গোনাহ হলেই তওবা করে নেয়। -(জামে তিরমিযী, হাদীস ২৪৯৯)।
ঈমানের পর ইসলামের সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ আমল হলো সালাত বা নামাজ। নামাজ ইসলামের প্রাণ। মুমিন এবং কাফেরের মাঝে বড় পার্থক্য হলো নামাজ।পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজ ছাড়াও নফল নামাজ পড়ার বিধান ইসলামী শরিয়তে রয়েছে। দুনিয়ার সব খারাপ ও অন্যায় কাজ থেকে মানুষকে রক্ষা করে নামাজ।
মুসলমানদের জন্য নামাজ ফরজ । নামাজ অশ্লীল ও নিষিদ্ধ কাজ থেকে বিরত রাখে।
কুরআন শরীফে আল্লাহ তায়ালা নিজেই নামাযের এ স্বার্থকতা ও বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে ঘোষণা করেছেন : “নিশ্চই নামায মানুষকে পাপ, অন্যায় ও অশ্লীলতা এবং লজ্জাহীনতার কাজ হতে বিরত রাখে।” সূরা আনকাবুত আয়াতঃ ৪৫।
অর্থাৎ নিশ্চয়ই নামাজ, নামাজী ব্যক্তি এবং নামাজীদের সমাজ (যেহেতু ব্যক্তির সমষ্টিই সমাজ) থেকে ইসলামের দৃষ্টিতে অশ্লীল ও নিষিদ্ধ কাজ দূর করে।
তওবা আরবি শব্দটির অর্থ পাপ থেকে প্রত্যাবর্তন। পবিত্র কোরআনে তওবা বিষয়টির ওপর অত্যন্ত গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। বিগত পাপের জন্য অন্তরে অনুশোচনা ও সেই সঙ্গে ভবিষ্যতে সৎ জীবন যাপনের সংকল্পকেই ইসলামি পরিভাষায় তওবা বলা হয়। যে আন্তরিকভাবে তওবা করে তাকে ইসলাম নিষ্পাপ শিশুর সঙ্গে তুলনা করেছে।
পবিত্র কোরআনে সুরা তাহরিম-এর ৮ আয়াতে বলা হয়েছে ‘হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা আল্লাহর কাছে তওবা করো— বিশুদ্ধ তওবা; হয়তো তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের মন্দ কাজগুলো মুছে দেবেন আর তোমাদের প্রবেশ করাবেন জান্নাতে যার পাদদেশে নদী বইবে।’
সত্যকার তওবা দিয়েই প্রকৃত ধর্মজীবনের সূচনা করা যায়। বিশুদ্ধ তওবা করে আল্লাহ পাকের পবিত্র কোরআনের দেয়া নির্দশ উপদেশ এবং হুজুরে পাক স. -এর জীবন আদর্শ মেনে চললে আমরা আমাদের সন্তান ভবিষৎ সমাজ এবং নিজের জন্য পরিবারের সকলের জন্য পরকালে কল্যাণ বয়ে আনতে পারবো।